Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘সুপারি’ দিয়ে স্ত্রীকে খুন, ধৃত শিক্ষক

কেতুগ্রামের গোন্নাসোরান্দির বাসিন্দা উজ্জ্বল ৭ বছর ধরে কাটোয়ায় আছেন। ইতিহাস পড়ান দাঁইহাটের চরপাতাইহাট হাইস্কুলে। ২০০৯-এ বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের মেয়ে মহুয়ার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।

মহুয়াদেবী ও উজ্জ্বলভাস্কর ঘোষ

মহুয়াদেবী ও উজ্জ্বলভাস্কর ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান ও কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৭ ০৫:০৩
Share: Save:

‘সুপারি’ দিয়ে স্ত্রীকে খুনের ছক কষা হয়েছিল জেলে বসে। বধূ নির্যাতনের মামলায় জেল খাটছিলেন শিক্ষক স্বামী। কাটোয়ার গৃহবধূ মহুয়া ঘোষ (২৮) খুনের তদন্তে নেমে পুলিশের ধারণা, তিন বছর আগের সেই ছকই এত দিনে ‘সফল’ হয়েছে। গত ১৮ জুলাই রাতে সাড়ে ছ’বছরের ছেলের সামনে খুন হন মহুয়া। পুলিশ তাঁর স্বামী উজ্জ্বলভাস্কর ঘোষ ও শাশুড়ি ছবিরানি ঘোষকে ধরেছে।

কেতুগ্রামের গোন্নাসোরান্দির বাসিন্দা উজ্জ্বল ৭ বছর ধরে কাটোয়ায় আছেন। ইতিহাস পড়ান দাঁইহাটের চরপাতাইহাট হাইস্কুলে। ২০০৯-এ বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের মেয়ে মহুয়ার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, স্ত্রী-কে সন্দেহ করতেন উজ্জ্বল। আবার মহুয়ার বাপের বাড়ির দাবি, উজ্জ্বলের বিবাহবর্হিভূত সম্পর্কের জেরেই অশান্তি ছিল দাম্পত্যে।

আরও পড়ুন: মহুয়া খুনে অভিযুক্ত স্বামীর ফাঁসি চান পড়শিরা

জামাইয়ের শাস্তি চাইছেন মৃতার মা।

পুলিশের দাবি, বধূ নির্যাতনের মামলায় ২০১৪ সালে জেল হয় উজ্জ্বলের। সেখানেই আলাপ ‘সুপারি কিলারে’র সঙ্গে। ওই শিক্ষক পুলিশকে জানিয়েছেন, স্ত্রীকে খুন করতে কাটোয়ার ওই দুষ্কৃতীর সাহায্য চান তিনি। ৯০ হাজার টাকায় রফা হয়। ১৩ দিন জেল খেটে বেরোন উজ্জ্বল। কয়েক দিনে ছাড়া পায় ওই দুষ্কৃতীও। খুনের দিনও ঠিক হয়। কিন্তু তার আগেই অন্য মামলায় ওই দুষ্কৃতী ধরা পড়ে। সম্প্রতি ছাড়া পেয়ে ফের সে যোগাযোগ করে উজ্জ্বলের সঙ্গে। এ বার দর চায় তিন লক্ষ। রাজি হয়ে ‘অগ্রিম’ আরও এক লক্ষ টাকা দেন ওই শিক্ষক।

১৮ জুলাই, মঙ্গলবার আবাসনপাড়ার বাড়িতে মহুয়ার পাশেই ঘুমোচ্ছিল ছেলে ইন্দ্রজিৎ। সে পুলিশকে বলেছে, সে দেখেছে, দু’টো লোক মায়ের হাত চেপে গলায় ওড়না জড়িয়ে টান দিচ্ছিল। মায়ের মুখে ‘চিক’ (সেলোফেন কাগজ) লাগানো ছিল। ‘বাবা’ তাকে পাশের ঘরে পাঠিয়ে দেয়।

শোকার্ত পরিজনেরা। শনিবার।

পড়শিদের দাবি, শুক্রবার ছবিরানি ফোন করে তাঁদের এক জনকে বলেন, ‘বৌমার খোঁজ মিলছে না!’ খবর নিতে জনা ছয় পড়শি ঘোষবাড়িতে যান। কিন্তু উজ্জ্বলের কথাবার্তায় সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশের দাবি, মঙ্গলবার রাতে খুনের পরে উজ্জ্বলের মোটরবাইকেই মহুয়ার দেহ নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। একটি দিঘির পাশের ঝোপে বস্তাবন্দি দেহ ফেলে দেয় তারা। মুখটি অ্যাসিড ঢেলে বিকৃত করে দেয়। পরদিন দেহ উদ্ধার হলেও পরিচয় জানা যায়নি। শুক্রবার জেরায় উজ্জ্বল মহুয়াকে খুনের কথা মানেন বলে দাবি পুলিশের। এ দিন মহুয়ার দেহ শনাক্ত করেন তাঁর বাবা।

ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE