মাস পাঁচেক আগের কথা। গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের দুই গোষ্ঠীর কোন্দল তখন চরমে। বিরোধ মেটাতে খিদিরপুরের তৃণমূল কার্যালয়ে আসতে হয়েছিল রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীকে। সেই সভাতেই সবার সামনে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী এক গোষ্ঠীর নেতার কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন, ‘‘আমি একে চিনি। ও খুব ভাল ছেলে।’’
মন্ত্রীর প্রশংসা পেয়ে এলাকার ছাত্র রাজনীতির মাথা হয়ে ওঠা সেই ‘ভাল ছেলে’ আসফাক আনসারির বিরুদ্ধেই দেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বহু গোপন তথ্য পাকিস্তানে পাচারের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পাক গুপ্তচর সন্দেহে তাকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। শুধু আসফাক নয়, পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে তার বাবা তথা এলাকার তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের অন্যতম নেতা ইরশাদ এবং মামা মহম্মদ জাহাঙ্গিরকেও। আর এই গ্রেফতারের পর থেকেই তৃণমূলের ছোট-বড় সব নেতা এই পরিবারটির সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন! সে দিন আসফাকের কাঁধে হাত রেখে যে মন্ত্রী তাকে ‘ভাল ছেলে’র তকমা দিয়েছিলেন, তিনি এখন এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্যই করতে চাইছেন না!
একই ভাবে আসফাককে নিজের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে উঠে পড়ে লেগেছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রও। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একাংশ জানিয়েছেন, আসফাক হরিমোহন ঘোষ কলেজে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অশোকবাবুর যথেষ্ট কাছের লোক বলেই পরিচিত ছিল। কিন্তু আসফাক গ্রেফতার হওয়ার পরেই দেখা গেল, তাকে রাতারাতি দল থেকে বহিষ্কৃত বলে দেগে দিয়েছেন অশোকবাবু! শুধু অশোকবাবু নন, রবিবার আসফাককে ‘বহিষ্কৃত’ বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন ওই কলেজের পরিচালন কমিটির সহ-সভাপতি তথা ১৫ নম্বর বরো চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীলও। কিন্তু এই ‘বহিষ্কার’ নিয়েই এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার তৃণমূল নেতাদের একাংশ। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘দলের মধ্যে থেকেও আমরা কখনও জানতে পারিনি যে আসফাককে বহিষ্কার করা হয়েছে! ছাত্র তৃণমূলের নেতা হিসেবে রোজই কলেজে যেত আসফাক। বসত ছাত্র সংসদের ঘরেই। এখন দায়ে পড়ে বলা হচ্ছে দু’মাস আগে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে!’’
দলের একাংশের এই অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করলে অশোকবাবু বলেন, ‘‘দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েও তো ও কলেজে আসতেই পারে। কলেজের ছাত্র কলেজে আসবে না!’’ অর্থাৎ অশোকবাবুর বক্তব্য, কলেজে আসফাক আসত পড়াশোনা করতে। কিন্তু এ দিন কলেজের অধ্যক্ষ নির্মল আচার্য জানান, গত অক্টোবর মাসেই আসফাক চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল, বাবা অসুস্থ বলে সে আর পড়াশোনা করতে পারবে না। নির্মলবাবু বলেন, ‘‘আমি ওর চিঠি গ্রহণ করি। তৃতীয় বর্ষে একদিনও ক্লাস করেনি ছেলেটি।’’ কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক ছোট মাপের নেতার কথায়, ‘‘ইউনিয়নের ঘরে বসেই দাদাগিরি চালাত আসফাক! কোনও দিন ক্লাস করত না!’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, এই ‘দাদাগিরি’ করেই হরিমোহন ঘোষ কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মাথা হয়ে উঠেছিল আসফাক। মাস দশেক আগে ওই কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আসফাক এবং স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা ইস্তাক আনসারি ওরফে বল্লার দাপটে বিরোধী দলের কেউ মনোনয়নপত্রই জমা দিতে পারেননি! বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে প্রথমে ওই ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হন বল্লা। কিন্তু আসফাকের দাপটে বেশি দিন সেই পদে থাকতে পারেননি তিনি। রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর কাছের লোক এবং ‘ভাল ছেলে’র তকমা পেয়ে মাস পাঁচেক আগে আসফাকই হয়ে ওঠে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। এলাকার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘রাজ্যের এক বড় মন্ত্রী কাঁধে হাত রেখে ‘ভাল ছেলে’র সার্টিফিকেট দিচ্ছে, এটা দেখা পরেও আসফাকের বিরোধিতা করবে, এমন সাহস কার আছে! এর পর থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে ও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy