Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Panchayat Elction

মনোনয়ন ঘিরে সন্ত্রাস, পার্থর দাবি, ভোট হবে শান্তিপূর্ণ

রেহাই মেলেনি বিজেপি জেলা সভাপতিরও। কোথাও আবার মনোনয়নপত্র কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।

আরামবাগে আক্রান্ত বিজেপি’র প্রস্তাবক তপন মণ্ডল। মঙ্গলবার।

আরামবাগে আক্রান্ত বিজেপি’র প্রস্তাবক তপন মণ্ডল। মঙ্গলবার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৮ ১৬:২১
Share: Save:

ছবিটা দেখা গিয়েছিল প্রথম দিনই। তিন দফার পঞ্চায়েত ভোটের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দ্বিতীয় দিনেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দফায় দফায় মিলল সংঘর্ষের খবর। হুগলির আরামবাগ থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদের লালবাগ— একাধিক জায়গা থেকে মিলল বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলার খবর। প্রতি ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে তৃণমূলের দিকে। যদিও বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। এ দিন সাংবাদিক সম্মেলন করে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় উল্টে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আগাম ভবিষ্যৎবাণী করেছেন।

হুগলির আরামবাগ, খানাকুল, বীরভূমের লাভপুর, সিউড়ি, মুর্শিদাবাদের লালবাগ, ডোমকলের মতো বহু এলাকায় মঙ্গলবার সকাল থেকেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে ঘিরে তুলকালামের অভিযোগ এসেছে। কোথাও মারধরে আহত হয়েছেন বিরোধী দলের প্রতিনিধি, নেতা-কর্মী। রেহাই মেলেনি বিজেপি জেলা সভাপতিরও। কোথাও আবার মনোনয়নপত্র কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।

এ দিন সকালে আরামবাগ এসডিও অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন খানাকুলের ৪১ নম্বরের জেলা পরিষদের বিজেপি প্রার্থী বিকাশ লক্ষ্ণণ। অভিযোগে, সে সময় এসডিও অফিসেই বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের উপর চড়াও হন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। ওই হামলায় আহত হন তপন মণ্ডল নামে বিজেপির প্রস্তাবক। বিজেপির দাবি, মিনিট কুড়ি ধরে তাণ্ডব চালায় শাসক দলের পতাকাধারীরা।

আরও পড়ুন: মার, আগুন, ছিনতাইয়ে শুরু পঞ্চায়েতের মনোনয়ন

পাশাপাশি, মুর্শিদাবাদের লালবাগে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল এবং বিজেপি সমর্থকেরা। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হন মুর্শিদাবাদের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষ। পরে সভাপতি দাবি করেন, ‘‘এ দিন বিডিও অফিস প্রায় দখল করে নিয়েছিল তৃণমূল কর্মীরা। রাজ্য প্রশাসনের সহযোগিতায় তৃণমূলের সমর্থকরা এই তাণ্ডব চালিয়েছে।’’

পঞ্চায়েত মনোনয়নের দ্বিতীয় দিনে উত্তপ্ত বীরভূমের লাভপুর। ব্লক অফিসের সামনে তলোয়ার হাতে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের। পাশাপাশি, সংঘর্ষের খবর মিলেছে সিউড়িতেও। সেখানে বিজেপি-র বীরভূম জেলার সাধারণ সম্পাদক কালোসোনা মণ্ডলের উপর ছুরি দিয়ে আক্রমণ চালানো হয়। অভিযোগের আঙুল তৃণমূলের দিকে। খোদ জেলাশাসকের কার্যালয় চত্বরে এমন ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে।

আক্রান্ত মুর্শিদাবাদের বিজেপি জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষ।

আরও পড়ুন: কেশরীর রিপোর্টে কাঠগড়ায় পুলিশই

বিডিও-র দফতর ঘিরে যে ভাবে শাসক দলের দুর্বৃত্ত বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তাতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া প্রায় অসম্ভব বলে দাবি তুলেছে বিজেপি-সহ বিরোধীরা। গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের ভোট পরিচালনার দায়িত্ব যাঁর হাতে ছিল, সেই প্রাক্তন তৃণমূল নেতা মুকুল রায় অবশ্য ধারাবাহিক হিংসার ঘটনায় রাজ্যে প্রশাসনকেই অভিযুক্ত করেছেন। বিজেপি নেতা মুকুলের কথায়, ‘‘এ রাজ্যে ফ্যাসিবাদ চলছে। দেশে আর কোনও রাজ্য নেই যেখানে বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারে না।’’

শাসক দলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশ জানাতে দ্বারস্থ হয়েছেন মুকুল রায়, প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, শমীক ভট্টাচার্য এবং জয়প্রকাশ মজুমদাররা। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রতিনিধিদল নিয়ে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে এ দিন দেখা করেন। সোমবারই প্রতিনিধিদল নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাজ্যপালের। নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানিয়েছে বামেরাও।

শাসক দলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠলেও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় তা খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণ ভাবেই পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। মানুষ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে ভয় পান না!” উল্টে তিনি রাজ্যপালকে পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার দাবি করেছেন। পার্থবাবুর কথায়, “রাজ্যপালকে নিরপেক্ষ ভাবতে পারছে না এই রাজ্যের মানুষ। আজ পর্যন্ত শুনিনি যে, রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছেন।” বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে তিনি আরও বলেন, “এঁরা বোধহয় আইনের শাসনকে ভয় পাচ্ছেন।”

তথ্য সহায়তা: শুভাশিস সৈয়দ, তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়, পীযূষ নন্দী, মোহন দাস

ভিডিও: শুভাশিস সৈয়দ, তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE