Advertisement
০৭ মে ২০২৪

পাস্তা থেকে পোস্ত

পাত্রপক্ষ মেয়ে দেখতে আসছে। অথচ মেয়ে কোনও রান্নাই জানে না কী করবেন? খোঁজ দিচ্ছেন অদিতি ভাদুড়িমুম্বইতে ডাব্বাওয়ালারা নিজেদের কোম্পানি খুলছেন। ভবিষ্যতে এমএনসি-র সঙ্গে টাই আপ করে তাঁরা খাবার ডেলিভারিও করবেন কাস্টমারদের। ফিরি চলুন এ শহরে। মোচার ঘণ্ট, শুক্তো, আলুপোস্ত, ভেটকি মাছের পাতুরী— উঁহু, একটু ভুল হল। লিস্টিতে পাস্তা, বিরিয়ানি, মোগলাই, মাটন স্টেকও কিন্তু হাজির।

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

মুম্বইতে ডাব্বাওয়ালারা নিজেদের কোম্পানি খুলছেন। ভবিষ্যতে এমএনসি-র সঙ্গে টাই আপ করে তাঁরা খাবার ডেলিভারিও করবেন কাস্টমারদের। ফিরি চলুন এ শহরে। মোচার ঘণ্ট, শুক্তো, আলুপোস্ত, ভেটকি মাছের পাতুরী— উঁহু, একটু ভুল হল। লিস্টিতে পাস্তা, বিরিয়ানি, মোগলাই, মাটন স্টেকও কিন্তু হাজির। না, রেস্তোরাঁর মেনুকার্ডের কথা বলছি না। পাতি হোম ডেলিভারির কথাই বলছি। তবে ভুলেও পাতি বলবেন না। হোম ডেলিভারির কায়দা-কানুনই যে বদলে গিয়েছে হালে। আর শীতের ফুরফুরে ঠান্ডায় খাওয়ার মেজাজটাও যোল আনা। থু়ড়ি বা়ড়়ির রান্না কি রোজ পোষায়! এদিকে রোজ হোটেলে খাওয়ার রেস্তও তো কুলোনোর নয়। কাজেই...

এসো বসো আহারে

দেবজ্যাতি সমাদ্দার গল্ফ গ্রীনে তাঁর হোম ডেলিভারি চেন করেছেন প্রায় ১৩ বছর। তারাতলার হোটেল ম্যানেজমেন্টের এই প্রাক্তন ছাত্র বললেন, “আমাদের এখানে কিন্তু ডাইন-ইন ব্যবস্থা পাবেন না। অর্ডার করার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আমরা খাবার পৌঁছে দিই। আর ফয়েল প্যাক ছাড়া ব্যবহার করি না। খাবারটা যাতে হাইজিনিক উপায়ে ডেলিভারি করা যায়, সেটাও তো দেখতে হবে। তাই টিফিন কেরিয়ার আমরা মোটেই ব্যবহার করি না।”

তা কি আছে ওঁদের মেনুতে? সনাতন বাঙালি খাবার তো বটেই, বিরিয়ানি, চিকেন চাঁপ, ডাব চিংড়ি, চিকেন কবিরাজি, চাইনিজ সব রকম স্পেশালিটি খাবারই ওঁরা বানান কাস্টমারদের জন্য। গাড়ি করে খাবার ডেলিভারি করে দেবজ্যোতির সংস্থা। আর ক্লায়েন্ট লিস্টে কে নেই! “ঋতুদা (পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ) খুব ভালবাসতেন আমাদের তৈরি খাবার খেতে। পছন্দ করতেন, ফিশ ফ্রাই, কচুবাটা। যেহেতু উনি ডায়াবেটিক ছিলেন, তাই ওঁর জন্য চাটনি বানাতাম সুগার-ফ্রি দিয়ে। ঋতুদার ‘সত্যান্বেষী’, ‘চিত্রাঙ্গদা’ ইউনিটের খাবারও আমরাই দিতাম” জানালেন তিনি।

আহারে বাহারে

সল্টলেকে ইন্দ্রাণী ব্রহ্মর হোম ডেলিভারি সংস্থা প্রায় ১৪ বছরের। এখন তো ছোটখাটো গেট-টুগেদার, পার্টি এমনকী বিয়েবাড়িতেও কেটারিং করে তাঁর সংস্থা। গোটা শহর জুড়েই ছড়িয়ে ইন্দ্রাণীর ক্লায়েন্টরা। সেলিব্রিটি থেকে সাধারণ মানুষ, সবাই তাঁর খাবারের ভক্ত। “আমার ক্লায়েন্টরা আবার বিভিন্ন ধরনের খাবার অর্ডার করেন। যেমন মারোয়াড়ি বিয়ের খাবার বানাতে আমাকে মহারাজ নিয়ে আসতে হয়। আবার বিরিয়ানি বানাতেও আলাদা ঠাকুর নিয়ে আসি,” বলেন ইন্দ্রাণীদি। আপাতত তিন জন রান্নার ঠাকুর নিয়ে রমরমিয়ে চলছে ইন্দ্রাণীর ফ্যামিলি বিজনেস যা এক সময় তিনি তৈরি করেছিলেন কিছুটা শখে। আর বাকিটা সেই সব মানুষের কথা ভেবে, যাঁরা অনেক কারণবশত রান্না করার সুযোগ পান না বা অসুস্থ। অথচ ঘরের খাবার না হলে যাঁদের চলবেও না। কথায় কথায় বললেন, “জানেন, এমনও অর্ডার পাই যে পাত্রপক্ষ মেয়ে দেখতে আসছে। অথচ মেয়ে কোনও রান্নাই জানে না। কাজেই রান্নায় যাতে ঘরের মেজাজ থাকে সেই কারণে বাড়ির পিছনের দরজা দিয়েও খাবার পৌঁছে দিতে হয়েছে আমাদের।”

শখ... তবু পেশা হয়

সল্টলেকের রীতা চট্টোপাধ্যায়ের রান্নার প্রশংসা করতেন পাড়া-পড়শি থেকে বাড়ির লোক। নিজের পোষ্য কুকুর ছাড়াও পাড়ার আরও ১১-টা কুকুরকে নিত্যদিন খাওয়াতেও হয় তাঁকে। সেই থেকেই শুরু। হোম ডেলিভারি শুরু করেছেন তিন বছর হয়ে গিয়েছে। নিজে রাঁধেন। আর সঙ্গে সাহায্যের জন্য একজন থাকে। সুন্দর অ্যালুমিনিয়াম মোড়কে ফয়েলবন্দি হয়ে তাঁর খাবার পৌঁছে যায় কাস্টমারদের বাড়ি-বাড়ি। তবে ঘরোয়া রান্নাই করেন রীতাদি। কখনও কখনও ফ্রায়েড রাইস-চিলি চিকেনও বানিয়ে দেন কাস্টমারদের। আর খাবারগুলো দামেও ঠিকঠাক। তাই পাতি মাছ-ভাত হোক বা চিকেন কিংবা মাটন, দামটাও খুশি করে দেয় ক্রেতাদের।

ঘর ছেড়ে পরবাসী আইটি ফার্মের চাকুরে সৌম্যদীপ হোম ডেলিভারি ফুডেই অভ্যস্ত। বললেন, “আমি যেখান থেকে খাবার নিই ওরা হাইজিনের ব্যাপারটা খুব মেনে চলে। আর খাবারটাও ঘরোয়া। হোটেলের খাবার রোজ খেলে আর দেখতে হবে না। কখনও কখনও চাইনিজ বা চাইলে কন্টিনেন্টালও বানিয়ে দেয় ওরা। যদিও সেটা মাসে এক-আধবার।”

আর হ্যাঁ, শুধুই যে রান্না করতে পারেন না এমন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বাড়ি ডেলিভারি মারফত খাবার পৌঁছচ্ছে এমনটা ভাববেন না। নামীদামী ডাক্তারবাবু থেকে শুরু করে ফিল্ম ইউনিট, মায় পাত্রী দেখতে আসা বাড়ি থেকে খ্যাতনামা ফুটবলার টেন্ট, ডেলিভারি মোডে এখন খাবার পৌঁছে যাচ্ছে যত্রতত্র সর্বত্র। সার কথা একটাই, খাবারের মধ্যে থাক ঘরের ছোঁয়া। আর স্বাদের সঙ্গে থাকুক স্বাস্থ্যও।

খানা ইসিকা নাম হ্যায়

১. টিফিন কেরিয়ার এখন বিগতযৌবনা। খাবার এখন ডেলিভারি হয় ফয়েল প্যাকে। তাই খাবারও থাকল, স্বাস্থ্যও বাঁচল।

২. আগে টুকটাক সাইকেলে করেই কাস্টমারদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হত খাবার। হালে দু’চাকা ছেড়ে চারচাকায় সওয়ারি হয়ে সেই খাবার একদম ফোর-জি স্পিডে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে।

৩. রকমারি মাল্টিকুইজিন খাবারও পেয়ে যাবেন ডেলিভারিতে। তবে আগে থেকে জানিয়ে রাখতে হবে ডেলিভারি সংস্থাকে।

৪. বেশিরভাগ হোম ডেলিভারি সংস্থাই কিন্তু আজকাল ছোটখাটো গেট টুগেদারে বা পার্টিতেও খাবার সরবরাহের দায়িত্ব নেয়। তাই আপনার বাড়িতে কোনও ইভেন্ট থাকলে অনায়াসেই যোগাযোগ করে নিতে পারেন এদের সঙ্গে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE