Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

না বদলাল হ্যাঁ-তে, পুরনো গড়েই সূর্য

সোমবারের সকাল। সিপিএম রাজ্য কমিটির বৈঠক তখনও শুরু হয়নি। তবে নারায়ণগড়ে দলের লোকাল কমিটির কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের ভিড়। এক প্রস্থ বৈঠকও হল। আর তার ফাঁকেই জোনাল কমিটির সম্পাদক মদন বসু মুচকি হেসে বললেন, ‘‘আমার কাছে যতটুকু খবর সূর্যবাবুই প্রার্থী হচ্ছেন। মিলিয়ে নেবেন।’’

রণ-দামামা। নারায়ণগড়ে সূর্য মিশ্র। সঙ্গে তরুণ রায়। ফাইল চিত্র।

রণ-দামামা। নারায়ণগড়ে সূর্য মিশ্র। সঙ্গে তরুণ রায়। ফাইল চিত্র।

দেবমাল্য বাগচী
নারায়ণগড় শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৬ ০০:১০
Share: Save:

সোমবারের সকাল। সিপিএম রাজ্য কমিটির বৈঠক তখনও শুরু হয়নি। তবে নারায়ণগড়ে দলের লোকাল কমিটির কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের ভিড়। এক প্রস্থ বৈঠকও হল। আর তার ফাঁকেই জোনাল কমিটির সম্পাদক মদন বসু মুচকি হেসে বললেন, ‘‘আমার কাছে যতটুকু খবর সূর্যবাবুই প্রার্থী হচ্ছেন। মিলিয়ে নেবেন।’’

কথাটা মিলতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হল। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ আলিমুদ্দিনে ঘোষণা হল টানা পাঁচ বার যে কেন্দ্র থেকে জিতেছেন, সেই নারায়ণগড় থেকেই লড়বেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তা জেনে খুশি দলের জেলা কমিটির সদস্য ভাস্কর দত্ত-ও। সূর্যবাবু না দাঁড়ালে প্রার্থী হিসেবে তাঁর নামই প্রস্তাব করেছিল জেলা সিপিএম। ভাস্করবাবু বলছেন, ‘‘সূর্যবাবু প্রার্থী হওয়ায় তৃণমূল কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়বে। জয় নিয়ে সংশয় নেই।” আর সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, ‘‘সূর্যকান্ত মিশ্র প্রার্থী হওয়ায় লড়াইটা আরও সহজ হয়ে গেল। তৃণমূলের একটি অংশ আমাদের প্রার্থীকে সমর্থনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।’’

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম বরাবরই জানিয়েছে, নারায়ণগড়ে প্রার্থী হিসেবে তাদের প্রথম পছন্দ সূর্যবাবু। কিন্তু সূর্যবাবু রাজি ছিলেন না। একে তো দলের রাজ্য সম্পাদকের ভোট-ময়দানে নামার দৃষ্টান্ত সিপিএমে নেই। তার উপর ২০১১ সালের ভোটে প্রার্থী হয়েছেন, এমন অনেককেই এ বার আর টিকিট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিপিএম। ক্রমে অবস্থা পাল্টায়। পাঁচ বছর আগে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের যে সব মুখ ভোটের ময়দানে ছিল, তাদের বেশিরভাগকেই প্রার্থী না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কাকে সামনে রেখে ভোটে লড়াই হবে, তা নিয়ে সঙ্কটে পড়ে আলিমুদ্দিন। এই পরিস্থিতিতে ভোটে দাঁড়ানোর জন্য প্রবল চাপ আসে সূর্যবাবুর উপরে। যাদবপুর কেন্দ্র থেকে তাঁকে দাঁড় করানোর ভাবনাচিন্তাও হয়। কিন্তু সিপিএম সূত্রের খবর, সূর্যবাবু দলের অন্দরে সাফ জানিয়ে দেন, একান্তই প্রার্থী হতে হলে তিনি কেন্দ্র বদল করতে নারাজ। ‘চ্যালেঞ্জ’ নিয়ে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্বও আলিমুদ্দিনকে জানিয়ে দেন, এখন হয়তো তাঁদের কথা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। কিন্তু ভোটে তাঁরা নারায়ণগড় আসন জিতিয়ে এনে দেখাবেন! এরপরে ‘না’ থেকে ‘হ্যাঁ’ হতে আর বিশেষ সমস্যা হয়নি।

কিন্তু নারায়ণগড় থেকে সূর্যবাবুর ষষ্ঠ বার জয় কি আদৌ সহজ হবে?

পরিসংখ্যান কিন্তু তা বলছে না। গত বিধানসভা ভোটে গড় ধরে রাখলেও সূর্যবাবুর ভোটব্যাঙ্কে ধস নেমেছিল। বরাবর বিশাল ব্যবধানে জেতা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জিতেছিলেন মাত্র হাজার সাতেক ভোটে। তারপর থেকে প্রতিটি ভোটেই নারায়ণগড়ে সিপিএমের রক্তক্ষরণ অব্যাহত। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে পশ্চিম মেদিনীপুরের এই কেন্দ্রে সিপিএম পিছিয়ে প্রায় ২৬ হাজার ভোটে। কিন্তু সিপিএম সূত্রের খবর, এ ক্ষেত্রে সূর্যবাবুর যুক্তি হল তিনি যদি হারের ভয়ে কেন্দ্র বদল করেন, তাহলে তা নিয়ে প্রচারের সুযোগ পেয়ে যাবে তৃণমূল। সেটা হতে দেওয়া যায় না।

এ কথা মানছেন জেলা সিপিএমের নেতারাও। একই সঙ্গে তাঁরা জানাচ্ছেন, সূর্যবাবুকে প্রার্থী হিসেবে চাওয়ার এটাই একমাত্র কারণ নয়। জিতবেন বলেই সূর্যবাবুকে তাঁরা নারায়ণগড়ে চেয়েছেন। কিন্তু জয় আসবে কোন অঙ্কে? এ ক্ষেত্রে মূলত দু’টি কারণের ব্যাখ্যা দিচ্ছে জেলা সিপিএম। প্রথমত, সূর্যবাবু গত পাঁচ বছরে সিপিএমের ‘মুখ’ হিসেবেই উঠে এসেছেন। তাঁর নেতৃত্বে জাঠা, পদযাত্রা কর্মসূচিতে ভাল সাড়াও মিলেছে। ফলে, লড়াকু হিসেবে এই প্রার্থী ভোটারদের নজর কাড়বেন বলেই আশা দলের। তবে দ্বিতীয় কারণটিই হল মোক্ষম। আর সেখানে জড়িয়ে আর এক সূর্য।

গত বিধানসভা ভোটে সূর্যকান্ত মিশ্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ভোটে হেরেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী সূর্য অট্ট। এ বার আর তাঁকে প্রার্থী করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নারায়ণগড়ে টিকিট পেয়েছেন তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ। এই পরিস্থিতিতে শাসক দলের কোন্দল অনিবার্য। এখনই সূর্য অট্ট গোষ্ঠীর লোকজন প্রদ্যোৎবাবুর প্রচারে তেমন খাটছেন না বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। সে কথা না মানলেও তৃণমূলের সূর্য বলছেন, ‘‘সূর্য মিশ্র দাঁড়ালে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।’’ সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের প্রতিপক্ষ প্রদ্যোৎবাবু যদিও বলছেন, ‘‘লড়াই এতটুকু কঠিন হবে না। আমরা নিশ্চিত মানুষ শান্তি আর উন্নয়নের পক্ষে ভোট দেবেন।

সূর্যবাবুকে প্রার্থী করার কঠিন লড়াইয়ে জয় এসেছে। তাই তাঁকে জেতানোর লড়াই যতই কঠিন হোক না কেন আশা ছাড়ছে না নারায়ণগড়ের সিপিএম, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম। বরাবরের এই ‘লাল-গড়ে’ ফের সূর্যোদয়ের আশাতেই ঝাঁপাচ্ছেন কমরেডরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE