Advertisement
০৪ মে ২০২৪

এ পারের অপেক্ষায় ৬০ হাজার রোহিঙ্গা, নেপথ্যে শাসক দলের নেতা!

ধীরে ধীরে তাঁরা সকলেই এ রাজ্যে ঢুকে ‘মিশে’ যেতে চান। তাঁদের এ পারে আনার কাজে বেশ কয়েকটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সক্রিয় বলেও জেনেছেন গোয়েন্দারা। ওই সংস্থাগুলির কাছে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ সাহায্য আসছে বলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলি জেনেছে।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় 
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৮ ০৩:৪০
Share: Save:

সন্দেশখালি, সরবেড়িয়া, বারুইপুর-বজবজে কয়েকশো রোহ‌িঙ্গা পরিবার ইতিমধ্যেই এসে বসবাস শুরু করেছে। কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের এ রাজ্যে ঢুকে পড়ার ঘটনা অবশ্য তাতেই থেমে থাকছে না। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার খবর অনুযায়ী, আড়াই হাজার কিমি বাংলাদেশ সীমান্তের ও পারে প্রায় ৬০ হাজার রোহিঙ্গা এসে জড়ো হয়েছেন।

ধীরে ধীরে তাঁরা সকলেই এ রাজ্যে ঢুকে ‘মিশে’ যেতে চান। তাঁদের এ পারে আনার কাজে বেশ কয়েকটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সক্রিয় বলেও জেনেছেন গোয়েন্দারা। ওই সংস্থাগুলির কাছে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ সাহায্য আসছে বলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলি জেনেছে। সংস্থাগুলির সঙ্গে শাসক দলের এক শ্রেণির নেতার সরাসরি যোগাযোগেরও খবর পাওয়া যাচ্ছে।

গত ১২ মার্চ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে গঠিত স্টেট মাল্টি এজেন্সি সেন্টার (স্ম্যাক)-এর বৈঠকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। সেই বৈঠকে রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের প্রতিনিধিরা পশ্চিমবঙ্গে রোহিঙ্গাদের আসার কথা মেনে নিয়েছেন। রাজ্যের প্রতিনিধিই সীমান্তের ও পারে অপেক্ষারত প্রায় ৬০ হাজার রোহিঙ্গার কথা বৈঠকে জানান। যা শুনে অন্য সংস্থার কর্তারা বিএসএফের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে কার্যত কৈফিয়ত তলব করেন। তাঁদের প্রশ্ন, বিএসএফের একাংশ যুক্ত না থাকলে দল বেঁধে রোহিঙ্গাদের এ রাজ্যে ঢুকে পড়া সম্ভব নয়। বিএসএফের প্রতিনিধি অবশ্য জানান, দু’দফায় তাঁদের হাতে জনা কুড়ি রোহিঙ্গা ধরা পড়েছেন। তাঁদের ফেরত পাঠানোও হয়েছে। তবে দীর্ঘ সীমান্তের ও পার থেকে কখন, কী ভাবে রোহিঙ্গারা ঢুকে প়ড়ছেন তা নিয়ে বিএসএফ ওই বৈঠকে আরও সতর্ক থাকার আশ্বাস দিয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বারুইপুরের কাছে হাড়দহ গ্রামে ইতিমধ্যেই প্রায় আড়াইশো রোহিঙ্গা বসবাস শুরু করেছেন। চলতি মাসে আরও ৭০ জন এখানে এসেছেন।

আরও পড়ুন: উত্তপ্ত আসানসোলে আবার আহত পুলিশ

পুলিশ জেনেছে, নদীপথে বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে সন্দেশখালি-সরবেড়িয়ায় প্রথম আসছে রোহিঙ্গার দল। সেখান থেকে বিভিন্ন সংগঠনের জিম্মায় যাচ্ছেন তাঁরা। তার পর ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছেন নানা অঞ্চলে। কক্সবাজার থেকে এ রাজ্য হয়ে দক্ষিণ ভারতেও রোহিঙ্গারা পৌঁছে যাচ্ছে বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। স্ম্যাক-এর বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত চর্চাও হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ধৃত রোহিঙ্গাদের বয়ান থেকেই সীমান্ত পারপারের ক্ষেত্রে মোটা টাকার কারবারের বিস্ফোরক তথ্যও পেয়েছেন গোয়েন্দারা।

রাজ্যে গোয়েন্দা বিভাগ বৈঠকে জানায়, সীমান্ত লাগোয়া বেশ কিছু ধর্মশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিকভাবে রোহিঙ্গাদের এনে তোলার পরিকল্পনার কথা তাঁরা জেনেছেন। বিশেষ করে সম্পন্ন পরিবারে মহিলা ও শিশুদের যাতে আশ্রয় দেওয়া হয়, সেই বার্তাও ওই প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে প্রচার করা হচ্ছে।

পাশাপাশি রাজ্য গোয়েন্দা কর্তারা মনে করছেন, যে ভাবে এ পারে জামাতুল মুজাহিদিন-বাংলাদেশ (জেএমবি), আল কায়দার বাংলাদেশ শাখা আনসারুল্লা বাংলা টিমের (এবিটি) জঙ্গিরা পর পর ধরা পড়ছে, তাতে রোহিঙ্গা আনাগোনা শুধুমাত্র জনসংখ্যার উপর চাপ তৈরিই করবে না, নিরাপত্তার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেবে অনেকখানি।

গোয়েন্দা কর্তারা মনে করছেন, এ ভাবে বাধাহীন ভাবে রোহিঙ্গা আসতে শুরু করলে আশ্রয়প্রার্থীর ছদ্মবেশে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ)-এর কাজকর্মও শুরু হয়ে যেতে পারে। বৈঠকের তথ্য, আলোচনা ও আশঙ্কার কথা স্ম্যাক-এর তরফে কেন্দ্র এবং রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে’কে ডেকে পাঠিয়ে রোহিঙ্গা-প্রশ্নে জবাব চেয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rohingya India রোহিঙ্গা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE