Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাঘা থাবায় শীতের মুকুট মাঘের মাথায়

সকাল দেখে নাকি ইঙ্গিত মেলে, দিনটা কেমন যাবে! মাঘ-পয়লার সকাল কেমন কাটবে, সেই ইঙ্গিত অবশ্য দিয়ে গিয়েছিল পৌষের শেষ সন্ধ্যা!

শীতের সোহাগ। সুমন বল্লভ

শীতের সোহাগ। সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৫
Share: Save:

সকাল দেখে নাকি ইঙ্গিত মেলে, দিনটা কেমন যাবে! মাঘ-পয়লার সকাল কেমন কাটবে, সেই ইঙ্গিত অবশ্য দিয়ে গিয়েছিল পৌষের শেষ সন্ধ্যা!

পৌষের শেষে ধুমধাড়াক্কা ব্যাট চালাচ্ছিল শীত। নিট ফল সংক্রান্তিতে পাঁচ বছরের রেকর্ড। সঙ্গে উপরি পাওনা মরসুমের শীতলতম দিন। কিন্তু সেই রেকর্ড টিকল না বেশি ক্ষণ। এক দিনের মধ্যে পৌষসংক্রান্তিকে হারিয়ে এই মরসুমের শীতলতম দিনের তকমা জিতে নিল পয়লা মাঘ।

শনিবার, পৌষের শেষ দিনে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রবিবার সেটা আরও নেমে দাঁড়িয়েছে ১১.২ ডিগ্রিতে, স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রি কম। খাস কলকাতা ছাড়িয়ে শহরতলিতে পৌঁছলেই বেড়ে যাচ্ছে কাঁপুনি। কয়েকটি জেলা তো কার্যত হিমঘরের চেহারা নিয়েছে! বীরভূম, ডায়মন্ড হারবারে শৈত্যপ্রবাহ (সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি কম) বয়েছে এ দিনও।

হাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, শ্রীনিকেতনে এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬.৫ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি কম। বাঁকুড়া, আসানসোলেও রাতের তাপমাত্রা আট ডিগ্রির কাছে নেমে গিয়েছে। সাগরপাড়ের ডায়মন্ড হারবারেও কনকনে ঠান্ডা। রাতের তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে ন’ডিগ্রিতে! উত্তরবঙ্গের তো পিছিয়ে থাকার কথাই নয়! কয়েক দিন ধরেই হাড়কাঁপানো শীতের দাপট চলছে তরাই-ডুয়ার্সে। এ দিন কোচবিহারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫.২ ডিগ্রি। ‘‘উত্তর থেকে দক্ষিণ, রাজ্য জুড়ে যেন মাঘের বাঘা শীতেরই দাপট,’’ বলছেন এক আবহবিজ্ঞানী।

ছুটিবারে অনেকেই এ দিন পাড়ি দিয়েছিলেন বেড়াতে। নরম রোদ এবং হিমেল হাওয়া গায়ে মেখে কেউ কেউ আবার সাতসকালেই দলবল নিয়ে চড়ুইভাতির ‘স্পটে’। ব্যারাকপুরের অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় চডুইভাতি করতে গিয়েছিলেন কোলাঘাটে। নদীর পাড়ের হিমেল হাওয়ায় বিকেলে কাঁপুনি লাগছিল শরীরে। বললেন, ‘‘হিম-হাওয়ায় দুপুরের হইহুল্লোড়টা জমে গিয়েছিল।’’ দমদমের অরুণ ঘোষ ছুটির দুপুরে সপরিবার কলকাতামুখী। ‘‘খুদে নাতনিকে নিয়ে দিনভর ঘুরে-বেড়িয়ে ফেরা সেই রাতে,’’ বললেন অরুণবাবু। মেট্রো স্টেশনেই ফোন এল তাঁর ছেলে রাজীবের মোবাইলে। তাঁদের এক ভ্রমণসঙ্গী তত ক্ষণে পার্ক স্ট্রিটে রেস্তোরাঁর সামনে হাজির!

ঘূর্ণিঝড়ের বাউন্সার শীতকে এ বার বিপাকে ফেলে দিয়েছিল ডিসেম্বরের গোড়াতেই। তার পর থেকে ক্রমশই যেন কঠিন হয়ে উঠেছিল তার যাত্রাপথ। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, মুখ থুবড়ে পড়া শীতের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজন ছিল ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা জোরালো ঠান্ডা ও ভারী হাওয়ার। আবহাওয়া দফতর যাকে বলে ‘পশ্চিমি ঝঞ্ঝা’। কিন্তু এ বছর ডিসেম্বর জুড়ে যেন আকাল চলছিল সেই ঝঞ্ঝার। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের পরে কাশ্মীরে একের পর এক পশ্চিমি ঝঞ্ঝা হাজির হওয়ায় ঝিমুনি কাটিয়ে আচমকাই স্বমূর্তি ধরে শীত। স্লগ ওভারের ধাঁচে ব্যাট চালিয়ে রান তুলতে থাকে সে।

সেই ডিসেম্বর থেকে শীতের জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকা বাঙালির মুখে হাসি ফুটেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, মাঘ-পয়লার শীত ক’দিন স্থায়ী হবে?

‘‘তাপমাত্রা আর হয়তো নামবে না। তবে আগামী দিন দুয়েক কলকাতা-সহ রাজ্যের বেশির ভাগ অঞ্চলে এমনই শীত থাকবে,’’ আশ্বাস দিচ্ছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Winter Cold
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE