Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মায়ের খুনি অপবাদ মুছতেই লড়াই দুই ভাইয়ের

এক যুগ আগে দুই ভাই মিলে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিল মায়ের বিরুদ্ধে। তখন তারা ছিল নাবালক। ‘ভুল’ বুঝতে পেরে তাঁরাই এখন মাকে জেল থেকে বার করে আনতে মরিয়া। এখন তাঁরা যুবক।

পথসন্ধান: মাকে ছাড়াতে মরিয়া দুই ভাই। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

পথসন্ধান: মাকে ছাড়াতে মরিয়া দুই ভাই। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:৪৮
Share: Save:

এক যুগ আগে দুই ভাই মিলে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিল মায়ের বিরুদ্ধে। তখন তারা ছিল নাবালক। ‘ভুল’ বুঝতে পেরে তাঁরাই এখন মাকে জেল থেকে বার করে আনতে মরিয়া। এখন তাঁরা যুবক।

স্বামীকে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মুর্শিদা বেগম ফুসফুসের ক্যানসারে কাবু। ছেলেরা দেখতে এলে অশক্ত দেহটা টেনে কোনও মতে আলিপুর জেলের গরাদ ধরে দাঁড়ান। হাওড়ার শ্যামপুরে জরির কারবারি ২৭ বছরের শেখ মুরসালিন আর ২৫ বছরের শেখ মৈনুদ্দিন তখন মরমে মরে যান। অনুতপ্ত দু’ভাই বলছেন, ‘‘পাড়ার কয়েক জন, বিশেষ করে জেঠুরা ভুল বুঝিয়েছিল, অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে মা-ই মেরেছে বাবাকে। আমাদেরও নাকি খতম করে দেবে। ওই বয়সে কতটুকুই বা বুঝতাম!’’ ক্যানসারগ্রস্ত মাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার জন্য দু’ভাইয়ের দৌড়ঝাঁপ চলছে কারা দফতর থেকে কলকাতা হাইকোর্টে। রাজ্যপাল, কারামন্ত্রীকে চিঠি লিখে মায়ের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা করে চলেছেন নিরন্তর।

আরও পড়ুন: ঝাঁঝরা হয়ে ফিরল ৩ ছেলে

ছেলেদের সাক্ষ্যই কাল হয়েছিল মুর্শিদার। ২০০৩-র জানুয়ারিতে খুন হন তাঁর স্বামী, শ্যামপুর বালিচাতুরি মার্কেটের দর্জি শেখ ইলিয়াস। কোনও প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু মেয়ে কোলে নিয়ে জেলে যেতে হয় মুর্শিদাকে।

মূল আসামি শেখ আলতাবুর আলির যাতায়াত ছিল ইলিয়াসদের ঘরে। দু’ভাইয়ের অভিযোগ, বাবার দোকান হাতানোর জন্যই তাঁকে খুন করে আলতাবুর। তাতে মায়ের কোনও ভূমিকাই ছিল না। ইলিয়াসকে ছুরি মেরে খুনের রাতে মুর্শিদারও দু’হাত বাঁধা ছিল। কিন্তু পড়শিরা পুলিশকে অন্য রকম বুঝিয়েছিলেন।

জেলের ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ নৃত্যনাট্যের ‘বনদেবী’ মুর্শিদাকে চেনেন বন্দিদের কাছের মানুষ শিল্পী অলকানন্দা রায়ও। ‘‘দেখা হলে ওকে একটু আদর করি! বাড়িতে গেলে একটু শান্তি পেত মেয়েটা,’’ গলা ধরে আসে অলকানন্দার। ১২ বছর পরে বন্দিনীদের সাজা মকুবের কথা ভাবতে পারে সরকার। মুমূর্ষু মুর্শিদার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ফাইলের নড়াচড়া শুরু হয়েছে বলে জেল সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Prison Sons Mother
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE