সুধানি ব্রিজ পেরোচ্ছে কামরূপ এক্সপ্রেস। সেতু সারাইয়ের পরে প্রথম বার যাচ্ছে ট্রেন। —নিজস্ব চিত্র।
শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা পূর্বাঞ্চল নয়, সারা দেশেই এখন লাইনের ক্ষমতা অনুযায়ী ট্রেন চালাতে গিয়ে রেলের কর্মী-অফিসারেরা হিমশিম খাচ্ছেন। তার উপরে যদি সেই ক্ষমতাটুকুও অর্ধেক হয়ে যায়, কী ঘটতে পারে?
কী যে ঘটতে পারে, সেটা পদে পদে টের পাচ্ছেন কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ হয়ে অসমমুখী ট্রেনের যাত্রিসাধারণ। বন্যার জেরে দিন কুড়ি বন্ধ থাকার পরে শনিবার হাওড়া থেকে প্রথম যে-ট্রেনটি ছেড়েছিল, সেই কামরূপ এক্সপ্রেস বাংলার সীমান্ত পার করতেই অতিরিক্ত সময় নিয়েছে সাড়ে সাত ঘণ্টা! প্রায় একই অবস্থা অসমের ডিব্রুগড় থেকে ছাড়া কলকাতামুখী কামরূপ এক্সপ্রেসের। সেটিও চলছে অনেক দেরি করে। এর কারণ হিসেবে রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, একটি লাইন চালু থাকায় এমনিতেই ক্ষমতা আরও কমে গিয়েছে। তার উপরে অনেকটা এলাকায় লাইন দুর্বল থাকায় ট্রেনের গতি বেঁধে দেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ওই একটি লাইন দিয়েই এখন যাত্রিবাহী ট্রেনের সঙ্গে চালানো হচ্ছে মালগাড়িও। ফলে ট্রেনের দেরি হবেই। হচ্ছেও। শুধু দেরিতেই সমস্যা মিটছে না। আর একটি লাইন চালু না-হলে এই রুটে অন্য ট্রেনগুলিকে চালানো যাবে না।
এ বারের বন্যায় বিভিন্ন জায়গায় রেললাইনের তলার মাটি ধুয়েমুছে গিয়েছিল। তার উপরে বিশেষ করে বিহারের কিছু অংশে কয়েকটি রেলসেতু ভেঙে যাওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে যায়। রেলের মতে, ১৯৬৭ সালের ভয়াবহ বন্যাতেও এত দীর্ঘদিন ট্রেন বন্ধ থাকেনি। এমন ক্ষয়ক্ষতিও হয়নি রেলের। এ বার ১৫-২০ দিন ধরে টানা মেরামতির কাজ চালানোর জন্য রেলকর্মীদের সঙ্গে সেনাও নামাতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও একটি লাইন চালু করতেই সময় লেগে গিয়েছে ২০ দিন। ফলে রেলকর্তারা আপাতত সব দিকেরই একটি বা দু’টি করে ট্রেন চালানোর চেষ্টা করছেন। বাকি ট্রেনগুলি চালিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুজোর বাদ্যি বেজে যেতে পারে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাতিল
• শিয়ালদহ-আগরতলা কাঞ্চনজঙ্ঘা
• শিয়ালদহ-গুয়াহাটি কাঞ্চনজঙ্ঘা
• শিয়ালদহ-শিলচর কাঞ্চনজঙ্ঘা
• তিস্তা-তোর্সা
• হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি শতাব্দী
• হাওড়া-গুয়াহাটি সরাইঘাট
• উত্তরবঙ্গ
• কাঞ্চনকন্যা
• দার্জিলিং মেল
• পদাতিক
• গুয়াহাটি গরিব রথ
• কলকাতা-ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস
• নিউ জলপাইগুড়ি বাতানুকূল এক্সপ্রেস
• কলকাতা-হলদিবাড়ি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস।
সূত্র: পূর্ব রেল
বন্যার আঘাত সয়ে সবে সুস্থ হতে থাকা লাইনে ট্রেন দেরিতে চলবে, সেটা রেলের কর্তা-কর্মীদের সঙ্গে যাত্রীরাও কমবেশি অনুধাবন করছেন। কিন্তু পদে পদে হয়রানি কেন, তার জবাব পাচ্ছেন না তাঁরা। হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে উত্তরবঙ্গ হয়ে পূর্বাঞ্চলগামী অনেক ট্রেন বাতিল হয়েছে। কিন্তু কলকাতা ও শহরতলির সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে তার টিকিট বিক্রি চলছিল। কেন? যাত্রীরা ওই সব দিনের টিকিট চাইলে কাউন্টারের কর্মী ট্রেন বন্ধের কথা জানিয়ে কেন তাঁদের নিরস্ত করেননি? ট্রেন বন্ধের কথাটা বিজ্ঞপ্তির আকারে কাউন্টারে ঝুলিয়েই বা দেওয়া হচ্ছে না কেন?
রেলকর্তাদের একাংশ স্বীকার করে নিচ্ছেন, রেলের যে-বিভাগ ট্রেন চালায়, সেখানকার কর্তারা নিজেদের বাণিজ্যিক দফতরে ট্রেন বন্ধের খবর দেননি। খবর পাঠানো হয়নি আসন সংরক্ষণ কেন্দ্রেও। তাই যাত্রীদের ভুগতে হচ্ছে। সংরক্ষণ কেন্দ্রে ঠিকঠাক খবর দেওয়া হলে যাত্রীরা জেনে নিতে পারতেন, কবে কোন ট্রেন বন্ধ থাকছে। প্রশ্ন উঠছে, রেলের এই গাফিলতির দায় যাত্রীদের ভুগতে হবে কেন? তার জবাবে রেলকর্তারা নীরব।
মোবাইলের যুগে এসএমএস করে ট্রেন বন্ধের কথা যথাসময়ে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে না কেন, সেটাও বড় প্রশ্ন। রেলকর্তাদের দাবি, এসএমএস করা হয়। অনেক যাত্রী সেই বার্তা পেয়ে হয়রানি এড়ানোর সুযোগও পান। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যাত্রীরা ঠিকঠাক ফোন নম্বর না-দেওয়ায় সমস্যায় পড়েন। অনেকে টিকিট কাটতে গিয়ে ভুলভাল নম্বর দেন। কেউ কেউ দেন অন্যের নম্বর। বহু যাত্রী নম্বরই দেন না। তাই ভুগতে হয় বলে রেলকর্তাদের অনুযোগ। তাঁদের আবেদন: ঠিকঠাক নম্বর দিন। তাতে ট্রেন বন্ধের খবর যথাসময়ে জানিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। দুর্ঘটনা ঘটলেও কাজে আসবে সেই নম্বর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy