Advertisement
০২ মে ২০২৪

মাটি পড়তে রণংদেহি ভাবাদিঘির মহিলারা

হাতে লাঠি। গাছ-কোমর করে পরা শাড়ি। রণংদেহি মূর্তি।তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেলপথ নির্মাণের জন্য গোঘাটের ভাবাদিঘিতে বৃহস্পতিবার মাটি পড়তেই কয়েকশো মহিলার তুমুল প্রতিবাদে তেতে উঠল এলাকা।

তাণ্ডব: তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর। ছবি: মোহন দাস।

তাণ্ডব: তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর। ছবি: মোহন দাস।

পী়যূষ নন্দী
গোঘাট শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৭ ০৩:২৪
Share: Save:

হাতে লাঠি। গাছ-কোমর করে পরা শাড়ি। রণংদেহি মূর্তি।

তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেলপথ নির্মাণের জন্য গোঘাটের ভাবাদিঘিতে বৃহস্পতিবার মাটি পড়তেই কয়েকশো মহিলার তুমুল প্রতিবাদে তেতে উঠল এলাকা। ডাম্পার-চালকদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তৃণমূল নেতারা মাটি ফেলার কাজে মদত দিচ্ছেন অভিযোগে দিঘি লাগোয়া দলের একটি কার্যালয়েও হামলা হয়। প্রহৃত হন চার নেতা-কর্মী। চারটি মোটরবাইক ভাঙচুর করা হয়। দু’টিতে আগুনও লাগানো হয়। পুলিশ এবং র‌্যাফ পরিস্থিতি সামলায়। দুপুরে প্রশাসন আপাতত কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলে মহিলারা শান্ত হন।

আরামবাগ মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘রেলকে আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। গ্রামবাসীদের বোঝানো হবে।’’ পূর্ব রেলের তরফে ওই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী চিফ ইঞ্জিনিয়ার সুনীল কুমার যাদব বলেন, ‘‘অযথা কাজে বাধা দেওয়া হল। কাজ যাতে নির্বিঘ্নে হয়, রাজ্য সরকারের কাছে সেই আবেদন জানানো হবে।’’

প্রায় ৫১ বিঘার ভাবাদিঘির উপর দিয়ে রেলপথ নির্মাণ নিয়ে স্থানীয়দের আপত্তি এই প্রথম নয়। ২০১০ সাল থেকে ভাবাদিঘির বাসিন্দারা বহুবার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ‘দিঘি বাঁচাও’ কমিটি গড়েছেন। কমিটির দাবি, রেলপথ দিঘির উত্তর দিকের জমি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক। কারণ, গ্রামের অর্থনীতি ওই দিঘির উপরে নির্ভরশীল। রেলের দাবি, গ্রামবাসীদের দাবিমতো কাজ করলে কারিগরি সমস্যা হবে।

এই টানাপড়েনে এত দিন আটকে রয়েছে কাজ। তবে তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর এই ৮২ কিলোমিটারের মধ্যে তারকেশ্বরের দিক থেকে গোঘাট পর্যন্ত প্রায় ৩৪ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়ে ট্রেন চলছে। উল্টো দিকে, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থেকে ময়নাপুর পর্যন্ত প্রায় ৩৩ কিলোমিটার রেলপথ তৈরি শেষ। মাঝে বাকি ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে গোঘাটের কামারপুকুর মৌজা পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ হলেও ভাবাদিঘি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নানা অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগে কমিটির কয়েকজনের বিরুদ্ধে আগে মামলা হওয়ায় তাঁরা গা-ঢাকা দিয়েছেন। শ্লীলতাহানির অভিযোগে গত সোমবার ‘দিঘি বাঁচাও কমিটি’র সম্পাদক সুকুমার রায়কেও ধরা হয়। তার পর থেকেই গ্রাম পুরুষশূন্য। এ দিন তাই মহিলারাই প্রতিবাদে নামেন।

নিজেদের তৃণমূল সমর্থক দাবি করে আন্দোলনকারী অঞ্জলি রায়ের প্রশ্ন, ‘‘সিঙ্গুরে চাষিদের স্বার্থরক্ষা হল। এখানে হবে না কেন? আমাদের সিঙ্গুরে আন্দোলনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এখন কেন দলের নেতারা বাধা দিচ্ছেন?’’ ঝর্না দাস নামে আর এক মহিলা বলেন, ‘‘আমরা প্রকল্পে বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু দিঘির কিছুটা বোজানো হলেও মাছ ধরায় সমস্যা হবে।’’ আন্দোলনকারীদের দলীয় সমর্থক হিসেবে মানতে চাননি গোঘাটের তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদার। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সমর্থক হলে কেউ দলের কার্যালয়ে হামলা চালায়?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhabadighi Village Women
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE