Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
হিটের নেপথ্যে

যুগলবন্দির ইচ্ছেগুলো

আলোড়ন ফেলেছে দু’টো ফিল্মই! একটা বাংলায়। একটা বিশ্বজুড়ে। একটাতে প্রবীণ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অন্যটায় অমিতাভ বচ্চন। কোন রসায়নে? আনন্দplus কারণ খুঁজল। ‘বেলাশেষে’র স্কোরবোর্ড জ্বলজ্বল করছে। পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়-এর মুখোমুখি নাসরিন খান।‘বেলাশেষে’র স্কোরবোর্ড জ্বলজ্বল করছে। পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়-এর মুখোমুখি নাসরিন খান।

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৫ ০১:০১
Share: Save:

সৃজিতকে ফোন করেছেন? না কি এত ব্যস্ত যে খবর নেওয়ার সময় পাননি?

শিবপ্রসাদ: আপনারা তো জানেন সৃজিতের ফোন খারাপ হয়ে গিয়েছে। ঋতুপর্ণা দিল্লি গিয়েছিল। সৃজিতের সঙ্গে দেখা করেছে। আমি প্রতিনিয়ত খবর রাখছি। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাই সৃজিত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক।

লোকে তো বলছে বক্স অফিসে আপনার আর সৃজিতের নীরব যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে?

শিবপ্রসাদ: সৃজিত আর আমার কোনও লড়াই নেই। লড়াই যদি কিছু থাকে, তা হল তামিল, তেলুগু, মালয়ালম রিমেকগুলোর বিরুদ্ধে। হিন্দি সিনেমার বিরুদ্ধে। আমাদের দু’জনের একটাই লক্ষ্য। বাংলা সিনেমার দর্শককে আবার হলমুখী করা। যে দর্শকরা হারিয়ে গিয়েছিল, তাদের আবার হলে ফিরিয়ে আনা।

পাঁচ বছরে পাঁচটা হিট। পাবলিক পালস কী করে এত ভাল বোঝেন?

শিবপ্রসাদ: হল মালিকেরা একটা জিনিসই চান। যে সব পরিচালক দর্শকদের হলমুখী করতে পারেন, তাঁদেরই চান। কেউ কেউ চান তরুণ মজুমদারকে, কেউ তপন সিংহকে, কেউ অঞ্জন চৌধুরীকে। অঞ্জন চৌধুরীর ‘শত্রু’ যেমন পঁয়ত্রিশ সপ্তাহ টানা হলে ব্যবসা দিয়েছিল। আমরা এখনকার পরিচালকেরা যদি এক সপ্তাহও একটা ছবিকে টানা হলে চালাতে পারি তা হলে সেটাও বিরাট অ্যাচিভমেন্ট।

আপনারা সিনেমার লার্জার দ্যান লাইফ আবেদন বাদ দিয়ে গল্পের ওপর জোর দেন। সেটা কি ইচ্ছাকৃত?

শিবপ্রসাদ: গল্পই হল রাজা। সিনেমার মূল চাবিকাঠি। দর্শকের সঙ্গে আমাদের সংযোগটা তৈরিই হয়েছে গল্প দিয়ে। আজ হয়তো লোকেদের মনে হচ্ছে গল্পের সাফল্যের জন্য আমরা এই ধরনের ছবি করি। কিন্তু আমরা যখন ‘ইচ্ছে’ ভেবেছিলাম, তখন ওই সিনেমাটা করতে আট বছর অপেক্ষা করেছিলাম। কলকাতা শহরে কোনও প্রোডিউসর নেই যাঁর কাছে গিয়ে বলিনি সিনেমাটা করুন। প্রত্যেকেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও আমরা পিছিয়ে যাইনি। ‘ইচ্ছে’ যত দিনে রিলিজ হচ্ছে আমরা ‘মুক্তধারা’ নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি। কিন্তু তখনও আমরা জানি না যে, কে প্রোডিউস করবে। বা ‘মুক্তধারা’ বাজারে চলবে কি না। কোনও দিন আশঙ্কা হয়নি যে সিনেমাটা সাকসেসফুল হবে কি না।

‘বেলাশেষে’র বিষয়টা নতুন। সিলভার সেপারেশন নিয়ে। অনুপ্রেরণা কোথায় পেলেন?

নন্দিতা: আমরা একটা নাটক দেখেছিলাম ‘বেলাশেষে কোলাহল’ বলে। ওই নাটকের কনসেপ্টটা খুব ভাল লেগেছিল আমার। সেই থিমটা তুলে নিয়ে একদম অন্য গল্প তৈরি করলাম। তৈরি হল ‘বেলাশেষে’।

জীবনের বেলাশেষে আপনার পাশে থাকবেন, এমন কেউ আছেন?

শিবপ্রসাদ: (হেসে) আমি তো চাইব তাই।

অনেকের ধারণা আপনার আবেগের বহিঃপ্রকাশ খুব কম। কেউ কেউ এমনও বলেন আপনি খুব ‘ফেক’...

শিবপ্রসাদ: আমার সিনেমাই আমার অনুভূতি দেখানোর জায়গা। আমার রাগ, আমার আদর, আমার প্রেম করা, প্রেমের প্রকাশ— এ সবেরই জায়গা আমার সিনেমা। বাইরের জগতের কাছে নিজের অনুভূতি না-ই বা দেখালাম।

অনেকে বলেন শিবপ্রসাদ হলেন গ্ল্যামার ফ্যাক্টর আর নন্দিতা রায় হলেন ব্রেন আর ক্রিয়েটিভ ফ্যাক্টর।

শিবপ্রসাদ: সেটা তো খুব ভাল!

দু’জনে মিলে একটা ছবি পরিচালনা করা কাজ হিসেবে ঠিক কতটা কঠিন?

নন্দিতা: আমাদের পক্ষে এটা বেশ সহজ একটা কাজ। আমরা কে কোন কাজটা করব, তা আগে থেকেই ঠিক করে নিই। এবং সেই সীমাটা কখনও গুলিয়ে যায় না। আমরা দু’জনে দু’জনের জায়গাগুলোকে খুব ভাল চিনি, জানি।

বাঙালি দর্শক ভাবেইনি ‘ঘরে-বাইরে’ জুটিকে আবার এই সিনেমায় এ ভাবে পাওয়া যাবে। চিত্রনাট্য লিখেছেন কি ওঁদের কথা ভেবেই?

শিবপ্রসাদ: আমরা সৌমিত্রদা, স্বাতীলেখাদির কথা মাথায় রেখেই স্ক্রিপ্টটা লিখেছিলাম। ‘অলীক সুখ’য়ে কাজ করার পর আমাদের মাথায় ছিল যে সৌমিত্রদাকে নিয়ে আবার কোনও কাজ করা। ‘বেলাশেষে কোলাহল’ নাটকে আরতির চরিত্রটা করতেন স্বাতীদি নিজেই। স্বাভাবিক ভাবেই ওঁকে ছবিটাতে নেওয়া হয়েছে।

ঋতুপর্ণা ছাড়া এ ছবিতে অন্যান্য চরিত্রে তারকা না নিয়ে চরিত্রাভিনেতা নিয়েছেন...

শিবপ্রসাদ: আমরা যে ধরনের গল্প নিয়ে ছবি করেছি, তাতে স্টার নিয়ে কাজ করার দরকার পড়েনি। যদি সেটা একটা দৃশ্য হয়, আমি সেই একটা দৃশ্যের জন্যই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছে যাব। ‘অলীক সুখ’-এ একটাই দৃশ্যে সৌমিত্রদা অভিনয় করেছিলেন এবং সিনেমাটা দেখে যখন বেরিয়েছিল সবাই, তখন ওই একটা দৃশ্যকেই লোকে বলেছিল সিনেমার প্রাণকেন্দ্র। গল্পটাই প্রধান। আমাদের চোখে যে কোনও তারকাই প্রথমত অভিনেতা। ‘বেলাশেষে’তে মিলি আর বিশ্বনাথের চরিত্রের জন্য সৌমিত্রদা আর ঋতুপর্ণাকেই দরকার ছিল। আমার তো মনে হয় ঋতুপর্ণার জীবনের অন্যতম সেরা চরিত্র এটা। একজন সুপারস্টারের পক্ষে অনসম্বল কাস্টে কাজ করাটা সবচেয়ে কঠিন।

ছবিতে সূ্ক্ষ্ম ভাবে নানা ব্র্যান্ডকে প্রোমোট করা হয়েছে। এটাতে তো ছবির খরচ অনেকটাই উঠে আসে...

শিবপ্রসাদ: আমাদের ছবিতে ইন-ফিল্ম থাকলেও বিষয়বস্তুকে লঘু করে না। আমার চরিত্ররা কখনও বিজ্ঞাপনের ভাষা সংলাপে প্রকাশ করে না।

শিবপ্রসাদ, আপনি তো অভিনয় করতে ভালবাসেন। সুযোগ পেলে কোন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে চাইবেন? নায়িকা হিসেবেই বা কাকে চাইবেন?

শিবপ্রসাদ: নিজের ছবি বাদ দিয়ে অন্য কারও ছবিতে কাজ করার সময় নেই আমার।

সামাজিক কথা তুলে ধরেন। কিন্তু রাজনীতিতে আপনার এত অনীহা কেন? সত্যিই কি রাজনীতি নিয়ে কোনও ঝোঁক নেই আপনার?

শিবপ্রসাদ: একজন সত্যিকারের শিল্পীর রাজনৈতিক মত প্রকাশের জায়গা তার শিল্পক্ষেত্র। আমাদের কাছে সেটা আমাদের সিনেমা।

নিন্দুকেরা বলে আপনার ছবি আসলে বড় পর্দার মেগাসিরিয়াল...

শিবপ্রসাদ (রেগে গিয়ে): ওরা কী চায় বলুন তো? যারা বলছে, আমার তাদের কাছে একটা প্রশ্ন আছে। যশ চোপড়া হিন্দিতে সিনেমা করে বলছে ‘তুমহারে পাস কেয়া হ্যায়’। আমরা তখন তাকে বড় জায়গায় বসিয়ে বলছি যশ চোপড়া ভারতের শ্রেষ্ঠ পরিচালক। আর অঞ্জন চৌধুরী যখন ‘শত্রু’র মতো ছবি বানাচ্ছে তখন সেই সম্মানটাই আমরা তাঁকে দিতে চাই না। শুনুন, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের মধ্যে এই হিপোক্রেসিটা বন্ধ হোক। দর্শকদের সঙ্গে সংযোগটাই কিন্তু আসল। সিনেমা তো শুধু গ্ল্যামার বা এক্সোটিক লোকেশন দিয়ে হতে পারে না! কনটেন্টই সিনেমার মূল কথা। আর সঙ্গে লাগে অনেকটা হৃদয়।

নন্দিতা: বাঙালি গল্প শুনতে, গল্প বলতে, গল্প দেখতে ভালবাসে। এটা আমাদের নেচার।

আপনার গার্লফ্রেন্ড কে, তা নিয়ে বাজারে প্রচুর চর্চা হচ্ছে। কাকে ডেট করছেন?

শিবপ্রসাদ: এই সাক্ষাৎকারটা আমি আর নন্দিতাদি দু’জনে দিচ্ছি। আমার ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ তাই পরের কোনও সাক্ষাৎকারের জন্য তোলা থাক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE