Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অমৃতের কলস নাসিকে

অমৃতকুম্ভ! সুরাসুরের সমুদ্রমন্থনে উদ্ভূত অমৃতকলস। যে কলস থেকে অমৃতের বিন্দু ক্ষরিত হয়েছিল এই ভারতের চারটি স্থানে। হরিদ্বার, প্রয়াগ, নাসিক এবং উজ্জয়িনী। কত কত বছর আগেকার কথা। অথচ আজও অমৃতের আশায় মানুষ ছুটে চলে কুম্ভমেলায়। লক্ষ লক্ষ মানুষ। ধনী, দরিদ্র, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে কোন বিশেষ দেবদেবীর পুজোর জন্য নয়, কেবল কুম্ভস্নানের জন্য – অমৃতলাভ করে পাপমুক্ত হয়ে এক পবিত্র জীবন লাভের আশায়। বিশ্বাস, বিশ্বাস, বিশ্বাস। ভারতবর্ষের মানুষই বোধহয় একমাত্র এই অপরিসীম বিশ্বাসের অধিকারী – আধ্যাত্মিক পুণ্যলাভের জন্য তারা যে কোন কিছু করতে প্রস্তুত। এই সেই বিশ্বাস যা পাহাড় টলিয়ে দিতে পারে। লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই বিশ্বাস নিয়ে পথ চলে – কুম্ভস্নানে মুক্তি হোক এই শরীরের – শোক, তাপ, দুঃখ এইসব কিছু থেকে মুক্ত হোক জীবন – চলুক অমৃতের পথে। লিখছেন পারমিতা মুখোপাধ্যায়অমৃতকুম্ভ! সুরাসুরের সমুদ্রমন্থনে উদ্ভূত অমৃতকলস। যে কলস থেকে অমৃতের বিন্দু ক্ষরিত হয়েছিল এই ভারতের চারটি স্থানে। হরিদ্বার, প্রয়াগ, নাসিক এবং উজ্জয়িনী। কত কত বছর আগেকার কথা। অথচ আজও অমৃতের আশায় মানুষ ছুটে চলে কুম্ভমেলায়। লক্ষ লক্ষ মানুষ।

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

পুরা প্রবৃতে দেবানাম
দেবৈসহ মহারণে।
সমুদ্রমন্থনাপ্রাপ্তং
সুধাকুম্ভ নদা সুরৈ।।
তস্মাৎকুম্ভাত্সমুৎপত্রঃ সুধাবিন্দু মহীতলে।
যত্রয়ত্রাপনত তত্রকুম্ভপর্ব প্রকির্তিত।।
ফিরে যাই অনেক অনেক বছর পেছনে। একটি কাহিনির অবতারণা করি। দেবরাজ ইন্দ্র তাঁর হস্তী ঐরাবতে চেপে বের হয়েছেন। ঐরাবতের ওপর আসীন ইন্দ্র উজ্জ্বল, প্রভাময়। দুর্বাসা মুনি ইন্দ্রের ওই রূপ দেখে বিমোহিত হলেন। দুর্বাসা তাঁর গলার মালা খুলে উপহার দিলেন দেবরাজকে। কিন্তু কি দুর্বিপাক দুর্বাসার নিক্ষেপিত মালা ইন্দ্র ধরে নিতে অসমর্থ হলে; সে মালা ধুলোয় লুটিয়ে পড়ল এবং মূহুর্তের মধ্যে দলিত হল ঐরাবতের পায়ের তলায়। কি! এত বড় স্পর্ধা! দুর্বাসা মুনি ক্রোধে জ্বলে ওঠেন। আমার দেওয়া মালার এমন অবমাননা! না, কিছুতেই এ হতে পারে না। আমি অভিশাপ দিচ্ছি...। শিহরিত হন ইন্দ্র। না, মহর্ষি, না। অভিশাপ নয় অভিশাপ নয়...! কিন্তু কে কার কথা শোনে। দুর্বাসা মুনি ক্রোধান্বিত। অতএব, অভিশপ্ত ইন্দ্রকে হতেই হবে। কি অভিশাপ? না, খর্ব হোক ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবতাদের ক্ষমতা।
দুর্বাসার অভিশাপে ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবতাদের শক্তি তো কমে গেল। এতে লাভ হল অসুরদের। ত্রিপুরাসুর হয়ে বসল দেবলোকের অধিপতি। অগত্যা দেবতারা আর কি করেন! তাঁরা শরণাপন্ন হলেন ভগবান বিষ্ণুর। বিষ্ণু দেবতাদের উপদেশ দিলেন যেন তাঁরা দানবদের সঙ্গে সন্ধি করেন এবং তাদের সমুদ্রমন্থনে সাহায্য করতে বলেন। দেবতাদের একার পক্ষে সম্ভব নয় সমুদ্রমন্থন – দানবদের সহায়তা একান্ত প্রয়োজন, তাই বিষ্ণু এই কৌশলটি দেবতাদের আয়ত্ত করতে বললেন। সমুদ্রমন্থনে উদ্ভূত হবে ‘অমৃত’। সেই অমৃতপানে দেবতারা হয়ে উঠবেন অমর। বিষ্ণুর পরামর্শমত দানব অধিপতি ত্রিপুরাসুরকে আহ্বান করলেন সমুদ্রমন্থনের জন্য। ত্রিপুরাসুর রাজি হল একটা শর্তে; তা হল সমুদ্রমন্থনের ফলে উদ্ভূত অমৃতের ভাগ দানবদেরও দিতে হবে।
সমুদ্রমন্থনের তোড়জোড় শুরু হল। দেব আর দানব মন্দার পর্বতকে উঠিয়ে নিয়ে এল। বাসুকি নাগ বেষ্টন করলেন সেই মন্দার পর্বতকে। বিষ্ণু হলেন কূর্ম অবতার। কূর্মের রূপ ধরে তিনি সমুদ্রে নিমজ্জিত হলেন। পৃষ্ঠে ধারণ করলেন মন্দার পর্বতকে। এইবার সেই পর্বতের আবেষ্টনকারী বাসুকী নাগের দু প্রান্ত ধরে দেব আর দানব মন্থন করতে লাগলেন সমুদ্র। সমুদ্রমন্থনের ফলে উঠে এল বহু মূল্যবান সামগ্রী এবং তার সঙ্গে ধন্বন্তরী নিয়ে উঠলেন অমৃতের ভাণ্ড। অমৃতের কলস তো উঠল কিন্তু দানবদের কি সে অমৃতের ভাগ দেওয়া যায়? না, কখনো নয়। দেবগুরু বৃহস্পতির তত্ত্বাবধানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সেই অমৃতভাণ্ড রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হল ইন্দ্রপুত্র জয়ন্তকে। চন্দ্রকে দেওয়া হল প্রহরার ভার। দেবতারা সেই অমৃতভাণ্ড অসুরদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পালিয়ে বেড়ালেন তিন লোক – পাতাল লোক, মৃত্যুলোক এবং স্বর্গলোক। তাঁরা বারো দিন ছিলেন মৃত্যুলোকে অর্থাৎ এই পৃথিবীতে। এই বারো দিন পৃথিবীর হিসেবে বারো বছর। এই সময় এই অমৃতভাণ্ড রাখা হয়েছিল চারটি স্থানে – হরিদ্বার, প্রয়াগ, ত্রিম্বকেশ্বর-নাসিক এবং উজ্জয়িনী। এই চারটি স্থানে কলস থেকে অমৃতরস ক্ষরিত হয়েছিল; তাই এই চারটি স্থান অমৃতসুধারস বিজড়িত। প্রতি তিন বছর অন্তর এই চারটি স্থানে অনুষ্ঠিত হয় কুম্ভমেলা। এক একটি স্থানে প্রতি বারো বছর অন্তর ফিরে আসে কুম্ভযোগ। নাসিকের কাছে ত্রিম্বকেশ্বরে গোদাবরীতীরে কুম্ভস্নানকে বলা হয় ‘সিংহস্থ কুম্ভ’। যখন সূর্য এবং বৃহস্পতি সিংহরাশিতে উপস্থিত হয় তখন তাকে সিংহস্থ কুম্ভযোগ বলা হয়ে থাকে। সাধারণতঃ এই যোগ ভাদ্রপদ অর্থাৎ অগস্ট সেপ্টেম্বর মাসে হয়। এই বছর নাসিক-ত্রিম্বকেশ্বরে এই যোগ রয়েছে তাই ১লা অগস্ট থেকে ২৭ শে সেপ্টেম্বর অবধি বিশেষ বিশেষ দিনে চলবে কুম্ভস্নান। বারো বছর অন্তর পূর্ণ কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয় হরিদ্বার, এলাহাবাদের প্রয়াগ, নাসিক-ত্রিম্বকেশ্বর ও উজ্জয়িনীতে। প্রতি ছয় বছর অন্তর হরিদ্বার ও এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত হয় অর্ধকুম্ভ। একশো চুয়াল্লিশ বছর অন্তর প্রয়াগে আয়োজিত হয় মহা কুম্ভমেলা। স্নানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এই মেলা আয়োজিত হয় নদীর তীরে। হরিদ্বারে গঙ্গা, প্রয়াগে গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতী সঙ্গমে, নাসিক-ত্রিম্বকেশ্বরে গোদাবরীতীরে এবং উজ্জয়িনীতে শিপ্রা নদীতীরে। এইবছর নাসিক-ত্রিম্বকেশ্বরে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে কুম্ভমেলা। এর পূর্বে নাসিকে ২০০৩-০৪ সালে কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রয়াগ, হরিদ্বার এবং উজ্জয়িনীতে বৈষ্ণব আখড়া এবং শৈব আখড়ার সন্ন্যাসীরা একই সঙ্গে স্নান করেন। কেবল নাসিক-ত্রিম্বকেশ্বরে তাঁরা আলাদা স্নান করেন। বৈষ্ণব আখড়ার সাধুরা নাসিকে এবং শৈব বা উদাসিন আখড়ার সন্ন্যাসিরা স্নান করেন ত্রিম্বকেশ্বরে। নাসিকের আরও একটি তাৎপর্য আছে যে এখানে দণ্ডকারণ্যে রামচন্দ্র তাঁর বনবাসের কিছুদিন অতিবাহিত করেছিলেন। ত্রিম্বকেশ্বরে রয়েছে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের এক লিঙ্গ।

কলসস্য মুখেবিষ্ণু

কণ্ঠে রুদ্র সমাশ্রিতঃ।

মুলেত্বস্য স্থিতো ব্রহ্মা

মধ্যে মাতৃগণাঃ স্মৃতাঃ।।

কুক্ষৌ তু সাগরাঃ সর্ব
সপ্ত দীপা বসুন্ধরা।

ঋগ্বেদো যজুর্বেদো সামবেদোহখণঃ।।

কুম্ভমেলা। কুম্ভ অর্থ কলস এবং মেলা অর্থ অনেক মানুষের সমাহার। এই কুম্ভের অন্তর্নিহিত অর্থ কিন্তু খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কুম্ভ বা কলসের মুখের খোলা অংশটি বিষ্ণুর প্রতীক। কলসের গলার অংশ রুদ্রের প্রতীক। যে ভিত্তির ওপর এটি নির্মিত তা ব্রহ্মার প্রতীক। সমস্ত দেবীগণ অধিষ্ঠিত কলসের কেন্দ্রে। সকল মহাসাগর এবং চার বেদও অধিষ্ঠান করছে এর অভ্যন্তরে। মানুষের শরীরও কুম্ভ। গর্ভ, পৃথিবী যা প্রাণকে আত্মাকে ধারণ করে থাকে – ধারণ করে থাকে জল, অমৃত। কলস, সমুদ্র, নদী, পুষ্করিণী, কূপ এসবই কুম্ভের প্রতীক কারণ এরা সকলেই জলকে ধারণ করে থাকে। বায়ু আকাশকে বেষ্টন করে থাকে, সূর্য তার আলো দিয়ে ঘিরে রাখে এই মহাবিশ্বকে। মানবশরীর আচ্ছাদিত কোষ দিয়ে। পঞ্চতত্ত্ব – ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম – এখানেই মানবদেহের লয়। কিসের আশায় আসে লক্ষ লক্ষ মানুষ কুম্ভমেলায়? আসে আত্মানুসন্ধানের জন্য – নিজেকে খুঁজে ফেরে মানুষ! আমি কে? কোথা থেকে এসেছি? কোথায় যাব? কোথায় গেলে পাবো সেই পরম সত্যকে? তারা কুম্ভের পুণ্যস্নানে অর্জন করে চলেছে আত্মানুসন্ধানের নিগূঢ় তত্ত্বকে জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে।

কুম্ভমেলা – এ যেন এক ক্ষুদ্র ভারতবর্ষ। সমগ্র ভারতবর্ষের সংস্কৃতি, জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিকতার মিলনস্থল এই কুম্ভমেলা। সন্ন্যাসী, বৈরাগী, উদাসীন, সাধু, সন্তদের মিলনক্ষেত্র। কুম্ভ পূর্ণ হয়ে ওঠে প্রেম, একতা, জ্ঞান, ভ্রাতৃত্ব এবং আধ্যাত্মিকতায়। এই সব মহতী গুণ অবিরল ক্ষরিত হচ্ছে কুম্ভ থেকে – এই তো অমৃত; জীবন-অমৃত। এই অমৃত কখনও শুকিয়ে যায় না বা শূন্যও হয় না। এই জীবন অমৃতই আমাদের শক্তি দেয় জীবনের পথে এগিয়ে চলার।

নাসিক-ত্রিম্বকেশ্বরে কুম্ভমেলার সময়কাল প্রায় এক বছর। এই বছর ১৪ই জুলাই কুম্ভমেলা শুরু হয়েছে নাসিকের রামকুণ্ডে পতাকা উত্তোলন সহকারে। সমগ্র অনুষ্ঠান বিধিবদ্ধভাবে শেষ হবে ১১ই অগস্ট ২০১৬ সালে।

মহারাষ্ট্র সরকার প্রদত্ত ২০১৫ সালের বিশেষ স্নানের তারিখগুলি দিয়ে দেওয়া হল। ১৪ই অগস্ট সাধুগ্রামের আখড়ায় পতাকা উত্তোলন, ২৬ শে অগস্ট শ্রাবণ শুদ্ধ প্রথম স্নান, ২৯শে অগস্ট প্রথম শাহী স্নান, ১৩ই সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় শাহীস্নান, ১৮ই সেপ্টেম্বর তৃতীয় শাহী স্নান, ২৫শে সেপ্টেম্বর ভাদ্রপদ শুক্লা দ্বাদশী – বামন দ্বাদশী স্নান। নবী মুম্বইয়ের ভাসিগাঁওয়ের ভারত সেবাশ্রম সংঘ থেকে সংগ্রহ করা গেল কুম্ভস্নান সম্পর্কিত কিছু খবর। নাসিকে তপোবনে কপিলাসংগমের কাছে ভারত সেবাশ্রম সংঘের আশ্রম আছে। ভারত সেবাশ্রম সংঘের মতে স্নানের যোগগুলি হল ১৭ই অগস্ট প্রথম কুম্ভস্নান, ২৬শে অগস্ট বিশেষ কুম্ভস্নান, ২৯শে অগস্ট রাখী পূর্ণিমা স্নান, ১৩ই সেপ্টেম্বর মৌনী অমাবস্যা স্নান, ১৮ই সেপ্টম্বর ঋষি পঞ্চমী স্নান। নাসিকে প্রধান স্নানের ঘাটগুলি হল রাম ঘাট, কপিলা সঙ্গম, তপোবন, পঞ্চবটী।

‘আজি শ্রাবণঘনগহন মোহে’

কুম্ভমেলা নিয়ে অনেক কিছু লেখা হল, এবার মুম্বইয়ে অনুষ্ঠান সম্পর্কিত কিছু খবর দিয়ে দিই। তার আগে একটু গৌরচন্দ্রিকার প্রয়োজন। মুম্বইয়ে আষাঢ় আসার আগেই বর্ষা এসেছিল ঠিকই কিন্তু তারপর ছিল এক দীর্ঘ বিরতি। চারিদিকে গেল গেল রব উঠে গিয়েছিল। এত কম বৃষ্টিতে জল কি করে পাওয়া যাবে! এই রুখাশুখা পশ্চিমের শহরটায় এই বর্ষার তিন চারটে মাসই যা বৃষ্টি। তারপর তো সারা বছর বৃষ্টিবিহীন দিনগুলোর চূড়ান্ত একঘেয়েমি। তা সে যাই হোক, শ্রাবণ মাস পড়েছে আর মুম্বইয়েও বৃষ্টিরা নেমে আসছে জয়োল্লাসে। স্বস্তির নিঃশ্বাস, এবার বোধহয় জলকষ্টের কবলে পড়তে হল না। শ্রাবণ, শ্রাবণ, শ্রাবণ! ‘শ্রাবণের গগনের গায় বিদ্যুৎ চমকিয়া যায় ক্ষণে ক্ষণে’। মনের মাঝে বিদ্যুতের ঝলকানির মতই মাঝে মাঝেই ঝিলিক দিয়ে ওঠে গত ফাগুনে বেলাপুরের আর্বান হাটে অনুষ্ঠিত লালমাটি উৎসবের আবির রঙা খণ্ড খণ্ড মূহুর্তগুলো। সেই উৎসবের কাণ্ডারী ছিলেন রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়। সেই উৎসবের স্মৃতি এখনও ফিকে হয় নি। আবার আর একটি অনুষ্ঠানের হাতছানি। শ্রাবণ-পূর্ণিমায় – শ্রাবণ সন্ধ্যা। মুম্বইয়ের খ্যাতনামা শিল্পীদের গান, নাচ ও আবৃত্তির অনুষ্ঠান। রঞ্জিত ঝর্না কাঁসাই ইকো ফাউণ্ডেশন, যার কর্ণধার রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায় এবং আরত্রিকা (ইন্সটিটিউট অফ পারফর্র্মিং আর্ট) এর নিবেদন এই শ্রাবণ সন্ধ্যা। সঙ্গীত পরিবেশনায় সূর্য ভট্টাচার্য, শর্মিলা সরকার, মৈত্রেয়ী বসু, কোয়েল ত্রিপাঠী, উন্মনা দত্ত, সুতপা বন্দোপাধ্যায়, সুদীপ্ত চক্রবর্তী, সৌম্যকান্তি অধিকারী। নৃত্যে নিবেদিতা মুখোপাধ্যায় এবং আরত্রিকা। আবৃত্তিতে মলি দত্ত, তাপস মাইতি এবং তাপস কর। অনুষ্ঠানের মূল ভাবনায় রাজর্ষি এবং পথিকৃৎ। শ্রাবণ সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হবে ২৯শে অগস্ট, শনিবার রাখী পূর্ণিমায়; থানের ডক্টর কাশীনাথ ঘানেকর অডিটোরিয়ামে (মিনি) সন্ধে সাড়ে সাতটায়। দেখা যাক, ‘লালমাটি’র রাজর্ষি শ্রাবণ পূর্ণিমাতে আমাদের কোন বৃষ্টিভেজা আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যান!

স্মৃতি সততই সুখের – এই আপ্তবাক্যটি সবসময় খাটে না। কোন কোন বেদনাভারাতুর স্মৃতিও মনে গেঁথে থাকে সারা জীবন। আর এই বেদনার মধ্য দিয়েই তো মানুষ প্রকৃত আনন্দের সন্ধান করে ফেরে। অমৃতের স্বাদ পেতে হলে যে হলাহলকেও কণ্ঠে ধারণ করতে হয়! সুখ-দুঃখ, জীবন-মৃত্যু, আনন্দ-বেদনা – এ তো মানবজীবনের অবশ্যম্ভাবী ক্রিয়াকলাপ। দুঃখের আগুনে নিজেকে না পোড়ালে খাঁটি সোনা হয়ে উঠব কি করে? শ্রাবণ মাস এলেই আকাশ ভরা এত চোখের জল দেখে তাঁর কথা খুব মনে পড়ে যায়। কার কথা? কেন, আমাদের রবি ঠাকুরের কথা! এই শ্রাবণেই যে তিনি যাত্রা করেছিলেন অমৃতলোকের পথে। বাইশে শ্রাবণ। এই দিনটা চিরকালের জন্য বাঙালির মর্মে গাঁথা হয়ে গেছে। আমরা বাঙালিরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মাঝেও নিবিড়ভাবে রবীন্দ্রনাথকে কাছে পেতে চাই। তাঁর রচনার বিচিত্র প্রকাশের মধ্যেই আমরা খুঁজে নিই আমাদের মুক্তি। আনন্দের অভিব্যক্তিতে যেমন খুঁজে পাই তাঁকে – তেমনই দুঃখের রাতে যখন সবাই চলে যায় মুখ ফিরিয়ে, বঞ্চনা করে এই সমগ্র জগৎসংসার; তখনও তিনিই আমাদের সহায়। রবীন্দ্রগান বা কবিতার পরম ঐশ্বরিক উপলব্ধির মাঝেই মেলে মনের শান্তি। জীবন – এ তো এক রঙ্গমঞ্চ! অবিরত অভিনয় করে যাওয়া; আলোর বৃত্তটুকুর মাঝে। তার চারপাশে ঘন অন্ধকার। আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, ভালবাসার মানুষ – সকলের কাছ থেকেই একদিন বিদায় নিয়ে চলে যেতে হয়। কোথায়? অন্ধকার পথ বেয়ে কোথায় সে যাত্রা আমাদের? আলোর দিকে, সেখানে পরম পুরুষের সাথে মিলনের আনন্দ; যে আনন্দ সর্বব্যাপী, আশা-আকাঙ্ক্ষারহিত। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ছাড়া কার গানে বা কবিতায় পাব পরমপুরুষের সঙ্গে মিলনের গাঢ় অনুভব। তাই শেষ করার আগে রবি ঠাকুরের গানেই বলি-

শান্তিসমুদ্র তুমি গভীর,

অতি অগাধ আনন্দরাশি।

তোমাতে সব দুঃখ জ্বালা

করি নির্বাণ ভুলিব সংসার,

অসীম সুখসাগরে ডুবে যাব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE