নতুন ট্রেন্ড সেট করতে বলিউডের জুড়ি মেলা ভার! আনকোরা নতুনকেই ট্রেন্ড হিসেবে তুলে ধরতে হবে এমন তো কোনও কথা নেই। পুরনোকেও রাঙিয়ে নেওয়া যায় নতুনের মোড়কে। অন্তত বলিউড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির লেটেস্ট ট্রেন্ড তেমনটাই বলে মনে হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রির মন্ত্র, ওল্ড ওয়াইন ইন আ নিউ বটল। পুরনো গান নির্বাচনের ক্ষেত্রে নব্বইয়ের দশকের আধিপত্য থাকলেও উঁকি মারছে আরও একটা ট্রেন্ড। বেশি দূরে যাওয়ারও দরকার পড়ছে না। মাত্র পাঁচ-সাত বছরের পুরনো গানকেই ঝালিয়ে নেওয়া হচ্ছে কনটেম্পোরারি আঙ্গিকে।
নতুন রাবতা
সবচেয়ে ভাল উদাহরণ, ‘রাবতা’(২০১৭) ছবির টাইটেল ট্র্যাক। ২০১২-য় মুক্তিপ্রাপ্ত ‘এজেন্ট বিনোদ’ ছবিতে প্রীতমের সুরে গানটি গেয়েছিলেন অরিজিৎ সিংহ। সেই গানটি নতুন ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে সুশান্ত-কৃতীর ‘রাবতা’ ছবিতে। গানটি মূলত মহিলা কণ্ঠে হলেও, গায়কের ভার্সানটি গেয়েছেন অরিজিৎই। আবার ‘কম্যান্ডো টু’ ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ভুলভুলাইয়াঁ’ (২০০৭) ছবির জনপ্রিয় ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ গানটির নতুন ভার্সন। এ ক্ষেত্রে অবশ্য শিল্পী বদল করা হয়েছে। অরিজিনাল গানটি গেয়েছিলেন নীরজ শ্রীধর। ‘কম্যান্ডো টু’তে গেয়েছেন আরমান মালিক, রাফতার ও রিতিকা।
ইন্ডিপপের কামব্যাক
এখনকার হিন্দি ছবিতে পুরনো যে গানগুলির রিমেক করা হচ্ছে তার সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে নব্বইয়ের মন মাতানো ইন্ডিপপ। যেমন ধরুন, ‘হিন্দি মিডিয়াম’-এ সুখবীরের ‘ও হো হো’, ‘গেস্ট ইন লন্ডন’ ছবিতে স্টিরিও নেশনের ‘দারু ভিচ পেয়ার’, ‘রাবতা’য় পঞ্জাবি গায়ক জগদীপ সিংহের ‘ম্যায় তেরা বয়ফ্রেন্ড’ ইত্যাদি। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হিট হয়েছে ‘কালা চশমা’। এতটাই হিট যে সাম্প্রতিক কালের একটি নয়, দুটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে গানটি। পঞ্জাবি গায়ক অমর আরশির গাওয়া এই গানটি প্রথম বার শোনা যায় ‘বার বার দেখো’ (২০১৬) ছবিতে। বিয়েবাড়ি থেকে পার্টি, নাইটক্লাব থেকে ডিস্ক, সর্বত্রই ছিল ‘কালা চশমা’র অবাধ গতি। আর হালফিলে মুক্তি পাওয়া ‘বহেন হোগি তেরি’ ছবিতে শুনতে পাবেন ওই গানের ভক্তিগীতি ভার্সন ‘জয় মা’।
ব্র্যান্ড নব্বই
এ বছরে রিলিজ হওয়া হিট গানের লিস্ট যদি দেখেন, তাতেও কিন্তু রেট্রো ম্যাজিক। ‘রইস’ ছবির ‘ল্যায়লা মে ল্যায়লা’, ‘কাবিল’-এর ‘হাসিনো কা দিওয়ানা’, ‘ওকে জানু’-র ‘হাম্মা হাম্মা’ বা ‘বদ্রীনাথ কী দুলহনিয়া’র ‘তাম্মা তাম্মা’, একটা গানও কিন্তু অরিজিনাল নয়। ‘হাম্মা হাম্মা’ আর ‘তাম্মা তাম্মা’য় রিমিক্সের কাজ করেছেন এক বাঙালি। তনিষ্ক বাগচী। তাঁর মতে, নতুন ভার্সনের গানগুলোর মধ্য দিয়ে তিনি এ আর রহমান আর বাপ্পি লাহিড়ীকে ট্রিবিউট জানিয়েছেন।
এক নজরে হিটলিস্ট
হাম্মা হাম্মা (ওকে জানু)
শিল্পীদের মতামত
গায়ক-সুরকার অনুপম রায়ের কথায়, ‘‘এই ট্রেন্ডটার ভিত্তি পুরোপুরি বাণিজ্যিক। কী ভাবে বেশি টাকা রোজগার করা যায়, সে দিকেই ঝোঁক।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘টলিউডেও নব্বইয়ের দশকে এই ট্রেন্ডটার বেশ বাজার ছিল। অনেক শিল্পীই রিমেক গান গেয়ে নজরে এসেছিলেন।’’ সুযোগ পেলে নিজের কম্পোজিশনের গান রি-ইনভেন্ট করার ইচ্ছের কথা জানালেন অনুপম।
সুরকার জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এই ট্রেন্ড মোটেই ভাল নয়। এমনিতেই এখন ছবিতে গানের সংখ্যা কমে গিয়েছে। তার উপর যদি পুরনো গান ফিরিয়ে আনা হয়, তা হলে নতুন সৃষ্টি হবে কী করে! অনেক প্রযোজক-পরিচালক নতুন কম্পোজিশন শুনে বলেন, এটা পুরনো শোনাচ্ছে। তা হলে তাঁরাই কী করে পুরনো গান নিয়ে কাজ করছেন?’’ জিতের মতে, গানটা যদি ভাল চলে, তা হলে ঠিক আছে। কিন্তু পুরনো গান যদি নিউ ফরম্যাটে শ্রোতাদের টানতে না পারে, তবে সেটাও কিন্তু বেশ বড় ক্ষতি।
টলিউডের সংগীত পরিচালক অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘যদি শ্রোতার ভাল লাগে, তবে কোনও অসুবিধে নেই। কম্পোজার হিসেবে আমাদের সব সময় চেষ্টা করা উচিত নতুন কিছু সৃষ্টির। যদি ছবিটার জন্য রিমেক করা বাধ্যতামূলক না হয়, সে ক্ষেত্রে কিন্তু আমার মনে হয় নতুন কিছুর খোঁজ করাই ভাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy