Advertisement
E-Paper

অস্থির, শূন্যতা আর একাকিত্ব

উত্তর কলকাতার নিজস্ব গন্ধ আছে। তার চওড়া দালানকোঠা জুড়ে রয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্মের শৈশবের এক্কাদোক্কা।

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:১২
ছবিতে জয় সেনগুপ্ত।

ছবিতে জয় সেনগুপ্ত।

বিলু রাক্ষস

পরিচালনা: ইন্দ্রাশিস আচার্য

ভিনয়: জয় সেনগুপ্ত, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, কাঞ্চনা মৈত্র

৫/১০

এই সময়টা বড় অস্থির। মানুষ অস্থির, মানুষের প্রবৃত্তি অস্থির। সমাজও অস্থির। আর ‘বিলু রাক্ষস’-এ সেই অস্থির মানুষের জীবনের গল্পই বুনেছেন ইন্দ্রাশিস আচার্য।

উত্তর কলকাতার নিজস্ব গন্ধ আছে। তার চওড়া দালানকোঠা জুড়ে রয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্মের শৈশবের এক্কাদোক্কা। অলিগলি দিয়ে হেঁটে গেলে পাওয়া যায় কুমড়ো ফুলের বড়া, মাছ ভাজার গন্ধ। পড়ন্ত বেলায় রেলিংয়ের উপরে খেলে বেড়ায় রোদের কাটাকুটি। আর সেই বা়ড়িগুলোরই ছাদের আনাচে-কানাচে ঘুড়ি উড়িয়ে বড় হয় বিলু (জয় সেনগুপ্ত)। তার বেড়ে ওঠার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকে গান। এক প্রেমের হাত ধরে বিলুর জীবনে আসে আর এক প্রেমিকা সোহিনী (কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়)। জীবিকার খাতিরে প্যাশন সরে গিয়ে জায়গা করে দেয় আইটি সেক্টরের চাকরিকে। টার্গেট হাতানোর চরকিপাকে দূরে সরতে থাকে গান। বাড়তে থাকে বউয়ের সঙ্গে দূরত্বও। এ ভাবেই চলে বিলুর অবিরাম ছুটোছুটি। আর সেই ছুটে চলার মাঝেই হারিয়ে যেতে থাকে মা, বাবা, বউ, ছেলে, কৈশোরের ভাল লাগা রানুদি (কাঞ্চনা মৈত্র), ফেলে আসা গ্রাম— একের পর এক হাত। নিজের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝে বিলু একটা সময়ে আর মানুষ থাকে না, হয়ে ওঠে
যেন রাক্ষস।

টাকার জন্য ছেড়ে যাওয়া শখ, ‘বিপজ্জনক বাড়ি’ ভেঙে আধুনিক খুপরির মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা, সংসারী জীবনের একঘেয়েমি, কমতে থাকা উড়ানের পরিসর আর সর্বোপরি বিলু নিজেই নিজের ভিতরের এই রাক্ষসের জন্মদাতা।

‘বিলু রাক্ষস’ ছবির গল্পটা প্রাসঙ্গিক। আর প্রয়োজনীয়। অন্তত আমরা যারা আমাদের পুরনো কলকাতার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছি প্রতিনিয়ত, অথচ শিকড়ের টানে যাদের রাতগুলো ভরে ওঠে অবিরাম রক্তক্ষরণে, তারা সবচেয়ে বেশি মিল খুঁজে পাবে বিলুর সঙ্গে। তিলোত্তমা যতই আধুনিক হোক, পুরনো কলকাতার টান এড়ানো বড় কঠিন। আর সেই টানের সুরই উঠেছে জয় সরকারের শিল্পে, যা এক কথায় অনবদ্য।

পুরনো বাড়ির ঘোরানো সিঁড়ি, একই ফ্রেমে বিলু ও মা-বাবার ঘর, ধোঁয়াটে নদীতে নিরন্তর ভেসে চলা... ক্যামেরার কাজ কিছু জায়গায় নজর কাড়ে বইকী। তবে সমস্যা রয়ে গিয়েছে আখ্যান আর চিত্রনাট্যের কিছু দুর্বলতায়।

বিলুর চরিত্রে জয় সেনগুপ্ত অস্থির। চরিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই। জয় রাক্ষস কম, মানুষ হয়েছেন অনেক বেশি। তবে এই ছবির সেরা প্রাপ্তি কনীনিকা। প্রেমিকার অধোবদন, বউয়ের বিরক্তি-হতাশা-ক্ষোভ...স্বল্প পরিসরেও কনীনিকা নিজেকে মেলে ধরেছেন দাপটের সঙ্গে।

পুরনো-নতুনের দ্বন্দ্ব, ক্রমশ একা হয়ে যাওয়ার উপাখ্যান, মানুষের রাক্ষস হয়ে ওঠা আর রাক্ষসের মানব-শিকড় খুঁজে ফেরার গল্প বলতে গিয়ে পরিচালক মুঠো ভর্তি বালি নিয়েছেন। ফলে নিজের অজান্তেই আঙুলের পাশ দিয়ে খসে পড়েছে বেশ খানিকটা। তাই মুঠো খুলতেই চোখে পড়ে অনেকটা শূন্যতা... বিলুর জীবনের মতোই।

Bilu Rakkhosh Bengali Movie বিলু রাক্ষস
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy