Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
কলকাতায় দাবি ম্যাথুর

ওঁদের নজর ছিল শুধু নারদের টাকায়

দিদির দল বলেছিল, নারদের টাকা এসেছিল দুবাই থেকে। নারদ-এর মালিক ম্যাথু স্যামুয়েল বললেন, ‘‘কী করে জানলেন উনি? তৃণমূলের যে সাংসদ, মন্ত্রী, বিধায়করা আমার থেকে টাকা নিয়েছিলেন, তাঁরা তো পরিচয়টাই ভালো করে জানতে চাননি। আমি পাক গুপ্তচর সংস্থার লোকও তো হতে পারতাম। কিংবা আইএস জঙ্গি। কিন্তু সেটুকু খোঁজও ওঁরা নিয়েছিলেন কি? মিনিট খানেকের আলাপ। তাতেই নির্দ্বিধায় টাকা নিয়ে নেন ওঁরা।’’

সাংবাদিক বৈঠকে ম্যাথু স্যামুয়েল। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

সাংবাদিক বৈঠকে ম্যাথু স্যামুয়েল। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫২
Share: Save:

দিদির দল বলেছিল, নারদের টাকা এসেছিল দুবাই থেকে।

নারদ-এর মালিক ম্যাথু স্যামুয়েল বললেন, ‘‘কী করে জানলেন উনি? তৃণমূলের যে সাংসদ, মন্ত্রী, বিধায়করা আমার থেকে টাকা নিয়েছিলেন, তাঁরা তো পরিচয়টাই ভালো করে জানতে চাননি। আমি পাক গুপ্তচর সংস্থার লোকও তো হতে পারতাম। কিংবা আইএস জঙ্গি। কিন্তু সেটুকু খোঁজও ওঁরা নিয়েছিলেন কি? মিনিট খানেকের আলাপ। তাতেই নির্দ্বিধায় টাকা নিয়ে নেন ওঁরা।’’

শুক্রবার কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠকে এ সব উগরে দিয়ে ম্যাথু অভিযোগ করেন— ববি-শোভন-কাকলিদের নজর ছিল শুধু তাঁর পকেটের দিকে। কেউ অল্পে সন্তুষ্ট ছিলেন না, কেউ যা পেয়েছেন তাতেই খুশি ছিলেন, আর কেউ টাকার বিনিময়ে বিকিয়ে যেতে মিনিটের কাঁটা পুরোটা ঘোরার সময়ও দেননি। টাকা নিয়ে খোলা আশ্বাসে বলেছেন, যা সাহায্য চাই করব। কলকাতায় বসে নারদ নিউজের এই কর্তা এ-ও জানিয়ে দিলেন, স্টিং কাণ্ডের সত্যতা প্রমাণের জন্য আদালত ও তদন্ত এজেন্সির সঙ্গে সব রকম সাহায্য করতে তিনি প্রস্তুত।

নারদ কাণ্ড তৃণমূলের অন্দরে যে আতঙ্কে ঢুকিয়ে দিয়েছে, তার বহিঃপ্রকাশ রোজকার ঘটনা। এ দিনও বালি ও সালকিয়ার সভায় হুল কাণ্ডের সত্যতা স্বীকার করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বড় সংসারে দু’এক জনের বেগতিক হতেই পারে। তাতে সংসারটা খারাপ হয়ে যায় না। ভোটের পর তিনি সব ‘কন্ট্রোল’ করে নেবেন। কিন্তু খোলা মঞ্চে এই বক্তৃতার পাশাপাশি নারদের মুখ বন্ধ করার একটা ‘ছেলেমানুষি’ চেষ্টাও এ দিন ছিল তৃণমূলের তরফে। ম্যাথুর সাংবাদিক বৈঠক যাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়, সে জন্য রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল গুপ্তকে চিঠি দিয়েছিল তৃণমূল। তাঁদের বক্তব্য ছিল, বিষয়টি যখন সংসদের এথিক্স কমিটির কাছে গিয়েছে ও আদালতে বিচারাধীন, তখন কমিশনের উচিত ম্যাথুর সাংবাদিক বৈঠক আটকে দেওয়া। কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশে এক জন মানুষের বাক স্বাধীনতায় লাগাম কি পরাবে কমিশন? সুনীলবাবু তাই ওই চিঠি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দিয়ে তাঁর দায়িত্ব সেরেছেন! ফলে স্টিং অপারেশন নিয়ে মন উজাড় করে বলেন ম্যাথু। ফলে পঞ্চম দফার ভোট গ্রহণের আগে জল আরও ঘোলা হল। কারণ, নারদ ঘুষ কাণ্ডে যাঁদের টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে শুভেন্দু অধিকারী, শোভন চট্টোপাধ্যায়,
সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র, ইকবাল আহমেদ-এর কেন্দ্রে ভোট এখনও বাকি।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, ম্যাথুকে কলাকাতায় ডেকে এনে সাংবাদিক বৈঠকের সমস্ত আয়োজন করেছেন একদা মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ অমিতাভ মজুমদার। এঁকে সামনে রেখেই মকুল নতুন দল গড়ার কথা ভাবছিলেন। অমিতাভ এ দিন বলেন, ‘‘ম্যাথুর করা স্টিং-এ চার লক্ষ টাকা নিতে দেখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য অবধেশ কুমারকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার পরে দল থেকে তাড়িয়েও দেন। কিন্তু আমাদের এখানে কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হল না! উল্টে নানা কথা বলা হচ্ছে। তাই ম্যাথুর মুখ থেকে সত্যটা শুনতেই আমরা ওঁকে কলকাতায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।’’ ‘বেঙ্গল স্টাডি সার্কেল’ নামে একটি সংগঠনের তরফে অমিতাভবাবু উত্তরীয় পরিয়ে দেন ম্যাথুকে।

তার পরেই ম্যাথু নারদ কাণ্ডের নেপথ্য কাহিনী বর্ণনা শুরু করেন। নারদ কর্তা জানান, ইকবাল আহমেদের (তৃণমূল বিধায়ক) মাধ্যমে সহজেই তৃণমূলের সাংসদ ও মন্ত্রীদের কাছে তিনি পৌঁছেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি একটি সংস্থার নাম করে টাকা দিতে চাওয়ার পর কেউ কোনও খোঁজ-খবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলেন না! ওঁদের নজর ছিল শুধু আমার পকেটে! এটাই এই কাণ্ডের সব থেকে দুঃখজনক অধ্যায়।’’ ম্যাথু এ-ও জানান, প্রত্যেককে তিনি ৫ লাখ টাকা করে দিয়েছিলেন। এক জনকে দিয়েছিলেন ৪ লাখ। তিনি পরে বাকি ১ লাখ টাকাও চেয়ে নেন।

ম্যাথুর স্পষ্ট কথা, ‘‘আমি ঘুষ দিয়েছি। তৃণমূলের নেতারা তা নিয়েছেন। এর মধ্যে আর কিছু নেই। সাংবাদিক হিসাবেই আমি কাজ করেছি। তার ছবিও তুলে রেখেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

samuel mathew narada
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE