এফআইআর-এ থাকা ১৩ জনের বাইরেও নারদ-কাণ্ডে আরও দু’জন প্রভাবশালীর নাম উঠে এসেছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। তাঁরা দু’জনেই শাসক দলের খুব গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলে সিবিআই সূত্রের দাবি। তবে প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে এখনই তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করছে না সিবিআই।
সিবিআই সূত্রটির দাবি, দুই প্রভাবশালীর মধ্যে এক জনকে টাকা দিয়েছিলেন বলে নারদ কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েল জেরায় জানিয়েছেন। তবে সেই টাকা দেওয়ার সময়ে তিনি ভিডিও করলেও তা যান্ত্রিক কারণে মুছে যায়। সেই নেতা ইতিমধ্যেই রোজ ভ্যালি কাণ্ডে অভিযুক্ত।
দ্বিতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির কথা সিবিআইয়ের দায়ের করা এফআইআর-এ উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এক বার কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র ইকবাল আহমেদ এবং এক বার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ম্যাথুকে ওই নেতার সঙ্গে দেখা করার জন্য পরামর্শ দেন। বলা হয়, ওই নেতাই এখন দলের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী। কিন্তু চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে পারেননি ম্যাথু। মধ্য কলকাতায় ওই নেতার এক ‘বিজনেস পার্টনার’ পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন ম্যাথু। সে দিন তাঁর সঙ্গে টাকাও ছিল। নেতার ব্যবসায়িক সহযোগী ওই টাকা চাইলেও ম্যাথু সরাসরি ওই নেতাকেই টাকাটা দিতে চেয়েছিলেন।
মঙ্গলবার কোচি থেকে ফোনে ম্যাথুর দাবি, তিনি এ সব তথ্য সিবিআইকে দিয়েছেন। প্রভাবশালী ওই নেতার ব্যবসায়িক সহযোগীর কথাও সিবিআইয়ের এফআইআর-এ উল্লেখ করা হয়নি। সিবিআই সূত্রের খবর, শীঘ্রই ওই ব্যবসায়ীকে ডেকে জেরা করা হতে পারে।
আরও পড়ুন:এ-পারে স্বামীর দেহ ও-পারে ছেলের
সিবিআই সূত্রের খবর, ১৩ অভিযুক্ত বাদে এফআইআর-এ কিছু অজ্ঞাতনামার উল্লেখ করা হয়েছে। জেরায় কারও বিরুদ্ধে কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে পরে তাদের নাম এফআইআর-এ যোগ করা হতেই পারে। এমনকী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরও কড়া আইনি ধারাও প্রয়োগ করা যেতে পারে। সিবিআই সূত্রের খবর, জেরায় হাজির হওয়ার জন্য আগামী সপ্তাহ থেকেই এফআইআর-এ নাম থাকা অভিযুক্তদের নোটিস পাঠানো হবে। তাতে সাড়া না মিললে গ্রেফতারের পথে হাঁটবে সিবিআই।
সিবিআইয়ের একাংশ জানিয়েছে, ম্যাথুকে জেরা করে এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে যে সব তথ্যপ্রমাণ সিবিআইয়ের হাতে এসেছিল, তা থেকে ওই প্রভাবশালীর নেতার নামও এফআইআর-এ রাখার পক্ষপাতী ছিলেন কয়েক জন কর্তা-ব্যক্তি। কিন্তু তদন্তের দায়িত্বে থাকা কয়েক জন মনে করেন, ওই নেতার বিরুদ্ধে আরও তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করার পরেই এফআইআর করা উচিত। সিবিআইয়ের একাংশের কথায়, এ নিয়ে দিল্লি বনাম কলকাতা দ্বৈরথ বেধে যায়। অফিসারদের একাংশ মনে করছেন— এসপি মর্যাদার যে অফিসারকে দিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করানো হচ্ছিল, তাঁকে সরানোর পিছনে এই দ্বৈরথও একটি কারণ হতে পারে।
এফআইআর-এ সিবিআই জানিয়েছে, প্রথমে ইকবাল আহমেদ ম্যাথুকে ওই নেতার নাম বলেন। ম্যাথুর সামনে ওই নেতাকে ইকবাল ফোনও করেন। এফআইআর অনুযায়ী, কলকাতার মেয়র তথা মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ও ম্যাথুকে লোকসভা (২০১৪ সালে) নির্বাচনের পরে ওই নেতার সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন।
এ দিন ফোনে ম্যাথু দাবি করেন, আইপিএস অফিসার এসএমএইচ মির্জাও তাঁকে জানিয়েছিলেন, ওই দ্বিতীয় প্রভাবশালী নেতাই এখন দলে সব চেয়ে ক্ষমতাশালী। ফলে ওঁর সঙ্গেই দেখা করা উচিত। ম্যাথুর কথায়, পরামর্শ দিলেও এঁরা কেউ সরাসরি তাঁকে ওই নেতার সঙ্গে দেখা করিয়ে দিচ্ছিলেন না।
ম্যাথুর কথায়, ‘‘সে দিন ওই নেতা ওই অফিসে আসবেন বলে ঠিক ছিল। আমি ২০ লক্ষ টাকা নিয়ে গিয়েছিলাম। নেতার ব্যবসায়ী বন্ধু আমাকে বলেন, এই অফিস মারফত রাজ্যে যে কোনও বিনিয়োগ করলে কোথাও কোনও সমস্যা হবে না।’’ ম্যাথু জানিয়েছেন, নেতার ব্যবসায়িক সহযোগীই তাঁর কাছে ওই নেতার তরফে টাকা চান। কিন্তু, টাকাটা তিনি সরাসরি ওই নেতাকেই দিতে চেয়েছিলেন। কারণ তিনি তার ছবি তুলে রাখতে চেয়েছিলেন। নারদ-কর্তা জানিয়েছেন, ‘‘অনেক ক্ষণ অপেক্ষার পরেও ওই নেতা এসে না পৌঁছনোয় আমি চলে আসি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy