Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৩৮
Share: Save:

পরিচালককে মনে রেখে

সত্তর দশক। দিল্লি বা বম্বেতে পায়ে হেঁটে, অটো বা সাইকেলে চেপে, ভিড় বাসে গুঁতিয়ে, ট্রেনে ঠাসাঠাসি বসে যাতায়াত করত মধ্যবিত্ত মানুষজন, তারই মধ্যেই কোনও কোনও তরুণ-তরুণীর জীবনে আচমকা বসন্ত নেমে আসত বাসস্টপে, ট্রেনের কামরায়, বৃষ্টিভেজা বিকেলে ছেঁড়া ছাতার তলায়... বাসু চট্টোপাধ্যায়ের ছবি। পিয়া কা ঘর, রজনীগন্ধা, চিতচোর, ছোটি সি বাত (ডান দিকে ছবিটির পোস্টার), খাট্টা মিঠা, সফেদ ঝুট, স্বামী, দিল্লাগি, বাতোঁ বাতোঁ মে, মঞ্জিল, রত্নদীপ... আশি-নব্বইয়ের দশকে মনপসন্দ (সে ছবির রেকর্ড রিলিজ উপলক্ষে বাঁ দিক থেকে বাসুবাবু, রাজেশ রোশন, টিনা মুনিম, সব শেষে মহম্মদ রফি), শওকিন, পসন্দ আপনি আপনি, এক রুকা হুয়া ফয়সালা, শিশা, কমলা কি মওত এমন অজস্র ছবি তাঁর ঝুলিতে।

প্রবাসী বাঙালি, জন্ম ১৯৩০-এ আজমেঢ়-এ, বেড়ে উঠেছেন মথুরায়। সিনেমায় আসার আগে ব্লিত্‌স পত্রিকায় কার্টুন আঁকতেন দীর্ঘকাল। ’৬৯-এ প্রথম ছবি ‘সারা আকাশ’, সে বছর মৃণাল সেনের ‘ভুবন সোম’ ও মণি কলের ‘উসকি রোটি’র সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাক লাগিয়ে দেন সকলকে। অমল পালেকর, বিদ্যা সিনহা, জারিনা ওয়াহাব, দিনেশ ঠাকুরের মতো নবীন প্রতিভাদের নিয়ে একের পর এক ছবি ‘হিট’ করানোর পর হিন্দি ছবির তারকারা অত্যুত্‌সাহী হয়ে উঠেছিলেন তাঁর ছবিতে অভিনয়ের জন্যে। সলিল চৌধুরী, রাজেশ রোশন, রাহুল দেববর্মনেরা স্মরণীয় সুরারোপ করেছেন তাঁর ছবির গানে। শরত্‌চন্দ্র, সুবোধ ঘোষ, প্রভাত মুখোপাধ্যায়, সমরেশ বসু, বিমল কর, মনোজ বসুর কাহিনি নিয়ে ছবি করেছেন, ব্যোমকেশ বক্সীকে জনপ্রিয় করেন টিভি সিরিয়ালে। আশি পেরিয়ে এখনও সক্রিয় বাসুবাবুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর ছবির স্টিল, বুকলেট, পোস্টার, রেকর্ড নিয়ে সেনসোরিয়াম-এর উদ্যোগে এক প্রদর্শনীর আয়োজন উইভার্স স্টুডিয়োয়, ২৬ এপ্রিল থেকে ২ মে, প্রতি দিন ৪টে থেকে সাড়ে ৮টা। ‘বাসু চ্যাটার্জি: আ মঞ্জিল অব মেমোরিজ’: ভাবনা ও প্রয়োগে শৌনক চক্রবর্তী। সহায়তায় এন এফ ডি সি, এস এম এম অসাজা, মহীরুহ মুখোপাধ্যায় ও রূপালী গুহ।

সুতানুটির ঐতিহ্য

সুতানুটি কলকাতা গোবিন্দপুর। এই মিলেই কলকাতা মহানগর। আজকের উত্তর কলকাতার বড় অংশ সে কালের সুতানুটির মধ্যে ছিল। তারই ইতিহাসের খোঁজে ‘সূত্রধর’-এর উদ্যোগ ‘সুতানুটি ঐতিহ্যগাথা গ্রন্থমালা’। প্রথমটি শাশ্বত পঞ্চক: স্মৃত-বিস্মৃত (সম্পা: অশোককুমার রায়), যেখানে রামচন্দ্র দত্ত, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, নবীনচন্দ্র বসু, কালীকৃষ্ণ দেব আর অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণকে নিয়ে দুর্লভ রচনা গিরিশচন্দ্র ঘোষ, সরলাবালা সরকার, হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, মন্মথনাথ ঘোষ ও হেমেন্দ্রকুমার রায়ের। আর দ্বিতীয় বইয়ে (সুতানুটির বিজ্ঞাপনী: পত্রিকা ও প্রকাশনী, সংকলন অর্ণব নাগ/ সৌম্যা রায়চৌধুরী) সুতানুটির নানা প্রতিষ্ঠানের বই-পত্রিকার ৮০টি বিজ্ঞাপনের সমাহার। ১৬ এপ্রিল সন্ধে ৬টায় রাজা নবকৃষ্ণ স্ট্রিটে গোপীনাথ জিউয়ের ঠাকুরদালানে এক অনুষ্ঠানে বই দুটি প্রকাশ করে ‘সুতানুটির ঐতিহ্য: উত্তরাধিকারের দায়’ নিয়ে বলবেন দেবাশিস বসু। রেকর্ডে সুতানুটির গান শোনাবেন সুশান্তকুমার চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের আঁকা সরলাবালা সরকারের স্কেচ।

রূপসী বাংলা

বাংলার লোক-ঐতিহ্য সংরক্ষণে গুরুসদয় দত্ত আর তাঁর সংগ্রহের ভূমিকা সুপরিচিত। মানুষটির সার্বিক পরিচয় তুলে ধরতে গুরুসদয় সংগ্রহশালা প্রকাশ করছে কিউরেটর বিজন কুমার মণ্ডলের লেখা গুরুসদয় দত্ত : ব্রতচারী ও সংগ্রহশালা বইটি। এতে আছে গুরুসদয় দত্তের জীবন ও কর্মের সঙ্গে তাঁর লেখা বই ও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত রচনার তালিকা, ব্রতচারীর আদর্শ, সংগ্রহশালার সংক্ষিপ্ত বিবরণ। নববর্ষ উপলক্ষে উদ্বোধন হবে একটি প্রদর্শনী ‘রূপসী বাংলা’ (১৫-২৩ এপ্রিল, ২-৬ টা)। এ দিকে স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধশতজন্মবার্ষিকীকে মনে রেখে ১৫ এপ্রিল সকাল ১১টায় গুরুসদয় সংগ্রহশালায় আলোচনা: ‘স্বামী বিবেকানন্দ ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম’।

কত রঙ্গ

‘না জানি কলির শেষে, কত রঙ্গ উঠবে দেশে’। লালন ফকিরের গানের এই অংশটি আজ খুবই প্রাসঙ্গিক। সেই লালন অবলম্বনেই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু সভাগৃহে ১৭ এপ্রিল দুপুর ১টায় আয়োজন করেছে ‘আজগুবী বৈরাগ্য লীলা’। বিষয় ‘লালন: মঞ্চে, লোকায়তে’, বক্তা সুধীর চক্রবর্তী ও সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়। অন্য দিকে রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য ও নাটকের থেকে কিছু কিছু অংশ নিয়ে ‘প্রাসঙ্গিক’ তৈরি করেছে ‘প্রেম নব নব রূপে’। ‘রক্তকরবী’, ‘শ্যামা’, ‘শেষের কবিতা’ ও ‘রাজা’ থেকে নেওয়া বিশেষ কিছু অংশকে একত্র করে তৈরি হয়েছে চিত্রনাট্য। সঙ্গে রবীন্দ্র-কবিতা। গান ও পাঠে প্রমিতা মল্লিক, ঋতুপর্ণা রায় ও অন্যরা। ১৯ এপ্রিল সন্ধে ছ’টায়, কলামন্দির-এ।

ভোটচিত্র

ভোট নিয়ে, ভোটের বিষয় নিয়ে সাধারণ জনের হাসি ঠাট্টা মশকরা তামাশা বিদ্রুপ ব্যঙ্গচিত্রীর আঁকায়, কথায় চলে আসে। হালকা চালে। সমালোচনায়। যেমন হয় কার্টুনে। বাইরে থেকে দেখে নিলে, পড়ে ফেললে এক রকম। ভিতরে ঢুকলে, বুঝে নিলে অন্য রকম। ব্যঙ্গচিত্রী সমালোচক। লিখেছেন শুভেন্দু দাশগুপ্ত। তাঁর গ্রন্থনায় বাংলা কার্টুনে ভোট/ ১৮৭৪-২০১৪ (মনফকিরা) বইয়ে সেই গিরীন্দ্রনাথ দত্ত, প্রাণনাথ দত্ত থেকে কাফী খাঁ, চণ্ডী লাহিড়ী, রেবতীভূষণ হয়ে হালের দেবাশীষ দেব, ঋতুপর্ণ বসু অবধি বিভিন্ন শিল্পীর ছবি ও লেখা, সঙ্গে উত্‌স-সূত্র। পাশাপাশি প্রিয়ম প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে দেবাশিস বসুর ভোটের ছড়া।

সঙ্গীত নিয়ে

‘সাধারণত চলচ্চিত্রকারের কথা ভেবেই আমরা ছবির উত্‌সব করি। এ বারে সঙ্গীত পরিচালককে মুখ্য ভূমিকায় রেখে এই উত্‌সবের ভাবনা।’ বিশ্ববন্দিত শিল্পী আলি আকবর খান সুরারোপিত চলচ্চিত্র উত্‌সব প্রসঙ্গে জানালেন নন্দন-অধিকর্তা যাদব মণ্ডল। চৈত্রশেষে ১৩-১৪ এপ্রিল অযান্ত্রিক, ক্ষুধিত পাষাণ, বেনারসী, দেবী দেখানো হবে নন্দন-এ। প্রথম দিন সন্ধ্যায় শিল্পীস্মরণে উপস্থিত ছিলেন দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। আজ থাকবেন শিল্পীকন্যা আমিনা পেরেরা, তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় ও নন্দন-সভাপতি সন্দীপ রায়। সঙ্গে খানসাহেব সুরারোপিত ছবির পোস্টার, লবিস্টিল, বুকলেট, লং-প্লে রেকর্ড ইত্যাদি নিয়ে একটি প্রদর্শনী। সহায়তায় তপন সিংহ ফাউন্ডেশন। অন্য দিকে নন্দন-এর সঙ্গেই যৌথ উদ্যোগে ফিল্মস ডিভিশন-এর আয়োজন: ‘মিউজিক অন সেলুলয়েড’। ১৭ এপ্রিল সন্ধে ৬টায় দেখানো হবে তিজনবাঈ, মাইহার ব্যান্ড, পরভীন সুলতানাকে নিয়ে তিনটি সঙ্গীতভিত্তিক তথ্যচিত্র।

সিক্তবসনা

না, সঙ্গের ছবিটি হেমেন্দ্রনাথ মজুমদারের আঁকা নয়। হেমেন্দ্রনাথ বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে প্রতিষ্ঠা পান, কিন্তু এই ছবি সম্ভবত তার আগেই আঁকেন কোনও অনামা শিল্পী। শিল্পবেত্তাদের মতে, হেমেন্দ্রনাথের ছবির প্রধান আকর্ষণ সিক্তবসনা রমণীর চিত্রায়ন। এ ধরনের ছবির ক্ষেত্রে অনেকেই তাঁকে পথিকৃতের মর্যাদা দিয়েছেন। এ বার এই সিক্তবসনা ছবির অন্য এক উত্‌সের হদিশ মিলেছে বলে মনে করছেন সংগ্রাহক পরিমল রায়। বিশ শতকের গোড়াতেই কাঁসারিপাড়া আর্ট স্টুডিয়ো কালীঘাট পটের সূত্র ধরে দেবদেবীর সঙ্গে গোলাপসুন্দরী, প্রমোদাসুন্দরীদের ছবিও ক্রোমোলিথোগ্রাফিক পদ্ধতিতে শস্তায় ছাপতে শুরু করেছিল। এই স্টুডিয়ো থেকেই ছাপা সিক্তবসনা-র একটি ছবি শিল্পী কাজী অনির্বাণ সম্প্রতি উদ্ধার করেছেন। এ বার পরিমল রায় ও কাজী অনির্বাণের উদ্যোগে সেই ছবি সহ কাঁসারিপাড়া ও চোরবাগান আর্ট স্টুডিয়োর বারো ‘বণিতা’র দুর্লভ ছবি নিয়ে নতুন ক্যালেন্ডার তৈরি হয়েছে। বড় আকারে সুমুদ্রিত এই ছবিগুলি নিঃসন্দেহে বাঙালির শিল্প-ঐতিহ্যের স্মারক।

দ্রৌপদী

মহাভারতে আছে অর্জুন-পুত্র অভিমন্যু, ভীম-পুত্র ঘটোত্‌কচের বীরগাথা। অথচ, দ্রৌপদীর পাঁচ সন্তান প্রতিবিন্ধ্য, শ্রুতসোম, শ্রুতকীর্তি, শ্রুতসেন, ও শতানীক থেকে গিয়েছেন প্রচারের আড়ালে। যে মুহূর্তে রাজত্ব আর ক্ষমতা ঘিরে সমস্ত সংশয়ের অবসান হয়, পঞ্চপাণ্ডবের ঔরসে দ্রৌপদীর গর্ভজাতদের মুছে ফেলা হল ইতিহাসের পাতা থেকে। আর এখান থেকেই শুরু ‘বাংলা থিয়েটার কোলকাতা’র প্রথম প্রযোজনা ‘বৃত্তান্তে’। প্রথম প্রয়াস দ্রৌপদীকে নিয়ে কেন? ছোট ও বড় পর্দার সুপরিচিত নির্দেশক অভিজিত্‌ দাশগুপ্ত এই নাট্যেরও নির্দেশক। তাঁর কথায়, নারীর উপর অধিকার ক্ষাত্র-রাজনীতির স্পষ্ট লক্ষণ ছিল। কিন্তু, আমাদের এই কাল ও স্থানেও সেই অধিকার-চিহ্ন একই। প্রথম অভিনয় ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যা পৌনে ৭টায়, জ্ঞান মঞ্চে। এ দিকে বাদল সরকারের নাটক ‘বিচিত্রানুষ্ঠান’ বেশ কিছুকাল পরে শহরের মঞ্চে। তিন মাসের প্রশিক্ষণ শিবিরের ভিত্তিতে নতুন নাট্যদল বেহালা ব্রাত্যজন অভিনয় করছে নাটকটি, ২০ এপ্রিল, সকাল সাড়ে দশটায় অ্যাকাডেমিতে। উপদেষ্টা ব্রাত্য বসু, সম্পাদনা ও নির্দেশনায় সুপ্রিয় চক্রবর্তী।

ছবিও তোলেন

যিনি ছবি আঁকেন, তিনি ছবিও তোলেন। সে সব ছবি নেহাতই শখে তোলা আর সেই শখ নিয়েই বলতে গিয়ে নিজের ক্যামেরা-স্মৃতি বলছেন যোগেনবাবু, আমার প্রথম ক্যামেরাটি কিনেছিলাম প্যারিসে যাওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই। তার লেন্স ছাড়া পুরোটাই প্লাস্টিকের। তাতে ক্লিক করে ছবি তোলা ছাড়া আর কিছুই করা যায় না, সবটাই অটোমেটিক। আর প্রথম ছবি? যোগেন জানাচ্ছেন, সুহাসের ওভারকোট পরা ছবি, সেই দোকানেই, আমার প্রথম ছবি। সেই স্মৃতির ক্যামেরা দিয়েই পরে অনেক ছবি তুলেছেন শিল্পী, ব্যক্তিগত, বন্ধুগত, শিল্পগত সে সব নিয়ে এখন প্রদর্শনী মায়া আর্ট স্পেস-এ, ২০ এপ্রিল পর্যন্ত।

বই-পার্বণ

সিনেমার একশো বছরের উত্‌সব যখন পালিত হচ্ছে, তখন হীরালাল সেনকে ক’জন মনে রেখেছেন। ১৮৯৮-এ হীরালাল সেন নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্রটি ধরলে সিনেমার বয়স ১১৭! সেটা স্মরণ করাতেই বাংলা নতুন বছরে দে’জ-এর ‘উপহার’ বই মানে সিনেমাও। অন্য দিকে সপ্তর্ষি প্রকাশনের সঙ্গে যৌথ ভাবে অনেকটা ফিনিক্স পাখির মতোই জেগে উঠল বই না ছেপে বিষয় ছাপার দাবিদার প্রকাশনা সংস্থা এ মুখার্জী। নববর্ষ উপলক্ষে ১৬-২২ এপ্রিল (১২-৮টা) ওরা আয়োজন করেছে ‘বই-পার্বণ’। ও দিকে মা ও মেয়ে মিতা ও অন্তরা রায়চৌধুরী তৈরি করেছেন বাংলা বুক মার্ক। বাংলা বই পড়লে, বাংলায় ঝগড়া করলে কেন বাংলা বইয়ের ভাঁজে থাকবে না বাংলা বুক মার্ক? সেই ভাবনা থেকেই তাঁদের বুটিক ‘বিবিধ’ থেকে বেরলো বাংলা বুক মার্ক।

পরিণত

তিরিশ বছরের তরুণ ভ্রমরের স্ত্রী হেমন্তিকা। তরুণ স্বামীটি হঠাত্‌ই মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে একা একা বন্ধ ডাকে, তাতে শামিল হয় হেমন্তিকা। কিন্তু এই প্রতিবাদী দম্পতি ক্রমশ পরিস্থিতির আবর্তে জনপ্রিয় প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। আর তখনই যেন সংকট ঘনিয়ে আসে। শূদ্রক নাট্যগোষ্ঠীর নতুন নাটক ‘পর্যবর্ত’ নিয়ে বলছিলেন রচয়িতা ও নির্দেশক দেবাশিস মজুমদার। হেমন্তিকা সম্পর্কে তাঁর অভিমত ‘সমকালীনতার প্রতিধ্বনিতে চরিত্রটি একদিকে যেমন হাল্কা ভঙ্গিতে একের পর এক ছবি আঁকে মঞ্চে, তেমনই আবার শেষ পর্বে সে একটা দূরত্ব থেকে নিজের ঘরের দরজা খুলে রাখে কোনও এক ঘরতোয়া নদীর আহ্বানে।’ বাস্তব আর ধারণার মিশেলে তৈরি এ-চরিত্রটিকে অনেকটাই দর্শকের মনে গেঁথে দিতে পেরেছেন মিশকা হালিম, জানালেন দেবাশিস, ‘পরিণতমনস্ক অভিনেত্রী’। আর মিশকার কাছে ‘চরিত্রটা চ্যালেঞ্জিং। এত ওঠাপড়া আছে, কত রকমের শেড্স। দেবাশিসদা তাঁর ভাবনাটা প্রথমেই পৌঁছে দিয়েছেন আমার কাছে, তারপর স্বাধীনতা দিয়ে ছেড়ে রেখেছিলেন। তাই খোলা ভাবে অভিনয় করতে পেরেছি, চরিত্রটাকে বইতে পেরেছি নিজের মতো করে।’ মিশকার হাতেখড়ি রঙরূপ নাট্যগোষ্ঠীতে, সীমা মুখোপাধ্যায়ের কাছে, রবীন্দ্রনাথের ‘শেষরক্ষা’য় ইন্দুমতী করেছিলেন। অরুণ মুখোপাধ্যায়, বিভাস চক্রবর্তীর নির্দেশনাতেও কাজ করেছেন। উল্লেখ্য সুমন মুখোপাধ্যায়ের ‘বিসর্জন’-এ গুণবতী ও কৌশিক সেনের ‘কর্কটক্রান্তির দেশ’-এ জাহানারা। ১৫ এপ্রিল সন্ধে সাড়ে ছ’টায় ‘পর্যবর্ত’ হবে রবীন্দ্রসদনে।

শতবর্ষ

বছর কুড়ি আগে শিল্পী নিজেই উদ্যোগী হন বাড়িতে সংগ্রহশালা তৈরি করতে। নরেন্দ্রপুরে ‘ভাস্কর ভবন’ নামের সেই সংগ্রহশালায় রয়েছে তাঁর সৃষ্টি ও অমূল্য সংগ্রহ। শিল্পী চিন্তামণি করের সেই সংগ্রহের কিছু প্রদর্শিত হতে চলেছে ভারতীয় সংগ্রহশালায়। উপলক্ষ শিল্পীর (১৯১৫-২০০৫) জন্মশতবর্ষ। ‘চিন্তামণি কর সংগ্রহালয়’ ও ‘সর্বভারতীয় চারুকলা মন্দির’-এর আয়োজনে ১৯ এপ্রিল বিকেল ৫টায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন, চলবে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত (১২-৭ টা)। বিদেশে শিল্পীদের দেখেই সংগ্রহশালা তৈরির ভাবনা চিন্তামণির। পুরোটাই তিনি তুলে দেন রাজ্য সরকারের হাতে। সেখানে রয়েছে ওঁর কাজের ঘর, যন্ত্রপাতি, ছবি, ভাস্কর্য। এখানেই বৃদ্ধ বয়সেও কাজ করতে দেখা যেত শিল্পীকে।

জীবনের প্রথম দিকে প্যারিসে রবার্ট হ্বেলরিক-এর কাছে ভাস্কর্য এবং ভিক্তর জিওভানেল্লির কাছে পাথর খোদাই আয়ত্ত করেন। ইতালীয় শিল্পীর কাছে শেখা পদ্ধতিতে বাড়িতেই পিট ফার্নেস গড়ে নিজেই ঢালাই করতেন। প্রাচীন বাংলার সূত্রধরদের মতো ‘কাষ্ঠ-পাষাণ-মৃত্তিকা-চিত্র’ চারটি মাধ্যমেই দক্ষ এই শিল্পীর গুণগ্রাহী ছিলেন এপস্টাইন ও হেনরি মুর। আউটরাম ঘাটের কাছে রয়েছে তাঁর তৈরি বঙ্কিমচন্দ্রের ব্রোঞ্জ মূর্তি, পার্লামেন্টের সেন্ট্রাল হলে তাঁর আঁকা নেতাজির তৈলচিত্র। জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত হবে শ্যামলকান্তি চক্রবর্তী সম্পাদিত স্মারক গ্রন্থ স্মৃতি-চিন্তনে চিন্তামণি কর। শিল্পীর ইচ্ছানুসারে, এ বারেও ‘ভাস্কর ভবন’ ট্রাস্টির পক্ষ থেকে আটজন মেধাবী ছাত্রছাত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হবে স্মারক বৃত্তি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE