Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দ্রুতলয়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে হলে লুঙ্গি ডান্সও শুনতে হবে

বলছেন জয়তী চক্রবর্তী। তাঁর মুখোমুখি স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ট্যাক্সি ক্যাব চড়েও আধ ঘণ্টা লেট। ফোনেই বলেছিলেন চিজ চিলি টোস্ট আর কফি খেতে খেতে আড্ডা দেবেন। এত প্ল্যানিংয়ের পরেও রাস্তা হারিয়ে বেশ খানিকটা নাজেহাল লাগছিল জয়তী চক্রবর্তীকে।

ছবি: কৌশিক সরকার

ছবি: কৌশিক সরকার

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:১৮
Share: Save:

ট্যাক্সি ক্যাব চড়েও আধ ঘণ্টা লেট। ফোনেই বলেছিলেন চিজ চিলি টোস্ট আর কফি খেতে খেতে আড্ডা দেবেন। এত প্ল্যানিংয়ের পরেও রাস্তা হারিয়ে বেশ খানিকটা নাজেহাল লাগছিল জয়তী চক্রবর্তীকে।

কলকাতার রাস্তা খুব একটা চেনেন না, না?

আসলে বেশির ভাগ সময় গাড়ি থাকে। নয়তো বর নিয়ে যায়। রাস্তাটা খুব ভাল চেনা হয়নি তাই।

শুনেছি আপনার গানের রাস্তাটাও আপনার বরই তৈরি করে দিয়েছেন?

বরই ঠেলে ঠেলে পাঠায় আমাকে। আমি ভুলে যাই কোথায় কী কী কাজ করলাম। ও সব মনে করিয়ে দেয়। মনোময়দা (ভট্টাচার্য), রূপঙ্করদা (বাগচী) তো প্রায়ই বলে যে গানের জন্য কোথায় কী করতে হয়, তুই আজও শিখলি না। লোপাদি (মিত্র) তো বেশ রেগেই বলে, ‘‘তোকে ধাক্কা না মারলে তুই কি কিছুই করবি না!’’

আপনি তো খুব লাকি। সিনিয়রদের সাহায্য পান!

সত্যি কথা বলি একটা? আমি আসলে কারও সঙ্গে কুচুটেপনা করি না তো!

শোনা যায় শ্রীকান্ত আচার্য না থাকলে নাকি জয়তী চক্রবর্তী আজ এত দূরে আসতে পারতেন না?

এই প্রশ্নের উত্তর শ্রীকান্তদাই দেবেন। তবে শ্রীকান্তদা খোলাখুলি সকলের মাঝে আমার গানের প্রশংসা করেন। শ্রীকান্তদা নিজে এত বড় শিল্পী। ভাল গান শুনলে জোর গলায় সেটা বলতে জানেন। আর লোকেও হয়তো ভাবে শ্রীকান্ত আচার্য যখন বলছেন, মেয়েটার গান একবার শোনা যাক। রবীন্দ্রনাথের গান কী ভাবে গাইতে হয়, শিখেছি সুভাষ চৌধুরীর কাছে। আবার বিমান মুখোপাধ্যায়ের কাছেও দীর্ঘ দিন তালিম নিয়েছি। ক্লাসিক্যাল শিখেছি সনাতন বন্দ্যোপাধ্যায়, শম্ভুনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে। কেরিয়ারের শুরুতে যেমন দেবাশিসদার (গঙ্গোপাধ্যায়) প্রচুর সাহায্য পেয়েছি। একটু চিজ চিলি টোস্ট খাই? (বলে নিজেই অর্ডার দিলেন।)

আপনি খুব ফুডি, না?

খুউব!

জিমে যান?

আরে, আমাকে দেখে মনে হয় কখনও জিমে গেছি? আমি তো মজা করে বলি পৃথিবীর সব ভার বহন করছি আমি।

হোয়াটসঅ্যাপেও তো আপনাকে পেলাম না।

সবাই বকে ধমকে জয়েন করিয়েছে আমায়। বলেছে গান শেয়ার করা শেখ। টেকনোলজি নিয়ে অত ভাবিস না।

কিন্তু শাড়ি নিয়ে প্রচুর ভাবেন।

ও হ্যাঁ। শো করে টাকা পেলাম, ব্যস, গিয়ে দারুণ দু’টো শাড়ি কিনে ফেললাম।

এই যে আপনি শো-এর টাকায় প্রথমেই শাড়ি কেনার কথা ভাবেন। বেশির ভাগ শিল্পীর কাছে শো-টাই রুজি...

ঠিকই বলেছেন। এ দিক থেকে আমি খুব লাকি। আমার স্বামীর সহযোগিতা পেয়েছি বলে গানটা ভালবেসে গাই। আমার কাছে টাকা নয়, সম্মানটাই আসল। বড় বড় ব্যানারে গান গাইতেই হবে, থেকে থেকেই আমেরিকা যেতে হবে, মিডিয়ার সঙ্গে রোজ যোগাযোগ রাখতে হবে— এই রুটিনটা আমার পছন্দ নয়। ছেলেকে সময় দিই।
মনে হয় এটা অনেক দেওয়া হল।
আমি আসলে অল্পেতে সন্তুষ্ট। তাই খুব সুখী। তবে সিনেমায় প্লেব্যাক করাটা আমার কেরিয়ারে একটা
টার্নিং পয়েন্ট। যেমন ‘ছ-এ ছুটি’, ‘একটি তারার খোঁজে’, ‘মুক্তধারা’, ‘বোধন’, ‘বাঁশিওয়ালা’, ‘তখন তেইশ’। অতনু ঘোষের ‘তখন তেইশ’-এ পাওলির লিপে অতুলপ্রসাদের গান গেয়েছি। সামনে আসছে ‘ভালবাসার বাড়ি’।

কখনও মনে হয়েছে ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথের গানটা গাইতাম?

খুব মনে হয়েছে। নিজের গান গাইব ভেবেই প্রাইভেট অ্যালবাম করেছিলাম। কিন্তু লোকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবেই চিনল আমায়।

রবীন্দ্রনাথের গানে আপনি একটা কমার্শিয়াল টাচ দেন...

অনুষ্ঠানে পাখোয়াজের সঙ্গে ‘বহে নিরন্তর আনন্দধারা’ গাইলে খুব বোল্ডলি গাই। কিন্তু ওই একই গান ‘মুক্তধারা’ ছবিতে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর লিপ-এ গাইলে তার রেন্ডিশন নিশ্চয়ই আলাদা হবে। আর জয়দা (সরকার) এমন ভাবে মিউজিক অ্যারেঞ্জ করেছিলেন, গানটার চেহারাই বদলে গিয়েছিল। সব রকম গান শুনতে হবে।

সব রকম বলতে?

দ্রুতলয়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে গেলে কিন্তু ‘লুঙ্গি ডান্স’ও শুনতে হবে। এটা বলার জন্য গালাগাল খাব না। কেউ যদি বাড়িতে ফাস্ট ট্র্যাক হিন্দি গান শুনতে থাকেন, তা হলে তাঁর যে কোনও গানের লয়-টা দারুণ রপ্ত হবে। একটা গান কতটা স্মার্ট বা পরিচ্ছন্ন হবে, সেটা কিন্তু নির্ভর করে গানের লয়ের ওপর।

এখনকার হিন্দি গান শুনছেন?

অরিজিৎ সিংহের গান খুব ভাল লাগে। আরেক জনও আছেন। আবার গালাগাল খাব। আতিফ আসলামের কয়েকটা গান খুব পছন্দ।

আচ্ছা আপনি সোমলতার মতো মঞ্চে দাঁড়িয়ে জিন্স পরে কলেজের ফ্রেশার্স মাতাতে পারবেন?

সোমলতার নিজস্ব স্টাইল আছে। ও ওর যোগ্যতায় এত মানুষের প্রিয় হয়েছে। ওর মতো বডি মুভমেন্ট আমি করতে পারব না। তবে আমারও নিজস্ব দর্শক আছে। যাঁরা আমার গান, আমার শাড়ি, আমার সাজেই আমাকে দেখতে চান। প্রচুর মধ্যবয়স্ক দর্শক আছেন যাঁরা আমার গান শুনে আজও হাত ধরে কাঁদতে শুরু করেন।

নতুন প্রজন্মও কি আপনার গান শোনে?

অবশ্যই। যাঁরা গানের মধ্যে থাকতে ভালবাসেন, আর যাঁরা গান শেখেন, তাঁরা বেশির ভাগই আমার গানের ভক্ত। তবে একটা মজার
কথা বলি?

বলুন না...

আমার তিন জন ফ্যান আছেন। শয়নে, স্বপনে তাঁরা আমাকে এবং আমার গানকে নিয়েই থাকেন। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটও হয়। তাঁরা কিন্তু এই প্রজন্মের...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE