অন্য মেজাজে। নারায়ণগড়ে সূর্যকান্ত মিশ্র। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
উপলক্ষ ছিল হুল দিবসের অনুষ্ঠান। সেখানেও আগাগোড়া নানা প্রশ্নে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। অভিযোগ করলেন, বর্তমান সরকারের আমলে আদিবাসী মানুষজন বঞ্চিত হচ্ছেন।
মঙ্গলবার নারায়ণগড়ের বেলদা স্টেডিয়াম ময়দানে হুল দিবসের ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী অধিকার মঞ্চ ও সারা ভারত কৃষক সভা। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন সূর্যবাবু। এ ছাড়াও ছিলেন আদিবাসী অধিকার রক্ষা মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে, সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়, জোনাল সম্পাদক মদন বসু প্রমুখ। অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন কী ভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন সেই ছবি তুলে ধরে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেন, “আমাদের আমলে বনাঞ্চলের গাছ কেটে নেওয়ার ২৫ শতাংশ টাকা বনরক্ষা কমিটি পেতেন। এখন সে সব তুলে দেওয়া হচ্ছে। এখন তৃণমূল সরকার ও তাদের দলের লোকেরা গাছ কেটে কোটি কোটি টাকা লুঠ করছে।’’ শুধু তৃণমূল নয়, এ দিন কেন্দ্রের বিজেপিকে দুষেও এ দিন সূর্যবাবু বলেন, “কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে ভূমি সংস্কার আইন এনেছে সেখানেও আদিবাসীদের অধিকার থাকবে না।’’
রাজ্য জুড়ে সন্ত্রাসের অভিযোগেও সরব হন সূর্যবাবু। একই সঙ্গে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তাঁর বক্তব্য, “ওরা (তৃণমূল) বিভিন্ন জায়গায় বোমা ফাটাচ্ছে। তবে এ ভাবে আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করবেন না। সাহস যদি থাকে থাকে তবে থানা বন্ধ করে দিন। পুলিশকে ঘরে বসিয়ে রাখুন। তারপরে ময়দানের লড়াইয়ে বুঝিয়ে দেব আপনাদের তাকত কত, আর মানুষের তাকত কত।’’
১৮৫৫ সালে সাঁওতাল বিদ্রোহের শহিদ সিদো-কানহোর স্মরণে প্রতি বছর এই দিনটি পালন বামেরা। এই উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও লোক সংস্কৃতির অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। এ দিন রাজ্যের বিরোধী দলনেতার খাসতালুক নারায়ণগড়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। বেলদা কালীমন্দির থেকে ধামসা-মাদলের ছন্দে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা পৌঁছয় স্টেডিয়াম ময়দানে। সেখানকার সভায় সূর্যবাবু আরও বলেন, “কৃষক আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই আমরা বামফ্রন্ট সরকার গড়তে পেরেছিলাম। আজ সেই লড়াই আক্রান্ত হয়েছে। মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।’’
এ দিন মূলত আদিবাসীদের বঞ্চনা নিয়েই সরব হন সূর্যবাবু। আদিবাসী ছাত্রছাত্রীরা হস্টেলের ভাতা, বয়স্করা বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি। সূর্যবাবুর আরও কটাক্ষ, “এই সরকারের আমলে আদিবাসী সংস্কৃতি পাত্তা পাচ্ছে না। কারণ এখন পশ্চিমবঙ্গে হিরো-হিরোইন-টলিউডের সংস্কৃতিই একমাত্র সংস্কৃতি। আমাদের লোক সংস্কৃতি তুলে দেওয়া হচ্ছে। এখন হিরোদের নাচা-গানা হচ্ছে। তাই হুল উৎসব দিয়ে এর প্রতিবাদ আমাদের চলছে।’’
সোমবার নারায়ণগড়ের কুশবসান এলাকায় তৃণমূল বোমাবাজি করেছে করে বলে অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। হুল দিবসে আসতে চাওয়া মানুষকে ভয় দেখাতেই সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এ প্রসঙ্গে নারায়ণগড়ের বিধায়কের বক্তব্য, “যেখানে যত জোরে বোমা ফেটেছে, সেখান থেকে হাজার হাজার মানুষ এখানে এসেছে।’’ তাই এ দিন কারও নাম উচ্চারণ না করে স্যোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে রাজ্যের এক মন্ত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতার প্রতিক্রিয়া, “কালবৈশাখী চলে গিয়েছে। এখন লালবৈশাখী আসছে। তৃণমূলকে খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দিতে মানুষ লড়াইয়ের ময়দানে আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy