টিউবলাইট
পরিচালনা: কবীর খান
অভিনয়: সলমন খান, সোহেল খান, ওম পুরী, জু জু, মার্টিন রে টেংগু
৫.৫/১০
এই টিউবলাইট মাঝে মাঝে বেশ জোরালো ভঙ্গিতে দপদপ করছিল। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। বয়স্ক সলমন খানের অঙ্গভঙ্গি, কান্নাকাটিতে (‘তেরে নাম’ ছাড়া আর কোনও ছবিতে সলমন এত চোখের জল ফেলেননি) বোঝা গেল, টিউবের গ্যাস অনেকক্ষণ আগে শেষ! আলো জ্বলেনি, দপদপানিটুকুই সার।
এই ছবি আসলে বিস্মৃত এক ইতিহাস নিয়ে। ১৯৬২ সালে চিন-ভারত যুদ্ধের সময় বেশ কিছু শত্রুবিরোধী আইন চালু হয়েছিল। এ দেশের অভিবাসী চিনাদের দাদু-দিদা, ঠাকুরদা, ঠাকুমা কেউ এক জনও যদি চিনা হন, তাঁকে শত্রু হিসাবে গণ্য করা হবে। সন্দেহের বশে এঁদের অনেককেই রাজস্থানের দেওরালি, অসমের নগাঁও ইত্যাদি বিভিন্ন জেলে পাঠানো হয়েছিল।
কবীর খান এই সময়টাকেই ছবিতে ধরেছেন। তাঁর ‘বজরঙ্গি ভাইজান’-এর আদলে এই ছবিতে এসেছে চিনা মেয়ে লিলিং (জু জু) ও তার বালক পুত্র গুয়ো (মার্টিন রে টেংগু)। সলমনের সঙ্গে এই বালকের দৃশ্যগুলিই হাল আমলের জাতীয়তাবাদী বয়ানে অন্তর্ঘাত ঘটিয়েছে, আলো ছড়িয়েছে। বালক চিনা, হিন্দি দুই ভাষাতেই পারঙ্গম। দেশপ্রেমিক সলমন বলে, ‘তা হলে বল, ভারতমাতা কী জয়।’ গুয়ো কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রবল জোরে চেঁচায়, ‘ভারতমাতা কী জয়।’ তার পর বলে, ‘আমি তো তোমার থেকে জোরে বললাম। তা হলে আমি তোমার থেকে বড় দেশপ্রেমিক।’ এই বাজারে জাতীয়তাবাদী হাওয়ায়-ভরা ফাঁপা বেলুনটিকে আর কী ভাবেই বা পিন মেরে চুপসে দেওয়া যেত?
কবীর খান আর এক জায়গায় ব্যতিক্রম। ছবির শুরুতে টাইটল কার্ড জানিয়ে দিয়েছে, এটি মার্কিন ছবি ‘লিট্ল বয়’-এর আদলে তৈরি। সেই ছবিতে এক বালকের বাবা যুদ্ধে গিয়েছিল। বালকের চোখে পরে যুদ্ধের নিষ্ফলতা ধরা পড়ে, গির্জার যাজক তাকে যিশুখ্রিস্টের ছবির সামনে শেখায়, ‘বিশ্বাসই সব। প্রভুর প্রতি বিশ্বাস থাকলে পাহাড়ও টলিয়ে দিতে পারো।’ এখানে প্রভু যিশুর স্থান নিয়েছেন গাঁধীজি, যাজক হয়েছে গাঁধীবাদী বান্নো চাচা ওম পুরী (এ ছবিতেই তাঁর শেষ অভিনয়)। আর বিশ্বাসের জোরে পাহাড় টলিয়ে দেয় যে সারল্য, তার নাম সলমন খান। হলিউডি ছবির এ পাশ-ও পাশে খামচা মেরে বলিউডে কত ছবিই তৈরি হয়, কিন্তু এই ভাবে সরাসরি সূত্র বলে দেওয়ায় কবীর খান ব্যতিক্রম।
এ ছবিতে সলমন বোকাসোকা, তার নাম লক্ষ্মণ। ছেলেবেলায় স্কুলে তাকে সবাই ‘টিউবলাইট’ বলে খ্যাপাত। লক্ষ্মণের ছোট ভাই ভরত আবার স্মার্ট, মারকুটে। ছবির গোড়ায় বাচ্চারা লক্ষ্মণকে ‘জ্বল যা জ্বল যা’ বলে খ্যাপাচ্ছে, ভরত দাদার অপমানের বদলা নিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে দৃশ্যগুলি চমৎকার।
এই ভরত বড় হয়ে সোহেল খান হলেন এবং যুদ্ধে গেলেন। লাদাখে যুদ্ধের দৃশ্যগুলি ভাল, কিন্তু সোহেল এবং ভারতীয় সেনারা শুধু ডান কাঁধে গুলি খায় কেন বোঝা দায়। প্রীতমের সুরে সলমন-সোহেলের নাচ নিয়ে থিম সং ‘নাচ মেরি জাঁ, হোকে মগন তু’ অবশ্য শুনতে চমৎকার।
কিন্তু শিশু লক্ষ্মণ যখন বড় হয়ে সলমন খানে পরিণত হলেন, চমৎকৃতি উধাও। নির্বোধ সারল্যে ‘কোই মিল গ্যয়া’-র হৃতিক রোশনের ধারেকাছেও তিনি নেই। সলমন খানই এই ছবির সবচেয়ে বড় ভরসা এবং বোঝা। এ রকম সমস্যাপূর্ণ ‘চোক’ থাকলে টিউবলাইট না জ্বলারই কথা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy