Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ০০:১৫
Share: Save:

সত্যজিতের ‘রবিশঙ্কর’

বাবা এ রকম চিত্রনাট্য একমাত্র ‘পথের পাঁচালী’ ছাড়া আর কোনও ছবিতে করেননি। সত্যজিত্‌-কৃত ‘রবিশঙ্কর’ সম্পর্কে বলছিলেন সন্দীপ রায়। ‘পথের পাঁচালী-র চিত্রনাট্য গোটাটাই যেমন ছবি এঁকে করা, লেখা ছিল না কিছু, রবিশঙ্করকে নিয়ে স্টোরিবোর্ডটাও পুরো আঁকা, যে ক’টা শব্দ লিখেছেন, সেগুলো সিনেমার টেকনিক্যাল নির্দেশ। আঁকাজোকার জন্য জি সি লাহা থেকে ড্রয়িং ব্লক কিনতেন বাবা, সে রকমই একটা ড্রইং ব্লক-এ রবিশঙ্করকে নিয়ে ছবি এঁকে এই চিত্রনাট্যটা সাজিয়েছিলেন। ৩২টা স্কেচ আছে এতে। সম্পূর্ণ ড্রয়িং বুকটা মূল অক্ষুণ্ণ অবস্থায় আছে আমাদের কাছে। পথের পাঁচালী-র অনেকটাই যেমন প্যারিসের সিনেমাথেক-এ দিয়ে দিয়েছিলেন বাবা (শুনছি নাকি সেটা সেখানে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, আমরা চিঠি দিয়ে চাইব ভাবছি), বাকিটা অবশ্য আমাদের কাছে মাইক্রোফিল্ম করা আছে।

সৌভাগ্য যে, রবিশঙ্কর-এর বেলায় সেটা ঘটেনি। কিন্তু আফশোসটা থেকেই যাচ্ছে, শেষপর্যন্ত তো এটা থেকে ছবি করা হয়ে ওঠেনি বাবার।’ সম্ভবত সেই আফশোস ঘোচাতেই সত্যজিত্‌ রায় সোসাইটি এ বার উদ্যোগী যৌথ ভাবে হার্পার কলিন্স-এর সঙ্গে এটিকে বই হিসেবে প্রকাশ করার (সত্যজিত্‌ রে’জ রবিশঙ্কর: অ্যান আনফিল্মড ভিসুয়াল স্ক্রিপ্ট)। বহু বছর আগে মারি সিটন-এর পোর্ট্রেট অব আ ডিরেক্টর-এ (১৯৭১) ‘রবিশঙ্কর’-এর গোটা আটেক স্কেচ অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, সত্যজিতেরই পছন্দ অনুসারে, তাঁর ভাবনার একটা ধারণা পাঠককে দেওয়ার জন্যে। মারি তাঁর বইটিতে তখন সত্যজিতের এই সম্ভাব্য ছবি নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন: ‘পসিবলি, সাম ডে, আ ভ্যারিয়েশন অন দিস অডিয়ো-ভিস্যুয়াল এক্সপেরিমেন্ট মে বি মেড।’ সিনেমার শিক্ষানবিশ থেকে সমঝদার অবধি সকলেই যাতে ওয়াকিবহাল হতে পারেন সত্যজিতের এই প্রস্তুতিপর্ব সম্পর্কে, সেই জন্যেই সত্যজিত্‌ রায় সোসাইটি-র এই উদ্যোগ, জানালেন সি ই ও অরূপকুমার দে, “২ মে তাঁর জন্মদিনে আই সি সি আর-এর সত্যজিত্‌ রায় অডিটোরিয়ামে বইটি প্রকাশ করবেন নাসিরুদ্দিন শাহ। সঙ্গে আর একটি বইয়েরও আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হবে তাঁর হাতে ফোরটিন স্টোরিজ দ্যাট ইনস্পায়ার্ড সত্যজিত্‌ রে (হার্পার পেরেনিয়াল)। তার পর ‘সত্যজিত্‌ রায় স্মারক বক্তৃতা’ দেবেন নাসির। শেষ পর্বে দেখানো হবে সত্যজিতের দুটি ছোট ছবি ‘টু’ আর ‘দ্য ইনার আই’।” সঙ্গে সেই ‘রবিশঙ্কর’-এর একটি ড্রয়িং, সত্যজিত্‌ রায় সোসাইটি-র সৌজন্যে।

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য

ইংরেজ বণিকের মানদণ্ড খুব দ্রুতই রাজদণ্ডে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই হুগলি নদীর পশ্চিম তীর বরাবর মাত্র শ’খানেক কিলোমিটার বিস্তৃত ভূখণ্ডে বাণিজ্য-সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য একের পর এক পা ফেলেছিল পর্তুগিজ, ডাচ, দিনেমার, ফরাসি, জার্মান বণিকরা। তাদের ব্যবসা টেকেনি, কিন্তু ব্যান্ডেল, হুগলি, চঁুচুড়া, চন্দননগর কি শ্রীরামপুর আজও তাদের সাংস্কৃতিক স্মৃতি বহন করছে। বাংলা মুদ্রণ শুরু এখানেই, আধুনিক ইউরোপীয় শিক্ষার ঐতিহ্যও এই অঞ্চলে। স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র ছিল চন্দননগর। ইংরেজরা অবশ্য সরে এসেছিল পূর্ব তীরের কলকাতায়। এই সুফলা ভূখণ্ডের ইতিবৃত্ত লেখায় হাত দিয়েছিলেন দুই কৃতবিদ্য ইতিহাসবিদ, সুরঞ্জন দাস ও বাসুদেব চট্টোপাধ্যায়। দ্বিতীয় জনের অকাল প্রয়াণের পর কাজটি সম্পূর্ণ করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। আছে নানা দুর্লভ ছবি। ইউরোপ অ্যান্ড দ্য হুগলি: দি ইউরোপিয়ান সেটলমেন্টস অন দি ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক অব দ্য রিভার (কে পি বাগচী) নামের বইটি সেন্টার ফর সোশ্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ-এর আয়োজনে ২৪ এপ্রিল ৩টেয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলিপুর ক্যাম্পাসের প্রেক্ষাগৃহে প্রকাশ করবেন আঁদ্রে বেতেই, আলোচনায় জহর সরকার, সভাপতি রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায়।

রাষ্ট্র ও নারী

কলকাতার স্বতন্ত্র নারী আন্দোলনের শুরুর দিকের অন্যতম ব্যক্তিত্ব মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়। আজীবন যে সংগঠনের আহ্বায়ক হিসেবে নারীর অধিকারে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিয়ে সোচ্চার ছিলেন, সেই নারী নির্যাতন প্রতিরোধ মঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত হচ্ছে দ্বিতীয় মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা। রাষ্ট্র ও নারী আন্দোলন নিয়ে ২২ এপ্রিল বিকেল পাঁচটায় হাজরা রোডে সুজাতা সদনে বলবেন রাষ্ট্রের মানবাধিকার হরণের আর এক শিকার ইলিনা সেন। আদতে কলকাতার মেয়ে ইলিনা জে এন ইউ থেকে গবেষণা করে সেই আশির দশকেই ১৯০১-১৯৬০ পর্বে নারী-পুরুষ অনুপাত কী ভাবে হ্রাস পেয়েছে, সে দিকে প্রথম নজর টানেন। এর পর রায়পুর, শঙ্কর গুহনিয়োগীর আহ্বানে দল্লি-রাজহরার শ্রমিকদের মধ্যে চিকিত্‌সক স্বামী বিনায়ক সেনের সঙ্গে ঘর করতে করতে ছত্তীসগঢ় মহিলা মুক্তি সংগঠন তৈরি, ওয়ার্ধায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা, নিজের সংগঠন রূপান্তর তৈরি, লেখালিখি। বিনায়ককে মাওবাদী বলে গ্রেফতার করার পর ইলিনা ও তাঁর দুই মেয়ের ওপর নেমে আসে রাষ্ট্রের নির্মম খবরদারি। স্বামীর মুক্তির জন্য লড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি সামলেছেন অধ্যাপনা ও নানা সাংগঠনিক গুরুদায়িত্ব।

শেষের ফসল

চিত্রকলা ছিল রবীন্দ্রনাথের দিনান্ত বেলার ‘শেষের ফসল’। জীবনের উপান্তে এসে সার্ধদ্বিসহস্র সৃষ্টির অপ্রত্যাশিত আবির্ভাব বাংলা তথা ভারতের চিত্রকলার ইতিহাসে আজও একটি বিস্ময়কর চর্চা। তিনি নিজেই বলেছেন ‘প্রতিভার সাধনা কোন পথে চলে হঠাত্‌ বোঝা যায় না। প্রথমটা লাগে ধাঁধা, তার পরে দেখা যায় একটা কোথাও পৌঁছে সে আপনার তাত্‌পর্য প্রকাশ করে। ... সকল প্রকার সৃষ্টির ইতিহাস অনাসৃষ্টির রাস্তা দিয়েই’। এই অনাসৃষ্টির রাস্তা দিয়েই তিনি পরিণত বয়সে আবিষ্কার করেছিলেন তাঁর ছবির ভুবন। রবীন্দ্রজন্মোত্‌সবের প্রাক্কালে ২৭ এপ্রিল সন্ধে ছটায় নিউটাউন রবীন্দ্রতীর্থে ‘কবির ছবির ভুবন’ নিয়ে বলবেন সুশোভন অধিকারী। সঙ্গে রবীন্দ্রগানে মানিনী মুখোপাধ্যায়। ৪ মে সন্ধেয় শান্তিনিকেতন শিক্ষাসত্রের ছাত্রছাত্রীরা মঞ্চস্থ করবেন ‘চণ্ডালিকা’।

জল নদী পার হয়ে

যে কোনো ভাল কবিতার জন্য ঠিকমতো নুন লাগে। নুন বেশি হলে খারাপ, কম হলেও খারাপ। কবিতায় এই নুনটাকে আমি বিষণ্ণতা বলে ডাকি। ওটা না থাকলে একটা কবিতা কবিতা হয়ে উঠতে চায় না। সুবোধ সরকার দিল্লিতে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার নিতে যাওয়ার আগে এ-সাক্ষাত্‌কার দিয়েছিলেন কথাকৃতি-র সম্পাদক নীলাদ্রিশেখর সরকারকে। পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যাটি সম্মানিত সুবোধের প্রতি সংবর্ধনা সংখ্যা: ‘জল নদী পার হয়ে’। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন বিশিষ্ট জনেরা। শেষে তাঁর কাজ-জীবন-পুরস্কারের বিবরণ। অন্য দিকে দ্বৈপায়ন হ্রদের ধারে কাব্যগ্রন্থের জন্য তাঁর এই অকাদেমি পুরস্কার প্রাপ্তি উপলক্ষে কলিকাতা লেটারপ্রেস ২২ এপ্রিল সন্ধে ৬টায় বাংলা আকাদেমি সভাগৃহে আয়োজন করেছে তাঁর একক পাঠের: ‘কবিতা ও কথায় সুবোধ সরকার’। সূচনা: নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, কথাসূত্র: বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় কৌষিকী দাশগুপ্ত।

সচিত্র ট্রাম

বিশ্বশান্তি, ভ্রাতৃত্ববোধ, স্বাধীন মতপ্রকাশ, সহিষ্ণুতা ও মিশ্র সংস্কৃতি, এমন সব বিষয়কে মনে রেখে ২০১২ থেকে ১৫ এপ্রিল দিনটি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব আর্টের অনুমোদনে পালিত হয় বিশ্ব শিল্প দিবস হিসেবে। এই দিনটি লিওনার্দো দা ভিঞ্চির জন্মদিন। কোকুয়ো ক্যামলিন লিমিটেড এই প্রথম এই দিনটি উপলক্ষে এ শহরে আয়োজন করল ক্যামেল আর্ট উইক। ওরা বেছে নিয়েছিল পাঁচটি ট্রামকে। ১৭-১৯ এই তিন দিন ছাত্রছাত্রী, শিল্পশিক্ষক, সাধারণ মানুষ, পথশিশু ও ক্যামেল আর্ট ফাউন্ডেশনের শিক্ষার্থীরা ছবিতে ভরিয়ে তুলেছেন ট্রামগুলি। ১৯ এপ্রিল ধর্মতলা ট্রামডিপোতে এই ট্রামগুলি উদ্বোধন করে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, এই প্রকল্প আমাদের শহরের সুনাম বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে। সঙ্গে তারই ছবি তুলেছেন শুভাশিস ভট্টাচার্য।

সুবর্ণজয়ন্তী

বহু বছর ধরে কী করে একটি সুন্দর ঘাসে মোড়া ফুটবল মাঠ রক্ষা করা যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছে বরানগরের নবোদয়। ফুটবলের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চেতনা ধরে রাখা ও সমাজসেবা। ১ বৈশাখ এই ক্লাবটি পদার্পণ করল পঞ্চাশ বছরে। সকালে দক্ষিণেশ্বর মন্দির থেকে মশাল দৌড়, রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ক্রীড়া প্রদর্শনীতে সত্তরোধ্বর্র্ প্রবীণ থেকে সাত বছরের বাচ্চা সবাই মেতে উঠেছিলেন। সঙ্গে ছিল জমাটি আড্ডা।

মেয়েদের ছবি

মেয়েদের নিয়ে মেয়েদের ছবি। হিন্দু মেয়েরাও যে আজকাল পুরোহিতের পেশা নিচ্ছেন, বাড়ি-বাড়ি ঘুরে বিয়ে-শ্রাদ্ধ-পুজোপার্বণ সারছেন, সে খবর আমাদের সামনে নিয়ে এসেছেন সুহাসিনী মুলে। ‘ব্রহ্মবাদিনী: মহিলা পৌরোহিত্য’ তাঁর নতুন তথ্যচিত্র। আবার নিষ্ঠা জৈন-এর তৈরি তথ্যচিত্রটি বুন্দেলখণ্ডে সম্পত পালের নেতৃত্বে দরিদ্র পীড়িত মেয়েদের রুখে দাঁড়ানোর লড়াই ‘গুলাবি গ্যাং’ (সঙ্গে স্থিরচিত্র)। ছবিটি এ বার জাতীয় পুরস্কারে সামাজিক প্রশ্নে সেরা ছবির স্বীকৃতি পেয়েছে। দু’টি ছবিই ‘উইমেন থ্রু উইমেনস আইস’ এই শিরোনামে ২৪ এপ্রিল সন্ধে ৬টায় নন্দনে দেখানোর আয়োজন করেছে ফিল্মস ডিভিশন। যুগ্ম উদ্যোগে সিনে সেন্ট্রালও, তারা আবার নন্দনেই ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪টেয় দেখাবে সদ্যপ্রয়াত ফরাসি পরিচালক অ্যালাঁ রেনে-র (১৯২২-২০১৪) ‘হিরোশিমা মন আমর’, আর ২৫ এপ্রিলে অজয় করের (১৯১৪-’৮৫) শতবর্ষ উপলক্ষে ‘অতল জলের আহ্বান’ ও ‘মধুবন’।

বসুন্ধরা দিবস

মহাবিশ্বের একমাত্র সবুজ গ্রহ পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য ১৯৭০ সাল থেকে ২২ এপ্রিল দিনটি ধার্য হয়েছে ‘বিশ্ব বসুন্ধরা দিবস’ হিসেবে। শহরে এ বার এই দিনটিতে থাকছে বিড়লা শিল্প ও কারিগরি সংগ্রহশালা ও পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের নানা অনুষ্ঠান। আবার ভারতীয় সংগ্রহশালায় সকাল সাড়ে দশটা থেকে রয়েছে অনেক মজার অনুষ্ঠান। বিশালাকৃতি একটি পৃথিবী তৈরি করতে পারবেন দর্শকরা, থাকছে পরিবেশবন্ধু শিল্প শিক্ষার আয়োজন। মাটির কাজ, আলপনা, তুলসীমঞ্চ তৈরির সঙ্গেই থাকছে ফেলে দেওয়া জিনিস থেকে তৈরি কলাগাছ, পুরুলিয়ার ছো নাচে গণেশ। পি কে মিশ্র বলবেন প্রাচীন যুগে মাটির পাত্র তৈরির নির্মাণ কৌশল নিয়ে। সবটাই একেবারে ঘরোয়া ভাবে। যৌথ ভাবে এই অনুষ্ঠানটির আয়োজক ক্র্যাফটস কাউন্সিল অব ওয়েস্ট বেঙ্গল, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার, আকার প্রকার, মিউজ, আর্থডে নেটওয়ার্ক, ভারতের প্রত্নতত্ত্ব ও ভূতত্ত্ব সর্বেক্ষণ এবং ভারতীয় সংগ্রহশালা।

অনেকের মধ্যে

মা চলে গিয়েছিলেন দুরারোগ্য ক্যান্সারে। তাঁরই চিকিত্‌সার সূত্রে এক মেডিক্যাল ব্লগ থেকে জানতে পারেন তিন ক্যান্সার-রোগীর কথা, দিন রুদ্ধশ্বাস দ্রুতিতে ফুরিয়ে আসছে জেনেও যাঁরা উঠেপড়ে লেগেছিলেন জীবন খুঁজে নিতে। সেই ঘটনাই হয়ে উঠল পাঁচ বছর আগে বানানো আমার প্রথম শর্ট ফিল্মের প্লট, বলছিলেন ইন্দ্রাশিস আচার্য। ছবি তৈরির ব্যাকরণটা জানা ছিল রাজা সেন, বরুণ চন্দের মতো সিনেমা-ব্যক্তিত্বের সস্নেহ সান্নিধ্যে এসে, বাকিটা ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি নিংড়ে, সেক্টর ফাইভ-জীবন থেকে সময় ছেনে, পকেটের পয়সা ঢেলে তৈরি করা। ২০১০-এ বানানো ‘একটু আন্তরিকতার জন্য’ দেখানো হয়েছে দেশে-বিদেশে, মিলেছে প্রশংসাও। চার বছরের বিরতিতে তৈরি হল ‘অনেকের মধ্যে একজন’, এই ছবিতে ইন্দ্রাশিসের সঙ্গে সহ-নির্দেশনায় এ শহরেরই আর এক ছবি-করিয়ে, তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়। আসন্ন কান চলচ্চিত্র উত্‌সবের শর্ট ফিল্ম কর্নার-এ সসম্মানে জায়গা করে নিয়েছে ইন্দ্রাশিস-তথাগতর ছবি, ভারত থেকে একমাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধি। একলা প্রৌঢ়ের একাকিত্বের নির্মিতি ছবির ভাষায় লিখেছেন দুই পরিচালক, ফ্রেমে আর সংলাপে এঁকেছেন সঙ্গ-নিঃসঙ্গতার আলো-আঁধারি। কান-এর খবর শুনে বড় পরদার কোনও প্রযোজক ফোন করেননি? ছোট ছবির নির্মাতাদের আর এ শহরে বাজার কোথায়, ইন্দ্রাশিসের আক্ষেপ। তবু অমিত সাধ, দুই বন্ধু মিলে লেগে পড়েছেন কাহিনিচিত্রের প্রস্তুতিতে, এখন উদ্যোগপর্ব।

লোকশিল্পী

রঙ তুলি হাতে পড়লেই তিনি অন্য মানুষ। হেসে বলতেন, ‘ভগবান আমারে এটুকুই দেছেন’। শত অভাব-দুঃখ এ দিয়েই জয় করে গেলেন তিনি। লোকশিল্পী সরযূবালা পালের জন্ম বরিশালে। নানা পার্বণ, গান, আলপনা, পুতুল এই সবই ছিল তাঁর ছোট বেলার দিনযাপনের সঙ্গী। নিজে চমত্‌কার আলপনা আঁকতে পারতেন, সঙ্গে ব্রতকথা। পিতা গোপাল পালের কাছে মাটির কাজে হাতেখড়ি। অল্প বয়েসেই বিয়ে হয় অনিল পালের সঙ্গে। শুরু হয় মাটির কাজ, চাহিদা থেকে দক্ষতা অর্জন মনসার ঘট তৈরির কাজে। দেশভাগের সময়ে চলে আসেন দত্তপুকুরে। পরে ওঁর স্থায়ী ঠিকানা হয় উল্টোডাঙার দক্ষিণদাড়ি। স্বামীর অকালমৃত্যুর পর ধরেছিলেন সংসারের হাল। বহুমুখী প্রতিভা ছিল সরযূবালার।

নিজের হাতে মাটি ‘পিটনা’ দিয়ে পিটিয়ে ঘট তৈরি করে, পুড়িয়ে তারপর তাতে ছবি আঁকতেন। কখনও ক্রেতাদের আবদারে তিনি মনসাঘটের আদলেই তৈরি করেছেন কালী, সরস্বতী বা দুর্গাঘট। এঁকেছেন সরাচিত্র। তৈরি করেছেন মাটির পুতুল, পোড়ামাটির গয়না। তবে ওঁর আসল দক্ষতা ছিল মনসাঘট তৈরিতে। তাঁর সে কাজের নমুনা সংরক্ষিত হয়েছে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষত্‌ সংগ্রহশালায়। সম্প্রতি গুরুসদয় সংগ্রহশালাও উদ্যোগী হয়েছিল ওঁর কাজ সংরক্ষণে। হঠাত্‌ করে ওঁর চলে যাওয়ায় অপূরণীয় ক্ষতি হল বাংলা লোকশিল্পের। ওঁর কাজ নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করছিলেন পরিচালক শুভাশিস চক্রবর্তী। অসমাপ্ত ছবিটি সম্পাদনার পর রূপ পেয়েছে ‘কালার অব মাইগ্রেশন’ নামে, এটি দেখানো হবে সরযূবালার স্মরণসভায়।

ছবি : গোপী দে সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE