Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শ্রীজাত চালিশা

চল্লিশে পড়ে শ্রীজাত যেন আরও বিস্ফোরক। আরও বেপরোয়া। বছর শেষে নামছেন ছবি পরিচালনাতেও। মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায়।চল্লিশে পড়ে শ্রীজাত যেন আরও বিস্ফোরক। আরও বেপরোয়া। বছর শেষে নামছেন ছবি পরিচালনাতেও। মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায়।

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৪৪
Share: Save:

যেখানেই যান না কেন, হাতে একটা প্যাকেট সর্বক্ষণের সঙ্গী তাঁর। প্যাকেটে থাকে টুপি আর সোয়েটার। অ্যাজমার জন্য সিগারেট খান না। আর সামনে কেউ খেলেও বিরক্ত হন। গত বুধবার ভর-দুপুরে সঙ্গীতকার ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত-র বাড়িতে ডাল, পোস্ত, মাছ ভাজা খেয়ে শুরু হল আড্ডা এবং ঘরটা তখন পুরোপুরি ‘নো স্মোকিং জোন’...

বাসে করে এলেন নাকি?

বাসেই তো যাতায়াত করি।

আপনার বাসের একটা গল্প সে দিন শুনছিলাম। আপনি বাসে উঠেছেন...

(থামিয়ে দিয়ে) আর একজন ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘আপনি কি শ্রীজাত?’’ আমি বললাম, আমি নই, আমাকে ওঁর মতো দেখতে। তাতে উনি আশ্চর্যই হলেন। শুনে বললেন, ‘‘ঠিকই, শ্রীজাত কেন বাসে চড়ে ঘুরবেন?’’

কিন্তু আপনার তো গাড়ি আছে। এই বাসে করে ঘোরাটা কি মার্কেটিং গিমিক?

(হাসি) একেবারেই কোনও গিমিক নয়। আমি অনেক কষ্ট করে একটা গাড়ি কিনেছি। আসলে যে আর্থিক পরিবেশে বড় হয়েছি তাতে গাড়িটা আমার ঠিক আসে না। আমি অভ্যস্ত নই। খুব দরকার পড়লে গাড়ি চড়ি সেন্টার থেকে ড্রাইভার আনিয়ে। আমার অদ্ভুত একটা নেশা আছে, বাসের জানলা দিয়ে কলকাতা দেখা। এই নেশা আমার স্কুল থেকে।

কী দেখেন?

কলকাতাকে দেখি। তার চলমানতা দেখি। তার বদলে যাওয়া চেহারা দেখি।

গাড়ি থেকে দেখা যায় না বুঝি?

আজকে ইন্টারনেটে মানুষ তরিতরকারি কিনছে। গ্রসারি পর্যন্ত বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমি যখন মাছওয়ালার সঙ্গে আড্ডা মারতে মারতে ট্যাংরা মাছের পেটটা টিপে, তার দাম করি, বাড়ি এসে রান্না করে খাই — তার তৃপ্তিটাই আলাদা। বাস আর গাড়ির এটাই তফাত বোধহয়।

একটু কবি শ্রীজাতর দিকে ফেরা যাক।

প্লিজ...

আপনাকে দেখলে মনে হয় আপনি মানুষটা খুব শান্ত, ধীরস্থির। কিন্তু আপনার ভিতরে তো প্রচুর রাগ রয়েছে, ক্ষোভ রয়েছে — যা কবিতার মাধ্যমেই প্রকাশ পায়।
এই দু’টো সত্তাকে আলাদা রাখেন কী ভাবে?

আলাদাটা ইচ্ছে করে যে রাখি তা কিন্তু নয়। ওভারল্যাপ হয়। তবে লেখাটা আমার প্রাথমিক এক্সপ্রেশন। আমার মৌলিক চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, রাগ, ক্ষোভ — সমস্ত কিছুই লেখার মাধ্যমে। মুখ ধুয়ে ফেলার পর যেমন আর ধুলোময়লা দেখা যায় না, একটা কবিতা লেখার পর কিন্তু আমারও সব রাগ, অ্যাংস্ট শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তাই হয়তো আলাদা মনে হয়। তবে সব সময় যে পারি তা কিন্তু নয়।

যখন সময়ের অভাবে লিখতে পারেন না, তখন রাগ হয়?

হয়তো। খারাপ লাগে। বিরক্ত লাগে। যখন হয়তো আমার গঙ্গার ঘাটে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে, সেখানে না গিয়ে আমাকে যেতে হচ্ছে কোনও প্রিমিয়ারে কারণ সেই ছবিটার সঙ্গে আমি জড়িত। তখন ভাল লাগার অভিনয় করি।

অভিনয় তো করছেন সিনেমাতেও। সৃজিতের ‘জুলফিকার’য়ে একটি বিশেষ চরিত্র আপনি?

আর বলবেন না। সৃজিত বন্ধু, তাই আমাকে রোলটা দিয়েছে। তবে মন দিয়ে কাজটা করছি। শ্যুটিং করতে গিয়ে হাঁটুও বেশ জখম হয়েছিল। মজা করে সৃজিতকে বলেছিলাম, রক্ত দিয়ে অভিনয় করছি ভাই। চল্লিশ বছর বয়সে বেস্ট ডেবিউ আমাকে পেতেই হবে। (জোর হাসি)

কবিতায় ফিরি। এই যে আপনার পাঠানকোট নিয়ে লেখা ‘শহিদ’ কবিতা নিয়ে তুমুল হইচই চরিদিকে। কতক্ষণ লেগেছিল লিখতে?

(দীর্ঘশ্বাস ফেলে) হাতে লিখতে তো তিন মিনিট। কিন্তু ‘পাঠানকোট’‌য়ের মতো একটা কবিতা লিখতে বোধহয় যে কোনও কবির অনেকগুলো বছর লাগে। তিরিশ বছরের ক্ষোভ লাগে। এই ক্ষোভটা কিন্তু সারাক্ষণ আমার শরীরে-মনে বইছে। পেশোয়ারে ১৭৬ জন বাচ্চাকে যখন হত্যা করা হয় তখন হতাশার সঙ্গে রাগ হয়। যখন ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয় তখন হতাশা গ্রাস করে। ইনফ্যাক্ট অভিজিৎ রায়ের পরেই তো ‘অন্ধকার লেখাগুচ্ছ’ লিখতে শুরু করলাম। আজকেও তো শুনলাম আবার পেশোয়ারে হামলা হয়েছে। কষ্ট হয় এগুলো দেখলে।

শুনেছিলাম, গত বছরের পেশোয়ারের সেই ঘটনার পর ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলেন?

গিয়েছিলাম তো। কোনও দিন কাউকে বলিনি, কিন্তু আমাকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যেতে হয়েছিল। আমাকে কোনও ওষুধ দেননি সাইকিয়াট্রিস্ট কিন্তু কিছু মেন্টাল এক্সারসাইজ দিয়েছিলেন। আমি সেগুলো করে ধীরে ধীরে ডিপ্রেশন থেকে বেরোই। তবে পেশোয়ারের সেই ঘটনার পরের কয়েক মাস আমার কাছে ভয়াবহ ছিল। সারাদিন ঘুমাতাম। উঠে খেতাম আর মাঝেমধ্যে হাঁটতে যেতাম। কোনও লেখা লিখিনি। পেন ছুঁইনি।

কী মনে হত?

মনে হত, কী লাভ লেখালিখি করে? মনে হত, আমার একটা কবিতাও একটা বাচ্চাকে পর্যন্ত বাঁচাতে পারল না। অবশ্য সেটা আজকেও পারবে না। কিন্তু আজকে আমি মনকে বোঝাতে পেরেছি, আমাকে আমার কাজ করে যেতে হবে অনেস্টলি।

আপনি কি জানেন, আজকে অনেক মানুষের কাছে শ্রীজাত হলেন প্রতিবাদের প্রতীক? তা ‘তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়’‌য়ের মাধ্যমেই হোক কী পুরস্কার ফেরত দেওয়া...

একটা কথা বলি। আমরা যারা আজকে প্রতিবাদ করছি, সত্যি তারা সংখ্যালঘু । সংখ্যাটা যেহেতু এত কম, প্রতিবাদ করলেই মানুষ কী মিডিয়ার চোখে পড়ছে। আগে একশো জনের মধ্যে আটানব্বই জন প্রতিবাদ করত। আজকে আটানব্বই জন হ্যাঁ-হ্যাঁ করে, আটানব্বই জনই বিক্রি হয়ে গিয়েছেন।

কার কাছে বিক্রি?

নানান জায়গায় বিক্রি। রাষ্ট্রের কাছে, শাসকের কাছে, শাসন যন্ত্রের কাছে, কেউ আবার রাজ্যের কাছে। অনেকে এমনও আছে যাদেরকে কেউ কিনতে চায় না, তারাও বিক্রি হয়ে গেছে।

কোনও কবি বিক্রি হয়ে গেছেন?

বিক্রি হয়ে গেছেন কি না জানি না। তবে সুবোধ সরকার খুব অদ্ভুত ভাবে পাল্টে গেছেন। যেটা তাঁর কবিতার সঙ্গে, তাঁর জীবনের সঙ্গে, তাঁর যাপনের সঙ্গে যায় না। তাঁর বদলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারি না।

সুবোধ সরকারের বদলে যাওয়াটা দেখে ডিপ্রেশন হয় ?

আমার ডিপ্রেশনটা আর একটু গভীর জিনিসে হয় বোধ হয়, জানেন। তবে খারাপ লেগেছে। আমার ধারণা সুবোধ সরকারেরও খারাপ লেগেছে। তাই যখন আমি ওঁকে ক্রমাগত আক্রমণ করেছি, উনি আমাকে শান্তভাবে বলেছেন, আমাদের পারিবারিক সম্পর্কটা যেন একই রকম থাকে।

আপনি সিনেমার গান লেখেন বলে, আপনাকে তো গীতিকার বলে ব্যঙ্গ করেছিলেন। আপনাকে নন-গ্র্যাজুয়েটও বলেছিলেন!

আমি নন-গ্র্যাজুয়েট গীতিকার হয়ে ভাল আছি, অনেকের মতো চাটুকার তো হতে হল না। তবে তাও বলব, ওঁর শিক্ষা আছে যে উনি অন্তত বলেছিলেন যে, আমাদের পরিবারকে এর থেকে সরিয়ে রাখতে। আনলাইক কবীর সুমন।

কবীর সুমনের সেই শিক্ষা নেই?

মনে হয় না। (ভেবে) না, নেই।

আপনার সঙ্গীতসম্মান ফেরত দেওয়া নিয়েই তো আপনার উপর কবীর সুমনের রাগ?

হ্যাঁ, সেটা নিয়েই। সরকারের এত রাগ নেই যা ওঁর রাগ। আমি যখন বলেছিলাম পুরস্কার আমি গ্রহণ করতে পারব না, তখন আমার কাছে কিন্তু সৌজন্যমূলক একটা এসএমএস পাঠিয়েছিলেন নবান্নের এক সচিব। লেখা ছিল, ‘থ্যাঙ্ক ইউ। আপনি ভাল থাকবেন’। কিন্তু কবীর সুমনের কেন যে এত রাগ হল কে জানে? রাগ করে উনি ওঁর ফেসবুকের মাধ্যমে আমাকে আক্রমণ করা শুরু করলেন। সঙ্গে অন্যরাও ছিল।

কারা?

ওঁর হাতে গোনা কিছু অনুগামী যারা ওঁর পাশে থাকেন আজকাল, তারা। কবীর সুমন আমার কাছে একটা লেসন। ওই মাপের শিল্পী যে এত নীচে নামতে পারে, ওঁকে না দেখলে আমি বিশ্বাস করতাম না।

আর কবীর সুমনের ‘তোমাকে চাই’ শোনেন না, মন খারাপ হলে ‘ক্যাকটাস’?

আমি কোনও দিন মানুষের সঙ্গে শিল্পীকে গুলিয়ে ফেলি না। এটা আমাকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় শিখিয়ে গিয়েছেন। তাই করতে হলে, আমার চারপাশের বহু মানুষের গান-বাজনা-কবিতা পড়া বন্ধ করে দিতে হত। শুধু সুনীল-শঙ্খ পড়তে হত।

তবে এটুকু বলতে পারি, কলকাতা শহরে যদি পাঁচজনও থাকে, যারা কবীর সুমনের সব গান মুখস্থ গাইতে পারে, তা হলে তাদের মধ্যে আমি একজন। কিন্তু মানুষ কবীর সুমনকে আমার পছন্দ নয়।

এই যে আপনার অ্যান্টি-এস্টাব্লিশমেন্ট, এর পরেও গুলাম আলির ফাংশনে তো গেলেন...

হ্যাঁ, গেলাম তো। গুলাম আলিকে মুখ্যামন্ত্রী কোন উদ্দেশ্যে এখানে এনেছেন, সেটা নিয়ে আমি ভাবতে রাজি নই। কিন্তু একজন শিল্পীর মনে একটা গোটা দেশ সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছিল। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ওঁর মন থেকে সেই ভুল ধারণাটা মুছে দিতে পেরেছেন। এর জন্য আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মন থেকে ধন্যবাদ জানাই।

অনেকে বলছে, এটার জন্য পরের বার ‘বঙ্গরত্ন’ পেতে পারেন?

(হাসি) সে তো সময় বলবে। আর বঙ্গরত্ন-র প্রসঙ্গ আসছে কেন? এটাও একটা অদ্ভুত জিনিস হয়েছে আমাদের সমাজে। কাউকে ভাল বলা মানে তাকে আমি সাপোর্ট করছি। কাউকে খারাপ বলা মানে, আমি তার বিরোধী। আরে এত ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট নাকি সব কিছু! অনেকে ভুলে যান, আমি কিন্তু বাম আমলেও পুরস্কার নাকচ করেছি। বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার তখন নাকচ করেছিলাম নন্দীগ্রামের জন্য। তৃণমূল জমানায় পুরস্কার ফিরিয়েছি কামদুনি আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার জন্য। ‘তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়’ লেখার দু’সপ্তাহের মধ্যে এই পুরস্কার আমাকে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। ওটা না-ফেরাতে পারলে দ্বিচারিতা হত।

অনেকে তো আপনাকে কবির পাশাপাশি ‘টলি-কবি’ও বলেন। বাংলা গানের অন্যতম গীতিকার আজকে আপনি...

হ্যাঁ, আমি গানের বাড়ির ছেলে। আমার দাদু ছিলেন সঙ্গীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তী। মা শ্রীলা বন্দ্যোপাধ্যায় নামী ক্ল্যাসিকাল গায়িকা। গানটা আমার রক্তে। আর আমি যখন যেটা করি সেটা মন দিয়েই করি। তবে ‘০৩৩’ বা ‘অটোগ্রাফ’‌য়ের সময় ভাবতে পারিনি আমি এতটা ব্যস্ত হয়ে যাব গীতিকার হিসেবে। আজকে তো সৃজিত, কৌশিকদা সবার সঙ্গেই কাজ করছি।

এতে আপনার কবিতার ক্ষতি হবে না বলছেন?

সেটা হবে না। কবিতা কবিতার জায়গাতেই থাকবে।

এই গান লেখাটি তা হলে আপস?

(হাসি) ‘আমাকে না আমার আপস কিনছো তুমি’...

আপনি কবীর সুমনকে কোট করছেন?

অত ভাল ভাল লাইন লিখেছেন, করব না? হয়তো গান লেখাটা এক প্রকারের আপসই। আমার তো স্থায়ী ইনকাম নেই। আমার স্ত্রী দূর্বা একটা বেসরকারি চাকরি করেন। আর মা এখনও গানের টিউশনি করেন। এই করে আমাদের চলে যায়। তাই লেখালেখি যত বেশি করব, তত ভাল ভাবে থাকতে পারব বোধহয়।

আপনার কিছু পাঠক আপনার ফেসবুকে কবিতা তোলা নিয়ে প্রশ্ন করেন। এতে কবিতাকে হয়তো আপনি লিবারেট করছেন। কিন্তু টিভি বাইটের মতো এই কবিতাগুলো হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও তো থাকে?

দেখুন, ফেসবুক নিয়ে আমি একেবারেই উৎসাহী ছিলাম না। ফেসবুকে শুধু দেখতাম লোকেরা তাদের বউয়ের রান্না ডাল, পোস্তের ছবি দিচ্ছে। অথবা বউরা বরদের কিনে দেওয়া বেনারসি দেখাচ্ছে। আমার বউ কোনও দিন সেটা করেনি। আমিও করিনি। তবে ধীরে ধীরে আমি মিডিয়ামের পাওয়ারটা বুঝতে পারলাম। আগে কবিতা লিখলে, সেটা ছাপতে ছাপতে প্রায় তিন মাস সময় লাগত। আজকে পাঠানকোটের ঘটনা নিয়ে কবিতা যদি তিন মাস পরে ছাপা হয়, তা হলে তার ভ্যালু কিন্তু অনেক কমে যাবে। কিন্তু ফেসবুক এমন একটা মিডিয়াম যেখানে আমি সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কাছে পৌচ্ছে যাচ্ছি।

কিন্তু আজকে সকালের ফেসবুক পোস্ট তো বিকেলেই বাসি...

হ্যাঁ, মানছি সেটা। কিন্তু এটাতেও আমি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পথেই হাঁটছি। যিনি আমাকে বারবার বলেছেন, ‘অমরত্বের স্বপ্ন দেখে বোকারা’। আমার অমর হওয়ার কোনও বাসনা নেই। আর কোন ভাষাতে লিখছি আমি? লিখছি যে ভাষাতে তাতে রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিম, জীবনানন্দ, বিভূতিভূষণ, সুনীল, শক্তি, শঙ্খরা লিখে গিয়েছেন। এ সব জায়েন্টদের পাশে আমি কি পাগল যে অমরত্ব খুঁজে বেড়াব? আমার প্রতিভা কতটা আমি জানি না। কিন্তু আমার নিজের সম্পর্কে সেল্ফ অ্যাসেসমেন্টটা ঠিক আছে। প্রচুর পেয়েছি আমরা প্রচারের দৌলতে। এদেশেই তো জীবনানন্দ হাঁটলে তাঁকে মানুষ চিনতে পারত না।

কিন্তু...?

আর একটা কথা বলি। আমরা না আজকাল নিজেদের বড্ড সেলিব্রিটি ভাবি। আরে স্টিফেন হকিং সেলিব্রিটি। সলমন রুশদি সেলিব্রিটি। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ সেলিব্রিটি। আর আমিও নাকি সেলিব্রিটি! এটা হয় নাকি। নিজের ব্যাপারে বাড়িয়ে ভাবলে কী বিপদ হতে পারে, সেটা আমি আমার সমসাময়িক অনেককে দেখেই বুঝেছি। তারা কেউ কেউ নিজেদের বব ডিলান ভাবেন, কেউ তারকোভস্কি। আমরা ঋতুপর্ণ ঘোষের কথায় শুধু ‘গুড ক্রাফ্টসম্যান’। জাস্ট কলাকুশলী। ব্যস।

এত স্ট্রং স্টেটমেন্ট? এ রকম স্টেটমেন্ট পড়লে তো বহু মানুষ ফোন করে বাহবা দেবেন।

ফোনে পাবে কী করে আমায়? আমি তো ফোন বেশির ভাগ সময় বন্ধই রাখি। কিছু ভাল ডাক্তার আছেন, যাঁরা দিনে দশজনের বেশি পেশেন্ট দেখেন না। আমি ফোনের ক্ষেত্রে সেটা করে ফেলেছি। সারা দিনে আমি দশটা ফোন ধরি বা করি। দশ হয়ে গেলেই আমার ফোন বন্ধ। আমাকে তো নিজের সময়টুকু বার করে নিতে হবে।

এটা আপনি পারেন। কিন্তু কর্পোরেট জগতে কাজ করা কেউ বা মিডিয়ার লোক তো সেটা পারবে না!

সেটা ঠিক। কিন্তু আমি যে এই লাইফটাই চেয়েছিলাম। আমি তিনটে জিনিস চেয়েছিলাম জীবন থেকে। প্রথমটা হল, প্রথাগত বিদ্যা আমি চাই না। তাই পার্ট টু-র পরীক্ষা না দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম। দ্বিতীয়ত, চেয়েছিলাম চল্লিশের পর চাকরি করব না। সাঁইত্রিশেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আর আমাকে সকাল দশটায় কার্ড ঘষতে হয় না। আর তৃতীয়টা ইউরোপ বেড়ানো। যেটা এখনও হয়নি।

আপনার কোনও কবিতার লাইন আপনি ডেডিকেট করতে চান সুবোধ কী কবীর সুমনকে?

না। অনেক কাজ পড়ে আছে। এই বইমেলায় একটা কবিতার বই বেরোচ্ছে আমার। ‘কবিতাসমগ্র ২’। এ ছাড়া আর একটা কবিতার পাণ্ডুলিপি তৈরি করছি – ‘মুস্তাক হুসেনের দরবারি’। এই দু’টো কাজ নিয়েই এখন ব্যস্ত।

তাও যদি ইনসিস্ট করি?

তা হলে ওঁদের সৃষ্টি ওঁদেরকেই ডেডিকেট করতে চাই। সুবোধদার একটা নিজের লাইন আছে, ‘‘এ বাড়ি নয়তো ও বাড়ি/ জীবন হাজারদুয়ারি।’’ ওটাই আমার মেসেজ।

আর কবীর সুমন?

(অনেকক্ষণ ভেবে) ‘‘তোমার ওই আদিম জ্বালার কিছুই কি নেই বাকি/ হে আমার আগুন, আমার পালিয়ে যাওয়া পাখি।’’

ইন্টারভিউ শুরুর আগে তো বলেছিলেন একটা ব্রেকিং নিউজ দেবেন। প্লিজ বলবেন সেটা কী?

(হাসি) ব্রেকিং নিউজটা হল, এই বছরের শেষ দিকে আমি ছবি পরিচালনাতে আসছি।

কী বলছেন?

হ্যাঁ, টালিগঞ্জের এক নামী প্রযোজক পরের সপ্তাহে স্ক্রিপ্টটা শুনবেন। ওঁর আইডিয়াটা ভাল লেগেছে। দু’টো স্ক্রিপ্ট রেডি আছে আমার। অনেক দিন ধরে ভাবছি পরিচালনাতে আসব। শেষমেশ ডিসিশনটা নিয়েই ফেললাম।

এতে তো শত্রুর সংখ্যা আরও বাড়বে আপনার?

(হাসি) যাঁরা কুৎসা করবেন, তাঁদেরকে একটাই জিনিস ভিন্ন ভাবে বলব। তখনও তফাত গড়বে সেই শিরদাঁড়া।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE