ডিসেম্বরের প্রথম ১৫ দিন চলে যাওয়ার পরে শনিবার সবে একটু ঠান্ডার আমেজ। তবে জাঁকিয়ে শীত বলতে যা বোঝায়, তা এখনও পড়ল না কলকাতা ও লাগোয়া এলাকায়। ফলে শীতের শহরে কোন উপাদান বাতাসকে কতটা বিষিয়ে তুলছে এবং তার উৎসই বা কী, কলকাতা ও হাওড়ায় তা মাপার কাজ এখনও শুরু করা গেল না।
পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও ‘নিরি’ (ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট) যৌথ ভাবে ওই কাজ এ বছর শুরু করেছে। কোন উপাদান বাতাসকে কতটা দূষিত করছে, তা মাপার কাজ গ্রীষ্মকালে হয়েছে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। শীতে সেই কাজ শুরু করার কথা ছিল নভেম্বরের শেষ, খুব দেরি হলে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে। এখন ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ। কিন্তু আবহাওয়া বা তাপমাত্রা প্রতিবন্ধক হয়ে দেখা দিয়েছে শীতে ওই কাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু করার ক্ষেত্রে।
শনিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেটাও স্বাভাবিকের চেয়ে এক ডিগ্রি বেশি। পর্ষদ ও নিরি-র বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, কলকাতা ও লাগোয়া এলাকায় বাতাসে দূষণের পরিমাণ সব চেয়ে বেশি হয় শীতে। ঠান্ডা যত বাড়ে, বাতাস তত ভারী হয় এবং সূক্ষ্ম ও অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণাগুলি বাতাসে ভাসতে থাকে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সেই আবহাওয়া বা তাপমাত্রার হদিস মিলল না ডিসেম্বরের প্রথম ১৫ দিনেও।
এক বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘বহু বাড়িতে ও অফিসে শুক্রবারও পাখা চলেছে। কেউ কেউ এসি-ও ব্যবহার করছেন। শীত নয়, ডিসেম্বরের প্রথম ১৫ দিন বাতাসের অবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই ছিল গরম কালের মতো।’’ ওই বিজ্ঞানী জানান, কলকাতা ও লাগোয়া এলাকার বাতাসে দূষণ সব চেয়ে বেশি থাকে শীতকালে। কিন্তু এখন ক্যালেন্ডারের হিসেবে শীতকাল হলেও তাপমাত্রা অনুযায়ী শীত তেমন পড়েনি। দূষণের উৎসের পরিমাণ নির্ধারণ করতে গেলে শীতকালীন বাতাসের ঠিক চিত্র এখন বোঝা যাবে না। কবে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়বে, অপেক্ষা তারই জন্য।
পর্ষদ ও নিরি সূত্রের খবর, শনিবার যেমন ঠান্ডার আমেজ অনুভূত হয়েছে, সেটা অব্যাহত থাকলে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে, অর্থাৎ বড়দিন ও বছরের শেষ ক’টা দিন জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আগামী সপ্তাহ বা বড়দিন থেকে শীতকালীন বায়ুদূষণের উৎস মাপার কাজ শুরু হতে পারে। এই পর্যায়ে দূষণের উৎস মাপার কাজ চলবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
শীতে হাওড়ার চার জায়গায় যন্ত্র বসিয়ে দূষণের উৎস মাপা হবে। গ্রীষ্মে কেবল এক জায়গায় ওই কাজ হয়েছিল। সেটা বাঁধাঘাটে। হাওড়া পুরসভার কাছে আরও তিনটি জায়গা চেয়েও পায়নি নিরি ও পর্ষদ। ঠিক ছিল, বাঁধাঘাটের পাশাপাশি ঘুসুড়ি পাম্পহাউস, বেতড় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাওড়া পুরসভা ভবনে যন্ত্র বসানো হবে, বিভিন্ন উপাদানের কোনটা কত দূষণ ঘটাচ্ছে, তা মাপতে। কিন্তু হাওড়া পুরসভাকে একাধিক বার চিঠি দেওয়া হলেও তারা সাড়াশব্দ করেনি।
শেষমেশ পর্ষদের উদ্যোগে যন্ত্র বসানোর বিকল্প জায়গা হিসেবে কদমতলার অক্ষয় শিক্ষায়তন, দাসনগরের অ্যাডভান্সড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও বাকসাড়া হাইস্কুল চূড়ান্ত হয়েছে। শুক্রবার নিরি-র একটি দল ওই তিনটি জায়গার অবস্থা খতিয়ে দেখতে যায়।
কলকাতার ছ’টি জায়গায় অবশ্য গ্রীষ্মে বায়ুদূষণের উৎস মাপার কাজে কোনও সমস্যা হয়নি। মৌলালি, শ্যামবাজার, ডানলপ, মিন্টো পার্ক, চেতলা ও বৈষ্ণবঘাটা-পাটুলিতে গ্রীষ্মকালের মতো শীতেও যন্ত্র বসবে।
গরমে কলকাতার বাতাসকে বিষিয়ে তোলার ক্ষেত্রে কোন উপাদানের অবদান বেশি, কার কম, সে সব এখন মাপার কাজ চলছে গবেষণাগারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy