Advertisement
০৭ মে ২০২৪

শান্তির বার্তা জঙ্গলমহলের পাতালদুর্গার

জঙ্গলমহলের মাটি তখন রক্তে ভেজা। খোঁড়াখুঁড়ি করলেই মেলে লাশ, হাড়গোড় অথবা ল্যান্ডমাইন। পুলিশি অভিযানের মুখে মাওবাদী স্কোয়াডের লোকজনও সেঁধিয়ে যায় মাটির নীচে সুড়ঙ্গপথে।

মাটির নীচেই দেবীর বোধন।  ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

মাটির নীচেই দেবীর বোধন। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কিংশুক গুপ্ত
বিরিহাঁড়ি (ঝাড়গ্রাম) শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:১৯
Share: Save:

জঙ্গলমহলের মাটি তখন রক্তে ভেজা। খোঁড়াখুঁড়ি করলেই মেলে লাশ, হাড়গোড় অথবা ল্যান্ডমাইন। পুলিশি অভিযানের মুখে মাওবাদী স্কোয়াডের লোকজনও সেঁধিয়ে যায় মাটির নীচে সুড়ঙ্গপথে।

২০০৯-১০ সালের সেই মাওবাদী পর্বে মাটির নীচ মানেই ঝাড়গ্রামের বিরিহাঁড়ির বাসিন্দাদের কাছে ছিল আতঙ্ক। সন্ত্রাস-নাশকতা শেষে ছন্দ ফিরেছে গ্রামে। শুভশক্তির জয় উদ্‌যাপনে তাই

মাটির গভীরেই দুর্গতিনাশিনীর আরাধনা হচ্ছে বিরিহাঁড়িতে। পাতাল-দুর্গার বন্দনায় সামিল এক সময় জনসাধারণের কমিটির লড়াকু মুখগুলোও।

ঝাড়গ্রাম শহর থেকে বিরিহাঁড়ি ১০ কিলোমিটার। গ্রামের মোরাম রাস্তার ধারে এখনও দাঁড়িয়ে মাওবাদীদের ‘শহিদ মিনার’। তাতে খোদাই করা পুলিশের গুলিতে নিহত মাওবাদী-কমিটির নেতা উমাকান্ত মাহাতো, লালমোহন টুডু, সিদো সরেন, বৃদ্ধা সারবালা মাহাতোর নাম। বিরিহাঁড়িকে কেন্দ্র করে আশপাশের ১০-১২টি গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছিল ‘মাওবাদী-মুক্তাঞ্চল’। স্কোয়াডের চাপে জনসাধারণের কমিটির গণ মিলিশিয়াতে সামিল হয়েছিলেন গ্রামের ছেলে-বুড়ো, এমনকী মেয়েরাও। বধ্যভূমি বিরিহাঁড়িতে মিছিল-সভা, গ্রামের মাঠে গণ আদালতে মৃত্যুদণ্ড, গুলি আর মাইনের কানফাটা শব্দে প্রায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন গ্রামবাসী। স্থানীয় স্কুলের এক পার্শ্বশিক্ষককে অপহরণ করে খুনও করেছিল মাওবাদীরা।

বিরিহাঁড়ি উদীয়মান তরুণ সঙ্ঘের সম্পাদক জগদীশ মাহাতো জানালেন, কাছেপিঠে দুর্গাপুজো হয় না। এ বার সেই দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান।

বিরিহাঁড়ি গ্রামে মোট ৯০টি পরিবারের বাস। পুজোয় সামিল আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দারাও। পুজোর উপদেষ্টা বছর আটান্নর কালিপদ মাহাতো। এই প্রৌঢ় ছিলেন এলাকায় মাওবাদী-জনসাধারণের কমিটির আন্দোলনের ‘মুখ’। রাষ্ট্রদ্রোহ, খুন, অপহরণ, নাশকতার ১২টি মামলায় আড়াই বছর জেলও খেটেছেন। কমিটির আর এক প্রাক্তনী বছর পঞ্চাশের হেমন্ত মাহাতোও ৬টি মামলায় বছর খানেক জেল খেটেছেন।

বিরিহাঁড়ি উদীয়মান তরুণ সঙ্ঘের যে ফুটবল মাঠে এক সময় মাওবাদীদের সভা হতো, গণ আদালত বসত, তারই একপাশে মাটি খুঁড়ে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। গ্রামের ছেলেছোকরারা স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি খুঁড়ে তৈরি করেছেন ৭ ফুট গভীর আর প্রায় ১৫০ মিটার লম্বা আঁকাবাঁকা সুড়ঙ্গ। সেই পথ ধরে যেতে হবে প্রায় ১২ ফুট গভীরে মূল মণ্ডপে।

এই পুজো থেকেই শান্তির রসদ পেতে চায় বিরিহাঁড়ির নবীন প্রজন্ম। গ্রামের যুবক জগদীশ মাহাতো, যতীন মাহাতোদের কথায়, “আর মাইন-কঙ্কাল নয়, বিরিহাঁড়ির মাটি এখন শান্তির। এই শান্তি আমরা আগলে রাখব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Underground pandal Jangalmahal peace message
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE