Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘শবর’‌য়ে মেওয়া ফলে

স্বপ্ন দেখেন বচ্চনের সঙ্গে অভিনয় করার। বিশ্বাস করেন কেউ উত্তমকুমার হতে পারবে না। ‘ঈগলের চোখ’ মুক্তির আগে আক্রমণাত্মক শবর গোয়েন্দা। সামনে ইন্দ্রনীল রায়স্বপ্ন দেখেন বচ্চনের সঙ্গে অভিনয় করার। বিশ্বাস করেন কেউ উত্তমকুমার হতে পারবে না। ‘ঈগলের চোখ’ মুক্তির আগে আক্রমণাত্মক শবর গোয়েন্দা। সামনে ইন্দ্রনীল রায়

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০২:০০
Share: Save:

কেমন আছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়?

কাজে-কম্মে-অকাজে ভালই আছি...

অকাজ?

অকাজ বলতে এখন একটা ছবির শ্যুটিং ক্যানসেল হয়েছে। তাই বাড়িতে টাইমপাস করছি। সেট টপ বক্স খারাপ বলে ডিভিডি-তে সিনেমা দেখছি...

নিজেকে কি একটু সরিয়ে নিয়েছেন ইন্ডাস্ট্রি থেকে?

আমি তো কোনও দিনই সাঙ্ঘাতিক পার্টি করার লোক নই। শ্যুটিং আর বাড়ি — এই তো শিডিউল।

শ্যুটিং আর বাড়ি। আর এখন মাঝেমধ্যে মুম্বই। টালিগঞ্জের স্টুডিয়ো থেকে শাশ্বত এখন নাকি বেশি কমফর্টেবল অনুরাগ বসু-র সেটে রণবীর আর ক্যাটরিনার সঙ্গে…

(হাসি) না, না। সে রকম কিছু না। সবে তো দ্বিতীয় হিন্দি ছবি করছি ‘কহানি’র পর। আমার থেকে অনেক বেশি হিন্দি ছবি করেছে, এমন বহু মানুষ কলকাতায় রয়েছে। বেণুদা (সব্যসাচী চক্রবর্তী)কেই ধরুন না। বেণুদা অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে দু’টো ছবিতে অভিনয় করেছে। ওই স্বপ্নটা তো আজও আমার অধরা।

ওই স্বপ্নটা আছে তার মানে?

অবশ্যই। এই তো ‘তিন’‌য়ের স্পেশাল শো-তে সুজয় ঘোষ আলাপ করিয়ে দিল। বাবার কথা বলাতে মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদও করলেন। পরে সুজয়কে বললাম, গুরু একটা সুযোগ দাও মিস্টার বচ্চনের সঙ্গে অভিনয় করার। একটা সিন হলেও আমি রাজি। কিছুই তো করা হল না... (হাসি)

‘শবর’ তো হল। টাইটেল রোল। শহর জুড়ে ‘ঈগলের চোখ’‌য়ের পোস্টার।

হ্যাঁ, ‘শবর’ যে করেছি সেটা হাড়ে মজ্জায় বুঝতে পেরেছি। যা খাটিয়েছে পরিচালক অরিন্দম শীল আর ফাইট মাস্টার শান্তনু, আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। সে দিন কাকে যেন বলছিলাম, আলুসেদ্ধ ভাত খেয়ে সারা বছর যে ওজন বাড়াই, একটা ‘শবর’ করেই সেটা ঝরিয়ে ফেলি। এটা আমার ফিটনেস রেজিম।

‘শবর’ কি কোথাও আপনার কাছে লাইফলাইন?

লাইফলাইন? কেন বলছেন বলুন?

বলছি কারণ ইন্ডাস্ট্রির অনেকের মতে, ‘কহানি’, ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘C/O স্যর’‌য়ের পর যেখানে আপনি নিজেকে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন, সেই জায়গা থেকে নাকি উল্টোপাল্টা রোল করে আপনি নিজেই সেই জায়গাটা খুইয়েছেন।

তাই কি?

অনেকেই বলে শাশ্বতর যা প্রতিভা তাতে কেনই বা ‘বঙ্কুবাবু’র মতো রোল করবে?

একটু খোঁজ নিলে দেখবেন অনেকের থেকে কম টাকা নিই আমি। ও সব লোভ আমার নেই। আর ‘বঙ্কুবাবু’র মতো রোল করে আমি খুশি...

সত্যি?

ইয়েস। এই বয়সে ৮২ বছরের একটা চরিত্র করলাম। দারুণ মজা হয়েছিল ‘বঙ্কুবাবু’ করে। আর শুনুন, যাঁরা বলছেন আমি কেন শুধু ‘মেঘে ঢাকা তারা’র মতো ছবি করছি না, তাঁদের জিজ্ঞেস করতে চাই, ভাল রোলের জন্য তো একটা দারুণ গল্প লিখতে হবে। সেটার জন্য একজন প্রযোজকের দরকার হবে। তার পর আমার কাছে সেই রোলটা আসতে হবে। আমি তো আর রোলের কাছে যেতে পারব না।

কিন্তু...

দাঁড়ান দাঁড়ান। আর যাঁরা চাইছেন আমি শুধু সো কলড ‘মিনিংফুল’ রোল করি, তাঁরা কি চাইছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে বসে থাকুক যাতে তাঁরা ওই রোলগুলো করতে পারেন? আই অ্যাম সরি, সেটা হওয়ার নয়।

শুনছিলাম, ‘শবর’‌য়ে আপনাকে কাস্ট করা নিয়েও অনেক কথা হয়েছিল। অনেকে আপনাকে চায়নি। কিন্তু অরিন্দম শীল আপনার জন্য শেষ অবধি লড়ে গিয়েছেন...

একটা ছবিতে কে থাকবে সেটা তো পরিচালকই ঠিক করবে নাকি!

আপনাকে নিয়ে নাকি সমস্যা ছিল আপনার ওজন, যেটা আপনি কিছুতেই কমাতে রাজি হচ্ছিলেন না হিন্দি ছবির কন্টিনিউইটি-র জন্য?

সম্পূর্ণ বাজে কথা। অনুরাগের ছবিতেও আমার কন্টিনিউইটির সমস্যা হয়েছিল। ওয়েট লস তো আমার হাতে ছিল না কারণ আমার একটা শারীরিক সমস্যাও হয়েছিল যেটা আজকে কনট্রোল করা গেছে...

কী শারীরিক সমস্যা সেটা বলা যায়?

অবশ্যই বলা যায়। আমার থায়রয়েডের সমস্যা হয়েছিল। এখন সেটা কনট্রোল করা গেছে।

শুনেছিলাম এটাই নাকি আপনার শেষ ‘শবর’?

হতে পারে। একটু দৌড়ঝাঁপটা কমবে বাবা! (হাসি) অরিন্দম শীল, প্লিজ লাইনটা মন দিয়ে পড়বেন...

শুনলাম কৌশিক সেন পরের ‘শবর’?

করতেই পারে কৌশিক সেন। আমি কী বলব...

আমরা একটা স্টোরি করেছিলাম ‘ফ্যাব ফাইভ’। পরে জেনেছি যিশু-পরম ভাল বন্ধু হয়ে গেছেন। আবির-ঋত্বিকের নিয়মিত কথা হয়। কিন্তু আপনি এই গ্রুপটায় মেশেন না?

তাই কি? আমার মনে হয় না।

এটা কি এই জন্য যে এত দিন ইন্ডাস্ট্রিকে কাছ থেকে দেখার ফলে আপনি এটা জানেন এখানে সব বন্ধুত্বই আসলে লোক দেখানো?

সেটার থেকেও বড় কারণ বোধহয় আমি চারজনের থেকে একটু বড়। তাই আমি ওদের কাছে শাশ্বত না, অপুদা। সেই জন্যই বোধহয় ওরা আমার সঙ্গে একটা ডিসট্যান্স মেনটেন করে।

আপনাকে নিয়ে আর একটা আক্ষেপ শুনি। পরিচালকরা মনে করেন আপনার মতো এত ট্যালেন্টেড অভিনেতা যদি রোল নিয়ে, কী নিজের অভিনয় নিয়ে আর একটু পড়াশোনা করতেন...

(থামিয়ে দিয়ে) আমি না উল্টোটাও দেখেছি। ভীষণ পড়াশোনা করে অভিনেতা অভিনয়টাই পারল না। খুব বড় বড় অভিনেতার এ রকম হতে দেখেছি, আমি নাম নিতে চাই না। আমি ইন্সটিংক্টিভ অভিনেতা।

আপনার পরিচালকরা কমপ্লেন করেন আপনি নাকি আজকাল বড্ড ‘গ্যালারি’ অভিনয় করেন?

কী রকম?

শুনি, আপনাকে যদি পরিচালক বলেন, ‘‘অপু, শুধু তোর প্রোফাইল দেখা যাবে, দয়া করে ক্যামেরার দিকে দেখিস না’’, তাও নাকি সিন শুরু হলেই আপনি ক্যামেরা লুক দিয়েই ডায়ালগ দেন।

এটা হতে পারে। খেলতে খেলতে ব্যাটসম্যানদের টেকনিকে কিছু বাজে অভ্যেস ঢুকে যায় না! এটা সে রকম। আর একটা ব্যাপারও হয়। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে এত দিন ডায়ালগ দিয়েছি বলেই তো লোকে আমাকে ভালবেসেছে। তাই যদি হয়, তা হলে আমি আমার স্ট্রং পয়েন্টটা কেন ছেড়ে দেব — এই চিন্তাটাও কাজ করে মাথায়। তবে এটা শুধু আমার নয়, বহু অভিনেতারই হয়।

১২ অগস্ট তো আপনার দু’টো ছবি রিলিজ। ‘ঈগলের চোখ’ আর ‘হেমন্ত’?

হ্যাঁ, দু’টো ছবি। চাইব দু’টোই ভাল চলুক।

‘হেমন্ত’ তো ‘হ্যামলেট’‌য়ের অ্যাডপ্টেশন। ‘হ্যামলেট’ পড়েছিলেন শ্যুটিংয়ের আগে?

না পড়িনি ‘হ্যামলেট’। আমি ছোটবেলায় শেক্সপিয়র পড়ার চেষ্টা করেছি ভাই, কিন্তু ওই ইংরেজিটা আমি ভয় পাই। এ সব হলেই আমি আমার বউয়ের শরণাপন্ন হই। মহুয়া ইংরেজিতে এমএ। ওকে বলি, একটু নাটশেলে বলো তো ব্যাপারটা।

বাংলাতেও তো ‘হ্যামলেট’‌য়ের অনুবাদ পড়তে পারতেন?

(হাসি) ‘গুপি গায়েন বাঘা বাইন’ বাংলায় না পড়লে কি মজা পাবেন? শেক্সপিয়রও তাই। পড়লে ইংলিশে পড়ো, না হলে মজা পাবে না।

আচ্ছা, আপনি তো তোপসেও হয়েছেন। অজিতও হয়েছেন। ‘শবর’‌য়ে নিজেই গোয়েন্দা। যদি র‌্যাঙ্ক করতে বলি এই তিন গোয়েন্দাকে?

তা হলে ফার্স্টে অবশ্যই থাকবে ফেলুদা। ওটার যে রস ছোটবেলায় মা-বাবা ইনজেক্ট করেছে সেটা থেকে বেরনো ডিফিকাল্ট ভাই। তার পর আসবে ব্যোমকেশ। তৃতীয় শবর। শবর তো হালে এল...

‘মহানায়ক’ দেখলেন?

না, দেখা হয়নি। ৭টার সময় বাড়ি ফেরাটাই ডিফিকাল্ট। কিন্তু হঠাৎ জিজ্ঞেস করছেন কেন? (হাসি)

করছি, কারণ আপনার তো একটা উত্তমকুমার হ্যাং ওভার আছে।

(হাসি) আমার? আমার থেকে বেশি ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ডিটো উত্তমকুমার করে দেবে লোকটা।

আপনাকে ‘মহানায়ক’ অফার করলে করতেন?

পাগল! আমার কাছে ফোন এলে বলতাম আমি বোলপুরে। উত্তমকুমার কেউ করতে পারে নাকি? আমি কাউকে উত্তমকুমারের জায়গাটা দেব না। আমি আমার বাবাকেই দিলাম না তো অন্য কেউ! ওঁর ৫০০ মাইলের আশেপাশে আমি বড় দেওয়াল তুলে রেখেছি। কেউ টপকাতে গেলে ৪০০০ ভোল্টের শক খাবে। উত্তমকুমার কেউ হতে পারবে না। করতে যাওয়াটাই বোকামি।

তা হলে...

আর দেখুন আমার মনে হচ্ছে এই সিরিয়ালটার সবচেয়ে বড় প্রবলেম হল নামটা। ‘মহানায়ক’ নামটার ওজন বড্ড বেশি। ‘মহানায়ক’‌য়ের বদলে অন্য নাম দিলে সিরিয়ালটা বেশি চলত বলে আমার ধারণা।

ভাই, লোকটা এখনও টালিগঞ্জের মোড়ে ধুতির কোঁচা দুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ওঁর ব্যাপারে কোনও ইয়ার্কি বাঙালি মানবে না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Saswata Chattopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE