Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

.....

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

মাস্টারের সৌজন্যে উত্তম-ছবি

কতদিন পরে ভ্রমর এসেছে পদ্মবনে... গাইছেন উত্‌পলা সেন, সতীনাথ মুখোপাধ্যায় রয়েছেন, ‘বনপলাশীর পদাবলী’ ছবির রেকর্ডিং, আর মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে উত্‌পলাকে ক্রমাগত মনোনিবেশে সাহায্য করছেন উত্তমকুমার। তখন মোটা সেলুলয়েড ফ্রেমের চশমা পরতেন উত্তম, তেমনই এক সহাস্য মুহূর্তে (বাঁ দিকে) সুকুমার রায়ের স্থিরচিত্রে কী ভীষণ জীবন্ত তিনি! সাড়ে তিন দশক পার হতে চলল তাঁর মৃত্যুর, অথচ এ সব ছবি দেখলে বিশ্বাসই হতে চায় না তিনি নেই। মিউজিক-রিহার্সাল ‘কাল তুমি আলেয়া’র, উত্তম সে-ছবির সুরকার, হঠাত্‌ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এসে হাজির, অন্য ছবির রেকর্ডিং-এ এসে দেখা করে গেলেন উত্তমের সঙ্গে। ওই ছবিরই শ্যুটিংয়ের অবসরে হাতা-গোটানো শার্ট আর ধুতি পরে আড্ডা দিচ্ছেন উত্তম, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ও শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে।

‘নায়ক’ ছবির সূত্রে বার্লিন যাওয়ার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে সুপ্রিয়া চৌধুরীর সঙ্গে উত্তম, পাশেই বিজয়া ও সত্যজিত্‌ রায়। কখনও কথা বলছেন পঙ্কজকুমার মল্লিকের সঙ্গে, কখনও হাত মেলাচ্ছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বা রাজ কপূর বা রাজেশ খন্নার সঙ্গে, কখনও বাড়িতে স্ত্রী-পুত্র গৌরীদেবী-গৌতমের সঙ্গে নিভৃতে, আবার কখনও তুমুল আড্ডায় ভূপেন হাজরিকা সৌমিত্র ও অনিল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। যাত্রিক পরিচালিত ‘যদি জানতেম’ ছবির মহরতে সৌমিত্রর কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে উত্তম (ডান দিকে)। সুকুমার রায়ের এই অ্যালবামটি, উত্তম-ছবি (সূত্রধর), প্রকাশ করবেন বাংলা ছবির বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়, নিজ বাসভবনে, ৩ সেপ্টেম্বর, উত্তমের ৮৮তম জন্মদিনে। সঙ্গে দু’টি উপহার থাকছে, একটি সিডি, তাতে উত্তম-কণ্ঠে রবীন্দ্রগান ও রবীন্দ্রকবিতার আবৃত্তি, অন্যটি ছোট পুস্তিকা, উত্তমের রচনা-সংবলিত। আলোকচিত্রাবলির নেপথ্য-গল্প ও তথ্য দিয়ে স্মৃতি সাজিয়েছেন শৈবাল বিশ্বাস, আর শুরুতেই সুকুমারবাবুর স্বগত কথন ‘অকপটে’, তাতে তিনি লিখেছেন উত্তমের সঙ্গে তাঁর সখ্যের কথা: প্রথম দিন থেকেই উনি আমাকে ‘মাস্টার’ বলে ডাকতে শুরু করলেন। এরপর থেকে তাঁর প্রতিটি ছবির ফ্লোরে হাজির থাকতাম। যেতাম আউটডোর শ্যুটিঙে। দেখা হলেই একগাল হাসি ‘কী খবর মাস্টার? কেমন চলছে?’

আদানপ্রদান

১৯২৪-এ রবীন্দ্রনাথ চিনে গিয়েছিলেন প্রথম বার। সঙ্গে নন্দলাল বসু। তাঁর টানেই সে দেশের অনেক শিল্পী আসেন ভারতে। রবীন্দ্রভক্ত কাও চিয়ান ফু এ দেশে এসে দার্জিলিং-এ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি অজন্তার অনুকরণে ছবিও আঁকেন (সঙ্গে তারই একটি)। ষাটের দশকে আসেন বিখ্যাত চিনা শিল্পী শি লু। বেনারস, মুম্বই ঘুরে প্রচুর ছবি আঁকেন। এ দেশ থেকে নীহাররঞ্জন চৌধুরী সহ অনেক শিল্পী চিনে গিয়েছিলেন সংস্কৃতির টানে। মূলত রবীন্দ্রনাথই এই সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের দরজাটা খুলে দিয়েছিলেন। এশিয়ার অনেক শিল্পীই শান্তিনিকেতনে আসেন। কলাভবনের প্রাক্তনী চিত্রশিল্পী অমিতাভ ভট্টাচার্য বেশ কয়েক বার চিনে গিয়েছেন। সেখানে তাঁর ছবির প্রদর্শনীও হয়। চিনা ভাষা রপ্ত করার পর দুই দেশের শিল্পীদের মত বিনিময় ও শৈল্পিক সংলাপ তাঁকে উত্‌সাহিত করে। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে দুই দেশের শিল্পীদের পারস্পরিক আদানপ্রদান নিয়ে লিখলেন সার্ভে অব সিনো ইন্ডিয়ান আর্টিস্টিক ডিসকোর্স (মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান স্টাডিজ ও টুওয়ার্ডস ফ্রিডম)। আছে নানা দুর্লভ ছবি। সঙ্গে প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ছবির শিল্পী সু পে হঙ।

সর্বভারতীয়

‘বহু বছর বাদে ব্রাত্য বসুর মতো এক নাট্যকারকে আমরা পেয়েছি, যাঁর নাটক প্রথমত মঞ্চসফল, দ্বিতীয়ত সাহিত্যরসের নিরিখে সাহিত্যের ইতিহাসে স্থান পাওয়ার যোগ্য।’ লিখেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘প্রস্তাবনা’য়, হিন্দিতে অনূদিত ব্রাত্য বসুর নাট্যসংগ্রহ চতুষ্কোণ এবং অন্য নাটক-এ (অনুবাদ: সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজকমল প্রকাশন)। ‘চতুষ্কোণ’-সহ ব্রাত্যর ‘উইঙ্কল-টুইঙ্কল’, ‘বাবলি’, আর ‘মৃত্যু ঈশ্বর যৌনতা’ ঠাঁই পেয়েছে এতে। এর আগে ব্রাত্য বসুর নাটকের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ পেয়েছে, হিন্দিতে এই প্রথম। অনুবাদের ফলে সর্বভারতীয় স্তরে নানা নাট্যগোষ্ঠী আগ্রহী হয়ে উঠেছে নাটকগুলির মঞ্চায়নে। ‘এই সর্বভারতীয় সাড়াটা আমার ভাল লাগছে। অভিনয়, পরিচালনার পাশাপাশি নাটক লেখাটাও আমার একই রকম প্যাশন।’ জানালেন ব্রাত্য বসু।

সংলাপ

রাজনীতিতে, সমাজজীবনে, বিশেষ করে দ্বন্দ্বের পরিস্থিতিতে সংলাপের কথা, আলাপ-আলোচনার প্রসঙ্গ প্রায়ই উচ্চারিত হয়। কী এই সংলাপ? এ তো নাটক বা ছায়াছবির সংলাপ নয়। এ সংলাপ পূর্বনির্ধারিতও নয়। এই সংলাপ কোন পরিস্থিতিতে হতে পারে? সংলাপের ক্ষেত্রেও কি কাজ করে ক্ষমতার রাজনীতির প্রভাব? এ নিয়েই এ বারে চতুর্থ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ বক্তৃতা দেবেন রণবীর সমাদ্দার। ষাটের দশকে প্রেসিডেন্সি কলেজের যে মেধাদীপ্ত শিক্ষার্থীরা আগুন ঝরানো অতি-বাম রাজনৈতিক পথের পথিক হয়েছিলেন কেরিয়ার জলাঞ্জলি দিয়ে, রণবীর তাঁদের অগ্রগণ্য। বছর ছয়েক কারান্তরালে থাকবার পরে দ্বিতীয় জীবনে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন নিজের নতুন পরিচয়। এই উপমহাদেশে শান্তি চর্চার অন্যতম অগ্রপথিক রণবীর তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন তাঁর সাধের গবেষণা কেন্দ্র ক্যালকাটা রিসার্চ গ্রুপ। রণবীর সমাদ্দার বলবেন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ৩ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটেয়। পাশাপাশি অন্য রকম সংলাপ প্রয়াত সাহিত্যিক নবারুণ ভট্টাচার্যের স্মরণে, ২ সেপ্টেম্বর সন্ধেয় কামারহাটি নজরুল মঞ্চে। থাকছে তাঁকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও। আলোচনায় রবিশঙ্কর বল, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, সৌরভ মুখোপাধ্যায়, অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় এবং রাজীব চৌধুরী। খোলা মনে কথাবার্তা চলুক, হোক বিতর্কও, এমনটাই চান উদ্যোক্তারা।

থ্রিলোম্যানিয়া

টানটান উত্তেজনায় সিটের হাতল চেপে ধরেন দর্শক যে সব ছবি দেখতে-দেখতে, সেই থ্রিলার-ফিল্মের জন্ম গত শতাব্দীর প্রথমার্ধে। অন্যতম উদ্গাতা ছিলেন হিচকক, মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার তৈরি করতেন। অন্য দিকে ছিল আমেরিকার ডার্ক-থ্রিলার, ফরাসিতে যার নাম ‘ফিল্ম নোয়ার’। হালফিলের একগুচ্ছ থ্রিলার-ছবি, ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আনিয়ে এক উত্‌সবের আয়োজন, ম্যাক্সমুলার ভবনে ১-৩ সেপ্টেম্বর, প্রতি দিন বিকেল সাড়ে ৪টেয় ‘থ্রিলোম্যানিয়া’। উদ্যোগে গ্যেটে ইনস্টিটিউট, সঙ্গে ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস।

ডোভার লেন

বছরের শুরুতেই সঙ্গীত জগতের দিকপালদের নিয়ে কলকাতায় সঙ্গীতরসিক মানুষজনকে গান শোনানোর দায়িত্ব ৬২ বছর ধরে পালন করে চলেছে দ্য ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্স। শুধু এতেই ক্ষান্ত থাকেন না এই সংস্থার সদস্যরা। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে সংস্থার বার্ষিক মেধা সন্ধান প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের এবং কয়েক জন সম্ভাবনাময় শিল্পীকে নিয়ে আয়োজিত হয় এক উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর। এ বারেও সেই আসর বসছে ২-৩ সেপ্টেম্বর বিড়লা অ্যাকাডেমিতে। কণ্ঠসঙ্গীতে শ্রুতি গুপ্ত, সোমদত্তা চট্টোপাধ্যায়, জয়দীপ কুন্ডু। সেতারে অনুষ্টুপ ভট্টাচার্য, সন্তুরে স্বপ্না চক্রবর্তী এবং বেহালায় দিল্লির আর শ্রীধর। ৪-৫ সেপ্টেম্বর উত্তম মঞ্চে সংস্থার বার্ষিক ধ্রুপদী নৃত্যের উত্‌সব। শিল্পীদের মধ্যে উল্লেখ্য সুতপা তালুকদার ও তাঁর সম্প্রদায়, প্রীতি পটেলের অঞ্জিকা সম্প্রদায়, মৃণালিনী বিশ্বাস ও সম্প্রদায়, এবং কত্থক শিল্পী বিশাল কৃষ্ণ। সঙ্গে মেধা সন্ধান প্রতিযোগিতায় জয়ী পৌলমী দাস, সুনীপা দাস ও শ্রুতি স্বয়মসিদ্ধা। অনুষ্ঠান রোজ সন্ধে ৬টা।

নাট্য সপ্তাহ

ছ’দিনে ছ’জন নাট্যকার-অভিনেতা-নির্দেশককে নিয়ে ছ’টি সন্ধ্যা। শম্ভু মিত্র, উত্‌পল দত্ত, বাদল সরকার, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, কেয়া চক্রবর্তী ও তৃপ্তি মিত্র। বাংলা আকাদেমি সভাঘরে ২-৭ সেপ্টেম্বর এই আয়োজন পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি-র। প্রথম দিন শম্ভু মিত্র স্মারক অনুষ্ঠানে নাটক পড়বেন ব্রাত্য বসু, প্রকাশিত হবে ‘নাট্য আকাদেমি পত্রিকা’-র ‘বাদল সরকার সংখ্যা’। শ্যামল ঘোষ, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, অমিয় দেব, পঙ্কজ মুন্সি, প্রতিভা অগ্রবাল প্রমুখের লেখা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংখ্যাটি, সম্পাদক সত্য ভাদুড়ী। বিভিন্ন আলোচনাসভায় থিয়েটারে সমালোচক-সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা, বাংলা মঞ্চে বিদেশি নাটক, আবেগ ও অভিনয়, নিজের অভিনয় জীবন প্রসঙ্গে বলবেন বিভাস চক্রবর্তী, জয় গোস্বামী, অশোক মুখোপাধ্যায়, অর্পিতা ঘোষ, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত।

নতুন করে

মহানগরীতে ফের তিজন বাঈ। তাম্বুরা হাতে এই পাণ্ডবাণী শিল্পীর কণ্ঠে আবার শোনা যাবে মহাভারতের কথা-সুর-গান-নাট্যভাষ্য। উপলক্ষ, এই শহরেরই নাট্য সংস্থা ‘কসবা অর্ঘ্য’র প্রতিষ্ঠা দিবস। ৫ সেপ্টেম্বর অ্যাকাডেমি মঞ্চে থাকবেন ছত্তীসগঢ়ের এই শিল্পী, সঙ্গে তাঁর শিষ্যা, এই শহরেরই নাট্যকর্মী ‘কসবা অর্ঘ্য’র সীমা ঘোষ। নাট্যাভিনয়ের পাশাপাশি পাণ্ডবাণী পরিবেশনেও সীমা সুখ্যাত। দীর্ঘ দিন বাদে তাঁকেও কলকাতার মঞ্চে পাণ্ডবাণী পরিবেশন করতে দেখা যাবে। সঙ্গে পাণ্ডবাণীতে শামিল হবেন অর্ঘ্যের নবীন শিল্পী মেরী আচার্য। এ দিকে কুড়ি বছর ধরে যাঁদের গান গেয়ে আসা, সেই শিক্ষকদেরই তাঁদের গান গেয়ে শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠান এ বার নাজমুল হকের। দু দশক ধরে তাঁর কণ্ঠে লোকগান বইছে। লালন ফকির, পাঞ্জু সাঁই, হাছন রাজা থেকে শাহ আবদুল করিমের গান নিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্রসদনে সন্ধে ছটায় ‘দরবেশের দরবারে নাজমুল’। শুধু গান নয়, লালন ফকির ও লালনোত্তর মহাজনদের সম্পর্কে নানা অজানা তথ্যও শোনাবেন তিনি। আয়োজনে ‘উজানিয়া’।

ত্রিমাত্রিক

ট্রেসি লি স্টাম আমেরিকার উত্তরাধুনিক শিল্পকলার শিল্পী। ট্রেসি রাস্তা জুড়ে ত্রিমাত্রিক নকশায় এমন ছবি আঁকেন, যে পুরোটাই জীবন্ত মনে হয়। এ বারের দুর্গাপুজোয় হরিদেবপুরের ‘বিবেকানন্দ পার্ক অ্যাথলেটিক ক্লাব’-এ দেখা যাবে ট্রেসির কাজ। মণ্ডপের চার পাশের দেওয়ালে তিনি তুলে ধরবেন তিলোত্তমা কলকাতাকে। দেখে মনে হবে মণ্ডপের দেওয়াল থেকে ট্যাক্সিটা এই বুঝি গিয়ে পড়বে পাশের খাদে!

আর মণ্ডপের সিলিং-এ শহরকে ত্রিমাত্রিক নকশায় ফুটিয়ে তুলবেন দীপ্তীশ ঘোষ দস্তিদার ও শান্তনু মিত্র। যা দেখে নীচে থেকে দর্শকের মনে হবে কাচের ওপর দিয়ে যেন নেতাজি ঘোড়া নিয়ে ছুটে চলেছেন (সঙ্গে তারই নকশা)। পুজোমণ্ডপের সিলিং থেকে দেওয়াল এ রকম ত্রিমাত্রিক নকশায় চলমান কলকাতাকে তুলে ধরার ভাবনা পার্থ দাশগুপ্তর।

উত্‌সর্গ

বয়স তখন মোটে সাড়ে তিন-চার। আমদাবাদ থেকে কলকাতায় এসে মায়ের হাত ধরে ট্র্যাঙ্গুলার পার্কে দাদুর (বাবার মামা) সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল ফ্রক পরা মেয়েটি। দাদু গান গাইতে বললে ছোট্ট করে গান শুনিয়েছিল মেয়েটি। এই স্মৃতিটুকুই সম্বল। দাদু দেবব্রত বিশ্বাস। সম্পর্কে দেবব্রত বিশ্বাসের নাতনি সোমদত্তা। কলকাতায় জন্ম হলেও সোমদত্তা বড় হয়েছেন আমদাবাদে। বাবা জ্যোতিশঙ্কর চক্রবর্তী বেশ কিছু দিন ছিলেন ট্র্যাঙ্গুলার পার্কে মামার কাছে। আইআইটি দিল্লির প্রাক্তনী হলেও মামার প্রভাবে গান, গিটার নিয়ে ছিলেন বেশ উত্‌সাহী। বাবার কাছেই সোমদত্তার গানের হাতেখড়ি। গানের পাশাপাশি ভরতনাট্যমও শিখতে শুরু করে আমদাবাদের ‘দর্পণা অ্যাকাডেমি’তে মৃণালিনী সারাভাইয়ের কাছে। বয়স তখন মোটে চার। পরে নাচ শেখা মল্লিকা সারাভাইয়ের কাছে। ছোটবেলায় নাচের স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের নাচ-গানের সঙ্গে বার বার পরিচয় হয়েছিল। আমদাবাদে থেকেও মা’র কাছে নিয়মিত গীতবিতান চর্চা। বর্তমানে সুদূর মার্কিন মুলুকে বসেও তাঁর গানের চর্চা অব্যাহত রেখেছেন। ওখানে নিয়মিত রবীন্দ্রসঙ্গীত ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হল সোমদত্তার অ্যালবাম ‘উত্‌সর্গ’। এটি উত্‌সর্গ করেছেন দেবব্রত বিশ্বাসের উদ্দেশে। এর আগেও তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীতের দুটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছিল। নতুন অ্যালবামটিতে ১০টি রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে রয়েছে ইংরেজিতে মল্লিকা সারাভাইয়ের পাঠ। গীতাঞ্জলি থেকে অংশ বিশেষ শোনা যাবে মল্লিকার কণ্ঠে। সম্প্রতি পিকাসো থেকে বেরোল অ্যালবামটি। উদ্বোধন করলেন সুমিত্রা সেন।

প্রবাসী

অক্সফোর্ডের একেবারে গা ঘেঁষে ছবির মতো ছোট্ট গ্রাম কিডলিংটন ছাড়িয়ে সোজা এগিয়ে চলেছে যে-পথ, সে পথের নাম ব্যানবেরি রোড। ডাকঘর, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান, ব্যাঙ্ক আর বিলেতি পাব-ঘেরা চৌমাথা ছাড়িয়ে পথটি যেখানে একটু বাঁক নিয়েছে, সেখানেই এক ছিমছাম বাড়ির কাচের দরজার ওপরে দেয়ালে তির্যক ভাবে লেখা ৬৩, বাড়িটির নম্বর। এ বাড়িতেই বাস করেন কেতকী কুশারী ডাইসন। বিবাহসূত্রে সেই ষাটের দশক থেকে তিনি বিলেতবাসী। শিক্ষা কলকাতা ও অক্সফোর্ডে। ইংরেজি সাহিত্যের কৃতী ছাত্রী কেতকী ইংরেজি ও বাংলা দু’টি ভাষাতেই সমান স্বচ্ছন্দ। বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে এই অভিবাসী লেখিকার সৃষ্টিশীল লড়াই তাঁর পাঠককুলকে আবিষ্ট করে রেখেছে। কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক এবং অনুবাদ সর্বত্র তাঁর কাজে এক আশ্চর্য চিহ্ন। পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। তার মধ্যে দু’বার আনন্দ পুরস্কার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া ভুবনমোহিনী স্বর্ণপদক ছাড়াও ২০০৯-এর সেরা বাঙালি হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন কেতকী। তাঁর রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্‌তোরিয়া ওকাম্পোর সন্ধানে, ইন ইয়োর ব্লসমিং ফ্লাওয়ার- গার্ডেন বা রঙের রবীন্দ্রনাথ (সুশোভন অধিকারীর সঙ্গে) ইত্যাদি গ্রন্থ রবীন্দ্র-গবেষণার ক্ষেত্রে তাঁকে আলোচনা ও বিতর্কের শীর্ষে নিয়ে গেছে। আগামী প্রকাশনার মধ্যে আছে বাংলা কবিতা সংগ্রহ ও প্রবন্ধসংগ্রহ। গত জুন মাসে পঁচাত্তর বছর স্পর্শ করলেন তিনি। তাঁর দুই পুত্রের এক জন গ্রাফিক ডিজাইনার ও অন্য জন ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর কাছে আমাদের দাবি রইল আরও ভাবনা-জাগানো কাজের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkatar karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE