Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাঁচাতে চেষ্টা করলেন বব বিশ্বাস

সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু উড়ান নিতে পারল না। লিখছেন জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়অব তক এইট্টি নাইন। নানা পটেকরের ছিল ছাপ্পান, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের এইট্টি নাইন। তবে নানা ছিলেন কি না পুলিশ অফিসার, আর শাশ্বত সেজেছেন সিরিয়াল কিলার। বব বিশ্বাসের মতো ভাড়াটে খুনি না। ‘এইট্টি নাইন’-এ খুন করাটাই শাশ্বতর প্যাশন। তাঁর স্বপ্ন, পৃথিবীর পয়লা নম্বর সিরিয়াল কিলার হয়ে ওঠা। পরিচালক মনোজ মিশিগানের আগের দু’টি ছবি বক্স অফিসের তেমন দাক্ষিণ্য পায়নি।

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

অব তক এইট্টি নাইন।

নানা পটেকরের ছিল ছাপ্পান, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের এইট্টি নাইন। তবে নানা ছিলেন কি না পুলিশ অফিসার, আর শাশ্বত সেজেছেন সিরিয়াল কিলার। বব বিশ্বাসের মতো ভাড়াটে খুনি না। ‘এইট্টি নাইন’-এ খুন করাটাই শাশ্বতর প্যাশন। তাঁর স্বপ্ন, পৃথিবীর পয়লা নম্বর সিরিয়াল কিলার হয়ে ওঠা। পরিচালক মনোজ মিশিগানের আগের দু’টি ছবি বক্স অফিসের তেমন দাক্ষিণ্য পায়নি। সে দিক থেকে তিন বারের বার ভাগ্যদেবী প্রসন্ন হন কি না, সেটা আর ক’দিন গেলে বোঝা যাবে।

সিরিয়াল কিলার সিনেমা-করিয়েদের প্রিয় বিষয়। মসিয়ঁ ভের্দু, সাইকো, আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ-এর মতো ক্লাসিক তো আছেই। জনপ্রিয় ছবির বাজারেও সিরিয়াল কিলাররা পর্দায় বারবার মুখ দেখিয়েছেন। ‘সেভেন’, ‘সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্বস’, ‘ন্যাচরাল বর্ন কিলার্স’ বা বলিউডে ‘এক ভিলেন’, ‘কৌন’, ‘পাঁচ’ বা বাংলায় সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘বাইশে শ্রাবণ’ মনে পড়তেই পারে। ‘বাইশে শ্রাবণ’-এ এই রাইমা সেনই ছিলেন সাংবাদিক। তাঁর উপরে দায়িত্ব পড়েছিল সিরিয়াল কিলার নিয়ে স্টোরি করার। এ ছবিতে তিনি সায়কিয়াট্রিস্ট, সিরিয়াল কিলার নিয়ে গবেষণার কাজ নিজেই বেছে নিয়েছেন। রাইমা আবার ভায়োলেন্স দেখলে শুনলে অসুস্থ বোধ করেন।

ভায়োলেন্স অসুস্থ করে তুললে তা রোগ হিসেবে ধরা উচিত কি না, তা নিয়ে কথা হতে পারত। সেই সূত্র ধরে ছবিটা অন্য বাঁক নিতে পারত। কাহিনিকার-পরিচালক তা চাননি। ফলে রাইমার চিকিৎসা শুরু হল। হিপনোটিস্ট বরুণ চন্দের প্রবেশ ঘটল। তার পর থেকেই গল্পের গোমাতা বৃক্ষকেই তাঁর আবাস বেছে নিলেন।

নইলে ২০১৫ সালে দাঁড়িয়ে এক জন সুইচ টেপার মতো করে ‘ওয়ান টু থ্রি’ বলছে আর রুগি মেট্রোয় কালীঘাট থেকে যতীন দাস পার্ক যেতে যতটা সময় লাগে, তার চেয়েও কম সময়ে তার পূর্বজন্মের সাফারি সারছে— এটা ব়়ড্ড বেশি ‘টু মাচ’ হয়ে গেল না? আর সে কি একটা জন্ম? জন্ম-জন্মান্তরের গল্প চেয়ারে চোখ বুজে শুয়ে শুয়ে বলে যাচ্ছেন রাইমা। বরুণ চন্দ নম্বর হাঁকছেন। প্রেমিক পুলিশ অফিসার শতাফ ফিগর বসে বসে শুনে যাচ্ছেন। হিপনোটিজম-এর ধাক্কায় রাইমা একবার ষোড়শ শতাব্দীর ইথিওপিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রেও পৌঁছে গেলেন। নিজের শরীর থেকে বেরিয়ে নিজের মৃতদেহ দেখতে বসলেন। এমন আরাম করে সব বলতে লাগলেন যেন বাড়ির ছাদে বসে ফুলুরি খাচ্ছেন!

এই হিপনোটিজমের দৃশ্যই ছবির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য। সেখান থেকে প্লট ক্রমশ পরিণতির দিকে এগোচ্ছে, ক্রাইমের অনেক ক্লু বেরিয়ে আসছে! অবশ্য বেরিয়ে এসেই বা কী লাভ হল? কেন-কী ভাবে সব ঘটনা ঘটছে, তার যুক্তি পরম্পরা যে বড়ই মোটা দাগের। উদাহরণগুলো সবিস্তার লিখলে গল্পের অনেকটাই বলে ফেলতে হয়। থ্রিলার ছবির ক্ষেত্রে সেটা ঠিক নয়। তবে ক্লাইম্যাক্সে যা ঘটল, তা কী করে একটা হাই-সিকিউরিটি সলিটারি সেল-এর মধ্যে ঘটতে পারে, ভগবানই জানেন! ভালর মধ্যে ছবিটি মোটের উপরে নির্মেদ। গতি আছে। দেখতে শুনতেও ঝকঝকে। সংলাপ ভৌমিকের সম্পাদনা চমৎকার। সুপ্রিয় দত্তর ক্যামেরা সম্পর্কে অবশ্য এতটা উচ্ছ্বসিত হওয়া গেল না। সব চরিত্রের প্রতি ক্যামেরা সমান যত্নবান নয়। ক্লোজ আপের বাহুল্যও ক্লান্তিকর।

অভিনয়ে শাশ্বত ছাড়া সকলেই মাঝারি। রাইমা সুন্দর। তবে ‘এইট্টি নাইন’ তাঁর সেরা কাজের মধ্যে পড়বে না। নবাগত শতাফ ফিগরের চেহারা ভাল। কিন্তু প্রথম অভিনয় বলেই সম্ভবত শরীরের-মুখের পেশিগুলো সর্বদাই টানটান হয়ে রয়েছে। ফলে যে কেঠো ভাবটা তৈরি হয়েছে, তা পুলিশ অফিসারের স্বভাবজ কাঠিন্য বলে চালিয়ে দেওয়া মুশকিল। মুশকিল শাশ্বতরও। খারাপ অভিনয় করাটাই তাঁর পক্ষে মুশকিলের।

ছবির দ্বিতীয়ার্ধ শাশ্বতর উপরেই দাঁড়িয়ে। তিনি ছবিটা দাঁড় করিয়ে রেখেছেনও। কিন্তু চিত্রনাট্য যদি দুর্বল হয়, গল্পের লজিক কমজোরি হয়, তা হলে একা কতটা সামাল দেবেন? তবু শাশ্বতর ভক্তরা চাইলে ‘এইট্টি নাইন’ দেখতে পারেন! ঠকবেন না! শাশ্বত যখন একটার পর একটা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফিরিস্তি দিচ্ছেন, উপরওয়ালাই সবচেয়ে বড় সিরিয়াল কিলার কি না প্রশ্ন তুলছেন— আবার একটা সম্ভাবনা তৈরি হল। মনে হল, ছবিটা এখান থেকে একটা উড়ান নিতে পারে। নিল না।

ভায়োলেন্স ছবির মুখ্য বিষয়। ‘এ’ সার্টিফিকেটও আছে। তবু ভায়োলেন্সের দৃশ্যায়নে পরিচালক আগাগোড়া যে সংযম দেখিয়েছেন, সেটা বিরল হয়ে পড়ছে। ছবি দেখতে গিয়ে অনেক সময় দর্শকরা রাইমার মতো অসুস্থ বোধ করেন। ধন্যবাদ মনোজ, সুযোগ থাকলেও আপনি সে পথে হাঁটেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE