Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চা বাগানে মৃত্যু-মিছিল, বিক্ষোভের পথে শ্রমিক সংগঠন

বন্ধ চা বাগানে ‘অনাহার’, অপুষ্টি ও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু-মিছিল অব্যাহত। তা সত্ত্বেও সরকারের কোনও হেলদোল নেই। উল্টে, সরকার অনাহারে মৃত্যুর অভিযোগ খারিজ করতেই ব্যস্ত। তাই, শুধু ডুয়ার্স ও তরাই এলাকায় আন্দোলনকে সীমাবদ্ধ না রেখে এ বার কলকাতাতেও আন্দোলন করার কথা ভাবছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। ডানকানস‌্ গোষ্ঠীর বন্ধ চা বাগানে সবচেযে বেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাই ৮ ডিসেম্বর কলকাতায় ডানকানস্‌-এর দফতরের সামনে সিটু, আইএনটিইউসি, এআইসিসিটিইউ-সহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন বিক্ষোভ দেখাবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৫ ২১:০১
Share: Save:

বন্ধ চা বাগানে ‘অনাহার’, অপুষ্টি ও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু-মিছিল অব্যাহত। তা সত্ত্বেও সরকারের কোনও হেলদোল নেই। উল্টে, সরকার অনাহারে মৃত্যুর অভিযোগ খারিজ করতেই ব্যস্ত। তাই, শুধু ডুয়ার্স ও তরাই এলাকায় আন্দোলনকে সীমাবদ্ধ না রেখে এ বার কলকাতাতেও আন্দোলন করার কথা ভাবছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। ডানকানস‌্ গোষ্ঠীর বন্ধ চা বাগানে সবচেযে বেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাই ৮ ডিসেম্বর কলকাতায় ডানকানস্‌-এর দফতরের সামনে সিটু, আইএনটিইউসি, এআইসিসিটিইউ-সহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন বিক্ষোভ দেখাবে।

গত সাড়ে চার বছরে বন্ধ ও রুগ্‌ণ চা বাগানে দু’শোরও বেশি মানুষের অনাহারে এবং বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের অভিযোগ। এআইসিসিটিইউ-এর রাজ্য সম্পাদক বাসুদেব বসুর অভিযোগ, ‘‘চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত অনাহারে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে শুধু ডানকানস্-এর বাগরাকোট চা বাগানেই। সরকার কিছুই করছে না।’’ গত মঙ্গলবার পাণিঘাটা চা বাগানে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক মাসে ডানকানস্-এরই নাগেশ্বরী, কিলিকোট, হান্তাপাড়া, ভুঞ্চিপাড়া, লঙ্কাপাড়া, ডিমডিমা চা বাগানেও অনাহার এবং বিনা চিকিৎসায় একাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে শ্রমিক সংগঠনগুলি সূত্রে জানা গিয়েছে। একই খবর পাওয়া গেছে মধু, রেডব্যাঙ্ক, সুরেন্দ্রনগর চা বাগান থেকেও। পরিস্থিতি দ্রুত হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন উত্তরবঙ্গের বনবাসী-জনজাতি আন্দোলনের নেতা সৌমিত্র ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘সরকার অনাহারের কথা না-ই মানতে পারে। আমাদের দাবি, তর্কে না গিয়ে সরকার বরং বন্ধ ও রুগ্‌ণ বাগানের মানুষের খাবার আর চিকিৎসার বন্দোবস্ত করুক।’’ বেশির ভাগ বাগানের হাসপাতালও বন্ধ। বাগানের শ্রমিক লাইনে কোনও ডাক্তার যায় না। ওষুধ নেই। বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে মানুষ। খুব হইচই হলে পরিদর্শক দল পাঠায় সরকার। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা দেখা যায় না বলে অভিযোগ করেছেন সৌমিত্রবাবু।

রাজ্য সরকার ‘অনাহারে’ মৃত্যুর তত্ত্ব মানতে নারাজ। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, ‘‘যে সব বন্ধ বাগানের অবস্থা খুবই খারাপ সেই বাগানগুলিতে ফাউলিয়া স্কিমে টাকা দেওয়া হয়। অনাহারে থাকার কোনও প্রশ্নই নেই।’’ চিকিৎসার জন্য জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার থেকে বিভিন্ন বাগানে মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিট পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হচ্ছে বলেও মন্ত্রী আশ্বস্ত করে‌ছেন। মন্ত্রীর আশ্বাসে ভরসা নেই শ্রমিক নেতাদের। সিটু নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রী অনাদি সাহু এবং আইএনটিইউসি নেতা রমেন পাণ্ডে জানিয়েছেন, শুধু বিক্ষোভেই সীমাবদ্ধ না রেখে আরও বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।

ডুয়ার্স এবং তরাইয়ে ২৩টি চা বাগান বন্ধ। এ ছাড়াও শতাধিক বাগান রুগ্‌ণ। ২০০৩-এর পর ২০১৩-’১৪ সালে সবচেয়ে বেশি চা বাগান বন্ধ হয়েছে। ডুয়ার্সের পাঁচটা বড় বাগান বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া আংশিক এবং মরসুমি বন্ধের তালিকাও দীর্ঘ হয়েছে বলে সৌমিত্রবাবু জানিয়েছেন। বন্ধ এবং রুগ্‌ণ চা বাগান নিয়ে ডুয়ার্সে আন্দোলন করলেও তাতে সুফল তেমন পাওয়া যায়নি। ড়ুয়ার্স এবং তরাই-এর পাশাপাশি কলকাতাতেও ছাত্র-যুব সংগঠন-সহ বিভিন্ন গণ-সংগঠনকে নিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে সৌমিত্রবাবু জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE