অভিনব: পড়াশোনা চলছে মোবাইলেই। নিজস্ব চিত্র।
সন্ধেবেলা পড়তে বসে কিছুতেই ভূগোলের এক জায়গা বুঝে উঠতে পারছিল না ক্লাস টুয়েলভের সুমন শেখ। খানিকক্ষণ মাথা চুলকে ‘আস্ক দ্য এক্সপার্টস অব এনবিআই’ গ্রুপে প্রশ্নটা করেই ফেলে সুমন।
একটু পরেই উত্তর চলে আসে। ভূগোল শিক্ষক অলকেশ দাস বুঝিয়ে দেন, গলদ কোথায় হচ্ছে। ধন্দ কাটিয়ে ফের পড়ায় মন দেয় লালবাগের নাগিনাবাগের সুমন।
এই ‘এক্সপার্ট’রা কিন্তু কেউ চড়া ফি নেওয়া প্রাইভেট টিউটর নন। ওই গ্রুপও কোনও কোচিং সেন্টারের নয়। সুমনের স্কুল, মুর্শিদাবাদের লালবাগে নবাব বাহাদুর’স ইনস্টিটিউশন সদ্য এমন গ্রুপ খুলেছে। প্রধান শিক্ষক-সহ স্কুলের মোট ২২ জন শিক্ষক সেই গ্রুপে আছেন। স্কুল নোটিস পড়েছে, “প্রতি দিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পড়ুয়ারা সিলেবাসে থাকা বিষয়ে যে কোনও প্রশ্ন করতে পারে। সেই বিষয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা তার উত্তর দেবেন।”
মুর্শিদাবাদে এক মাত্র সরকারি স্কুল নবাব বাহাদুর’স ইনস্টিটিউশনই। প্রধান শিক্ষক মাসুদ আলম বলছেন, “এখন তো সকলের হাতে স্মার্টফোন। তার দৌলতে ছাত্রেরা যদি ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে আড্ডা দিতে পারে, ‘ব্লু হোয়েল’-এর মতো মারণ গেম খেলতে পারে, আমরা নয় তা একটু ভাল কাজেও লাগালাম!’’ যা শুনে শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলছেন, ‘‘চমৎকার উদ্যোগ! প্রযুক্তির উন্নতির যুগে গ্রামে-মফস্সলে এতে আখেরে ছাত্রছাত্রীরা লাভবান হবে।’’
আরও পড়ুন: পাঁচ ঘণ্টা টানা জেরা সৌগতকে
লালবাগের ওই স্কুলে মাধ্যমিকে ৮০ জন এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ১১০ জন ছাত্র রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রদের জন্য খোলা হয়েছে দু’টি আলাদা গ্রুপ। আগ্রহী ছাত্র প্রধান শিক্ষকের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ‘অ্যাড মি’ বলে অনুরোধ পাঠালেই তাকে গ্রুপে নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘এই ছাত্রদের বেশির ভাগই নানা জায়গায় প্রাইভেট টিউশন নেয়। কিন্তু স্কুলের শিক্ষকেরাই যদি পড়ার সময়ে হাজির থাকেন, তার দরকার কী? টিউশন-নির্ভরতা কমানোটাও আমাদের একটা প্রধান লক্ষ্য।’’
শিক্ষকেরা বলছেন, এই টিউশন-নির্ভরতার একটা অন্যতম কারণ বাড়িতে পড়ার সময়ে কারও সাহায্য না পাওয়া, বিশেষ করে উঁচু ক্লাসে। সুমনের বাবা-মা কেউই মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোননি। তাঁদের পক্ষে ছেলের পড়া দেখানো সম্ভব নয়। অনেকে কলেজ পাশ করলেও চর্চার অভাবে ভুলে গিয়েছেন, অনেকের বিষয়
ছিল আলাদা। পাল্টে গিয়েছে সিলেবাসও। লালবাগ চকের ক্লাস টুয়েলভের ছাত্র মইন শেখের বাবা যেমন বিএ পাশ করেছেন। মইন বলে, ‘‘বাবা নতুন সিলেবাসের অনেক কিছু জানেন না। ফলে সাহায্য করতেও পারেন না।’’
এখন আর সমস্যা নেই। অর্ঘ্য রায় জেনে নিচ্ছে স্ট্যাটিস্টিক্সের অঙ্ক, তো বিপ্লব দত্ত প্রশ্ন করছে চেকভের নাটক ‘দ্য প্রোপোজাল’ নিয়ে। অলকেশবাবু বলেন, “আমরা তো সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত প্রায়ই নানা কাজে অনলাইন থাকি। ফলে খুব বাড়তি কিছু করতে হচ্ছে না। বরং স্কুলের বাইরেও ওদের সাহায্য করতে পেরে ভালই লাগছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy