ভরসন্ধেয় ই-মেল ঢুকল সরকারি দফতরের অ্যাকাউন্টে। তার পরেই কম্পিউটারের একের পর এক তথ্য নষ্ট হতে শুরু করল! দেখতে দেখতে পুরো কম্পিউটারটাই বিকল হয়ে গেল।
ভরদুপুরে হঠাৎই হ্যাকার হানা জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের কম্পিউটারে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গোটা দেশে নেমে এল লোডশেডিং। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল চিকিৎসা, পরিবহণ-সহ যাবতীয় জরুরি পরিষেবা!
এ রকম হওয়ার আশঙ্কা এখন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের। যার মোকাবিলায় দেশজুড়ে তাঁরা তৈরি করতে চাইছেন সাইবার নিরাপত্তার বিশেষ পরিকাঠামো। দেশের কয়েকটি রাজ্য এই কাজে অনেকটা এগিয়ে গেলেও, পশ্চিমবঙ্গ এখনও এই কাজ শুরুই করে উঠতে পারেনি।
রাজ্য এই পরিকাঠামো না গড়ায় আগামী দিরে বিপদের আশঙ্কা করছেন অনেকে। সেই আশঙ্কা যে মিথ্যা নয়, তা মানছেন রাজ্যের পুলিশকর্তারাও। ২০১২ সালে খোদ সিআইডি-র ওয়েবসাইটে হানা দেয় হ্যাকারেরা। বিকল হয়ে যায় ওয়েবসাইটটি। চলতি বছরের গোড়ায় ফের হ্যাকারদের খপ্পড়ে পড়ে সিআইডি-র ওয়েবসাইট। অগস্টের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়েও সেটি ঠিক করা যায়নি! এখানেই শেষ নয়। ইন্টারনেট ফোন ব্যবহার করেও ইদানীং হুমকি-সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগও মিলছে। এ রাজ্যে তারও বিহিত করার পরিকাঠামো নেই বলেই পুলিশকর্তাদের দাবি। সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “এই পরিকাঠামো চটজলদি তৈরি করা না হলে বড় বিপদের আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছে।”
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার হানাও এক ধরনের সন্ত্রাসবাদ। যার জন্য জঙ্গিদের সশরীরে এ দেশে আসতে হবে না। ব্যবহার করতে হবে না বন্দুক-বোমা। “জঙ্গিদের হাতে শুধু কম্পিউটার থাকলেই এই সন্ত্রাস ছড়ানো সম্ভব।”বলছেন সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণারত এক অধ্যাপক। এই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই দেশ জুড়ে সাইবার সন্ত্রাসবিরোধী পরিকাঠামো গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই পরিকাঠামো গড়ার নির্দেশ দিয়ে ২০১৩ সালে সব রাজ্যকে এক গুচ্ছ পরামর্শও পাঠিয়েছে ক্যাবিনেট সচিবালয়। কেন্দ্রের এক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলছেন, দিল্লি-মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে এই পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গ সেই তালিকায় এখনও পিছনের সারিতে।
সরকারি সূত্রের খবর, ২০১৩ সালের মার্চ মাসে সাইবার সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কেন্দ্রের বিপর্যয় মোকাবিলা পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ক্যাবিনেট সচিবালয়ের যুগ্মসচিব (নিরাপত্তা) রাহুল দুয়া কয়েক দফা পরামর্শ-সহ একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন এ রাজ্যে। তাতে কী ভাবে সাইবার নিরাপত্তা পরিকাঠামো গড়ে তোলা উচিত, তার আট দফা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সেই নির্দেশেই বলা হয়েছে, মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়তে হবে। সাইবার নিরাপত্তার উপরে নজরদারি এবং হানা ঠেকাতে সারাক্ষণের জন্য কন্ট্রোল রুম খুলতে হবে। এই ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে প্রত্যেকটি দফতরেও।
রাজ্যকে পাঠানো ক্যাবিনেট সচিবালয়ের পরামর্শগুচ্ছে বলা হয়েছে, রাজ্যের প্রত্যেক দফতরে এক জন করে মুখ্য তথ্য নিরাপত্তা অফিসার নিয়োগ করতে হবে। এ ছাড়াও, এক জন উচ্চপদস্থ আমলা রাজ্যের তরফে দেশের তথ্য নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম অব ইন্ডিয়ার (সার্ট ইন) সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। এর বাইরেও আরও কিছু নির্দেশ রয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।
কিন্তু সেই নির্দেশ অনুযায়ী কাজ হয়েছে কি?
রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের এক শীর্ষকর্তা জানান, ওই চিঠি পাওয়ার পরেই সব ক’টি দফতরকে তা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু দফতরগুলি তার ভিত্তিতে কী করেছে, সেটা ওই কর্তার জানা নেই। তবে তিনি বলেন, “এ রাজ্যে সাইবার হানা ঠেকানোর পরিকাঠামো একমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি দফতরেরই রয়েছে।” সেই পরিকাঠামো যে যথেষ্ট নয়, তা-ও মেনে নিয়েছেন ওই কর্তা। এ রাজ্যের এক পুলিশকর্তা বলছেন, “এ রাজ্যে এখনও ইন্টারনেট মাধ্যমের হুমকি ফোন ট্র্যাক করারই ব্যবস্থা ঠিক মতো গড়ে ওঠেনি। সে ক্ষেত্রে বড় ধরনের সাইবার হানা হলে বসে বসে দেখা ছাড়া অন্য কোনও উপায় থাকবে না।”
রাজ্যের এমন গয়ংগচ্ছ মনোভাব থাকলেও কেন্দ্র কিন্তু সাইবার সন্ত্রাসের বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখছে। বস্তুত, গত তিন-চার বছর আগে স্বরাষ্ট্র, বিদেশ-সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের কম্পিউটারে হ্যাকার হানা হয়েছিল। তার পর থেকেই সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কড়াকড়ি শুরু হয়। সেনা সূত্রের খবর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ক্ষেপণাস্ত্র-সহ অনেক কিছুই তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। তা ছাড়া, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদানপ্রদানও করা হয়। ফলে সাইবার হানা হলে সেই সব ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ কথা মাথায় রেখেই সেনাবাহিনী সাইবার নিরাপত্তায় বিশেষ বাহিনী (সাইবার কম্যান্ড) গড়ার পরিকল্পনা করেছে। এ নিয়ে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলেও খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy