Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

কলকাতা শহরে খুব বড় মাপের ছবি, ভাস্কর্য আর ইনস্টলেশন নিয়ে একাধিক গ্যালারি জুড়ে প্রদর্শনী শেষ কবে হয়েছে বলা কঠিন। জায়গার অভাব তো আছেই, তার থেকেও বড় দৈন্য বোধহয় ভাবনা ও উদ্যোগের। সেন্টার অব ইন্টারন্যাশনাল মডার্ন আর্ট (সিমা) সম্ভব করেছে তাকেই। বাঙালি শিল্পী পরেশ মাইতির যে সব ভাস্কর্য ও ইনস্টলেশন পৃথিবী ঘুরে সম্মান অর্জন করেছে কিন্তু ভারতে অনেকটাই অদেখা, সেগুলি এখন কলকাতায়।

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:৩৬
Share: Save:

নতুন শিল্প-অভিজ্ঞত

কলকাতা শহরে খুব বড় মাপের ছবি, ভাস্কর্য আর ইনস্টলেশন নিয়ে একাধিক গ্যালারি জুড়ে প্রদর্শনী শেষ কবে হয়েছে বলা কঠিন। জায়গার অভাব তো আছেই, তার থেকেও বড় দৈন্য বোধহয় ভাবনা ও উদ্যোগের। সেন্টার অব ইন্টারন্যাশনাল মডার্ন আর্ট (সিমা) সম্ভব করেছে তাকেই। বাঙালি শিল্পী পরেশ মাইতির যে সব ভাস্কর্য ও ইনস্টলেশন পৃথিবী ঘুরে সম্মান অর্জন করেছে কিন্তু ভারতে অনেকটাই অদেখা, সেগুলি এখন কলকাতায়। বিড়লা অ্যাকাডেমির প্রাঙ্গণে তিনটি বড় মাপের কাজ (সঙ্গে শুভাশিস ভট্টাচার্যের ছবিতে তারই একটির সামনে শিল্পী), বাকি সব সিমা গ্যালারিতে, যার মধ্যে আছে ষাটের বেশি জলরং ও তেলরঙের ছবি। ১৬ জানুযারি পর্যন্ত দেখা যাবে এই প্রদর্শনী, বিড়লায় ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত।

সবে পঞ্চাশ পেরোলেন পরেশ। তিন দশকে দেশবিদেশ মিলিয়ে এটি তাঁর ৭৪তম একক প্রদর্শনী! পদ্মশ্রী পেয়েছেন গত বছর, তার আগেই ‘সেরা বাঙালি’। রূপনারায়ণের কূলে তমলুকে বেড়ে ওঠা, কলকাতায় শিল্পশিক্ষা সেরেই ঝাঁপিয়ে পড়া বিশ্বমাঝে। তার জন্যেই দিল্লিতে আস্তানা। অবিশ্রান্ত কাজ আর কাজ। পায়ের তলায় সর্ষে, বিচিত্র মানবচরিত্রের সঙ্গে প্রকৃতি তার সব রূপে, উজ্জ্বল বর্ণসুষমায় উপস্থিত পরেশের ছবিতে। বিশেষ করে নদী, তার অবিরাম চলার ছন্দ কোথাও স্পষ্ট কোথাও অন্তঃসলিলা। জলরঙে শুধু প্রথম সারিতে নন, অত বড় আকারের জলরঙের ছবিতে সম্ভবত তাঁর কাছাকাছি আর কেউই নেই। বিরাট ইনস্টলেশন, কি ভাস্কর্য কেন আকর্ষণ করে তাঁকে? একান্ত আলাপচারিতায় শিল্পীর স্পষ্ট উত্তর, ‘বড় কাজ মানেই কঠিন কাজ। যা কিছু কঠিন, তা আমাকে সব সময় টানে। শেষ না করা পর্যন্ত শান্তি নেই।’ একটা শেষ করে শান্তি নেই, আবার অন্য একটা, অন্য ধরনের কঠিন কাজ। ভিতরের যে ঝড়, যে আবেগ তাঁকে রূপনারায়ণ থেকে সাগরে নিয়ে ফেলেছে, অমোঘ অনিবার্যতায় নিয়ে যাচ্ছে মহাসাগরের দিকে, তার প্রকাশ আছে তাঁর ছবিতে-ভাস্কর্যেও। আছে নানা মাধ্যমে প্রকাশের ইচ্ছা— আলোকচিত্র, চলচ্চিত্র। সব মিলিয়ে এ এক আশ্চর্য জগৎ। এ জগৎ দেখা এক অভিজ্ঞতা। সিমা-র কর্তৃপক্ষ চাইছেন আরও বেশি করে কলকাতাকে এমন বড় আকারের শিল্প-অভিজ্ঞতার শরিক করতে। আমরা অপেক্ষায় রইলাম।

সি আর ডি জি

পুরো নাম চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত। জনপ্রিয়তার চাপে শুধু সি আর ডি জি। ৫৭ বছর ধরে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে পদার্থবিদ্যার বইয়ের অপ্রতিদ্বন্দ্বী লেখক হিসেবে তাঁকেই চেনে। যেমন চেনে ইংরেজি ব্যাকরণের পি কে দে সরকার কিংবা গণিতের কে সি নাগ-কে। ওই দুজন প্রয়াত, রয়েছেন চিত্তরঞ্জন। জন্ম খুলনা জেলায়, ১৯২৪ সালে। কলকাতার রিপন কলেজ থেকে স্নাতক। এম এসসি-র পর সিটি কলেজে অধ্যাপনা। সেখান থেকেই অবসর। ১৯৫৭ সালে এগারো ক্লাসের উচ্চ মাধ্যমিক পাঠক্রম শুরু হলে বুক সিন্ডিকেট প্রকাশনার অনুরোধে পরের বছরই লেখেন পদার্থবিদ্যার বই। শুরু থেকেই তাঁর বই হট কেক। কতটা, তার প্রমাণ বাংলা ফিল্ম ‘বাপি বাড়ি যা’। যেখানে নায়িকার মুখে সি আর ডি জি-র নাম। কিংবা হিন্দি ছবি ‘ম্যায় হু না’। যেখানে নায়ক শাহরুখ খান উল্টেপাল্টে দেখছে সি আর ডি জি-র ফিজিক্স। অবসরের পর বিনে পয়সায় পড়াতেন গরিব ছাত্রছাত্রীদের। চার বছর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সেই সেবায় ছেদ পড়েছে। স্ত্রী, পুত্র ও নাতি নিয়ে থাকেন ভবানীপুরে। হাঁটাচলা সীমিত। আজ ৯২ বছর বয়সে পড়লেন সি আর ডি জি।

নান্দীকারের উদ্যোগ

‘দুনিয়া জুড়ে যে বাচালতা করছে উগ্র মানুষেরা, তাদের যে বাগাড়ম্বর চলছে, তাতে তো শিল্পীকুলের নীরব হয়ে পড়াই স্বাভাবিক। বর্ষা সমাগমে যেমন ভেককুল সরব হলে কোকিল নীরব হয়ে যায়।’ নান্দীকার-এর আসন্ন ৩২তম জাতীয় নাট্যোৎসবের অনুষঙ্গে এ মন্তব্যের সঙ্গেই অবশ্য কর্ণধার রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত জানালেন, সারা দুনিয়া জুড়ে কী ভাবে নাট্যশিল্পীরা নীরবে কাজ করে চলেছেন— যা কোলাহল ছাপিয়ে স্থায়ী গভীর ও মর্মস্পর্শী। অসম বিহার দিল্লি মহারাষ্ট্র ওড়িশা সিকিম থেকে নানান নাট্যগোষ্ঠী আসছে তাদের থিয়েটার নিয়ে, আসছে আমেরিকা আর সুইডেন থেকেও, আছে এ বঙ্গ বা এ শহরেরও নাটক। ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-র রেপার্টারি’র পাশাপাশি নাট্যপ্রযোজনায় দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারও, সোহিনী সেনগুপ্তের নির্দেশনায়। কিসমত বানো-র মতো কমবয়সির রচনা-নির্দেশনায় অসমের উইংস থিয়েটার-এর প্রযোজনা। নান্দীকার-এর তিনটি ছোটদের নাটক— জুতা আবিষ্কার, অ্যাস্ট্রনটের ঠিকানা, তাসের দেশ (সঙ্গে মহড়ার ছবি)। অ্যাকাডেমি’তে ১৬-২৫ ডিসেম্বর। দুই নিরলস নাট্যকর্মী, রঙরূপ-এর শুভাশিস মুখোপাধ্যায় ও অনীক-এর অমলেশ চক্রবর্তীকে সম্মাননা জানানো হবে এ উৎসবে।

সম্পর্ক

১৮৩৩ সাল। রাজা রামমোহন রায় তখন লন্ডনে। তাঁকে দেখেই এক প্রতিকৃতি আঁকলেন রেমব্রান্ট পিল। পিবডি এসেক্স মিউজিয়মে রয়েছে সেই প্রায়-অদেখা তৈলচিত্র (সঙ্গের ছবি)। কিংবা ১৮৯৪-এ আমেরিকার মেরিল্যান্ডে স্বামী বিবেকানন্দ বা ১৯২১-এ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে হেলেন কেলারের ছবি। মেরিডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার পরিকল্পিত, মার্কিন কনসুলেট ও ভারতীয় সংগ্রহশালার উদ্যোগে এই ‘কিনড্রেড নেশনস, দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অ্যান্ড ইন্ডিয়া, ১৭৮৩-১৯৪৭’ প্রদর্শনী দেখা যাবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত, ভারতীয় সংগ্রহশালায়। বৃহত্তম গণতন্ত্রের এই দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক কী ভাবে গড়ে উঠল, তা প্রদর্শিত ছবিগুলির মধ্যে ধরা পড়েছে। এগুলি সংরক্ষিত থাকবে আমেরিকার মেরিডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে।

কৃষ্টি

একসময় রাজপুরে চিকিৎসা শুরু করেন। তার আগে কিছু দিন সরকারি চিকিৎসক হিসেবে গিয়েছিলেন মায়ানমারে। মৃত্যুর ২৫ বছর পরেও ডাক্তার সমরেন্দ্র সেনগুপ্তকে সবাই চেনে ‘বার্মা ডাক্তারবাবু’ নামে। তিনি চিকিৎসকদের একসঙ্গে করে করতেন নাট্যপ্রযোজনা, গান, আবৃত্তি, নানা কিছু। ১৯৫৮-য় প্রতিষ্ঠা করেন নাট্যদল ‘কৃষ্টি সংসদ’। তার দায়িত্বে এখন পুত্র সংগ্রামজিৎ সেনগুপ্ত। সম্প্রতি তাঁর জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠান হল রাজপুরে। দেখানো হল তথ্যচিত্র। পরিবেশিত হল কৃষ্টি সংসদ প্রযোজিত নাটক ‘নিউ পারিজাত বোর্ডিং’।

শশিভূষণ স্মরণ

‘শশিভূষণের সাহিত্যভাবনায় দর্শনশাস্ত্র, সমাজবিদ্যা, ইতিহাস ও অলঙ্কারশাস্ত্র প্রায় সমান গুরুত্ব লাভ করেছে’, লিখছেন অলোক রায়। ভারতের শক্তি-সাধনা ও শাক্ত সাহিত্য বা শ্রীরাধার ক্রমবিকাশ: দর্শনে ও সাহিত্যে-র গ্রন্থপ্রণেতা হিসেবে শশিভূষণ দাশগুপ্তকে চেনার মধ্যে যে সীমাবদ্ধতা, তা খণ্ডন করতেই ধ্রুপদী এষণা-র (সম্পা: সৌরেন সমাজদার) ‘আচার্য শশিভূষণ দাশগুপ্ত স্মারক সংখ্যা’। পাঁচ পর্বে বিন্যস্ত এ পত্রে তাঁকে নিয়ে বিশিষ্ট জনের সাম্প্রতিক রচনার সঙ্গে পূর্বপ্রকাশিত প্রবন্ধাদি। আবার শশিভূষণেরও বাংলা ও ইংরেজি রচনার পুনর্মুদ্রণ, অপ্রকাশিত পত্রাবলি, গ্রন্থ ও রচনাপঞ্জি। ১৯ ডিসেম্বর সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ ভবনে বিকেল সাড়ে ৫টায় সংখ্যাটি প্রকাশ করবেন শঙ্খ ঘোষ। স্মৃতিচারণে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, তাঁর সাহিত্যকৃতি নিয়ে বলবেন স্বামী শাস্ত্রজ্ঞানন্দ, উজ্জ্বলকুমার মজুমদার, অলোক রায়।

নৃতত্ত্ববিদ

তিনি কর্মজীবন শুরু করেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট-এ। কয়েক বছর কাজ করেছেন নৃতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণেও। ১৯৬৬ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগে যোগ দেন মণি নাগ। অসমের শিলচরে ১৯২৫ সালে জন্ম। পড়াশোনা শিলং এবং কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটিসটিক্সের স্নাতকোত্তর। পিএইচ ডি করেছেন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত বই, ফ্যাক্টরস অ্যাফেক্টিং হিউম্যান ফার্টিলিটি ইন দ্য নন-ইন্ডাসট্রিয়াল সোসাইটিজ, সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার অ্যান্ড এডস ইন ইন্ডিয়া, সেক্স ওয়ার্কার্স ইন ইন্ডিয়া। কয়েক বছর তিনি সোনাগাছির যৌনকর্মীদের নিয়েও কাজ করেন। বন্ধুবৎসল মানুষটি ৭ ডিসেম্বর প্রয়াত হলেন। রেখে গেলেন স্ত্রী করবী ও ছেলে রূপককে।

স্বামীজির চিঠি

১৮৮৮-১৯০২— চোদ্দো বছরে স্বামী বিবেকানন্দ লিখেছিলেন ৫৫০-রও বেশি চিঠি। গুরুভাই স্বামী ব্রহ্মানন্দ, রামকৃষ্ণানন্দ থেকে প্রিয় শিষ্য ও বন্ধু আলাসিঙ্গা পেরুমল, নিবেদিতা, জোসেফিন ম্যাকলাউড, সরলা ঘোষাল, সংস্কৃতজ্ঞ ই টি স্টার্ডি— প্রাপকতালিকাও সুদীর্ঘ। চিঠিপত্র থেকেই চেনা যায় মানুষ বিবেকানন্দকে, জানা যায় তাঁর গভীরতম অধ্যাত্ম-অনুভূতি, তেজিয়ান দেশভাবনা, যন্ত্রণা থেকে ছেলেমানুষি, সব কিছু। এমনই ২৪টি চিঠি নিয়ে রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার তৈরি করেছে একটি ডিভিডি, ‘স্বামীজীর চিঠি’। পত্রপাঠে সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, পরিকল্পনায় অনুপ রায়চৌধুরী। ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে বিবেকানন্দ হল-এ এটি প্রকাশ করবেন স্বামী সুপর্ণানন্দ।

গণিত উৎসব

‘অঙ্কশাস্ত্র সম্পর্কে বঙ্গভাষায় ইতঃপূর্ব্বে কোন পত্রিকা ছিল না ...’ সম্পাদকীয়তে এই খেদ ব্যক্ত করে ১৯৬৫-র জানুয়ারিতে কমলকুমার মজুমদার সম্পাদনা শুরু করেন ‘অঙ্ক ভাবনা’ ত্রৈমাসিক (সঙ্গে দ্বিতীয় সংখ্যার প্রচ্ছদ)। সঙ্গী বিজ্ঞানী আনন্দমোহন ঘোষ। নামকরণে নির্মাল্য আচার্য্য। ছাপাখানার দুর্বলতায় একটি প্রবন্ধ ছাপতে না পারার দুঃখ ছিল, দ্বিতীয় সংখ্যায় তা ছাপা হয় কালিকা টাইপ ফাউন্ড্রির মলয় চক্রবর্তীর মুন্সিয়ানায়। তবে ছাপাখানার দৈন্যই এ উদ্যোগে জল ঢেলে দেয়। অতঃপর গণিত জগৎ (পরে গণিত বার্তা), গণিত (পরে গণিত চর্চা), পরিসংখ্যান— সবই ক্ষণস্থায়ী। ব্যতিক্রম গণিত পরিক্রমা, আঙ্কিক, আধুনিক গণিত অন্বেষা। আধুনিক গণিত অন্বেষা পত্রিকার উদ্যোগে আদি পত্রিকা ‘অঙ্ক ভাবনা’র পঞ্চাশ বছর উপলক্ষে বারুইপুরে শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম ইনস্টিটিউট-এ ২০ ডিসেম্বর গণিত উৎসব। পত্রিকা প্রকাশ, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা, ক্যুইজ, মডেল প্রদর্শনী এবং গত পঞ্চাশ বছরে প্রকাশিত বাংলা গণিত পত্রিকার প্রদর্শনী।

মননবৈভব

আত্মঘাতী নয়, আত্মবিস্মৃত বাঙালি! এই ‘হাইটেক’ যুগে ‘সাইবার’ বাঙালি উনিশ শতকীয় মননবৈভবের ধারা থেকে ক্রমশ যে বিচ্যুত হচ্ছে, সেটা সব ক্ষেত্রেই স্পষ্ট। আর এই ভাবনা থেকেই প্রকাশনা-প্রতিষ্ঠান ‘সূত্রধর’-এর পঞ্চম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বলবেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, বিষয়: ‘বাঙালির মননবৈভব’, ১৯ ডিসেম্বর সন্ধে ৬টায় ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বাড়ির ঠাকুরদালানে। গ্রন্থাকারে নব সংস্করণে প্রকাশিত হবে নানা দুর্লভ সম্ভার— যেমন, প্রমথনাথ তর্কভূষণের জন্মসার্ধশতবর্ষে তাঁরই রচনা ‘হিন্দুধর্ম্মের বৈশিষ্ট্য’, হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ‘প্যারীচাঁদ মিত্র’, সুধীরকুমার মিত্রর ‘বাঘা যতীন’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নন্দলাল বসু’, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সঙ্গীত সম্বন্ধে যৎকিঞ্চিৎ’... ইত্যাদি।

নাট্যোৎসব

মফস্‌সল-ই এখন বোধহয় সদর হয়ে উঠছে, অন্তত বাঙালির নাট্যচর্চায়। তারই প্রমাণ দিল নতুন প্রজন্ম, কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র-র নতুন প্রযোজনা ‘শান্তমতি কথা’-য় (সঙ্গের ছবি)। নাচ-গান-মাইম-পাপেট্রি-মুখোশ-এর কোরিয়োগ্রাফি, সর্বোপরি অভিনয়— সব মিলিয়ে দীর্ঘ দিনের ওয়ার্কশপ থেকে তৈরি হওয়া এ নাটকে মঞ্চ জুড়ে ছিলেন ২৭ জন ছেলেমেয়ে। ‘এঁদের মধ্যে আবার ২২ জনের প্রথম অভিনয় মঞ্চে, আর গোটা নাটকটাই মিউজিক্যাল’, জানালেন নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার কিশোর সেনগুপ্ত। কল্যাণীর ঋত্বিক সদনে ২৫ ডিসেম্বর সন্ধে ৬টা ৪৫-এ। নীলা বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত নাটকটি কিশোরের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করেছেন দীপঙ্কর দাস, শান্তমতি-র ভূমিকায় সুস্মিতা বিশ্বাস। কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র আয়োজিত ২১তম উৎসবে (১৭-২৭ ডিসেম্বর)আছে বাংলাদেশের নাটকও। অন্য দিকে, কলাক্রান্তি’র ২২তম নাট্য প্রতিযোগিতার উৎসবে এ বারও দুঃস্থ শিল্পীদের সাহায্য ও সম্মাননা, নাট্যগোষ্ঠীর প্রয়াত পৃষ্ঠপোষক গৌরীকণা দেবীর স্মৃতিতে। ১৯-২০ ডিসেম্বর মুক্তাঙ্গনে ভারতীয় বিভিন্ন ভাষার নাটক মঞ্চস্থ হবে।

যুদ্ধ ও শান্তি

যুদ্ধের পরিণতি ধ্বংস! যুদ্ধের ভয়াবহ দিকগুলি স্পর্শ করে শিল্পীমনকে। কে জি সুব্রহ্মণ্যম এই ভাবনা নিয়েই সাদাকালোয় গড়েছেন এক অনবদ্য ম্যুরাল: ‘ওয়ার অ্যান্ড রেলিক্স’ (সঙ্গের ছবি)। এটি প্রদর্শিত হচ্ছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে। সিগালের উদ্যোগে ৩ ডিসেম্বর এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনে শিল্পীর কাজ নিয়ে বললেন রামন শিবকুমার, ছিলেন শিল্পী নিজেও। প্রদর্শনী চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অন্য দিকে, সাহাবুদ্দিন আহমেদের একক প্রদর্শনী ‘শান্তি’ গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারিতে, ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৬ জানুয়ারি। মুজিবর রহমানের উৎসাহে প্যারিসে পাড়ি দেন শিল্পী। প্রবাসে থাকলেও ওঁর মননে এখনও দোলা দেয় বাংলাদেশের প্রকৃতি। ওঁর কাছে দুই বাংলা এখনও এক। সেই ভাবনা থেকেই এই প্রদর্শনী। আইসিসিআর-এ এটি উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।

সংবাদ-চিত্র

অতীতের স্মৃতিচারণে ছবির চেয়ে ভাল মাধ্যম আর কিছু হয় না। এই ছবিগুলি তাই উসকে দেবে পুরনো স্মৃতি। তিরিশ জন বিশিষ্ট চিত্রসাংবাদিকের বেশ কিছু বিরল ফটোগ্রাফ নিয়েই হ্যারিংটন স্ট্রিট আর্ট সেন্টারে চলছে ‘তসবির এবং এমএপি’র (মিউজিয়াম অব আর্ট অ্যান্ড ফটোগ্রাফি) প্রদর্শনী— ‘লিগাসি অব ফটোজার্নালিজম: দ্য দীপক পুরী কালেকশন’। চলবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। দেখা যাবে ডায়েন বার্কার-এর তোলা ধর্মশালায় দলাই লামার ছবি, প্রশান্ত পাঞ্জিয়ার-এর তোলা ইলাহাবাদের মহাকুম্ভ মেলার নাগা সাধুদের ছবি, রঘু রাইয়ের তোলা দিল্লির বর্ষার ছবি এবং টি এস সত্যেয়ন-এর তোলা ‘পুণ্যস্নান’ (সঙ্গের ছবি)।

আট দশক

প্রায় পাঁচ দশক আগে পটনায় এক সংগীত সম্মেলনে তবলা সম্রাট পণ্ডিত সামতাপ্রসাদের একক বাজনার পর সেতার নিয়ে মঞ্চে বসলেন এক তরুণ। বাজনা শুনে ফিরে এসে পণ্ডিতজি সে দিন সেই তরুণকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। সেই তরুণই আজকের প্রবীণ সেতারশিল্পী পণ্ডিত মনোজশংকর। ময়মনসিংহের জমিদার পরিবারের সন্তান, দেশভাগের পর কলকাতায়। আলাউদ্দিন সংগীত সমাজের বার্ষিক সম্মেলনে প্রতিষ্ঠা পেলেন। ঋত্বিকের ‘সুবর্ণরেখা’, সথ্যুর ‘গরম হাওয়া’য় আবহসংগীতে বাজল তাঁর সেতার। রবীন্দ্রভারতীর যন্ত্রসংগীত বিভাগে অধ্যাপনা, দেশবিদেশের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদানে পেরিয়ে এলেন জীবনের আট দশক। এই উপলক্ষে তাঁর ছাত্রছাত্রী ও ‘শৈলী’র আয়োজনে ১৮ ডিসেম্বর আইসিসিআর-এ সন্ধে ৬টায় অনুষ্ঠান, থাকবে তাঁর সেতারবাদনও।

দূর নয় বেশি দূর

কালিদাসের কাব্যই ফিয়োনা রস’কে নতুন করে অক্ষর চিনতে শিখিয়েছিল। সেটা সত্তরের দশক। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্রী, কালিদাসের পরম অনুরাগী, ব্রিটেনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (সোয়াস)-এ ভারতীয় প্যালিয়োগ্রাফি বা প্রত্নলিপিবিদ্যার গবেষক ফিয়োনা ক্রমশ খেয়াল করেন, ধ্রুপদী সৃষ্টিগুলি যে স্তরের, প্রচলিত দেবনাগরী অক্ষরের মুদ্রিত রূপ তার কাছাকাছি পৌঁছতে পারছে না। সুন্দর হরফ চাই। যোগ দিলেন লাইনোটাইপ-পল সংস্থায়। লাতিন নয়, এমন নানা হরফের সংস্কারে ব্রতী হলেন তিনি। জননী সংস্কৃতের এক মেয়ে বাংলা। সোয়াস-এর সুপণ্ডিত অধ্যাপক তারাপদ মুখোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় বাংলা হরফ নিয়ে ফিয়োনার গভীর চর্চা শুরু হল।

সেই উদ্যোগের পিছনে প্রেরণা ছিল আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর। নতুন বাংলা লাইনোটাইপে এই পত্রিকা প্রকাশিত হল আশির দশকের গোড়ায়, পুরনো হট মেটাল প্রযুক্তি থেকে নতুন ফোটো টাইপসেটিং-এর পর্বান্তর ঘটল এই নতুন হরফের হাত ধরে। বাংলা হরফ নিয়ে চিন্তাভাবনা ও উদ্ভাবনে অগ্রণীর ভূমিকায় নিরন্তর ব্রতী এই পত্রিকার সঙ্গে গত তিন দশকে ফিয়োনা রসের গভীর সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ থেকেছে। আশির দশকের শেষ থেকে তিনি স্বাধীন উপদেষ্টা, গত বারো বছর ইউনিভার্সিটি অব রিডিং-এ শিক্ষকও। দেবনাগরী, আরবি, তাই হরফ পরিকল্পনা করেছেন, লিখেছেন বাংলা হরফের বিবর্তন নিয়ে একমাত্র প্রামাণিক বই দ্য প্রিন্টেড বেঙ্গলি ক্যারাকটার অ্যান্ড ইটস ইভলিউশন। তাঁর উদ্ভাবন অর্জন করেছে নানা আন্তর্জাতিক সম্মান। বাংলা এবং অন্য নানা ভারতীয় ভাষার হরফকে আরও সুন্দর, আরও বৈচিত্রময় করে তোলার বিরল সাধনায় নিমগ্ন ফিয়োনা রস সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন। ‘প্রথম কবে এই শহরে আসেন আপনি?’ প্রশ্নের উত্তরে শান্ত সৌম্য মুখটিতে সহজ হাসি ফুটে উঠল, ‘এই তো সে দিন, ২০০৮ সালে।’ দূরে থাকলেও দিব্যি কাছের মানুষ হওয়া যায়। এই কথাগুলি যে হরফে পড়ছি আমরা, তার মধ্যেও নিহিত থাকা যায় অনুক্ষণ।

বাংলাকে ভালবেসে

জন্মসূত্রে ফরাসি ফ্রাঁস মঁতেরু। আজ গবেষণা ও অনুবাদের জগতে বিশ্ববিশ্রুত নাম ফ্রাঁস ভট্টাচার্য। জন্ম প্যারিসে ১৯৩৩ সালে। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক। ‘ইনালকো’ বা অ্যাঁস্তিত্যু নাসিওনাল দে লাঁগ জোরিয়াঁতালে বাংলা পড়িয়েছেন পঁচিশ বছর। প্যারিসের হাউজ অব হিউম্যান সায়েন্সেস-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগের পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন কিছুদিন আগে অবধিও। ইউনেস্কো প্রকল্পে ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের ফরাসি অনুবাদক, অক্লান্ত ভাবে গবেষণা করেছেন বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দুয়ারে পৌঁছে দিতে। ফরাসিতে অনুবাদ করেছেন বিপ্রদাস পিপলাইয়ের ‘মনসামঙ্গল’, বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুণ্ডলা’ ও ‘আনন্দমঠ’, তারাশঙ্করের ‘রাইকমল’, রবীন্দ্রনাথের ‘নষ্টনীড়’, ‘চার অধ্যায়’, ‘যোগাযোগ’। ‘আরণ্যক’-এর অনুবাদ এখনও অপ্রকাশিত। বিরাশিতেও সকালসন্ধে ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’-এর ইংরেজি অনুবাদ নিয়ে ব্যস্ত, যা প্রকাশিত হবে মূর্তি ক্লাসিকাল লাইব্রেরি সিরিজে, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে।

ভালবেসে বিয়ে করেন লোকনাথ ভট্টাচার্যকে, ১৯৫৬ সালে। শিলং, পুদুচেরি, দিল্লি, কলকাতা নানা জায়গায় থেকেছেন। পড়িয়েছেন কলকাতা, যাদবপুর ছাড়াও দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯৭১-১৯৭৮)। শিখেছেন লাতিন, গ্রিক, ইংরেজি, চিনা, সংস্কৃত আর স্প্যানিশ ভাষা। সংস্কৃতজ্ঞ ভারতবিদ মাদলেন বিয়ারদোর কাছে গবেষণা করেছেন ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ ও ‘ঠাকুরদাদার ঝুলি’ নিয়ে। মনসামঙ্গল ও চণ্ডীমঙ্গল নিয়ে কাজ করে পেয়েছেন সরবোন নুভেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট। ওঁর গবেষণার আওতায় এসেছে ‘নববাবুবিলাস’, ‘নববিবিবিলাস’, ‘কলিকাতা কমলালয়’। সম্প্রতি কলেজ দ্য ফ্রাঁস থেকে প্রকাশিত হয়েছে উনিশ শতকের বাঙালি চিন্তাবিদদের ওপর কাজ। শেষ করেছেন বিদ্যাসাগরের জীবনী। ‘বইয়ের দেশ’ পত্রিকায় চিন্ময় গুহের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তাঁর এই ভালবাসার কাহিনি। বাংলায় তাঁর সূক্ষ্ম রসিকতা শুনলে বোঝা যায় এই ভাষা-সংস্কৃতিকে তিনি কতটা আত্মস্থ করেছেন। ২০১২ সালে রবীন্দ্রভারতী তাঁকে ডি লিট দেয়। এ বার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বর্ণপদক দিয়ে তাঁকে সম্মান জানাল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, সে উপলক্ষে ঘুরে গেলেন কলকাতা। কিন্তু যে ভাবে সমাবর্তনে কোনও পরিচিতি না দিয়েই তাঁকে ওই সম্মান দেওয়া হল তা বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্মানিত করেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE