মডেল: ঋতাভরী চক্রবর্তী; স্টাইলিস্ট: স্যান্ডি; মেকআপ ও হেয়ার: মৈনাক দাস; লোকেশন: দ্য অ্যাস্টর; পরিকল্পনা ও বিন্যাস: স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়; ছবি: কৌশিক সরকার
শীতের শহরে মন খারাপ!
বাইরে হালকা কুয়াশার চাদর। আর সদ্য নামানো কম্বলে যখন মন একটু উষ্ণতার আমেজ খুঁজছে, তখনই সব আনন্দের প্ল্যান যেন ভেস্তে দিয়েছে নোট বাতিল পর্ব।
হাতে টাকা নেই। হুল্লোড়ের মুড ছেড়ে, শহর এখন লাইন দিয়েছে এটিএম-য়ে।
চারদিকে একটাই কথা।
‘‘দাদা কত দিচ্ছে? পাঁচশো না দু’হাজার?’’
উত্তর শুনলে মুখ আরও ব্যাজার।
হয় দু’হাজার টাকার নোট নয়তো একশো টাকা। নিজের টাকা তুলতে এমন ফ্যাসাদে পড়তে হবে তা ভাবেননি কেউ। নোট বাতিলের ধাক্কায় চারপাশটা এখনও কেমন ধূসর। আর ধূসরতার মাঝে হাজির শীতের রংটাও যেন অদ্ভুত।
কিন্তু শীত মানেই তো শুধু ধূসরতা নয়। উইন্টার মানে পার্টিসার্টি।
তাই পাঁচশো-হাজার টাকার নোট নিয়ে ক্লান্তিকর চর্চার মাঝেও মন তো একটু পার্টি পার্টি করবেই।
জানেন কী, নতুন নোটের মতো এ বারের উইন্টার পার্টির রংও কিন্তু নতুন। তাই টাকার এই টানাটানির মাঝেও না হয় নিজেকে একটু প্যাম্পার করলেনই!
ছবি: কৌশিক সরকার
ইয়েস, নিজের সাধ্যের মধ্যে থেকে।
শীতের কালার মানেই ডার্ক। বছরভর ওয়ারড্রোব-বন্দি গাঢ় রং পরার পারফেক্ট টাইম এটা। তবে গতানুগতিক ভাবে নিজেকে কালোতে চুবিয়ে রাখবেন না। কালোর দিন শেষ। শীতের মাদকতায় থাকুক অলিভ গ্রিন, মেরুন, মাস্টার্ড ইয়েলো, ম্যাজেন্টা এবং পার্পেল ওয়াইন। চিজ আর ওয়াইনের চুমুকে মিশে যাক আপনার পছন্দের ডার্ক কালার।
পুরোনো লং কোটে নতুন লুক...
নোটের হাহাকারে নতুন করে পোশাক কেনার দরকার নেই। লং কোট অনেকেরই আছে। পরে ফেলুন ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’য়ে অনুষ্কার মতো কোট। শহরে জমে যাওয়া ঠান্ডার দিনটায় লং কোটের মাঝে উঁকি দিক উষ্ণ ক্লিভেজ।
পার্টি থেকে ওয়ার্ক প্লেস! সব জায়গায় ‘শেডস অব গ্রে’র মেজাজ। ধূসর রঙের শেডের সঙ্গে কালার পপ আপ করুন রঙিন স্কার্ফে। চোখের কাজল বা ঠোঁটে নয়, রহস্য থাক লেস দেওয়া টপ-য়ে।
লেসের ড্রেস, ব্লাউজ বা স্টকিংসে বেরিয়ে আসুক চাপা উষ্ণতার খোলা সাজ। লেসের শাড়িও জড়িয়ে নিতে পারেন শীতের হাওয়ায়,’’ বলছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার রিতু কুমার।
চোখের রং এ বার কমলা...
মন ভাল করতে মেক আপে চমক দিন। ‘‘নীল চোখের ইশারা এখন আউট ডেটেড। কালো বোরিং! অরেঞ্জ অথবা টারকোয়াইশ ব্লু শ্যাডোতে সাজুন। শিমারি আই শ্যাডো হলে তো কথাই নেই। যে কোনও সেক্সি পুরুষ বোল্ড আউট হতে বাধ্য! পার্টি থাকলে অরেঞ্জ বা টারকোয়াইশ ব্লু-তে সাজুন”. বলছিলেন বিউটিশিয়ান কেয়া শেঠ।
অরেঞ্জ বা টারকোয়াইশ ব্লু আইশ্যাডো কেনার দরকার নেই। খুলে দেখুন আইশ্যা়ডোর প্যালেটে এই রং আছে।
রাত-পার্টির মধ্যমণি হতে অফশোল্ডার গাউনের সঙ্গে ঝড় তুলুন শিমারি সিলভার আইশ্যাডোতে। ফরসা স্কিন টোন হলে গ্রিন আই শ্যাডোয় হয়ে উঠুন সুপার সেক্সি। গরম আর শীতে ফাউন্ডেশন লাগানোর ইকুয়েশনটাও কিন্তু আলাদা। ‘‘শীতে ফাউন্ডেশন লাগানোর সময় একটু ময়েশ্চারাইজার মিশিয়ে নিন। বোল্ড অ্যান্ড হট লুক পেতে চাইলে গ্লিটারি আইশ্যাডো টিম আপ করতে পারেন। থুতনিতে থাক শিমারি বা গ্লিটার আইশ্যাডোর মিক্সিং,’’ টিপস দিচ্ছেন কেয়া শেঠ।
অরেঞ্জ বা টারকোয়াইশ ব্লু পছন্দ না হলে পুরুষকে কাছে টানুন পিঙ্ক আই শ্যাডো দিয়ে। হট কোশেন্ট বা়ড়াতে চোখে থাক পিঙ্ক-য়ের নানান শেড। অফিস থেকে বিয়েবাড়ি সবেতেই এই শেড মানানসই। তবে স্কিন আর চুলের টোনের সঙ্গে মিলিয়ে পিঙ্ক-য়ের শেড বাছুন। ফরসা রঙে হালকা পিঙ্কের ছোঁয়া আর শ্যামলা টোনে গাঢ় পিঙ্ক রং বাছুন। খেয়াল রাখবেন পিঙ্ক আইশ্যাডো হলে আর কিছু ব্যবহার করবেন না।
বান্ধবী আসুক অ্যাপ-য়ে...
শীত-পার্টিতে ‘কাপল’দের ভিড়ে আপনি ‘সিঙ্গল’। কী করবেন, এটাই ভাবছেন তো? চিন্তা নেই। ‘ফাঁকা নাকি, ফাঁকা নাকি? আছো তুমি ফাঁকা নাকি?’ গাইতে হবে না। ইয়ং ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে জেনে নিন কী করবেন।
কিন্তু কোন পার্টিতে যাবেন, আর কোনটায় যাবেন না — এখনও ঠিক না করতে পারলে বুক মাই শো অ্যাপটা ইন্সটল করতে পারেন। এটা অনেকটা পার্টির মেনু কার্ডের মতো। ব্যস, পার্টির থিম দেখে ঠিক করে নিন কোথায় যাবেন। নাইট ক্লাবের পাস বা পুলসাইড পার্টির টিকিটও কেটে নিতে পারবেন ওখানে।
গাউনে উষ্ণতা...
পরুন নরম উলের গাউন। তাই বলে সব ঢাকা থাকবে? ‘‘একেবারেই না। ভিতরে পরুন স্কিন হাগিং টপ। আর গাউনের ডিপ কাটে ভেসে যাক আদরের শরীর। লো কাট গাউনে ধরা থাক ক্লিভেজের উষ্ণতা। শীত মানে যেমন ক্রিসমাস, পার্টি, তেমনি শীত মানে ক্লিভেজের ফেস্টিভ্যাল। তাই ব্লাউজ থেকে শ্রাগ যাই পরুন তার মধ্যে যেন থাকে রোম্যান্সের ছোঁয়া। মনে রাখবেন পার্টির গেম চেঞ্জার হয়ে উঠতে পারে আপনার ফ্লোয়ি সেক্সি গাউন,’’ বললেন ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ পায়েল খান্ডেলওয়ালা।
শুধু পোশাক নয়। কেবল একটা ডার্কগ্লাস বদলে দিতে পারে আপনার স্টাইল স্টেটমেন্ট। ‘ডিয়ার জিন্দেগি’র প্রোমোশনে আলিয়া আর শাহরুখ যেমন চোখের ভাষাতেই ঝড় তুলেছেন। জারা হটকে লুক দিতে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’র নায়িকা আলিয়া ভাটের মতো ওভারসাইজ সানগ্লাস পরতে পারেন। আর ছেলেরা চাইলে শাহরুখ খানের মতো ষড়ভুজাকৃতি সানগ্লাস ট্রাই করতে পারেন।
ওভারসাইজ সোয়েটারের মতোই শীতে চোখ ঢাকুন ওভারসাইজ ডার্ক গ্লাসে। ঠান্ডা হাওয়ায় এর চেয়ে বেশি হট লুক আর কিছু হতে পারে না। শীত মানেই হাই হিল আর বুটের দিন। পার্টি হোক বা প্রোমোশন, ইদানীং যেমন দীপিকা হাই হিল বা বুট ছাড়া আর কিছুই পরছেন না। শীত থেকে বাঁচতে ওপরে থাকুক ওভারসাইজ সোয়েটার। তা বলে পা কি ঢেকে রাখা যায়? পরুন হাইস্লিট গাউন। ডান্স ফ্লোরে খোলা পা নেশা ছড়াক। পুরুষকে কাছে পেতে দীপিকার মতো হাইস্লিট আউটফিটের সঙ্গে টিম আপ করতে পারেন ব্ল্যাক বুটস বা হাই হিল।
শরীরটা তো রাখতে হবে...
দিন যতই ধূসর হোক শরীরের সঙ্গে তো আর কম্প্রোমাইজ করতে পারবেন না। ফিট থাকতেই হবে। তাই শরীর চর্চা মাস্ট। ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায় বলছিলেন,‘‘সেক্সি দেখাতে হলে কিন্তু পায়ের মাসলগুলোকে টানটান করতে হবে। এটার জন্য লাঞ্জ হল খাসা এক্সারসাইজ।
আমরা কথায় কথায় যে ‘বয়সের ভার’ শব্দটা ব্যবহার করি, সেটা কিন্তু মাসলে টানটান ভাবের অভাব, বিশেষ করে পেটের মাসল ‘লুজ’ হয়ে যাওয়া। পেটের মাসল ঠিক করার সেরা উপায় হল ককটেল ট্রেনিং। রাশিয়ান টুইস্ট, প্ল্যাঙ্ক আর মাউন্টেন ক্লাইম্বার একসঙ্গে করুন। পার্টি যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে বাইসেপস-ট্রাইসেপসের ব্যায়াম যেমন করবেন, তেমনই বাকি ওয়ার্কআউটও হাল্কা ভাবে করে নিন। আর বেরোবার আগে একটা ডিমের সাদা অংশ ও কিছু ড্রাই ফ্রুটস খেয়ে নিন।’’
মুড ভাল করে এমন কয়েকটা ব্যায়াম হল কেটলবেল সুইং, পাওয়ার রোপ ড্রিল বা হার্ডল রান। মুড ভাল থাকলে ত্বকে উজ্জ্বলতা আসে।
এ সময় লাল লিপস্টিক চলে না...
সময়টা যা তাতে লাল ঠোঁট বেমানান। এ বার শীতে পাল্টান চুমুর রং। শীতে ঠোঁটের উষ্ণতা ফিরুক হালকা গ্লসি লিপস্টিক অথবা লিপ জেলে। তবেই তো চুমুর গভীরে পৌঁছনো যাবে। ঠোঁট তো হল, শরীরটা কিন্তু বাদ গেলে চলবে না। অবশ্যই বডি পলিশিং করান। ড্রেস যতই গর্জাস হোক আসল সৌন্দর্য কিন্তু ধরা থাকে ত্বকে। নোটের ধাক্কায় নিশ্চয়ই আর পার্লারে যেতে মন চাইছে না। দরকার নেই। বাড়িতে গ্লোয়িং স্কিনের জন্য পেঁপে আর কলার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। অথবা দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে মাখতে পারেন। পার্টিতে যাওয়ার আগে বাড়িতে মাখন, কলা আর বড় দানা চিনি মিশিয়ে নিয়ে মাসাজ করুন যতক্ষণ না দেহের সঙ্গে ক্রিমের মতো মিশে যাচ্ছে। স্কিনকে ডিটক্স করার এর চেয়ে ভাল উপায় আর নেই বলেই মনে করেন অনুষ্কা শর্মা।
ব্রেইনি ইজ দ্য নিউ সেক্সি...
এত কিছু তো হল, বুদ্ধিটাকে কিন্তু অবহেলা করবেন না। বিবিসি-র ‘শার্লক’ টিভি সিরিজে বলা বেনেডিক্ট কাম্বারবাখের কথাটা মনে আছে তো! ‘ব্রেইনি ইজ দ্য নিউ সেক্সি’। চুলে জেল আর মগজে কার্ফু যেন না হয়। বই তো পড়তেই হবে।
মন অনেকটাই ভাল হয়ে যাবে। তা ছাড়া স্মার্টফোন বা ট্যাবে কোনও ই-বুক রিডার (আইবুক, কিন্ডল) অ্যাপ ইন্সটল করে নিন। এখন প্রায় সব পাবলিশার বইয়ের ই-বুক ভার্সনও প্রকাশ করেন। সেটা কিনে নিন। অ্যামাজনের মতো ই-কমার্স সাইটেও অনেক ই-বুক পেয়ে যাবেন। কথা বলার টপিক কম পড়বে না। বই পড়ার সঙ্গে সঙ্গে, বেশ কিছু বিদেশি ছবি আর ডকুমেন্টারি দেখে নিন। ‘রিসার্চ স্কলার’য়ের সঙ্গে ট্রাম্প-হিলারি নিয়ে আড্ডা জমাতে অসুবিধা হবে না। খুচরো টাকার সমস্যায় এ বারের কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে না-গিয়ে থাকলেও ঘাবড়াবেন না। গুগল প্লে স্টোর আর অ্যাপল আইটিউনস স্টোর থেকে ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড দিয়ে দেখে নিন সিনেমা। আর ডিভিডি চাইলে তো ই-কমার্স সাইট আছেই।
নোট বাতিলের ধাক্কায় আপনি বেসামাল হলেও, পার্টি সিজন কিন্তু অন। তাই টাকার চিন্তা সরিয়ে রেখে একটু শীত উদযাপন না হয় করলেনই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy