Advertisement
০৯ মে ২০২৪

কলকাতার কড়চা

গত শতকের শেষ আর এই শতকের গোড়ার দিকে বাংলার টোলগুলো প্রায় সম্পূর্ণ উজাড় হয়ে যায়। পাঠান-মোগল আমলে যে দুর্দৈব ঘটেনি, ইংরেজ রাজত্বে সেটা দ্রুত ঘটল। অর্থনৈতিক চাপে পড়ে সকলেই ছেলে-ভাইপোকে টোলে না পাঠিয়ে ইংরেজি স্কুলে পাঠাতে আরম্ভ করলেন।

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৬ ২২:৫৫
Share: Save:

অতীত আঁকড়ে হাতিবাগান টোল

গত শতকের শেষ আর এই শতকের গোড়ার দিকে বাংলার টোলগুলো প্রায় সম্পূর্ণ উজাড় হয়ে যায়। পাঠান-মোগল আমলে যে দুর্দৈব ঘটেনি, ইংরেজ রাজত্বে সেটা দ্রুত ঘটল। অর্থনৈতিক চাপে পড়ে সকলেই ছেলে-ভাইপোকে টোলে না পাঠিয়ে ইংরেজি স্কুলে পাঠাতে আরম্ভ করলেন। চতুর্দিকে ইংরেজি শিক্ষার জয়জয়কার, সেই ডামাডোলে টোল মরল, আর বিস্তর কাব্যতীর্থ বেদান্তবাগীশ না খেয়ে মারা গেলেন— এমন কথা জনাব সৈয়দ মুজতবা আলির কাছ থেকে ধার করে বলাই যায়। তবে কিনা এ কথা যদি কেউ ভেবে থাকেন যে টোল উঠেই গিয়েছে, তবে ভুল করবেন। সংস্কৃত শিক্ষার ব্যবস্থা যেমন আছে, তেমনই উত্তর কলকাতার হাতিবাগানে অন্য এক ধরনের টোলের দেখা মিলবে। এ টোলের সঙ্গে অতীতের টোলের তুলনামূলক আলোচনা না করাই ভাল। দেখা যাক কেমন আছে এখানকার টোলেরা। খান্না সিনেমা থেকে পশ্চিমে হাঁটলেই চোখে পড়বে ‘প্রাচীন হাতিবাগান টোল মহাকালী আশ্রম’। দায়িত্বে গৌতম ভট্টাচার্য, পরেশনাথ ভট্টাচার্য। এখন পুজো-আচ্চা হয়। হাত দেখা-কোষ্ঠী দেখা-ভাগ্য গণনা, কোষ্ঠী গণনা, কোষ্ঠী বানানো ইত্যাদি। তার পর ‘প্রাচীন হাতিবাগান টোল বগলা মন্দির দুর্গা মন্দির’। নয় নয় করে দেড়শো বছরেরও বেশি বয়স। দায়িত্বে শুভজিৎ ভট্টাচার্য। এঁর টোল এখনও প্রাণবন্ত। প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশ জন ছাত্র আছেন। সংস্কৃত ভাষা কেউ শেখেন, কেউ শেখেন জ্যোতিষ। এর পরও রয়েছে ‘আদি প্রাচীন হাতিবাগান টোল মহাকালী মন্দির’। দায়িত্বে আছেন দীপঙ্কর জ্যোতিঃশাস্ত্রী। এঁরাও পুজোপাঠ-ভাগ্য গণনাই করে থাকেন। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউর ‘হাতিবাগান টোল মহাকালী আশ্রম’-এর দায়িত্বে আছেন বনবিহারী ভট্টাচার্য। দু’টি প্রকোষ্ঠে ভাগ করা। এক দিকে পুজো-আচ্চা, রাস্তার মানুষজন প্রণাম করে যাচ্ছেন; অন্য ঘরটায় কাঠের টেবিল-চেয়ার পাতা। সেখানে লোকজন আসে। ভাগ্য-ভবিষ্যৎ জানতে চায়। এঁদেরও বক্তব্য— টোল নামেই। এখন কোষ্ঠীবিচার, পুজো-আচ্চা— এই সবই হয়। তবু নামের সঙ্গে ‘টোল’ জুড়ে রেখে অতীতকে টিকিয়ে রাখতে চাইছেন তাঁরা । শিল্পী: মণীশ মৈত্র

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

বাংলা ভাষা আর সাহিত্যের চর্চায় বিদেশের ধরনে একটা অ্যাকাডেমি গড়ার প্রস্তাব দেন জন বিমস, সেই ১৮৭২ সালে। তার দুই দশক পেরিয়ে, ২৩ জুলাই ১৮৯৩ (৮ শ্রাবণ ১৩০০ বঙ্গাব্দ) এল লিওটার্ডের প্রবর্তনায় আর বিনয়কৃষ্ণ দেবের সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠিত হল ‘দ্য বেঙ্গল অ্যাকাডেমি অব লিটারেচার’। পরের মাসেই শুরু হল মাসিকপত্র, একই নামে। শুরুতেই লক্ষ্য ছিল উপযুক্ত বাংলা অভিধান তৈরি করা, যথার্থ ব্যাকরণ গড়ে তোলা। পাশাপাশি ঘনিয়ে উঠেছিল তর্ক, প্রতিষ্ঠানের ইংরেজিনির্ভরতা নিয়ে। বছর ঘোরার আগেই নতুন ইতিহাসের সূচনা— বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ্। বাংলার এই প্রতিষ্ঠানের ১২৫ ছুঁতে আর বেশি দেরি নেই। এ বারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন ২৪ জুলাই বিকেল ৪টেয়, পরিষৎ সভাকক্ষে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ভাষণ দেবেন সোমেন্দ্রচন্দ্র নন্দী। আছে নানা পুরস্কার প্রদান, প্রকাশিত বইয়ের প্রদর্শনী ও বিপুল ছাড়ে বিক্রি (৭ অগস্ট পর্যন্ত)। প্রকাশিত হল সুদুর্লভ প্রথম পত্রিকা ‘দ্য বেঙ্গল অ্যাকাডেমি অব লিটারেচার’-এর ১১টি সংখ্যার হুবহু সংস্করণ (সূচনাকথা: শঙ্খ ঘোষ, সঙ্গে তার প্রচ্ছদ) ও মীর মশাররফ হোসেনের ‘হিতকরী’ পত্রিকার হুবহু সংস্করণ।

আত্মচরিত

‘কোথাও যদি বা জলের ঘূর্ণি, বাঁকের বিভিন্ন ছায়া, ব্যঞ্জনার মেঘাবৃত বা অনুরঞ্জিত আভাস আমার সামান্য কবিতায় বা গদ্যে ধরা দিয়ে থাকে তার তাৎপর্য তোমরাই বুঝবে।’ অমিয় চক্রবর্তীর নরেশ গুহকে লেখা এ ধরনের রচনা যেন তাঁর কবিজীবনের চরিত তৈরি করে গিয়েছে ক্রমাগতই। আদলটা আত্মচরিতের হলেও তাতে অবশ্যই চিঠির চিহ্ন, আর তা থেকেই প্রকাশিত হচ্ছে অমিয় চক্রবর্তীর আত্মচরিত/ পত্রোত্তরে নরেশ গুহকে লেখা (অশোকগাথা)। সম্পাদক শুভাশিস চক্রবর্তী বইটির শুরুতেই জানিয়েছেন, কী ভাবে পত্রাকারে এ আত্মচরিত স্বীকার করে নেন অমিয় চক্রবর্তী (সঙ্গের ছবি) এবং তা প্রকাশেরও অনুমতি দেন নরেশ গুহকে। ২২ জুলাই বিকেল ৫টায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দুমতী সভাগৃহে আনুষ্ঠানিক প্রকাশ বইটির। সঙ্গে অশোকনগর পত্রিকার ‘সমরেশ বসু সংখ্যা’ও। সমরেশ বসু স্মারক বক্তৃতা দেবেন তপোধীর ভট্টাচার্য, বিষয়: ‘বাংলা কথাসাহিত্যে সাম্প্রতিক প্রবণতা’। আয়োজনে অশোকগাথা।

নান্দনিক

পেশায় চিকিৎসক হলেও তাঁর লেখা অসংখ্য উপন্যাস ও ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ওরফে বনফুলের জন্ম ১৮৯৯ সালের ১৯ জুলাই। তাঁর লেখা থেকে তৈরি হয়েছে মৃণাল সেনের ‘ভুবন সোম’, তপন সিংহের ‘হাটে বাজারে’, তরুণ মজুমদারের ‘আলোর পিপাসা’, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের ‘অগ্নীশ্বর’, ‘কিছুক্ষণ’, ‘মন্ত্রমুগ্ধ’র মতো বহু বিশিষ্ট ছবি। তাঁর ১১৭তম জন্মদিন উপলক্ষে ‘সাহিত্য ও চলচ্চিত্র’ শীর্ষক অনুষ্ঠান নন্দন-এর উদ্যোগে, বনফুলের পরিবারের সহযোগিতায় ১৯ জুলাই, বিকেল সাড়ে ৫টায় নন্দনে। তাঁর সাহিত্য নিয়ে কিন্নর রায়, ও তাঁর রচনাভিত্তিক চলচ্চিত্র নিয়ে বলবেন ঋতা দত্ত। প্রদর্শিত হবে ‘আলোর পিপাসা’ এবং শোনা যাবে বনফুলের স্বকণ্ঠে আবৃত্তিও। অন্য দিকে, উত্তমকুমার ১৯৬৮-তে যে শিল্পী সংসদ গড়ে তুলেছিলেন, তাদের প্রযোজনায় ‘বনপলাশির পদাবলি’, ‘দুই পৃথিবী’ ছবি দুটির লাভের অর্থ দুঃস্থ শিল্পীদের জন্য সংগৃহীত হয়েছিল। সেই স্মৃতিতেই উত্তমের প্রয়াণ দিবস ২৪ জুলাই নন্দনে তাঁর ফিল্মের পোস্টার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। থাকছে সপ্তাহব্যাপী উত্তম চলচ্চিত্র উৎসব এবং ক্যুইজ। আয়োজনে শিল্পী সংসদ।

প্রয়াণ

শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, ভারতে বাণিজ্য শিক্ষা ও হিসাবরক্ষণ সংক্রান্ত মৌলিক তাত্ত্বিক চর্চায় তিনি ছিলেন প্রথম সারিতে। বর্তমানে হিসাবরক্ষণের নতুন যে ধারার পরিবর্তন হয়েছে সে সম্পর্কে তাঁর গবেষণা অনন্যসাধারণ। ১৯৪৬ সালে জন্ম অরুণকুমার বসুর। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন, এই বিভাগের প্রাক্তনী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং পরে সভাপতি হন। ইন্ডিয়ান অ্যাকাউন্টিং অ্যাসোসিয়েশনের (কলকাতা শাখা) আমৃত্যু সভাপতি ছিলেন। তাঁর অসংখ্য লেখা দেশবিদেশের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সত্তর বছর বয়সে হঠাৎই চলে গেলেন।

সবার জন্য

নতুন শিল্পীদের তৈরি করাই ছিল শ্রুতিনন্দনের উদ্দেশ্য। সেই প্রতিভা সকলের সামনে তুলে ধরাই এ বার গুরুপূর্ণিমায় নতুন উদ্যোগ শ্রুতিনন্দন স্টুডিয়ো-র। তরুণ শিল্পীদের গান রেকর্ড করা হয়েছে সেখানে। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে তা দেওয়া হবে। নতুনদের উৎসাহ দিতে সেই অনুষ্ঠানে থাকবেন শহরের প্রবীণ শিল্পীরাও। বিষয় ভাবনায় শ্রুতিনন্দনের প্রথম ছাত্র, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর ছেলে অনঞ্জন।

চলচ্চিত্রকার

চলে যাওয়ার বয়সই হয়নি আব্বাস কিয়ারোস্তামি-র (১৯৪০-২০১৬), অথচ... ! কবি, চিত্রকর, আলোকচিত্রী, ইলাস্ট্রেটর, গ্রাফিক ডিজাইনার, শিল্প-নির্দেশক ও সর্বোপরি চলচ্চিত্রকার। এই তো গত কয়েক বছরের মধ্যেই ‘সার্টিফায়েড কপি’ আর ‘লাইক সামওয়ান ইন লাভ’-এর মতো নতুন দু’টি ছবিতে চমকে দিয়েছিলেন দুনিয়ার দর্শককে। ষাটের দশকের শেষে মূলত তাঁর হাতেই শুরু হয়েছিল ইরানের সিনেমার ‘নিউ ওয়েভ’, সঙ্গী ছিলেন দারিয়ুস মেহ্‌রজুই। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ইরানি ছবির যে ম্যাজিকে মুগ্ধ গোটা পৃথিবী, তিনিই তার পুরোধা। জাফর পানাহি, যাঁকে নিয়ে এত হইচই, তিনিও কিয়ারোস্তামিরই ছাত্র। সমস্ত ফেস্টিভ্যাল, বিশেষত কান ও ভেনিসে এবং ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটে বিশেষ ভাবে সম্মানিত তিনি। তাঁর ‘থ্রু দ্য অলিভ ট্রিজ’, ‘টেস্ট অব চেরি’ বা ‘দ্য উইন্ড উইল ক্যারি আস’ দর্শকের মুখে-মুখে ফেরে। ১৮ জুলাই সন্ধে ৬টায় নন্দনে তাঁকে নিয়ে বলবেন অশোক বিশ্বনাথন, সোমা চট্টোপাধ্যায় ও যাদব মণ্ডল। দেখানো হবে ‘টেস্ট অব চেরি’। নন্দনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন।

সাহিত্যে মা

বাঙালি মায়ের স্নেহান্ধতা সুবিদিত। বাঙালি মাকে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘মুগ্ধা জননী’। জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী বাংলা সাহিত্যে মা গ্রন্থে লিখেছিলেন, ‘লাটাইয়ের সূতার মত মায়ের স্নেহ। তা কাছেও টানে, দূরেও উড়িয়ে দেয়।’ বইটি ১৯৭৩ সালে প্রথম প্রকাশ পেয়েছিল। তিনি মা-র চরিত্রগুলি তুলে এনেছিলেন বৈষ্ণব ও শাক্ত পদাবলি, মঙ্গলকাব্য, রূপকথা, ছড়ার জগৎ থেকে। সেই বই-ই পুনঃপ্রকাশিত হচ্ছে ‘শুক্তি ভৌমিক স্মারক বক্তৃতা’ অনুষ্ঠানে, ২৩ জুলাই, সন্ধে সাড়ে ৬টায়, ছাতুবাবু-লাটুবাবুর ঠাকুরদালানে। সূত্রধর সংস্করণের ভূমিকায় গোপা দত্তভৌমিক লিখেছেন, ‘হয়তো আমরা একটু ফিরে দেখব আমাদের ফাটলধরা স্নেহসম্পর্কগুলিকে।’ স্মারক বক্তৃতায় ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে সবার নিমন্ত্রণ’ বিষয়ে বলবেন সবুজকলি সেন, সভামুখ্য: কবিতা চন্দ।

স্মরণ

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের প্রিয় ছাত্র, সত্যেন্দ্রনাথ বসুর স্নেহধন্য শৈলজারঞ্জন মজুমদার বিশ্বভারতীতে রসায়ন বিভাগে যোগ দেন শিক্ষক পদে। গুরুদেব বুঝেছিলেন তাঁর আসল উদ্দেশ্য। ক্রমে রবীন্দ্রসংগীতের সার্থক শিক্ষক ও রবীন্দ্রনাথের নির্দেশে সংগীতভবনের অধ্যক্ষ। ২২ জুলাই, সন্ধে ৬টা ৫মিনিটে, রবীন্দ্রসদনে তাঁর ১১৬তম জন্মবার্ষিকী পালন করবে ‘কথা ও সুর’। নিবেদিত হবে আলেখ্যগীতি ‘রবীন্দ্র জীবন-সাহিত্য-সংগীতে বিজ্ঞান: সত্যের আনন্দরূপ’। উপস্থিত থাকবেন বিকাশ সিংহ। দ্বিতীয় পর্বে সমবেত এসরাজ বাদন, পরে সঞ্জয় গঙ্গোপাধ্যায়ের একক রবীন্দ্রসংগীত। অন্য দিকে, অবসর নেওয়ার পরেও কলকাতায় এসে গান শেখানোর ধারা অবিচ্ছিন্ন রেখেছিলেন শৈলজারঞ্জন মজুমদার। ১৯৮০-র দশকে তার কিছু নমুনা টেপে ধরে রাখেন তাঁর অন্যতম ছাত্র বিমল বসু, তাঁর অনুমতিক্রমেই। এমন ক’টি গানের ক্লাসের সিডি প্রকাশিত হবে ২৬ জুলাই, সন্ধে সাড়ে ৬টায়, সুজাতা সদনে। সিডি প্রকাশ করবেন শঙ্করলাল ভট্টাচার্য। দ্বিতীয় পর্বে ঋদ্ধিমান বসুর একক রবীন্দ্রসংগীত।

সেতুবন্ধন

তিনি একাধারে স্পেনীয় ভাষার শিক্ষক, দোভাষী, অনুবাদক, নাট্যকার, লেখক ও অভিনেতা। জয়া চৌধুরী স্পেনীয় ভাষায় রামকৃষ্ণের জীবনী নিয়ে শ্রুতিনাটক লিখেছেন, লিখেছেন কিছু কবিতাও। গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন ও আই আই ই এস টি, শিবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্পেনীয় ভাষা শিক্ষকতায় যুক্ত। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প ‘মুসলমানী’, কবিতা, গান, নজরুলের কবিতা এবং নবনীতা দেবসেনের কবিতাও স্পেনীয় ভাষায় অনুবাদ করেছেন। স্পেনের সাহিত্য বাংলায় অনুবাদ করেছেন বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে। সম্প্রতি, তাঁর অনূদিত লাতিন আমেরিকার প্রথম সাহিত্যে নোবেলজয়ী মহিলা গাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল-এর নোবেল প্রাপ্তির ৭০ বছরে বাংলায় গাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল: নির্বাচিত রচনাসংগ্রহ (পরি: শরৎ বুক হাউস) বইটি চিলি দূতাবাস এবং চিলির সংস্কৃতি বিষয় দফতর থেকে প্রকাশ পেল।

ভুবনময়

আমেরিকার সিয়াটেল আর ডেলওয়্যার, দু’টি শহরেই স্বামী বিবেকানন্দের জীবন অবলম্বনে বিরতিহীন একক অভিনয়ে ‘পরশমণি’ পেশ করবেন পার্থপ্রতিম দেব, নির্দেশনা তাঁরই। এ ছাড়াও সেখানকার কমবয়সিদের নিয়ে, বিশেষত সেখানেই বেড়ে-ওঠা বাচ্চাদের নিয়ে, যারা প্রায় বাংলা জানেই না, ওয়ার্কশপও করবেন। ২২-২৪ জুলাই ও ২-৪ সেপ্টেম্বর। মাঝখানে নিউজার্সিতেও ওদের নিয়েই গৌতম বুদ্ধের জীবন অবলম্বনে তৈরি করবেন ‘লাইট অব এশিয়া’। সঙ্গে এপিক অ্যাক্টর্স ওয়ার্কশপ নাট্যগোষ্ঠীকে নিয়ে করবেন ‘সাগিনা মাহাতো’। তাঁর পরিচালিত এই দু’টি নাটকই পরিবেশিত হবে সাউথ এশিয়ান থিয়েটার ফেস্টিভ্যালে, ২৭ ও ২৮ অগস্ট জর্জ স্ট্রিট প্লে হাউস মঞ্চে। কলকাতার দু’টি স্কুলে নিয়মিত নাটক নিয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি ছোটদের নিয়ে নাটক করানোর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তাঁর। ২০০৫-এ সঙ্গী রূপাকে নিয়ে ‘বাঘাযতীন আলাপ’ নাট্যগোষ্ঠীর সূচনা করেন তিনি। নাটকের গানের সঙ্গে সঙ্গে ‘মহাভোজ’ ‘সাগিনা মাহাতো’ ‘পরশমণি’ ইত্যাদি নাটক মঞ্চস্থ করে তারা। পার্থর শিকড় কিন্তু নান্দীকার-এ, ১৯৮৬-র নভেম্বরে শুরু সেখানেই। নান্দীকার-এর আগের প্রযোজনা ‘নাচনী’র রচয়িতা ও নির্দেশক তিনি, সাম্প্রতিক ‘পাঞ্চজন্য’ও তাঁরই লেখা। তিন দশক ধরে নান্দীকার-এর নাটকে অভিনয় আর উদাত্ত সুরেলা কণ্ঠে দর্শককে মুগ্ধ করে রাখেন যে পার্থপ্রতিম, তাঁর বিচরণ আজ ভুবনময়!

বিস্মৃত

তিনি সত্যজিৎ রায়ের মতো অঙ্কনশিল্পী থেকে সরাসরি চিত্রপরিচালক হয়েছিলেন। তরুণ মজুমদার বলছিলেন, ‘কমার্শিয়াল আর্টের জগতেরই আর একজন খুব নামী আর্টিস্ট যখন ছবি করতে এলেন, তখন আমরা দু’এক জন উৎসাহিত হয়ে টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে তাঁর ছবির শুটিং দেখতে যাই।’ ১৯৪৪-’৫৮ জে ওয়াল্টার টমসন সংস্থার চিফ আর্ট ডিরেক্টর ছিলেন রাজেন তরফদার। রামরাখাল ও প্রফুল্লময়ীর দ্বিতীয় সন্তান রাজেনের (১৯১৭-’৮৭) জন্ম অবিভক্ত বাংলার রাজশাহির বাগুটিপাড়ায়। সদ্য শতবর্ষে পা দিলেন। ছেলেবেলা থেকেই ছবি আঁকতে ভালবাসতেন। রাজশাহি কলেজে পড়তে পড়তেই কলকাতার সরকারি শিল্পবিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ, সেখানেই স্বর্ণপদকপ্রাপ্তি। সে কারণেই ক্যামেরার কাজে বিশেষ মনোযোগী ছিলেন, মনে করেন গৌতম ঘোষ। সত্তর বছরের জীবনে মাত্র সাতটি ছবি পরিচালনা করেন। তাঁর প্রথম ছবি ‘অন্তরীক্ষ’ (১৯৫৭)। ১৯৮১ সালে তৈরি ‘নাগপাশ’-ই তাঁর শেষ ছবি। ‘গঙ্গা’ থেকে তাঁর খ্যাতির শুরু। অন্য ছবি: পালঙ্ক, অগ্নিশিখা, জীবন কাহিনী, আকাশ ছোঁয়া। তরুণ মজুমদারের ‘সংসার সীমান্তে’-র চিত্রনাট্য তাঁর লেখা। তাঁকে অভিনয়ে আনেন মৃণাল সেন। ‘আকালের সন্ধানে’, তার পর ‘খণ্ডহর’-এও। ‘এমন মানুষ পাওয়া ভার। আড্ডায় ও অভিনয়, দুয়েতেই।’ বলেছেন মৃণাল সেন। চলচ্চিত্রে নতুন যুগ সৃষ্টিতে সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণালের পাশে তিনিও অক্ষয় হয়ে থাকবেন, মনে করেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE