Advertisement
০৩ মে ২০২৪

মুসলিমদের দলে টানতে সঙ্ঘই ভরসা বিজেপির

লোকসভা নির্বাচনে দেশ জুড়ে বিপুল সাফল্য সত্ত্বেও রাজ্যে তাদের দু’টির বেশি আসন জোটেনি। কারণ খুঁজতে নেমে বিজেপি-র মস্তিষ্করা জানাচ্ছেন--নিবার্চনী প্রচারের শেষ পর্বে মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন পদ্ম ও জোড়া ফুলের মেলবন্ধনের সম্ভাবনা নেই। আর তার জেরেই রাজ্যের মুসলিম ভোটের সিংহভাগই ফিরে গিয়েছিল মমতার ভোটবাক্সে।

দিবাকর রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০৩:৩২
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচনে দেশ জুড়ে বিপুল সাফল্য সত্ত্বেও রাজ্যে তাদের দু’টির বেশি আসন জোটেনি।

কারণ খুঁজতে নেমে বিজেপি-র মস্তিষ্করা জানাচ্ছেন--নিবার্চনী প্রচারের শেষ পর্বে মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন পদ্ম ও জোড়া ফুলের মেলবন্ধনের সম্ভাবনা নেই। আর তার জেরেই রাজ্যের মুসলিম ভোটের সিংহভাগই ফিরে গিয়েছিল মমতার ভোটবাক্সে। এমনকী মুসলিম প্রভাবিত এলাকায় বামফ্রন্ট কিংবা কংগ্রেসের যে ভোট-ব্যাঙ্ক ছিল তাও ঢলে পড়েছিল ‘দিদি’র দিকেই।

এ বার তাই রাজ্য জুড়ে মুসলিম ভোটের খোঁজে নামতে চলেছে বিজেপি। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএস-এর সম্মতিও রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। মুসলিমদের দলে টানার চেষ্টায় ইতিমধ্যেই সক্রিয় হয়েছে সঙ্ঘের শাখা সংগঠন মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চ।

এ রাজ্যে নদিয়া, কোচবিহার ও উত্তর ২৪ পরগনায় বিজেপির ছায়ায় তাদের প্রচার শুরু করেছে মঞ্চ। ওই ৩ জেলায় মুসলিমদের যথেষ্ট প্রভাব। নদিয়ার করিমপুর ১ ব্লকের সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম পাকশিতে প্রায় ১২০০ বাসিন্দা বিজেপিতে যোগ দেন। যাঁদের অনেকেই মুসলিম। তাঁদের বিজেপিমুখী করার পিছনে মঞ্চের প্রভাব রয়েছে বলেই দলীয় সূত্রে খবর। স্থানীয় গ্রামবাসী লিটন শেখ, জয়নাল শেখরা বলছেন, “তৃণমূলের অত্যাচার থেকে বাঁচতে, গ্রাম ও সমাজের উন্নয়নের স্বার্থেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছি।” দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের মতো তৃণমূল দূর্গে সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।

সঙ্ঘের রাজ্যের প্রথম সারির এক নেতা বলেন, “বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারী মুসলমানদের জন্য এই দেশের বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সীমান্ত লাগোয়া জেলায় তার প্রভাব সবচেয়ে বেশি। স্থানীয় মুসলমানদের স্বার্থ দেখা হচ্ছে না। সে কারণে ওই সব জেলায় মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের কাজের সুযোগ রয়েছে। আমরা সে সুযোগ হাতছাড়াও করছি না।”

মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চ গড়ার প্রস্তুতি অবশ্য নতুন নয়। ২০০২ সালে প্রাক্তন সঙ্ঘপ্রধান কে সুদর্শনের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চ। দায়িত্বে ছিলেন সঙ্ঘের অন্যতম চালক ইন্দ্রেশ কুমার। প্রাথমিক ভাবে তিনি ছিলেন জম্মুতে, সঙ্ঘের প্রান্ত প্রচারক হিসেবে। সারা দেশে ঘুরে মুসলিমদের মধ্যে সংগঠন তৈরির চেষ্টা শুরু হয় তাঁর নেতৃত্বেই। আরএসএস সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বারো বছরে দেশের তিনশোরও বেশি জেলায় ওই মঞ্চ তাদের সংগঠন তৈরির চেষ্টা করছে।

মঞ্চ গড়ার প্রাথমিক কাজে ইন্দ্রেশ যে সফল প্রায় দশ লক্ষ সদস্য সংগ্রহ তারই প্রমাণ বলে আরএসএস-এর দাবি। ওই সংগঠনের জাতীয় আহ্বায়ক মহম্মদ আফজল জানান, দেশের ২৯টি রাজ্যে ৬৭২টি জেলার মধ্যে ২৬টি রাজ্যেই তারা মঞ্চ গড়া শুরু করেছেন। প্রায় ৩০০ জেলায় মঞ্চের সংগঠন তৈরিও হয়েছে বলে তাঁর দাবি।

আফজল বলেন, “গোধরা কাণ্ড ও পরবর্তী দাঙ্গার জেরে সংগঠনকে প্রতিকূলতার মুখে পড়তে হয়েছিল। তবে সেই পরিস্থিতি অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে।” ২০০৮-এ লালকেল্লা থেকে ‘পয়গাম-ই-আমনযাত্রা’ শুরু করে মঞ্চ। মুসলমান যুবকদের সেই যাত্রায় সামিল করতে সফল হয়েছিলেন তাঁরা বলে আফজল জানাচ্ছেন। ২০০৯-এ জামায়াতে-উলেমা-ই-হিন্দ ‘বন্দেমাতরম’কে ইসলাম বিরোধী তকমা দেওয়ার প্রতিবাদ করে ওই সংগঠন স্পষ্ট করেছে তাদের লক্ষ্য।

গুজরাতে সংগঠন অনেকটাই শক্তিশালী বলে দাবি আরএসএসের। উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং কর্নাটকেও সংগঠনের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বারাণসীতে নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী প্রচারে যোগ দিয়েছিলেন ইন্দ্রেশ কুমার। মূলত তাঁর ইচ্ছেতেই মুসলিমদের একটি অংশ নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী প্রচার করেন। এ ছাড়াও মুসলিম মহিলা প্রভাবিত বারাণসীর ভারতীয় আওয়াম পার্টিও (রাষ্ট্রীয়) ইন্দ্রেশ কুমারের কথাতেই মোদীর হয়ে ভোটের কাজ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। এ রাজ্যেও ইন্দ্রেশের প্রভাব খাটবে? জোড়া ফুলের ছায়া থেকে সংখ্যালঘু ভোটের একটা অংশ মঞ্চের হাত ধরে ‘পদ্ম বনে’ ফিরবে কি, এখন তা-ই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

muslim bjp dibakar roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE