Advertisement
১১ মে ২০২৪

ফের শিক্ষক বিদায়, ধাক্কা প্রেসিডেন্সিতে

শিক্ষক-ঘাটতি পূরণের বন্দোবস্ত হয়নি। শিক্ষকদের চলে যাওয়ার প্রবণতাও রুখতে পারছে না প্রেসিডেন্সি। এ বার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিলেন বাংলা বিভাগের শিক্ষক মলয় রক্ষিত। বুধবারেই তিনি যোগ দিয়েছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০২:১৪
Share: Save:

শিক্ষক-ঘাটতি পূরণের বন্দোবস্ত হয়নি। শিক্ষকদের চলে যাওয়ার প্রবণতাও রুখতে পারছে না প্রেসিডেন্সি। এ বার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিলেন বাংলা বিভাগের শিক্ষক মলয় রক্ষিত। বুধবারেই তিনি যোগ দিয়েছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রপ্রিয় এই শিক্ষক চলে যাওয়ায় বাংলা বিভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হল বলে মনে করছেন নবাগত পড়ুয়ারাও।

দীর্ঘ কালের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য তো আছেই। সেই সঙ্গে কিছু দিন আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মুকুট হাসিল করেছে প্রেসিডেন্সি। কিন্তু বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা একের পর এক কেন ওই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দিচ্ছেন, সেই প্রশ্নের নিঃসংশয় জবাব মিলছে না।

ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্সিতে ইস্তফা দেওয়ার পরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক মইদুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘‘কাজের পরিবেশ নেই। ওখানে সব কিছুই যেন কেমন ঝাপসা!’’ তার কিছু দিন আগে প্রেসিডেন্সি-ত্যাগের কারণ হিসেবে ওখানে কাজের পরিবেশ নেই বলে অভিযোগ করেছিলেন পদার্থবিদ্যার আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু চেয়ার অধ্যাপক সব্যসাচী ভট্টাচার্য। বেশ কিছু দিন ধরেই শিক্ষক-বিদায়ের স্রোত চলছে প্রেসিডেন্সিতে। তাঁদের কেউ দেখিয়েছেন ব্যক্তিগত কারণ। আবার পারিশ্রমিকের পরিমাণে তুষ্ট হতে পারেননি কেউ কেউ।

পদোন্নতি ও পারিশ্রমিকের কথা পরিষ্কার ভাবে বলেননি মলয়বাবু। তবে উচ্চতর পদ পাওয়াতেই তিনি যে প্রেসিডেন্সি ছাড়লেন, সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি প্রেসিডেন্সিতে যোগ দেন ২০০৭ সালে। মলয়বাবু এ দিন জানান, প্রেসিডেন্সিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর-পদ পেয়েছেন বর্ধমানে। প্রেসিডেন্সির অন্দরের খবর, পাঠ-পরিবেশের খামতিও তাঁর প্রস্থানের অন্যতম কারণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ‘সিস্টেম’ বা ব্যবস্থায় মানিয়ে নিতে অসুবিধে হচ্ছিল তাঁর। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একদা তাঁর সুসম্পর্ক থাকলেও পরে সেটা ছিল না। তার উপরে অদূর ভবিষ্যতে পদোন্নতির সম্ভাবনা না-থাকায় চলেই গেলেন তিনি।

প্রেসিডেন্সির রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনারের দাবি, মলয়বাবু বর্ধমানে গিয়েছেন সম্পূর্ণ পেশাগত কারণে। প্রেসিডেন্সির বাংলা বিভাগে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের পদ খালি নেই। বর্ধমানে ওই পদে কাজের সুযোগ পাওয়ায় উনি চলে গেলেন। ছাত্রছাত্রীদের, বিশেষত বাংলা বিভাগের পড়ুয়াদের একাংশের প্রশ্ন, মলয়বাবুর মতো ছাত্রদরদি শিক্ষককে রেখে দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধে দিলেন না কেন? এ বছরই প্রেসিডেন্সি থেকে বাংলায় এমএ পাশ করেছেন অয়ন্তিকা দাশগুপ্ত। তিনি জানালেন, পড়ুয়াদের কাছে খুবই প্রিয় ছিলেন মলয়বাবু। তাঁর প্রস্থানে মূল ধাক্কাটা লাগবে ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনেই। প্রেসিডেন্সি কেন তাঁর মতো শিক্ষকদের চলে যেতে দিচ্ছে, সেটা অয়ন্তিকাদের বোধগম্য হচ্ছে না।

শিক্ষকদের মধ্যে প্রেসিডেন্সি ছাড়ার প্রবণতা কেন, সেটা বুঝে উঠতে পারছে না শিক্ষাজগতের একাংশও। ওই প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ব-মানে টেনে তুলতে দেশ-বিদেশ ঢুঁড়ে শিক্ষক আনার কথা ছিল। তেমন নিয়োগ তো দূরের কথা, ২০১৩-এ ইতিহাস বিভাগের বেঞ্জামিন জাকারিয়ার বিদায় পর্ব থেকে শিক্ষকদের প্রেসিডেন্সি ছাড়ার হিড়িক চলছে তো চলছেই। ইতিহাসের শুক্লা সান্যাল, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু চেয়ার প্রফেসর সব্যসাচী ভট্টাচার্য, জীবনবিজ্ঞানের অধ্যাপক অধীর মান্না, পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক সোমক রায়চৌধুরী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক মইদুল ইসলাম-সহ অনেক নাম সেই তালিকায়। এ বার তাতে যুক্ত হল বাংলার মলয়বাবুর নামও।

প্রেসিডেন্সিতে কাজের পরিবেশ নিয়ে কমবেশি অভিযোগ করেছেন ওই তালিকার অনেকেই। সেই সঙ্গে আছে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংঘাত। এবং অনেক সময়েই সংঘাতটা আর্থিক প্রশ্নকে ঘিরে। শিক্ষা শিবিরের একটি বড় অংশের বক্তব্য, মেন্টর গ্রুপ গঠনের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নে দেশ-বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার কথা বলা হয়েছে বারবার। কিন্তু শিক্ষক-ঘাটতি পূরণ হয়নি। একের পর এক অধ্যাপক বিদায় নেওয়ায় শূন্যতা বেড়েই চলেছে। তাতে ক্ষতি হচ্ছে প্রতিষ্ঠানেরই। বিদেশ থেকে শিক্ষক আসুন না-আসুন, যাঁরা আছেন, তাঁরা যথাসময়ে পদোন্নতি এবং অন্যান্য প্রাপ্য সম্মান না-পেলে সেই ক্ষত ও ক্ষতি বাড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE