Advertisement
০২ মে ২০২৪
State News

বিরোধী রুখতে মরিয়া শাসক, রাজ্য জুড়ে গুলি-বোমা, মিডিয়াকে মার

কোথাও বা আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানোর পাশাপাশি চলল মারধর, ভাঙচুর। কোথাও আবার সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উপর চড়াও হয়ে চলল মারধর। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠল শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

ভাঙচুরের এই ছবিই দেখা গেল রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। —নিজস্ব চিত্র।

ভাঙচুরের এই ছবিই দেখা গেল রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৮ ১৯:২৬
Share: Save:

পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তৃতীয় দিনেও ছবিটা এক ইঞ্চি বদলাল না। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। কোথাও চলল বোমা, গুলি। কোথাও বা আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানোর পাশাপাশি চলল মারধর, ভাঙচুর। কোথাও আবার সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উপর চড়াও হয়ে চলল মারধর। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠল শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তারা যদিও সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে মঙ্গলবার বিকালে তৃণমূল ভবনে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বরং বিজেপিকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘‘বহিরাগতদের এনে দাঙ্গা বাধানোর পরিকল্পনা নিয়েছে দাঙ্গাবাজরা।’’

সোমবার থেকে শুরু হয়েছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া। সে দিন তো বটেই, মঙ্গলবারও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গণ্ডগোল এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একই রকম ভাবে বুধবার সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় সন্ত্রাস। উত্তর থেকে দক্ষিণ— সর্বত্রই একই পরিস্থিতি। রাস্তা অবরোধ, মারধর, ভাঙচুর, আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ভয় দেখানো, গুলি, বোমা— কোচবিহার, রায়গঞ্জ, ডায়মন্ড হারবার-সহ একাধিক জায়গায় গত দু’দিনের সেই চেনা ছবি।

এ দিন সকাল থেকেই অশান্ত উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ। শূন্যে গুলি চালানোর পাশাপাশি চলল ব্যাপক বোমাবাজি। কমলাবাড়ি, মারাইচূড়া, বাহিন, রামপুর— এই চার গ্রাম পঞ্চায়েতে মনোনয়নপত্র তুলতেই পারেননি বিজেপি প্রার্থীরা। অভিযোগ, আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে, মারধর করে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর পর প্রকাশ্য দিনের আলোয় ভরা রাস্তায় শূন্যে গুলি ছুড়তে ছুড়তে দাপাদাপি শুরু করে দুষ্কৃতীরা। ছোড়া হয় বোমা। রায়গঞ্জ হাসপাতাল রোডে বিজেপি-র দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। বিজেপি-র অভিযোগ, শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। ঘটনার প্রতিবাদে এম জি রোডে জেলা বিজেপি-র কার্যালয়ের সামনে পথ অবরোধ করেন দলীয় সমর্থকেরা। জেলা সভাপতি নির্মল দামের অভিযোগ, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়েই সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে তৃণমূল। আর এই ঘটনায় পুলিশ একেবারেই নিষ্ক্রিয়।” নির্মলবাবুর অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অমল আচার্য পাল্টা দাবি করেছেন, “এ সব ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। এখানে বিজেপি-র কোনও সংগঠনই নেই। ভোট বানচাল করার জন্য, মানুষের সহানুভূতি পাওয়ার জন্যই বাইরে থেকে দুষ্কৃতী এনে এ সব করছে ওরা।”

ছাড় পেলেন না সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও। দেখুন ভিডিও

প্রায় একই রকম ঘটনার সাক্ষী থাকল কোচবিহারও। এ দিন সকালে কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে বিরোধী দলের প্রার্থীরা দেখেন, এলাকার সমস্ত রাস্তা, অলিগলি জুড়ে ভিড় করে রয়েছেন তৃণমূলের প্রায় চার-পাঁচ হাজার কর্মী-সমর্থক। বিরোধীদের অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে অন্তত দেড়শো জনের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। সকাল থেকেই কোচবিহার-দিনহাটা রোড-সহ ব্লক অফিসের রাস্তার দখল নেন তাঁরা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। এর মধ্যেই খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হন সংবাদমাধ্যমের চার প্রতিনিধি। তাঁদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ভেঙে দেওয়া হয় ক্যামেরা। ধস্তাধস্তির সময়ে তাঁদের চোটও লাগে। আহতদের কোচবিহার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

কোচবিহারে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়ের অভিযোগ, “বিরোধীরা বেশির ভাগ জায়গাতেই আক্রান্ত। আক্রান্ত হচ্ছে সংবাদমাধ্যমও। ভোটের প্রক্রিয়া চলছে, না প্রহসন, বুঝতে পারছি না!’’ বিজেপি-র জেলা সভাপতি নিখিল রঞ্জন দে-র দাবি, “আগে থেকেই যদি ঠিক করা থাকে যে, বিরোধীদের ভোটে দাঁড়াতেই দেব না, তবে এই নির্বাচন করার কি প্রয়োজন!” তবে বিরোধীদের সমস্ত দাবিকেই অস্বীকার করেছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দলীয় নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষের পাল্টা দাবি, “যাঁরা এ সব করছেন, তাঁরা কোনও ভাবেই তৃণমূলের সঙ্গে জড়িত নন।’’ পুলিশ কী বলছে? পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “ইতিমধ্যেই সন্ত্রাসে জড়িত এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে এলাকায় তল্লাশি চলছে।”

আরও পড়ুন
কমিশন ঘিরে বিক্ষোভ মুকুলের, ‘সন্ত্রাস’ রুখতে মামলা সুপ্রিম কোর্টেও

উত্তরের মতো দক্ষিণেও দেখা গেল একই ছবি। বিরোধীদের ঠেকাতে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতেও দমন-পীড়নের নীতিকেই আশ্রয় করেছে শাসক দল। এমনটাই অভিযোগ বিরোধীদের। মঙ্গলবার রাত থেকেই সন্দেশখালির ১ নম্বর ব্লকের মেটিয়াখালিতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে ঘরে ঘরে ব্যাপক মারধর-লুঠপাট চালায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। ভাঙচুর করা হয় হাসনাবাদের ভেড়িয়া চৌমাথায় সিপিএম এবং বিজেপি পার্টি অফিস। ভেঙে দেওয়া হয় কাঠের আসবাবপত্র। তছনছ করা হয় পার্টি অফিস। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের নেতৃত্বেই হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। এ দিন সকাল থেকেই সেখানে চলে পথ অবরোধ। সেই জমায়েতে শাহজাহানের গ্রেফতারের দাবিও ওঠে।

তাণ্ডব চালানো হয় সন্দেশখালিতেও। —নিজস্ব চিত্র।

স্থানীয় তৃণমূল নেতা ফিরোজ কামাল গাজি ওরফে বাবু মাস্টারের কথায়, “এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।” বরং তাঁর পাল্টা দাবি, “বামপন্থী লোকজনই এ সব ঘটিয়েছে।” ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিজেপি নেতারা। স্থানীয় নেতা হাজারি লাল সরকারের মন্তব্য, “পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের দাঁড়াতে দেবে না তৃণমূল। তাই এ সব ঘটিয়েছে ওরা।” সিপিএমের সদস্য শর্মিলা সর্দার বলেন, “গত কাল রাতে নিজের দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ এলাকায় সমস্ত আলো চলে যায়। এর পর সেই অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে চলে ভাঙচুর-লুঠপাট-বোমা-গুলি।”

আরও পড়ুন
মনোনয়ন ঘিরে উত্তপ্ত সন্দেশখালি, চলল গুলি, বোমা

একই ছবি দেখা গিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারেও। সেখানেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিরোধীদের ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। বিষ্ণুপুর, ফলতা, ডায়মন্ড হারবারের বিভিন্ন ব্লকে এ দিন মনোনয়নপত্র তুলতেই পারেননি বিরোধী প্রার্থীরা। ঘটনা নিয়ে শাসক দলকে বিঁধেছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। বিধানসভায় বাম পরিষদীয় দলের ওই নেতার মন্তব্য, “তৃণমূল আগে বুধ দখল করত। এখন উন্নয়নের ঠেলায় বিডিও অফিস দখল করছে। আসলে ওরা ভয় পেয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayat Election Violence TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE