বহু দম্পতিকে আমি জানি যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করেন বলে প্রায় স্থায়ী ভাবে ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত থাকেন। স্বাভাবিক কারণে এদের স্ট্রেসও বেশি। আগেই আলোচনা করেছি, কম ঘুম, স্ট্রেস হর্মোনের অতিরিক্ত ক্ষরণ, দীর্ঘক্ষণ কাজের কারণে এক্সারসাইজ বিমুখতা এবং দুর্বল ডায়েট গর্ভসঞ্চারের খুব বেশি ক্ষতি করে। সুতরাং এ বিষয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই যে, অতিরিক্ত কাজ কোনও দম্পতির সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রে স্ট্রেস আছে এমন মহিলাদের মেন্সট্রুয়াল সাইকল ছোট হয়ে যায়। ফলিকুলার স্টেজ ছোট হওয়ায় ওভ্যুলেশন তাড়াতাড়ি হয় এবং সাইকলের মধ্যে ঘন ঘন মিলিত হওয়ার সুযোগ না পেয়ে কনসিভ করতে পারেন না।
যদি কাজ আপনার ওপর কর্তৃত্ব করে তা হলে কয়েকটি ক্ষেত্রে একটু বদল আনতে হবে। ছুটির দিনে অফিসের কাজ নয়, অনেকক্ষণ ধরে কাজ ও সপ্তাহান্তে কাজ বন্ধ রাখুন এবং অফিসের ফোন বাড়িতে ধরবেন না বা অফিসের মেল বাড়িতে চেক করবেন না। কর্মজগৎ ও জীবনের ভারসাম্য নিয়ে আর একবার ভাবুন।
যদি মনে হয় কাজের অত্যধিক চাপ, স্বাস্থ্যের ক্ষতির পাশাপাশি আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনাকেও প্রশ্নচিহ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে, সে ক্ষেত্রে আপনার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা দরকার। ভাবা দরকার কোন কোন বিকল্প আপনার খোলা আছে। নিজেকে কতকগুলি প্রশ্ন করে দেখতে পারেন,
১) এখনও আমি চাকরি করছি কেন?
২) আমি কি খুব ভাল বেতন পাই (সুযোগ সুবিধা/পেনশন ধরে)?
৩) আমার চাকরিতে কি যথেষ্ট পরিমাণ মেটারনিটি বা মাতৃত্ব/মেটারনিটি বা পিতৃত্ব ছুটির সুযোগ আছে?
৪) সংস্থাটি কি ফ্যামিলি-ফ্রেন্ডলি বা পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জোর দেয়।
৫) কাজের পরিবেশ কি আমার ভাল লাগে?
৬) এখানে আমার কর্মোন্নতির কতটা সম্ভাবনা রয়েছে?
৭) আগামী পাঁচ বছরে পেশাগত ভাবে আমি নিজেকে কোথায় দেখতে চাই?
যদি মনে হয়, স্ট্রেস থাকা সত্ত্বেও চাকরিতে আসা আপনার পক্ষে উচিত হবে না, সে ক্ষেত্রে প্রশাসন বা হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের সঙ্গে কথা বলে নিজের চাপ কমাবার চেষ্টা করুন।
গোটা পৃথিবীতে স্বামী-স্ত্রীর বাদানুবাদের পিছনে মূল যে কারণটি খুঁজে পাওয়া গেছে, তা অর্থ সংক্রান্ত। সমীক্ষাতেও এই সত্যতা উঠে এসেছে। সুতরাং খুব সহজেই এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, অর্থনৈতিক সমস্যায় ভোগা দম্পতিরা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি মানসিক চাপে ভোগেন। বিশেষ করে ইতিমধ্যেই শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতায় ভোগা কোনও মানুষ যখন হঠাৎ করে বন্ধ্যাত্ব সংক্রান্ত চিকিৎসার কথা ভাবেন, তখন এই বাড়তি বোঝা মানসিকভাবে তাঁকে কতটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তোলে তা বুঝতে বেগ পেতে হয় না।
অবস্থা যেমনই হোক, মানসিক অশান্তির মূল কারণ যদি টাকাপয়সা হয়, তবে আয় ও ব্যয়ের কালিতা নিয়ে একসঙ্গে আলোচনায় বসলে সব সময় জটিলতা কেটে যায়। বেশ কিছুদিন ধরে আপনি আপনার স্ত্রী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে যদি আয়-ব্যয়-সঞ্চয়ের হিসেব নিয়ে না বসে থাকেন তা হলে সমস্যার সমাধান হবে না।
নিজেরা আলাপ আলোচনায় সামলে সব সময় জটিলতা কেটে যায়। নিজেরা আলাপ আলোচনা করে দেখুন কোন কোন খাতে খরচ কমানো যায়। প্রয়োজনে কিছু দিন নিজেদের শখ-আহ্লাদ থেকে বঞ্চিত করুন। খরচের ওপর নিয়ন্ত্রণ এলে সঞ্চয়ের পাল্লা বাড়বে, মনেও শান্তি আসবে। মনে হবে নিজেদের জন্য ইতিবাচক কিছু করলেন।
বর্তমান পৃথিবীতে এমন বহু নারী ও পুরুষ আছেন যাঁদের প্রচুর কাজ এবং যাঁরা সামাজিক ভাবে অনেকখানিক দায়বদ্ধ। নিজেদের জন্য এঁরা কিছুই করতে পারেন না। অথচ নিয়মিত নিজেদের জন্য সময় বের করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি সপ্তাহে অন্তত খানিকটা সময় নিজের জন্য ব্যয় করুন। একে সময়ের অপচয় ভাববেন না। গর্ভসঞ্চার ছাড়াও এতে সর্বাঙ্গীন উপকার হবে।
নিজের জন্য কতটা সময় দেবেন, তা স্থির করতে এভাবে ভাবতে পারেন। সম্প্রতি সম্পূর্ণ নিজের ভাললাগার প্রয়োজনে ঠিক কোন কাজটি করেছেন? কাজটি কত ঘন ঘন করে থাকেন? বাড়তি ভাললাগার যে জিনিসটি করতে চান তা কেন করে উঠতে পারেন না? এই সব কাজের জন্য কতটা খরচের দরকার? উত্তর সন্তোষজনক মনে হলে ঠিক করে নিন সপ্তাহের কোন দিন কাজটি করা যাবে এবং কবে থেকে শুরু করবেন। তবে ভাবনায় সময় ও খরচের ব্যাপারে যেন বাস্তবতার স্পর্শ থাকে। অবাস্তব টাইম টেবিল ও বিশাল খরচের ধাক্কায় নতুন করে অশান্তি না করাই ভাল।
এটা মনে রাখবেন যে নিজের জন্য সময় বের করার প্রয়োজনে নিছক হেঁটে বেড়ানোর থেকে শুরু করে কোনও ভাল বই নিয়ে একা একটি ঘরে কাটিয়ে দেওয়া, চুটিয়ে গান শোনা, বাইরে বেড়াতে চলে যাওয়া—এ রকম অনেক কিছুই করা যেতে পারে। এমনও হতে পারে যে, এর জন্য এক পয়সা খরচ হচ্ছে না বা বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ারও দরকার নেই। শুধু নিজের জন্য প্রয়োজনে যা ভাল লাগে সেটাই করুন।
যোগাযোগ- ৯৮৩০৬৬৬৬০৬
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy