লোকসভা ভোটের সময়ে বিধায়কেরা দায়িত্ব নিয়েছিলেন। বিধানসভায় এখন প্রতিদানের পালা!
নিজের নিজের এলাকার প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে চষে বেড়াতে হবে তাঁদের। এলাকা ধরে ধরে কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে দলের প্রার্থীদের জন্য প্রচারে সামিল করার প্রধান দায়িত্ব নিতে হবে তাঁদেরই। প্রয়োজনে নিজের কেন্দ্রের বাইরেও ভোট-প্রচারে সামিল হতে হবে। আসন্ন বিধানসভা ভোট-বৈতরণী পেরোতে দলীয় সাংসদদের এ ভাবেই দায়িত্ব সঁপে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে ৭টি করে বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। সেই হিসেবে তৃণমূলের লোকসভার ৩৪ জন সাংসদের আওতায় ২৩৮টি বিধানসভা কেন্দ্র পড়ছে। ফলে, নিজেদের এলাকার বাইরেও ভোটে দলীয় প্রার্থীদের নিষ্কণ্টক করার চেষ্টা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সাংসদদের। লোকসভা নির্বাচনে নিজের নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে দলের প্রার্থীকে ‘লিড’ দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বিধায়কেরা। এখন তাঁরাই প্রার্থী। তাই সাংসদদের এ বার পাল্টা দায়িত্ব। এবং বাম-কংগ্রেস সমঝোতার আবহে সেই দায়িত্ব এ বার কিঞ্চিৎ বেশিই!
সাংসদদের পাশাপাশি প্রতি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পুরসভাগুলির কাউন্সিলরদের দায়িত্বও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি দলের কলকাতা জেলা নিয়ে কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ওয়ার্ডপিছু দলের ভোট বাড়ানোর দায়িত্ব কাউন্সিলরদের নিতে হবে। একটি ওয়ার্ডও বিরোধীদের ছাড়া যাবে না! লোকসভা ভোটে কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের বিধানসভা এলাকা ভবানীপুরে বিজেপি-র কাছে পিছিয়ে পড়েছিল তৃণমূল। সেই ইতিহাস মাথায় রেখেই কাউন্সিলরদের আরও বেশি তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় নেতাদের ব্যাখ্যা। এর জন্য প্রতিটি বিধানসভার নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার বার্তাও বারবার মমতা জেলাভিত্তিক বৈঠকগুলিতে দিয়েছেন।
শাসক দলের সাংসদেরা এখন মূলত তিন ভাবে দায়িত্ব পালনে নেমেছেন। প্রথমত, বেশির ভাগ সাংসদ তাঁর এলকার মধ্যে প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্র ধরে কর্মিসভা করছেন। দ্বিতীয়ত, সাংসদদের মধ্যে যাঁরা আবার অভিজ্ঞ রাজনীতিক, তাঁরা দিল্লিতেও আসরে নেমেছেন বাম-কংগ্রেস বোঝাপড়ায় বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য! সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো কেউ সুযোগ পেলেই সনিয়া গাঁধীর কুশল জিজ্ঞাসা করতে চলে যাচ্ছেন, কেউ আবার কমল নাথের দ্বারস্থ হচ্ছেন। কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ভাল, এই বার্তা বাজারে ছড়িয়ে দিয়ে বাংলায় কংগ্রেসের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে সচেষ্ট শাসক দলের এই সাংসদেরা।
তৃতীয়ত, এর বাইরেও আছেন দেব, মুনমুন সেন, সন্ধ্যা রায়, সুগত বসুর মতো সাংসদেরা। যাঁদের কাছ থেকে প্রখর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্তব্য আশা করতে পারছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটে এঁদের বৈতরণী পার করেছিলেন দলের স্থানীয় বিধায়ক ও নেতারাই। এখন এই সাংসদদের তৃণমূল কাজে লাগাতে চাইছে যথাসম্ভব প্রচারে নামিয়ে। পাশাপাশিই তাঁদের এলাকায় অন্য সাংসদদের বাড়তি দায়িত্বও নিতে বলা হচ্ছে।
স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী প্রতি জেলাতেই প্রচারে যাবেন। সেই সঙ্গেই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী (সাংসদও বটে), মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা সুবক্তা বিধায়ক-সাংসদদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রচার ও সংগঠন দেখভালে জোর দিতে হবে। তৃণমূল যুব সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন সাতগাছিয়া বা রায়দিঘীতে দলের সংগঠনে ক্ষোভ সামলানোর অনেকটা দায়িত্ব নিয়েছেন। আবার সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মতো বর্ষীয়ান বিধায়কদের নিজের এলাকার বাইরে অন্যত্রও প্রচারে সময় দিতে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘ভোটে সকলের দায়িত্বই ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেলে যতটুকু না হলে নয়, সেই ভাবে সংসদ ছুঁয়ে সাংসদদের রাজ্যে দলের কাজেই মন দিতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy