Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪
Daughter

দু’দিন ধরে খাটের নীচে স্ত্রী-মেয়ের দেহ, চলল বিরিয়ানি-মদ

বেশ কিছু দিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। তার উপর বাজারে অনেক টাকা দেনাও হয়ে গিয়েছিল।

পূজা এবং মিঠু দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র।

পূজা এবং মিঠু দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাবড়া শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৮ ১২:০৯
Share: Save:

শনিবার বিকেলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরেছিল পূজা। তার পর থেকে প্রতিবেশীরা আর তাকে দেখেনি। সোমবার সকালেও পূজাকে পরীক্ষা দিতে যেতে দেখেননি তাঁরা। কাকতালীয় ভাবে ওই দু’দিন দেখা যায়নি তার মা মিঠু দেবনাথকেও। তাই জল্পনাটা বেশ ছড়িয়েই পড়েছিল।

সোমবার বিকেলে তাই পূজার বাবাকে সামনে পেয়েই এ-সব নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন তাঁরা। জানতে চেয়েছিলেন স্ত্রী-মেয়ের খবর। প্রথমে আমতা আমতা করে দু’চার কথা বললেও, পরে ছুটে বাড়ির মধ্যে ঢুকে যান বছর চল্লিশের শেখর দেবনাথ।

তখনই শেখরের পিছু নেন প্রতিবেশীরা। বাড়ির দরজা ভেঙেই ঘরে ঢোকেন তাঁরা। দেখা যায়, খাটের উপর থেকে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন শেখর। প্রতিবেশীরা তাঁকে নিরস্ত করেন। কিন্তু, ঘরময় বোঁটকা গন্ধটাও নাকে আসছিল। কীসের গন্ধ? কেনই বা শেখর আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গেলেন? এ সব নিয়ে প্রশ্ন শুরু করতেই ভেঙে পড়েন শেখর। জানান, স্ত্রী ও মেয়েকে খুন করে তিনি খাটের তলায় রেখে দিয়েছেন। চমকে ওঠেন প্রতিবেশীরা। খবর দেওয়া হয় পুলিশে।

আরও পড়ুন: মহিলারা ভাঙলেন নেশার ঠেক

শেখরের কথা মতো খাটের তলা থেকে উদ্ধার করা হয় মিঠু দেবনাথ (৩৫) এবং তাঁর মেয়ে পূজার প্ল্যাস্টিকে মোড়া মৃতদেহ। সোমবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে হাবড়া থানার বিশ্বাসহাটি এলাকায়। জখম শেখরকে প্রথমে মছলন্দপুর ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থীতিশীল।

পুলিশের কাছে জেরায় শেখর স্বীকার করেছেন, তিনিই স্ত্রী-মেয়েকে মেরেছেন। কী ভাবে? শনিবার পূজা পরীক্ষা দিয়ে বাড়ির ফেরার সময় তার মা বাড়িতে ছিল না। সেই সময় শেখর প্রথমে ভারী কাঠের টুকরো দিয়ে তার মাথায় সজোরে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে পূজা। এর পর তার গলায় শাড়ির ফাঁস দিয়ে স্বাসরোধ করা হয়। কিছু ক্ষণ পর মিঠুদেবী বাড়ি ফিরলে তাঁকেও একই কায়দায় মারেন শেখর। তার পর প্লাস্টিকে দেহ দু’টি মুড়ে ঘরের খাটের তলায় রেখে দেন। এ দিন দেহ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে ওই ঘর থেকে বিরিয়ানির প্যাকেট এবং মদের বোতলও পেয়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: অ্যাম্বুল্যান্সে ধর্ষণের চেষ্টা

কিন্তু, কেন এমন ঘটনা ঘটালেন শেখর?

প্রতিবেশীদের বেশ কিছু দিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। বাজারে অনেক টাকা দেনাও হয়ে গিয়েছিল। প্রতিবেশীরা জানান, প্রথমে ব্যাগ তৈরির কারখানা ছিল শেখরের। সেটি উঠে যাওয়ার পর কাপড় সেলাইয়ের কারবার শুরু করেছিলেন। কিন্তু, বছর খানেক আগে সেটিও উঠে যায়। চিটফান্ড সংস্থায় রাখার ফলে বেশ কিছু টাকা লোকসান করেছিলেন। তার উপর বাড়ি করার জন্য অনেক টাকা ধারও হয়ে গিয়েছিল। এ সবের জন্যই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন শেখর— অনুমান প্রতিবেশীদের। আর স্ত্রী-মেয়েকে খুনের প্রসঙ্গে শেখরের স্বীকারোক্তি, ‘‘এ ভাবে বাঁচা যায় না। আমি মরে গেলে ওদের কী হতো। তাই এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলাম।

কিন্তু, দু’জন মানুষকে খুন করার পর কী ভাবে শেখর অমন নির্বিকার ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন? এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Wife Daughter Habra হাবড়া
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE