চলচ্চিত্র সার্কাস ছবির একটি দৃশ্য।
পরপর ফ্লপ। একটা সময় ভেবে ছিলেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিই ছেড়ে দেবেন। মন বদলে ঠিক করলেন যে-ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে এত সমস্যা, সেটারই হাটে হাঁড়ি ভাঙবেন! মৈনাক ভৌমিকের ‘চলচ্চিত্র সার্কাস’-এর নেপথ্য কাহিনি খানিকটা এ রকমই।
কিন্তু সিস্টেমের ভিতরে থেকে কতটা অকপট হওয়া যায়? ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ওপেন সিক্রেটগুলো কি স্পষ্ট করে বলতে পেরেছেন মৈনাক? পরিচালক অবশ্য দ্বিধাহীন কণ্ঠে বললেন, ‘‘যারা ভাবে সব কিছু গোপন রয়েছে, কেউ কিছু বুঝছে না, তারা ভুল ভাবে। এই ইন্ডাস্ট্রিতে গোপন কিছু নেই। বরং কিছু ঢাকতে চাইলেই সবটা আরও প্রকট হয়ে ওঠে! ‘চলচ্চিত্র সার্কাস’ ইজ আ ফিল্ম অ্যাবাউট গসিপ। এর সঙ্গে প্রেম ভাঙছে। ওর সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে। এই পিঠ চাপড়ে দিয়ে গেল, পর মুহূর্তেই পিছনে কাঠি। আজব দুনিয়া!’’
আরও পড়ুন: ‘ক্যামেরার পিছনে কী কী হয়, এ বার সেটাই দেখাব’
নমুনা পেশ করলেন মৈনাক নিজেই। ‘চলচ্চিত্র সার্কাস’ সিনেমার ভিতরে সিনেমা তৈরির গল্প। ছবির পরিচালক সূর্য। ঋত্বিক চক্রবর্তী যে চরিত্রটা করছেন।
মৈনাকের জবানিতে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আলোচিত সত্যিকারের মিথগুলো
কাস্টিং কাউচ আছে
হিপোক্রেসি, ডিপ্লোমেসি ভরপুর। অনেকে আবার মুখ খুলে বোমা ফাটানোয় বিশ্বাসী
কুসংস্কার আছে
অ্যাওয়ার্ড কেনা হয়। তার জন্য রেট কার্ড আছে
ছবি না চললেও সাকসেস পার্টি দিতে হয়
সাংবাদিককে পকেটে রাখতে হয়
কিন্তু সেই বহুচর্চিত গল্প— নায়িকা এবং প্রযোজকের প্রেম? মৈনাক নির্দ্বিধায় মেনে নিলেন, ইন্ডাস্ট্রিতে নায়িকা-প্রযোজকের সম্পর্কের কথা। ‘‘এ রকম তো হয়েই থাকে। প্রযোজক নির্দিষ্ট একজন নায়িকা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। ছবিতে পায়েল যেমন উঠতি নায়িকা। প্রযোজকের (বিশ্বনাথ বসু) সঙ্গে ‘ভাল সম্পর্ক’। তাই ছবিতে নিতে হবে। এ দিকে নায়িকা হিরোর সঙ্গেও প্রেম করে। তা হলে জুটি তৈরি হবে। প্রেম ভেঙে গেলে হিরোর ছবিতে আর হিরোইন হওয়া হবে না। এখানে সকলেই দু’নৌকোয় পা দিয়ে চলে। এটাও ইন্ডাস্ট্রির ট্রেন্ড। তিন জনের সঙ্গে প্রেম করব। সামনে দেখাব, তিন জনেই ভাল বন্ধু। ছবি দেখে বেরিয়ে বলব ভাল লেগেছে। আড়ালে খিস্তি করব। বাইরে থেকে এগুলো দেখলে সকলকে কার্টুন ক্যারেক্টারের মতো লাগে।’’
কোনও পরিচালক একই মুখ বারবার নিলে প্রেমের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। মৈনাকের কথায়, ‘‘স্বস্তিকার সঙ্গে পরপর ছবি করলে লোকে ভাবত, ওর সঙ্গে আমি প্রেম করি। এখন ভাবে, আমি বোধহয় ঋত্বিকের সঙ্গে প্রেম করি।’’
নাম না ভাঙলেও তিনিও যে ঢেঁকি গেলার মতো প্রযোজকের পছন্দের নায়িকা নিয়েছেন, স্বীকার করলেন পরিচালকই। ‘‘আরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি মানে কনস্ট্যান্ট কম্প্রোমাইজ। কেউ সেগুলো স্পষ্ট করে স্বীকার করবে না। নইলে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে ‘কলকাতার রসগোল্লা’ দেখতে হয়?’’
ছবিতে অরিন্দম শীল রয়েছেন এক্সিকিউটিভ প্রযোজকের চরিত্রে। একেবারে রসে-বশে থাকা একটা চরিত্র। যে টাকা সরায়, নিজের মতো ব্র্যান্ড প্রমোশন করে। পরিচালক-প্রযোজককে তেল দেয়। আবার যার সঙ্গে প্রেম করছে, তাকে একটা চরিত্র দেওয়ার জন্য ঝুলোঝুলি করে। এখানে অরিন্দম ওকালতি করে সুদীপ্তা চক্রবর্তীর জন্য। পরিচালক কিছু না পেরে কাজের লোকের চরিত্র গছিয়ে দেয় (কেসটা বুঝলেন তো!) যে কারণে ইপিদের ‘ছিপি’ বলা হয়। এমনই সব বিচিত্র চরিত্রদের নিয়ে এসেছেন মৈনাক তাঁর সার্কাসের তাঁবুতে।
কিন্তু প্রেম, টাকাপয়সার নয়ছয়, মুখে মিষ্টি, আড়ালে নিন্দের বাইরে ইন্ডাস্ট্রির আর কোন জিনিসটা মৈনাকের না-পসন্দ? বললেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়া ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে নষ্ট করে দিচ্ছে।’’ সত্যিই কি তাই? ‘‘একটা উদাহরণ দিই। ‘বেলাশেষে’ আর ‘ফ্যামিলি অ্যালবাম’ কাছাকাছি সময়ে মুক্তি পেয়েছিল। ‘ফ্যামিলি অ্যালবাম’-এর সাড়ে তিন লক্ষ ভিউ ইউটিউবে। এ দিকে ‘বেলাশেষে’ বড়জো়ড় ২০ হাজার। আর কিছু কি বলার আছে? সোশ্যাল মিডিয়া দিয়ে সাফল্য নির্ভর করে না।’’
কিন্তু ছবিতে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে এতটা খুল্লামখুল্লা হওয়া কি ঝুঁকির হয়ে গেল? একেবারে ফিল্মি স্টাইলেই হেসে জবাব দিলেন মৈনাক, ‘‘কেউ কিছু বললে বলব, সবটাই তো ফিকশনাল। আরে, কিছু ডিপ্লোম্যাসি তো শিখেছি এখান থেকেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy