Advertisement
১১ মে ২০২৪

স্বপ্ন সন্ধানের ২৫

পৃথিবী জুড়ে যুদ্ধ, সন্ত্রাস, হত্যার বিপরীতে স্বপ্নসন্ধানী-র নাট্যোৎসব পৃথিবী জুড়ে যুদ্ধ, সন্ত্রাস, হত্যার বিপরীতে স্বপ্নসন্ধানী-র নাট্যোৎসব

‘অশ্বত্থামা’র মহলায় সুরজিৎ, লোপামুদ্রা, কৌশিক ও ঋদ্ধি

‘অশ্বত্থামা’র মহলায় সুরজিৎ, লোপামুদ্রা, কৌশিক ও ঋদ্ধি

দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৫৮
Share: Save:

এক দিকে তিনি সোমশঙ্কর বসাকের কুপুত্তুর দিব্যেন্দু। অন্য দিকে তিনিই আবার পুরাণের কৃতবর্মা।

পরদায় যিনি ‘দুর্গাসহায়’-এ। মঞ্চে তিনিই আবার ‘অশ্বত্থামা’য়। তিনি কৌশিক সেন। তাঁর নাট্যদল ‘স্বপ্নসন্ধানী’ এ বছর ২৯ মে পঁচিশে পড়ছে। তাঁদের চার দিনের নাট্যোৎসবের শুরু ওই দিনেই।
শেষ ১ জুন। প্রতিদিন শো ৬টায়, জ্ঞান মঞ্চে।

‘ফোর ক্যারেকটার্স ইন সার্চ অব লাইট অ্যান্ড ডার্কনেস’ শিরোনামে এই উৎসবে ‘স্বপ্নসন্ধানী’ আনছে দুটি নতুন নাটক। যার একটি ব্রেখটের ‘মাদার কারেজ’ (রূপান্তর রতনকুমার দাস)। যার শো প্রথম দিনেই।

মূল নাটকের সঙ্গে এখানে ফারাক দুটি। সংযোজিত হয়েছে দুই কথাকার। তাঁদের একজন যেন অনেকটাই স্বয়ং ব্রেখটের ছায়া (কৌশিক সেন)। অন্য জন তাঁরই সঙ্গিনী, রুথ বার্লো যেমন! ড্যানিশ অভিনেত্রী। স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের সেনানি। হেলেন ভাইগেলের মতো পালিয়ে বেড়ানো ব্রেখটের বিশ্বস্ত সহচারী।

দ্বিতীয় বদল, প্রেক্ষাপট। এখানে কাশ্মীর। কার্টুনিস্ট মালিক সাজাদকে একদিন খবরের কাগজের প্রথম পাতার দুটি খবর ধাঁধায় ফেলে দেয়। একটিতে ছিল, সাত-আট জন কাশ্মীরীর সংঘর্ষে মৃত্যু। অন্যটিতে সুগন্ধী-হরিণ হাঙ্গুলের লুপ্তপ্রায় দশা। দুইয়ে মিলে মালিকের মনে প্রশ্ন, ‘‘আমরা কি সবাই ওই হাঙ্গুলের মতো লুপ্ত হওয়ার পথে?’’

এর পরই আত্মজীবনীমূলক বই লেখেন সাজাদ। নাটকের জরুরি অনুষঙ্গে জুড়ে আছে সেই গ্রন্থের নির্যাস।

যুদ্ধ এই ভারতেও আজ দূর পরবাসের গল্প নয়। কখনও জাতীয়তাবাদের নামে, কখনও দেশপ্রেমের হাওয়া তুলে, কখনও বা উগ্রপন্থী দমনের দোহাই পেড়ে যুদ্ধের দামামা বাজে প্রায়ই। চলে যুদ্ধবিমান, মিসাইল, কালাসনিকভের সওদাও। পাশাপাশি যুযুধান দু’দেশের শান্তিবৈঠক।

যুদ্ধ আসলে মারণযজ্ঞ। তার ক্রূঢ়তা মানেন মাদার কারেজ (রেশমি সেন)। কিন্তু যুদ্ধবাজারে তিনি ফায়দাও তুলতে চান।

পরিণাম? নিঃশেষিত হওয়া। যার মূলে এক দিকে যেমন তাঁর সুবিধাবাদ। সেই সঙ্গে রাষ্ট্র নামক বস্তুটি নিয়ে তাঁর ভ্রান্ত চিন্তাও। সমকালে যে চিন্তার শরিক বহু নাগরিক। এ নাটক তাঁদের কথা বলে।

রঙ নেই। সাদা-কালো আলো (সুদীপ সান্যাল) আর লাইভ মিউজিকে (গৌতম ঘোষ) সন্ত্রাসের দপদপানিকে ধরে একটি অস্ত্রবাহী গাড়িকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ধ্বংসের স্বরূপ চেনায় নাটক ‘মাদার কারেজ’।

পরের দিন, ৩০ মে, দলের দ্বিতীয় নতুন নাটক মনোজ মিত্রর ‘অশ্বত্থামা’। এ নাটকে বিশেষ একটি চরিত্রে লোপামুদ্রা মিত্র (আবহ জয় সরকার)। গানের কথায় নয়, সুরে যিনি সময়ের হাহাকারকে গলায় ধরছেন।

কাহিনিটি গোধূলিতে শুরু। শেষ হয় প্রান্ত রাতে। এর মাঝেই অশ্বত্থামা (ঋদ্ধি সেন), কৃতবর্মা (কৌশিক সেন) আর কৃপাচার্যকে (সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গী করে পাণ্ডব শিবিরে নিধনযজ্ঞে গিয়ে নিরস্ত্র ঘুমন্ত পাঁচ ভাইকে হত্যার বদলে খুন করে ফেলেন শিশুদের।

হত্যার নামে ভুল হত্যা। জেহাদির আওয়াজ তুলে রক্তের বান। আজাদির স্বপ্নে বিভোর হয়ে ছিন্নভিন্ন প্রাণ। ‘অশ্বত্থামা’ও যেন যুদ্ধের ভয়ঙ্করতা দেখায়। তবে সে যুদ্ধ দেশে-দেশে নয়। অন্তর্দেশীয়। গৃহযুদ্ধ! দুটি নাটকেরই সেট সঞ্চয়ন ঘোষের। এই দুটি নাটক ছাড়া উৎসবের তৃতীয় দিন ৩১ মে, ‘আন্তিগোনে’। চতুর্থ দিন ১ জুন থাকছে ‘দ্রোহকাল’।

এ বছর স্বপ্নসন্ধানী-র ‘শ্যামল সেন স্মৃতি সম্মান’ পাচ্ছেন প্রবীণ নাট্যকর্মী মায়া ঘোষ ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। স্বল্পবয়সি অভিনেত্রী হিসেবে এই সম্মান পাবেন নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়। এ ছাড়াও বিভিন্ন ভাবে সম্মানিত হবেন মনোজ মিত্র, চিত্রা সেন, অশোক প্রামাণিক ও সমর মিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE