Advertisement
০৪ মে ২০২৪

তোড়ায় বাঁধা শুভেচ্ছা, উপাচার্যের বাড়ি পড়ুয়ারা

রবিবার দুপুরে সল্টলেকের একটি বাড়িতে পাঠানো একটি ফুলেল শুভেচ্ছা নয়া মাত্রা জুড়ে দিল বাংলার ছাত্র-আন্দোলনে। সুবিচারের দাবিতে যাদবপুরের কলরবে এ যেন এক নতুন স্লোগান: ‘লাঠি, লাথি বা হাতকড়া / তার বদলে ফুলের তোড়া! ’ প্রাপক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। প্রেরক ছাত্রছাত্রীরা। গাঁধীগিরির কায়দায় গোলাপের তোড়া হাতে যে পড়ুয়ারা হাজির হয়েছিলেন, তাঁরা কেউই কিন্তু যাদবপুরের ছাত্র নন।

গাঁধীগিরি। অভিজিৎ চক্রবর্তীর বাড়িতে গোলাপ ফুল দিয়ে তাঁর আরোগ্য কামনা করলেন যাদবপুর সংহতি মঞ্চের সদস্যরা। রবিবার সল্টলেকে। ছবি: শৌভিক দে

গাঁধীগিরি। অভিজিৎ চক্রবর্তীর বাড়িতে গোলাপ ফুল দিয়ে তাঁর আরোগ্য কামনা করলেন যাদবপুর সংহতি মঞ্চের সদস্যরা। রবিবার সল্টলেকে। ছবি: শৌভিক দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪৩
Share: Save:

রবিবার দুপুরে সল্টলেকের একটি বাড়িতে পাঠানো একটি ফুলেল শুভেচ্ছা নয়া মাত্রা জুড়ে দিল বাংলার ছাত্র-আন্দোলনে।

সুবিচারের দাবিতে যাদবপুরের কলরবে এ যেন এক নতুন স্লোগান: ‘লাঠি, লাথি বা হাতকড়া / তার বদলে ফুলের তোড়া! ’

প্রাপক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী।

প্রেরক ছাত্রছাত্রীরা।

গাঁধীগিরির কায়দায় গোলাপের তোড়া হাতে যে পড়ুয়ারা হাজির হয়েছিলেন, তাঁরা কেউই কিন্তু যাদবপুরের ছাত্র নন। কেউ হয়তো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক। কেউ বিধাননগর, আশুতোষ বা সুরেন্দ্রনাথ কলেজের সদ্য স্নাতক।

যাদবপুরের ছাত্র-আন্দোলনে বহিরাগতদের উপস্থিতি নিয়ে উপাচার্যের তোপকে কার্যত স্বীকৃতিই দিতে চেয়েছেন তাঁরা। এবং সেই সঙ্গে বোঝাতে চেয়েছেন, যাদবপুরের আন্দোলন আর স্রেফ যাদবপুরের ঘরোয়া বিষয় নয়! গোটা ছাত্র সমাজের প্রতিবাদী স্বরই মিশে গিয়েছে এর মধ্যে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যার গবেষক সপ্তর্ষি চৌধুরী বলছিলেন, “আজ যাদবপুর মার খেয়েছে, কাল আমিও খেতে করি! এখানে যে কোনও ছাত্রেরই এ রকম হতে পারে। বিষয়টা কী ভাবে আলাদা করে দেখব?”

কিন্তু প্রতিবাদের অস্ত্র ফুল কেন? বিধানননগর কলেজে ইংরেজিতে অনার্স পূজা মিত্র বললেন, “উনি তো অসুস্থ। আরোগ্য কামনায় ফুল ছাড়া আর কী-ই বা দেওয়া যায়!” ফুলের তোড়ায় ছিল ৪০টি গোলাপ। এই সংখ্যাটিরও বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। ‘যাদবপুর সংহতি মঞ্চ’-র নামে লেখা চিঠিতে ওই পড়ুয়ারা মনে করিয়ে দিয়েছেন, উপাচার্য পুলিশ ডেকে ৩৭ জন ছাত্র-ছাত্রীকে গ্রেফতার করিয়েছিলেন এবং তিন জন ছাত্র মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এই ৪০ জনের হয়ে ঠিক ৪০টি গোলাপই উপাচার্যকে দেওয়া হয়েছে। ফুলের সঙ্গে রয়েছে ইংরেজিতে একটি লেখা চিঠি।

তবে বাড়িতে আসা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দেখা করেননি উপাচার্য। পূজা জানিয়েছেন, এক মহিলার ডাকে তাঁরা ফুল নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠেছিলেন। কিন্তু ওই মহিলা কোলাপসিবল গেট খোলেননি। ফুল দিয়ে আরোগ্য-কামনার বিষয়টি শুনে তিনি এক বার ভিতরে কারও সঙ্গে কথা বলতে যান। ফিরে এসে বলেন, “ফুলটুল রেখে যান।”

পুলিশ ডেকে নিজেকে ঘেরাওমুক্ত করানোর পরে উপাচার্য নিজেই জানিয়েছিলেন তিনি অসুস্থ। সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে তিনি জানান, রক্তচাপ কিছুটা বেশি রয়েছে। গভীর রাতে পুলিশ ছাত্রদের নির্বিচারে পিটিয়ে তাঁকে বার করে আনার পরে উপাচার্য এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দেননি। টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে শুধু বলেছেন, “আমি ভাল আছি। সুস্থ আছি।” আর ফুলের তোড়া প্রসঙ্গে অভিজিৎবাবু বলেন, “হ্যাঁ! একটা তোড়া কেউ দিয়ে গিয়েছে। আরোগ্য কামনাও করেছে।”

যাদবপুরের এক শিক্ষিকা রিমি বি চট্টোপাধ্যায় এই গোলাপ-গাথাকে ফেসবুকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “উপাচার্য ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক হয়ে শত্রুর মতো কাজ করেছেন। ওঁকে এ ভাবেই লজ্জায় ফেলা উচিত।”

‘লাগে রহো মুন্নাভাই’ ছবির কায়দায় এমন গাঁধীগিরির নমুনা অবশ্য এ দেশে একেবারে বিরল নয়। প্রশাসনের বিবেককে জাগাতে সরকারি আমলার কাছে ফুল পাঠানো বেশ কয়েক বার হাতিয়ার হয়েছে। মুন্নাভাইয়ের ছবিতে প্রোমোটার লাকিকে শিক্ষা দিতে বৃদ্ধাশ্রম থেকে উৎখাত হওয়া বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা এমন অস্ত্র প্রয়োগ করেছিলেন। কোনও হইহল্লা না-করে স্রেফ বার বার ফুল দিয়ে প্রোমোটারকে বিব্রত করা হয়। এ যাত্রায়ও উপাচার্যকে লেখা চিঠিতে ছাত্রছাত্রীরা আশ্বাস দিয়েছেন তাঁকে ব্যারিকেডে ঘেরা হবে না বা তাঁর বাড়ির সামনে কেউ স্লোগানও দেবে না। সকলের একমাত্র প্রত্যাশা, উপাচার্য সুস্থ হয়ে উঠুন, তাঁর বিবেক জাগ্রত হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE