Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইছামতী বর্ডার চুম্বন বিসর্জন

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়-এর নতুন ছবি। লিখছেন ইন্দ্রনীল রায়মহাপ়ঞ্চমীর সকালেও বর্ডারের ওপার থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের হান্দওয়ারার আর্মি ক্যাম্পে আক্রমণ হয়েছে। তার তিন দিন আগে উগ্রপন্থীরা হানা দেয় বারামুলায়। তারও দু’সপ্তাহ আগে উরিতে।

ফার্স্ট লুক: ‘বিসর্জন’ ছবিতে জয়া-আবীর। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

ফার্স্ট লুক: ‘বিসর্জন’ ছবিতে জয়া-আবীর। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

মহাপ়ঞ্চমীর সকালেও বর্ডারের ওপার থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের হান্দওয়ারার আর্মি ক্যাম্পে আক্রমণ হয়েছে। তার তিন দিন আগে উগ্রপন্থীরা হানা দেয় বারামুলায়। তারও দু’সপ্তাহ আগে উরিতে।

এমন যুদ্ধ-যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ‘বর্ডার’, ‘চেক পোস্ট’, ‘সীমান্তবর্তী এলাকা’, ‘সেনাবাহিনী’ — এই শব্দগুলোর ওপরই কাগজের পেজ ওয়ান স্টোরির প্রধান অধিকার।

ঠিক এমন সময়ই, এই সীমান্তবর্তী এলাকা, চেক পোস্টকে সাক্ষী রেখে নিজের পরের ছবির গল্প লিখছেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। ছবির নাম ‘বিসর্জন’।

অবশ্য পাকিস্তান বর্ডার নয়, এই লাভ স্টোরির প্রেক্ষাপট একসময়ের পূর্ব পাকিস্তান। আজকের বাংলাদেশ। এমনকী কাস্টিংয়েও রয়েছে তার ছোঁয়া।

মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন এপার বাংলার আবীর চট্টোপাধ্যায় এবং ওপার বাংলার জয়া এহসান। শ্যুটিং শুরু টাকিতে এই মাসের ১৯ তারিখ থেকে। আবীর, জয়া ছাড়াও এই ছবিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন স্বয়ং পরিচালক।

‘‘অনেকদিন ধরেই মাথায় লাভ স্টোরিটা ঘুরছিল। আজকের পরিস্থিতিতে তো গল্পটা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। আমরা সবাই জানি ২০১৬-র এই পৃথিবীতে কাঁটাতার দিয়ে অনায়াসে মানুষে মানুষে দূরত্ব তৈরি করা যায়। কিন্তু এর পাশাপাশি প্রেম দিয়ে যে সেই দূরত্ব মেটানোও যায় সেটাই ‘বিসর্জন’ ছবির থিম,’’ বৃহস্পতিবার বিকেলে বলছিলেন পরিচালক।

এই ছবিটা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছেও বড় চ্যালেঞ্জ। তাঁর শেষ ছবি ‘সিনেমাওয়ালা’ ফেলিনি পুরস্কার পেলেও একেবারেই বক্সঅফিস সাফল্য পায়নি। আজকে যখন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো পরিচালকরা বক্স অফিসেও সাফল্য পাচ্ছেন, তখন তিনিও কী তাঁর স্ট্র্যাটেজি বদলেছেন? তিনি কি একটু হলেও ফেস্টিভ্যাল ছবি থেকে কমার্শিয়াল ছবির দিকে ঝুঁকছেন?

‘‘অবশ্যই। শিবপ্রসাদের বক্স অফিস সাফল্য আজকের টালিগঞ্জের পরিচালকদের মধ্যে সবথেকে বেশি। এই গল্পটা লেখার সময়ও আমি শিবপ্রসাদকে মাথায় রেখেছি।
সিন লেখার আগে নিজেকে প্রশ্ন করেছি, এই সিনটা শিবু কী ভাবে ভাবত। সেই চিন্তা মাথায় রেখে আমি আমার মনন, আমার রুচি, আমার শৈল্পিকবোধ দিয়ে গল্পটা লিখেছি,’’ বলেন পরিচালক।

কিন্তু এই ফেস্টিভ্যালধর্মী ছবিকে বিদায় জানাতে খারাপ লাগছে না তাঁর?

‘‘একদমই নয়। যখন দরকার পড়বে তখন নিশ্চয়ই করব ফেস্টিভ্যালের ছবি। ওই পিচটা তো আমার অসম্ভব চেনা। এখানে এটাও বলি, ‘বিসর্জন’ লেখার সময় কিন্তু কোনও ফেস্টিভ্যাল কিউরেটরের মুখ আমার মাথায় আসেনি। কোনও ‘লরেল’‌য়ের কথা আমি ভাবিনি। যে ভাবে ‘খাদ’ কী ‘বাস্তু শাপ’‌য়ের গল্প লিখেছিলাম, সেই ধাঁচেই এই গল্পটা বলা। যথেষ্ট কমার্শিয়াল এলিমেন্ট থাকবে ছবিতে। আর এখানে আমার প্রযোজক নতুন। তিনিও যাতে লাভের মুখ দেখেন সেটাও আমার বড় দায়িত্ব,’’ বলেন ‘শব্দ’‌য়ের পরিচালক।

এই ছবিতে জয়া এহসানের চরিত্রের নাম পদ্মা। নামের মধ্যে এই ‘আয়রনি’টা কি ইচ্ছে করে রাখা? প্রশ্ন শুনে হসে ফেলেন পরিচালক।

‘‘সেটা রিলিজের পরে দেখে বলবেন। তবে ‘পদ্মা’ সব অর্থেই এখানে ইছামতীতে এসে মিশেছে। আর আবীর আর জয়ার কাস্টিং নিয়ে আমি অসম্ভব খুশি। দু’জনের কেমিস্ট্রিটা দারুণ, এবং এই কেমিস্ট্রিটা এই ছবির কিছু দৃশ্যের জন্য খুব প্রয়োজন। আর জয়া কিছুদিন আগে বলছিল টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রি ওকে তেমন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে না। আমি বড়াই করছি না, কিন্তু এই রোলটা হয়তো এ পার বাংলা বা ও পার বাংলার কোনও পরিচালক ওকে এখনও অবধি দেয়নি,’’ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলেন কৌশিক।

জয়া-আবীর নিজেরাও ‘বিসর্জন’ নিয়ে যথেষ্ট উত্তেজিত। ছবি নিয়ে হোমওয়ার্কও শুরু করে দিয়েছেন দু’জনেই। যেহেতু বাংলাদেশে ব্যবহৃত বহু প্রপস লাগবে ছবিতে, যেমন সিগারেটের বাক্স, সাবান, দেশলাই — সেগুলো প্রোডাকশনের লোকেরা ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে নিয়ে এসেছেন অভিনেত্রী নিজেই।

‘‘আমি যেহেতু ও দিকের ব্যাপারগুলো জানি আমার মনে হয়েছে আমি হেল্প করতে পারি। আর কৌশিকদার পরিচালনায় আমি বহুদিনই ছবি করতে ইচ্ছুক। এর আগে ‘আবর্ত’তে অভিনয় করেছি। আর এই ছবিতে তো কৌশিকদা পরিচালনার সঙ্গে সঙ্গে অভিনয়ও করছেন। আমাকে অভিনেত্রী হিসেবে টপ ফর্মে থাকতে হবে,’’ হাসতে হাসতে বলেন জয়া।

আবীর এই ছবিতে সম্পূর্ণ অন্য ‘গেট আপ’‌য়ে। বোঝাই যাচ্ছে ক্রমশ নিজের লুক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে আর পিছপা নন আবীর। এটা কি তা হলে তাঁরও নতুন স্ট্র্যাটেজি?

‘‘সবাই ইমেজ ভাঙছে বলে আমাকেও ইমেজ ভাঙতে হবে, সেই গড্ডালিকা প্রবাহে আমি পা দিতে চাই না। তবে এখানে যেহেতু পরিচালক কৌশিকদা, আমি জানি আই অ্যাম ইন সেফ হ্যান্ডস। কৌশিকদা আমাকে ঠিক গাইডেন্সটা দেবে। ‘বাস্তু শাপ’‌য়ের পরে কৌশিকদার ওপর আমার সেই ভরসাটা পুরো মাত্রায় রয়েছে। এই ছবিতে দর্শকরা একদম অন্য আবীরকে পাবেন সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত,’’ বলেন তিনি।

এই ছবিতে আরও দু’টো চমক রয়েছে। এই প্রথম কোনও বাংলা ছবিতে (এর আগে বাংলাদেশের একটা ছবি করেছিলেন) কাজ করছেন ‘দোহার’‌য়ের কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। তিনিও এ রকম একটা ছবির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে উচ্ছ্বসিত। ‘‘ছবির গল্পটাই এমন, আমি যে রকম মিউজিক নিয়ে কাজ করি সেটার প্রচুর স্কোপ রয়েছে ছবিতে। খুব মন দিয়ে কাজটা করতে চাই,’’ পুজোয় দিল্লিতে অনুষ্ঠান করতে যাওয়ার আগে এয়ারপোর্টে বসে বলছিলেন কালিকাপ্রসাদ।

এ ছাড়াও দ্বিতীয় চমক, এ ছবির নায়ক-নায়িকার লুক এবং কস্টিউম, দু’টোর দায়িত্বেই রয়েছেন ‘নির্বাসিত’র পরিচালক চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়।

‘‘হ্যাঁ, আবীর আর জয়ার লুক আর কস্টিউমের পুরোটা দেখছে চূর্ণী। এ ছাড়াও আমরা পুরো পোস্ট প্রোডাকশনের সেট আপ নিয়ে যাচ্ছি টাকিতে। ওখানে শ্যুটিংয়ের পাশাপাশি এডিটও করব। পুরো পোস্ট প্রোডাকশনটা সামলাবে চূর্ণী,’’ বলেন চূর্ণীর বেটার হাফ।

প্রযোজক সুপর্ণ কান্তি কারাটির ওপেরা মিউজিক অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্ট-এর ব্যানারে তৈরি হওয়া এই ছবির প্রি-প্রোডাকশনের কাজও চলছে এখন পুরোদমে। তার মধ্যেই দশমীর দিন ইছামতীতে গিয়ে ‘বিসর্জন’‌য়ের কিছু শট নিতে যাচ্ছেন পরিচালক।

তবে ছবি সম্বন্ধে শেষ কথাটা হয়তো বলছেন আবীর নিজেই। ‘‘কালকে ষষ্ঠী। এখন বিসর্জনের কথা বললে মন খারাপ হয়ে যেতে বাধ্য। কিন্তু আমরা যারা কৌশিকদার এই ছবিতে কাজ করছি, তাদের এখন ‘বিসর্জন’ শুনলে দারুণ এক্সাইটেড লাগছে। মনে হচ্ছে কৌশিকদার সঙ্গে একটা দারুণ কাজ হবে,’’ বলেন আবীর।

তা হলে কি ইছামতীতে ‘বিসর্জন’ দিয়েই নতুন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়কে পাবে দর্শক? ষষ্ঠীর বোধনে এটাই টালিগঞ্জের সব থেকে বড় প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abir Chattopadhyay Kaushik Ganguly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE