বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে লড়তে হবে কংগ্রেস এবং সিপিএমের জোটের বিরুদ্ধে। সংসদেই তার নেট প্র্যাকটিস সেরে নিতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে কাল থেকে। রাজ্যে ভোটের মুখে এই অধিবেশনে আর কেন্দ্র-বিরোধী স্লোগান-বিক্ষোভে সময় নষ্ট করতে চাইছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। বরং রাজ্যে কংগ্রেস আসলে সিপিএমের ‘বি-টিম’ বলে যে অভিযোগ মমতা দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছেন, তা যে কতটা সত্য সেটিই প্রমাণ করতে ঝাঁপাতে চাইছে তাঁর দল।
যে কারণে তৃণমূলের পক্ষ থেকে লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সর্বদলীয় বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন, সংসদ অচল হোক এমনটা তাঁরা চান না। বরং দুই কক্ষে সমস্ত ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয়’ নিয়ে আলোচনা করাটাই তাঁদের কাম্য। পশ্চিমবঙ্গে যেহেতু বিজেপিকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনা হচ্ছে না, ফলে সংসদেও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সংঘর্ষের লাইনে যেতে চাইছে না তৃণমূল। বরং সংসদে আলোচনার সুযোগে রাজ্যে বিরোধী জোটের এ-টিম, বি-টিম তথা সিপিএম-কংগ্রেসকে তুলোধোনা করাই তাদের অগ্রাধিকার হতে চলেছে এ বার।
অথচ ২০১৪ সালে মোদী সরকার আসার পর সংসদের ভিতরে-বাইরে লাগাতার কেন্দ্র-বিরোধী অবস্থান, স্লোগান এবং নানা অভিনব কায়দায় প্রতিবাদ করে গিয়েছেন তৃণমূল সাংসদরা। কালো টাকা ফিরিয়ে আনার দাবিতে উত্তাল হয়েছেন সংসদ চত্বরে গাঁধী মূর্তির নীচে। কিন্তু সেই আবহাওয়া কিছুটা বদলে যেতে থাকে সারদা-কাণ্ড নিয়ে সিবিআই রাজ্য সরকারের উপর চাপ তৈরি করার পর থেকে। জমি অধিগ্রহণ বিল ছাড়া বেশির ভাগ বিলেই তৃণমূল সমর্থন করে কেন্দ্রকে। কেন্দ্র প্রস্তাবিত পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি) যাতে দ্রুত পাশ করানো হয়, সে জন্য বিরোধী দলগুলির মধ্যে তৃণমূলকেই রাজধানীতে সবচেয়ে তৎপর ভূমিকায় দেখা গিয়েছে গত কয়েক মাস।
তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘আগের অধিবেশনগুলিতে বিভিন্ন কেন্দ্র-বিরোধী বিষয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে কক্ষ সমন্বয় করে চলেছে তৃণমূল। গুলাম নবি আজাদ নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন তৃণমূলের লোকসভার নেতার সঙ্গে। খোদ সনিয়া গাঁধীকেও দেখা গিয়েছে অধিবেশন চলাকালীন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করতে। এ বার সে সব হওয়ার সম্ভাবনা কম।’’ সর্বদলীয় বৈঠকে আজ তৃণমূল যে বক্তব্য রেখেছে তার মোদ্দা সুরটি হল, দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করার দায়িত্ব, শাসক এবং বিরোধী দল উভয়েরই। তৃণমূল চায় সংসদে বিতর্ক হোক।
তবে জেএনইউ বিতর্ক নিয়ে যতটা সম্ভব সতর্ক থাকতে চান তৃণমূল নেত্রী। আগামী ২৪ তারিখ বিষয়টি নিয়ে রাজ্যসভায় আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সেই বিতর্কে তৃণমূল কোন অবস্থান নেবে তার কৌশল এখনও চূড়ান্ত করা যায়নি। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, জেএনইউ-কাণ্ড এতটাই স্পর্শকাতর বিষয় এবং পরিস্থিতি যে রকম অগ্নিগর্ভ হয়ে রয়েছে, তাতে রাজ্যের শাসক দল হিসেবে এ নিয়ে সংযত থাকাটা জরুরি। ইতিমধ্যেই ওই কাণ্ডের আঁচ ছড়িয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যে হৈচৈ শুরু হলে, ভোটের আগে সেটা তৃণমূলের সমস্যা হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দলের নেতারা। তাই জেএনইউ নিয়ে ধরি প্রসঙ্গ না-ছুঁই বিতর্ক গোছের কৌশল নিতে পারেন তৃণমূলের সংসদেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy