ফাইল চিত্র।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দিল পশ্চিমবঙ্গের শিশু অধিকার কমিশন। পাশাপাশি, মায়ানমারের নেত্রী সু চি যতই ধৈর্য ধরতে বলুন না কেন, রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধানে আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে ক্রমাগত চাপ বাড়ছে তাঁর উপরে।
আজ সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা পেশ করে রাজ্যের কমিশন বলেছে, রোহিঙ্গা শিশু ও নাবালক-নাবালিকাদের জোর করে ফেরত পাঠানো মানে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা। কেন্দ্র সোমবারই সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে দাবি করেছিল, রোহিঙ্গারা এ দেশে ‘বেআইনি অনুপ্রবেশকারী’। রাজ্য কমিশনের আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি, ‘‘নাবালক বিচার আইনে বলা হয়েছে, কোনও শিশু বা নাবালক অনুপ্রবেশকারী এ দেশে ধরা পড়লে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটা নাবালক বিচার বোর্ড ঠিক করবে। কেন্দ্রের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই। তা ছাড়া, দেশের আইন অনুযায়ী কোনও শিশুর ছ’বছর বয়স পর্যন্ত তার সঙ্গে মাকে থাকতে দিতে হবে।’’
কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে দাবি করেছে, রোহিঙ্গারা জাতীয় সুরক্ষার পক্ষে বিপজ্জনক। এ বিষয়ে ৩ অক্টোবর পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আজ ফের বলেছেন, কেন্দ্র সব দিক দেখেশুনেই সুপ্রিম কোর্টে অবস্থান নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এটি একটি নীতিগত বিষয়। নিরাপত্তায় এর প্রভাব কী, এ বিষয়ে ভারতের বিদেশনীতি কী, আমাদের মানবিক বিচারের প্রশ্নগুলি কী, তা খতিয়ে দেখেই অবস্থান ঠিক হয়েছে। আমরা তো বাংলাদেশকেও সাহায্য করেছি। খাদ্য ও অন্যান্য জিনিসপত্র পাঠানো হয়েছে।’’
রোহিঙ্গারা ভারতের জাতীয় সুরক্ষার পক্ষে বিপজ্জনক, মোদী প্রশাসন এ কথা বললেও পৃথিবী জুড়ে কিন্তু সু চি-বিরোধিতার পারদ চড়ছে। গত কালই এ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। আজ রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে সু চি প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্দোগান। সেই এর্দোগান, যাঁর বিরুদ্ধে নিজের দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু অভিযোগ উঠেছিল। বসনিয়া ও রোয়ান্ডায় গণহত্যার প্রসঙ্গ টেনে এর্দোগান বুধবার নিউ ইয়র্কে বলেন, ‘‘মায়ানমারের এই শোচনীয় পরিস্থিতি না পাল্টালে মানবতার ইতিহাসে ফের একটি কালো ছাপ পড়বে।’’ বাংলাদেশে যে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা রয়েছেন, তাঁদের অবিলম্বে মায়ানমারে ফেরার ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক, দাবি করেন এর্দোগান।
সু চি-র উপর চাপ যতই বাড়ুক না কেন, পর্যবেক্ষকরা কিন্তু বলছেন, পরিস্থিতি আর তাঁর হাতে নেই। দেশে ‘নির্বাচিত সরকার’ থাকলেও যে সেনাবাহিনী মায়ানমারকে অর্ধশতক ধরে শাসন করে এসেছে, তারাই এখনও ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে। ৭২ বছর বয়সি ‘জননেত্রী’র সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কোনও ক্ষমতাই নেই।
বছর তিনেক আগে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা প্রসঙ্গে এক আলোচনাসভায় অমর্ত্য সেন ‘স্লো জেনোসাইড’ বা ‘মন্থর গণহত্যা’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছিলেন। তখনও ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ ঘটেনি সু চি-র। রোহিঙ্গা সমস্যা প্রসঙ্গে তখন অমর্ত্য বলেছিলেন, ‘‘অনেকেই হয়তো বলবেন, নাৎসি জার্মানি বা রোয়ান্ডার থেকে এই হত্যালীলা অনেকটাই আলাদা। কিন্তু এ কথা মানতে বাধা নেই যে, মায়ানমারে যা ঘটছে, তা গণহত্যাই। আর তার সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলছে নানা ধরনের বঞ্চনা— বাসস্থান না পাওয়ার বঞ্চনা, খাবার না পাওয়ার বঞ্চনা, কাজ না পাওয়ার বঞ্চনা, অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসা না পাওয়ার বঞ্চনা। সব কিছুর উপরে প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকার বঞ্চনা।’’
তিন বছর পরেও সেই ‘মন্থর’ হত্যালীলা থামার কোনও দিশা দেখতে পাচ্ছে না বিশ্ব। দেখাতে পারছেন না শান্তির নোবেলজয়ী আউং সান সু চি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy