Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কলকাতার কড়চা

মাত্র ত্রিশ পাতার রুল-টানা খাতা, ব্রাউন পেপারের কভারে বেগুনি কাগজের মলাট। মলাটের এক কোণে সাঁটা ছোট্ট চৌকো কাগজে একটা তোতাপাখির ছবির নীচে লেখা ‘হিতোপদেশের গল্প/ শ্রীদীপংকর বসু’। খাতায় দেওয়া তারিখ অনুযায়ী, লেখার সূচনা ১৪ মার্চ ১৯৪৩, সমাপ্তি ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮।

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো

মাত্র ত্রিশ পাতার রুল-টানা খাতা, ব্রাউন পেপারের কভারে বেগুনি কাগজের মলাট। মলাটের এক কোণে সাঁটা ছোট্ট চৌকো কাগজে একটা তোতাপাখির ছবির নীচে লেখা ‘হিতোপদেশের গল্প/ শ্রীদীপংকর বসু’। খাতায় দেওয়া তারিখ অনুযায়ী, লেখার সূচনা ১৪ মার্চ ১৯৪৩, সমাপ্তি ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮। কিন্তু সূচনা-তারিখে তো দীপংকর বসুর বয়েস মাত্র ১ বছর ৯ মাস! তা হলে লেখক কে? পাণ্ডুলিপির নামপত্রে রহস্যের আংশিক সমাধান, ‘শ্রীমান দীপংকর বসুর বড়দাদুর লেখা’। ভিতরে ২৪ পাতায় ছোটদের মতো করে বিষ্ণুশর্মা-রচিত হিতোপদেশের ১২টি গল্প, ছাপা হরফকে হার মানানো হাতের লেখায়, কোনও কাটাকুটি ছাড়া, নিখুঁত ভাবে ছাপা বইয়ের মতো বিন্যস্ত। এমন ‘জরিন কলম’ রবি ঠাকুরের পর আর কে হতে পারেন, রাজশেখর বসু ছাড়া? তিনিই তো দীপংকর বসুর মায়ের দাদু, ‘বড়দাদু’। আজও ৭৪ বছরের দীপংকরবাবুর কাছে সেই সব স্মৃতি সততই সুখের। ছাপানর জন্য এই পাণ্ডুলিপি তৈরি করেননি রাজশেখর, করেছিলেন একান্তই তাঁর প্রিয়তম শিশুটির জন্য। পরে যখন ‘মৌচাক’ পত্রিকায় ছাপার অনুরোধ এল, তখন রাজশেখর অনুমতি চাইলেন সাত বছরের ‘স্বত্বাধিকারী’র কাছে। অনুমতি এল, তবে শর্তাধীনে: ‘হ্যাঁ ছাপো, তবে খাতাটা কিন্তু আমার থাকবে, ছাপাওলাকে দিয়ে দিলে হবে না।’ পরে বিশ্বভারতী থেকে এটি বই আকারে ছাপা হয়।

সেই পাণ্ডুলিপি এত কাল সংরক্ষিত ছিল দীপংকরবাবুর কাছেই। এ বার পরিমল রায় ও কাজি অনির্বাণ আশ্চর্য মমতায় ও শ্রমে তাকে নিয়ে এলেন বৃহত্তর পাঠক সমাজে, অবিকল আসল চেহারায়। যোগ হয়েছে শুধু শক্ত মলাট, প্রচ্ছদ রাজশেখরের অনুসরণে (বাঁ দিকে), পিছনেও তাঁর আঁকা ছবি, ‘বড়দাদু’র ধাঁচে হাতের লেখায় ‘শ্রীমান দীপংকর বসুর কথা’, পরিমল রায়-কাজি অনির্বাণের সুলিখিত ‘একটি পাণ্ডুলিপির ইতিহাস’, দুটি দুর্লভ আলোকচিত্র (রাজশেখর একক ও সপরিবার, প্রথমটি এই সঙ্গে মুদ্রিত)। তার পরে সেই বেগুনি মলাটের খাতা, আদ্যোপান্ত। এমনকী প্রতি গল্পের শিরোনামের তলায় সবুজ কালির রেখা, মাঝে মাঝে বেগুনি কালির পাদটীকা, তা-ও অটুট। রুল টানা খাতাটি হাতে নিলেই যেন পৌঁছে যাওয়া যায় সেই মানুষটির কাছে, যিনি বলতেন, ‘আমি যখন গম্ভীর হয়ে লিখি (প্রবন্ধ) তখন নিজের নামে লিখি, আর যখন ঠাট্টা করে লিখি (গল্প) তখন নকল নাম পরশুরাম বলে লিখি।’ কিন্তু ‘বড়দাদু’ হয়ে তিনি সাকুল্যে একটিই বই লিখেছিলেন, সেটি এ ভাবে হাতে আসা স্বপ্নাতীত। সে কারণেই বোধহয় ওঁরা ‘দি কালার্স অফ আর্ট’ প্রকাশিত এই বইটিকে ‘অমূল্য’ রেখেছেন। সংগ্রাহক মাত্রেই পাগল, তবে এমন শ্রদ্ধানিবেদনের জন্য নিশ্চয়ই অন্য কোনও আবেগ লাগে। আশার কথা, এ কাজ এখানেই শেষ নয়, ওঁদের পরের বইটির নাম ‘গড্ডলিকাপ্রবাহ’, যথাসময়ে প্রকাশিত হবে।

নববর্ষ

বৈশাখে রবীন্দ্রনাথ, জ্যৈষ্ঠে নজরুল, আষাঢ়ে বঙ্কিম। মাসে মাসে নানা মনীষীর জন্মকে ভিত্তি করেই পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রকাশ করেছে অভিনব ক্যালেন্ডার। সঙ্গে হিরণ মিত্রের আঁকা তাঁদের প্রতিকৃতি, সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও পাণ্ডুলিপির প্রতিচিত্র। অন্য দিকে মেলা-উৎসব নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে আরও একটি ক্যালেন্ডার। নদিয়ার লালন মেলা, কালনার ভবা পাগলার মেলা, বা বীরভূমের পাথরচাপুড়ির মেলা: বাংলার নানা মেলার হদিশ এই বাংলা ক্যালেন্ডাের। সঙ্গে সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আঁকা বাংলার উৎসবের মজাদার ছবি (উপরে তারই একটি)। এ দিকে ‘বাংলা নববর্ষ উদযাপন সমিতি’ পয়লা বৈশাখ সকাল সাড়ে ন’টায় উত্তম মঞ্চে আয়োজন করেছে নববর্ষের অনুষ্ঠান। সে কালের নববর্ষে কলেজ স্ট্রিটের আড্ডা, সকালের প্রভাতফেরি শিল্প-সংস্কৃতির বৈঠকের ঘরানাকে অনুসরণ করেই এই আয়োজন। থাকবেন আরতি মুখোপাধ্যায়, পূর্ণদাস বাউল, হৈমন্তী শুক্লা, বনশ্রী সেনগুপ্ত, ইন্দ্রানী সেন প্রমুখ। কবিতা পাঠে গৌতম ঘোষ।

শিক্ষাব্রতী

জীবনের বেশিটাই কাটিয়েছেন মহিলা খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করে। তাঁদের প্রয়োজন অনুযায়ী কোন ভিটামিন কতটা দিলে, ডায়েটে কী কী পরিবর্তন করলে, কী ভাবে ব্যায়াম করালে পারফরমেন্সের উন্নতি হতে পারে এই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। আটচল্লিশ বছরের কর্মজীবনে তাঁর কাছে পিএইচ ডি করেছেন ৩৮ জন ছাত্রছাত্রী। কর্নম মালেশ্বরী বা জ্যোতির্ময়ী শিকদারের মতো খেলোয়াড়রাও বিভিন্ন সময় পরামর্শের জন্য তাঁর কাছে ছুটে এসেছেন। পঁচাত্তর বছরে এখনও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজির প্রাক্তন এমেরিটাস শিক্ষক প্রতিমা চট্টোপাধ্যায়ের দিন কাটে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। সম্প্রতি শিক্ষাক্ষেত্রে অসাধারণ কাজের জন্য তাঁকে ‘ভারতরত্ন মাদার টেরিজা গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড ২০১৫’ তে সম্মানিত করেছে তামিলনাড়ুর ‘গ্লোবাল ইকনমিক প্রোগ্রেস অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন’ সোসাইটি। প্রতিমা জানিয়েছেন, অবসর যাপন তাঁর ধাতে নেই। জীবনের বাকি দিনগুলিও কাটাবেন শিক্ষাসাধনায় ব্রতী হয়েই।

থিয়েটারের বই

১৯৯২-এর ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে নন্দনে যখন প্রথম বেরয় তৃপ্তি মিত্র স্মারকগ্রন্থটি, সে দিন প্রেক্ষাগৃহের দরজা বন্ধ করা যায়নি অনুরাগীদের প্রাবল্যে। আর সে সন্ধ্যায় বইটি শম্ভু মিত্রের কাছে পৌঁছনোর পর তিনি বলেছিলেন ‘এর আগে বোধহয় ভারতবর্ষে কোনো মঞ্চ অভিনেত্রীকে নিয়ে এই ধরনের সংকলন বের হয়নি।’ এ বার তারই পুনঃপ্রকাশ। তৃপ্তি মিত্রের নিজের লেখা, তাঁকে নিয়ে লেখা ও ছবি, দুর্লভ আলোকচিত্র সংবলিত বইটি পয়লা বৈশাখ বেলা তিনটেয় ২০৯এ বিধান সরণিতে দীপ প্রকাশনের দফতরে প্রকাশ করবেন মায়া ঘোষ, ‘সীতায়ন’ নাটকের অভিনয়ও করবেন তিনি সে দিন। তৃপ্তি মিত্র-র রেকর্ড-নাটক ‘বিরাজ বউ’-এর অংশ এবং পুরনো বাংলা গান বাজিয়ে শোনাবেন ইন্দ্রাণী মজুমদার। দীপ প্রকাশন থেকেই সেদিন বেরবে বিভাস চক্রবর্তীর ভুলি কেমনে, প্রকাশ করবেন রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী। দেবাশিস মজুমদার প্রকাশ করবেন অরূপ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত এপিক থিয়েটার-এর সুবর্ণজয়ন্তী সংকলনের তৃতীয় খণ্ড। এই খণ্ডে উৎপল দত্তের অগ্রন্থিত নাটক, সাক্ষাৎকার, আলোচনার সঙ্গে আছে গণনাট্য আন্দোলন নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক।

শিল্পী-স্মরণ

তাঁর যে কোনও সৃষ্টির পেছনেই থাকত প্যাশন। ভাল থেকে আরও ভাল কাজ করার প্রবল ইচ্ছেতেই শ্যামকানু বড়ঠাকুর (১৯৫৪-২০১৪) ঘুরে বেড়িয়েছেন নানা জায়গায়। আইসিসিআর-এ যোগেন চৌধুরী, সুনীল দাস, গণেশ হালুই প্রমুখের উপস্থিতিতে শুরু হয়েছে তাঁর ছবি ও ভাস্কর্যের প্রদর্শনী ‘ফরএভার ফ্রি’। চলবে ১৫ এপ্রিল (১১-৭টা) পর্যন্ত। অন্য দিকে ১৯ এপ্রিল পূর্ণ হচ্ছে ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী চিন্তামণি করের জন্মশতবর্ষ। সে দিন বিকেল পাঁচটায় ভারতীয় সংগ্রহশালার আশুতোষ জন্মশতবার্ষিকী প্রেক্ষাগৃহে এক চিত্র ও ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে উপস্থিত থাকবেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, ধীরেন্দ্রনাথ ব্রহ্ম, মণিলাল নাগ, ঈশা মহম্মদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হবে শ্যামল চক্রবর্তীর রূপসন্ধানী চিন্তামণি।

নাট্যকার

সত্তর পূর্ণ করলেন তিনি, আর তার পঞ্চাশ বছর কেটে গেল নিরবচ্ছিন্ন নাটক লিখেই। প্রায় দেড়শোর মতো নাটক লিখেছেন চন্দন সেন। মৌলিক, রূপান্তর, সাহিত্য থেকে নাট্যরূপ, এমনকী ডকু-প্লে’ও। বিষয় ও ভঙ্গির বৈচিত্রে উজ্জ্বল সে সব নাটকে চাপাপড়া মানুষের সৎ নির্ভীক লড়াই ফিরে-ফিরে আসে, আসে মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও সহমর্মিতার আশ্বাস। বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর নাটক, অভিনীত হয়েছে দেশের বাইরেও। প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নাট্যগ্রন্থ, পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মান। তাঁর লেখা নাটকের উৎসব শুরু হয়েছে ব্যারাকপুরের সুকান্ত সদনে, চলবে ১৫ এপ্রিল অবধি। আয়োজনে সংস্তব, সায়ক, থিয়েটার ওয়ার্কশপ, হযবরল, কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র ও ব্যারাকপুরের নাট্যদলগুলি। উদ্বোধনে ছিলেন, সমাপ্তিতেও থাকবেন নাট্যজগতের বিশিষ্টরা। বেরল চন্দন সেনকে নিয়ে তাঁদেরই রচনাদির একটি সংকলন।

রেল-চিত্র

পূর্ব ভারতে ভারতীয় রেলের ১৬০ বছরের স্মৃতির পাতায় জমেছে অনেক কথা। এই শহরের সংগ্রাহক মুহম্মদ মুজিবুল্লাহের সংগ্রহে তিল তিল করে জমেছে রেল সংক্রান্ত ডাকটিকিট, পার্সেল স্ট্যাম্প, কার্ড, ফার্স্ট ডে কভার, ক্যানসেলেশন ইত্যাদি। এই সংগ্রহ ইতিমধ্যেই দেশবিদেশের নানা প্রদর্শনীতে প্রশংসা কুড়িয়েছে। এসব নিয়ে আয়োজিত হয়েছে একটি প্রদর্শনী, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের প্রবেশপথের গ্যালারিতে। উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন রেল এবং ডাক বিভাগের আধিকারিকরা। শুধু ভারত নয়, এখানে স্থান পেয়েছে সারা বিশ্বের রেলসংক্রান্ত বিষয়ের ইতিহাস। রয়েছে ট্রামেরও কিছু বিষয়। চলবে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত, ১০-৫টা।

নাসবন্দি

বয়স পাঁচ হোক বা পঁচাত্তর, মেয়েরা কেউ-ই নিরাপদ নন। তা নিয়ে কত বিতর্ক, আন্দোলন, লেখালেখি, গম্ভীর কথাবার্তা। কিন্তু এর শেষ কোথায়? এই প্রশ্নই তুলে ধরেছেন রিজিতা চট্টোপাধ্যায় তাঁর সাম্প্রতিক নাটক ‘নাসবন্দি’তে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী রিজিতা (সঙ্গের ছবি) লন্ডন থেকে থিয়েটারের ডিগ্রি নিয়ে কলকাতায় এসে তৈরি করেন নাটকের দল ‘পার্ট টাইম লাভার্স’। বছর দুয়েক আগে নির্ভয়া কাণ্ড নিয়ে রিজিতা তৈরি করেছিলেন নাটক ‘গ্রোপ অ্যান্ড গ্র্যাব’। রিজিতার এ বারের নাটক রাজনৈতিক থ্রিলার ‘নাসবন্দি’। পরিচালনায় সৌরভ দাস। হিন্দি ও ইংরেজিতে এই নাটকটি মঞ্চস্থ হবে ১৯ এপ্রিল সকাল সাড়ে দশটায় অ্যাকাডেমিতে।

সুবর্ণজয়ন্তী

‘এ অ্যালবাম তো অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল... অত্যন্ত ভাল গেয়েছে অমিত।’ বলছিলেন সন্দীপ রায়, অমিতকুমারের প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম ‘এবার আমায় ডাকলে দূরে’ (সাগরিকা) সম্পর্কে। নববর্ষের প্রাক্কালে ১৪ এপ্রিল সন্ধে সাড়ে ৬টায় কলামন্দিরে এই অ্যালবাম প্রকাশ উপলক্ষে সন্দীপের স্মৃতিকথন, সত্যজিতের ছবিতে কিশোরকুমারের রবীন্দ্রগান গাওয়া নিয়ে। থাকবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও, আবৃত্তি করবেন। গাইবেন শ্রাবণী সেন, অন্তরা চৌধুরী। বিনোদন দুনিয়ায় পা দেওয়ার পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হল অমিতের, তাই সে সন্ধ্যায় তিনি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে রবীন্দ্রগান ছাড়াও গাইবেন শচীন ও রাহুল দেব বর্মন, মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, কিশোরকুমারের গান। উদ্যোগে স্পেকট্রাম পেট্রোম্যাক।

নতুন গ্যালারি

সংগীত চর্চার সঙ্গে আগ্রহ ছিল সংস্কৃতির নানা দিগন্তে। সেই সূত্রেই লোপামুদ্রা মিত্র লেক গার্ডেন্স অঞ্চলে তৈরি করলেন ‘অনু / দি আর্ট গ্যালারি’। পয়লা বৈশাখ উদ্বোধন, প্রথম প্রদর্শনীতেই থাকছে বিশিষ্ট শিল্পীদের ছবি। রোজ ১১-৭টা, সোমবার বন্ধ। শিল্পী বন্ধু তমালকৃষ্ণের সহযোগিতায় বছরভর নানা প্রদর্শনীর পরিকল্পনা। অন্য দিকে নক্ষত্র আর্ট গ্যালারি ও সেনসোরিয়াম আয়োজন করেছে ‘আ মডার্ন লিগ্যাসি’, বহু খ্যাতনামা শিল্পীর ছবির প্রদর্শনীর সঙ্গে শেষ দিন ১৩ এপ্রিল মকবুল ফিদা হুসেনকে শতবর্ষে স্মরণ, দেখানো হবে তথ্যচিত্র।

তিন দশক পরে

হাতের ওপর হাত রাখা খুব সহজ নয়/ সারা জীবন বইতে পারা সহজ নয়’— শঙ্খ ঘোষের কবিতার এই লাইনটাই সত্যি হয়ে উঠেছিল বিশ্বনাথ-আরতির জীবনে। পঞ্চাশ বছরের বিবাহিত জীবন একঘেয়ে হয়ে ওঠায় হঠাৎ তাতে ইতি টানতে চান বিশ্বনাথ। মামলা কোর্টে উঠলে জজ সাহেব পরামর্শ দেন অন্তত কাছেপিঠে কোথাও ঘুরে আসতে। সেখানে গিয়েই বৃদ্ধ দম্পতি পরস্পরকে নতুন করে আবিষ্কার করেন। সঙ্গে উপলব্ধি, ভালবাসা হারিয়ে যায় না, রোজকার খুঁটিনাটির ভিড়ে আড়াল হয়ে যায়। ডিভোর্স অবধি না গড়ালেও অনেক পরিবারই এমন সমস্যার মুখোমুখি। সাম্প্রতিক ছবি ‘বেলা শেষে’-তে এটাই তুলে ধরেছেন পরিচালক নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ‘ঘরে বাইরে’র পর এই ছবিতেই আবার বড় পর্দায় আসতে চলেছেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। মাঝে তিরিশ বছরের ব্যবধান। এ বারও বিপরীতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ‘বড় পর্দায় অভিনয়ের কথা শুনে প্রথমেই বুকটা ধড়াস করে উঠেছিল,’ বলছিলেন স্বাতীলেখা। ‘টেনশনে ছিলাম। ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে বরাবরই অস্বস্তি লাগত। প্রথম ‘ঘরে বাইরে’ দেখেছিলাম কান-এ। পর্দায় নিজেকে দেখে মনে হচ্ছিল আমায় ভাল লাগছে না। তবে সব টেনশন ছাপিয়ে ছিল সৌমিত্রদার সঙ্গে অভিনয়ের লোভ!’ নিজেই নিজেকে বোঝাতেন, শান্ত থাকতে। এই ছবিতেই স্বাতীলেখার সঙ্গে দেখা যাবে মেয়ে সোহিনী সেনগুপ্তকে। ১ মে মুক্তি পাচ্ছে ‘বেলা শেষে’। ছবি নিয়ে আশাবাদী স্বাতীলেখা। ‘গল্পটার নিজস্ব জোর রয়েছে।’

শতবর্ষে

ষাট-সত্তর দশকে কাঁকুলিয়া রোডের বািড়তে সারা দিনই চলত নানা বয়সের কবিদের কাব্য চর্চা ও জমজমাট আড্ডা। পৃষ্ঠপোষক গৃহকর্তা কবি ও সম্পাদক সুশীল রায়। গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, অনুবাদ, জীবনী— সাহিত্যের সব শাখায় ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। জন্ম রাজশাহিতে, ১৯১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। বাংলা সাহিত্যে এম এ করার পর ‘জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর’ সম্পর্কে গবেষণা করেন। কর্মজীবন শুরু ‘নাচঘর’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে। পরে যোগ দেন বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগের যুগ্ম-অধ্যক্ষের পদে, সঙ্গে ‘বিশ্বভারতী পত্রিকা’ সম্পাদনা। কবিতা আন্দোলনের জোয়ারের সময় ঘণ্টায় ঘণ্টায় প্রকাশিত তাঁর ‘কবিতা-ঘণ্টিকী’ খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। সম্পাদনা করেছেন ‘ধ্রুপদী’ সাহিত্য পত্রিকা। বহু তরুণ কবির প্রথম কবিতা এখানে প্রকাশিত হয়। মাইকেলের চিঠিপত্রের অনুবাদ ও আলোচনা তাঁর একটি স্মরণীয় গ্রন্থ। প্রণয়ীপঞ্চক, মেঘদূতের নতুন ভাষ্য আলেখ্য দর্শন, ত্রিনয়না, অদ্বিতীয়া তাঁর স্মরণীয় গ্রন্থ। বাংলা কবিতা প্রসঙ্গ তাঁর সম্পাদিত এক আকরগ্রন্থ। পঞ্চাশের দশকে বিশিষ্ট মনীষীদের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলে আনন্দবাজার পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে লিখেছিলেন সচিত্র নিবন্ধ ‘মনীষী জীবন কথা’। তাঁর বাড়িতে নিয়মিত আড্ডা জমাতেন অনেকেই (সঙ্গের ছবিতে তেমনই এক আড্ডায় মধ্যমণি সুশীল রায়, পিছনে রমাপদ চৌধুরী, বিমল মিত্র, সাগরময় ঘোষ, মন্মথনাথ সান্যাল, সুবোধ ঘোষ, সামনে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়)। সত্তরের দশকে ‘কৃত্তিবাস’-এ লিখেছিলেন স্মৃতিকাহিনি। ১৯৮৫-র ১ জুলাই তিনি প্রয়াত হন। প্রায় নীরবেই কেটে গেল তাঁর জন্মশতবর্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE