প্রতীকী ছবি
মামলা যে জটিল, সেই আঁচ মিলেছিল শুরুতেই। কিডনি পাচার চক্রের রহস্য ভেদ করতে এ বার ময়দানে নামল সিআইডি-ও। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পাশাপাশি ঘটনার তদন্ত করবে তারা। মঙ্গলবার সিআইডি-র একটি দল ব্যারাকপুর কমিশনারেটের কর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলে সব তথ্য সংগ্রহ করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রয়োজনে মামলার সম্পূর্ণ তদন্তভারও সিআইডি-র হাতে যেতে পারে।
মাত্র এক দিনে পুলিশের হাতে যে তথ্য এসেছে, তাতে তাজ্জব তদন্তকারীরা। তাঁরা জেনেছেন, পুরো চক্র চালাতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করা হত। নৈহাটির মিত্রপাড়ার অভয় ঘোষ রোডে যে বাড়িটিতে পাচার চক্রের সদস্যেরা থাকত, তার দৈনিক ভাড়া দু’হাজার টাকা! অর্থাৎ, স্যাঁতসেঁতে তিনটি ঘরের জন্য বাড়ির মালিক বিশ্বজিৎ পাল মাসে পেত ৬০ হাজার টাকা।
রবিবার রাতে মিত্রপাড়ার ওই বাড়ি থেকে সাত ভাড়াটেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নৈহাটি পুরসভার যে কর্মী প্রায়ই ওই বাড়িতে আসত, সেই সরফরাজ আহমেদ ওরফে মুন্না এবং বাড়ির মালিক বিশ্বজিৎকেও গ্রেফতার করা হয়। জানা যায়, কিডনি বিক্রেতাদের থাকা-খাওয়া এবং অন্য ব্যবস্থা করে দিত সরফরাজই। সে-ই ছিল চক্রের লিঙ্কম্যান। সোমবার ওই ন’জনকে আদালতে তোলা হলে সাত দিনের পুলিশি হেফাজত দেন বিচারক। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
তবে পাচার চক্রের সদস্যেরা ধরা পড়লেও চক্রের চাঁই এখনও অধরা। সোমবারই পুলিশ জানিয়েছিল, ওই ব্যক্তি কলকাতায় বসেই আন্তঃরাজ্য কিডনি পাচার চক্র নিয়ন্ত্রণ করত। দলের সদস্যেরা তাকে চিনত আক্রম নামে। সোমবার কলকাতায় পুলিশ তার খোঁজে তল্লশি চালায়। কিন্তু, খোঁজ মেলেনি। ঘটনার তদন্তে ভিন্ রাজ্যেও পুলিশ পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ব্যারাকপুর কমিনশনারেটের এক কর্তা।
কী ভাবে কিডনি বিক্রির জন্য ভিন্ রাজ্যের লোকেদের জোগাড় করা হত, তা পরিষ্কার হয়নি পুলিশের কাছে। তবে তদন্তকারীরা জেনেছেন, পাচার চক্রের সদস্যেরা কলকাতাতেও ছিল সক্রিয়। অসমের বাসিন্দা, বছর চব্বিশের স্নাতক ভারতী ছেত্রি কলকাতা এসেছিল কাজের খোঁজে। কিন্তু কয়েক মাস ঘোরাঘুরি করেও সে কিছু জোটাতে পারেনি। একটি জায়গায় কাজের খোঁজে গিয়ে ভারতী কিডনি পাচার চক্রের সদস্যদের খপ্পরে পড়ে। তাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, একটি কিডনি বিক্রি করলে চার লক্ষ টাকা পাবে। এতেই রাজি হয়ে যায় সে।
মিত্রপাড়া নৈহাটির অন্যতম অভিজাত এলাকা। সেখানেই বিশ্বজিতের বিশাল দোতলা বাড়ি। মঙ্গলবার সেখানে পাহারায় ছিলেন দুই পুলিশকর্মী। সদর দরজা দিয়ে ঢুকে হলঘরের দু’দিকে তিনটি ঘর। সেখানেই থাকত ধৃতেরা। হলঘর থেকেই দোতলায় ওঠার সিঁঁড়ি। মঙ্গলবার সেখানে দেখা মিলল বিশ্বজিতের স্ত্রী স্মৃতি পালের। তিনি জানালেন, সাত মাস ধরে জনা সাতেক লোক থাকত ওই ঘরগুলিতে। কখনও কখনও অন্য লোকও আসত।
স্মৃতির দাবি, কত টাকা ভাড়া মিলত, ভাড়াটেদের কী পরিচয়, তা জানাত না বিশ্বজিৎ। তিনি বলেন, “কখনও কখনও বলত, ওরা শ্রমিক। বেশি কিছু বললে বলত, তোমার অত খোঁজের দরকার কী?” তবে আগে বাড়িটি কখনও চিটফান্ডকে, কখনও চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারকদের ভাড়া দেওয়া হয়েছিল তা জানিয়েছেন স্মৃতি। পুলিশ জেনেছে, নৈহাটি পুরসভায় চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে মুন্না বছর পাঁচেক সৌদি আরবে ছিল। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন ১) কে কান্নন জানান, সেখানে মুন্না কী কাজ করত তা জানার চেষ্টা চলছে। সৌদি আরব থেকেই সে এই চক্রে জড়িয়ে পড়েছিল কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy