মডেল: দর্শনা। ছবি: দেবর্ষি সরকার।
বিষপান করিয়েই চলেছে ওরা। মানে গাড়ির কুচকুচে কালো ধোঁয়া, অন্যের সিগারেটের কড়া গন্ধ, ধাতুর পাত্র, প্লাস্টিকের প্যাকেট, কীটনাশকের ঝাঁজ আর শয়তানের শিরোমণি স্ট্রেস। সব ক’টা মিলে দেহে ভরে দিচ্ছে টক্সিন অর্থাৎ গরল। তার দাপট বেশ টের পাওয়া যায়। মাথা ধরা, তিরিক্ষে মেজাজ, অনন্ত ক্লান্তি অথচ শুলেও আসছে না ঘুম। শরীরের এমন বেহাল দশার আশু সমাধান করতে পারে ডিটক্সের নানা উপায়।
প্রথম ধাপেই যকৃৎকে যথাসম্ভব সুস্থ রাখুন। নজর দিন যথার্থ পানাহারে। হজম ঠিক হচ্ছে কি না খেয়াল করুন। সকাল বেলা উঠেই সাবেকি পরামর্শটাই পালন করে ফেলুন। এক গ্লাস সামান্য গরম জলে মধু ও লেবুর রস। শুধু দিনের শুরুতেই নয়, দেড়-দু’ঘণ্টা অন্তরই জল বা টাটকা ফলের রস পান করুন। দিনে চার লিটারের কাছাকাছি জল খেতে পারলে, তোফা থাকবে আপনার শরীরযন্ত্র। সব দুষ্টু কণারা ওই জলে ভেসেই দূর হয়ে যাবে। যখন-তখন খিদে, ঘুম পাবেই না। চনমনে থাকবেন।
খুব করে খান রসালো ফল। সবেদা, আম, তরমুজ, খরমুজ, জামরুল, আঙুর... যখন যেটা পাচ্ছেন। লাল টুকটুকে ক্র্যানবেরির সঙ্গে পাকা কমলালেবুর রস মিশিয়ে খেতে যেমন উপাদেয়, তেমনই তা ওস্তাদ শরীরের অন্দরমহল পরিষ্কার রাখতে। রোজের খাবারে অবশ্যই রাখুন ব্রাউন রাইস, মুগ ডাল, টাটকা সবুজ শাকসবজি, ব্রকোলি এবং রসুন। থালা আলো করে থাক ডিমের সাদা অংশ। উঁহু! কুসুম নয় কিন্তু। তেমনই কফির বদলে গ্রিন টি চলুক, সঙ্গে ফাইবার বিস্কিট। রোজকার খাবারে ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম ফাইবার রাখতে পারলেই টক্সিন তাড়ানোর রাস্তায় অনেকটা এগিয়ে যাবেন আপনি।
রাসায়নিক ভরা প্রসাধনী আর সুগন্ধি থেকে দূরে থাকুন। তেমনই ঘরবাড়ি পরিষ্কারের কেমিক্যালও যতটা পারবেন এড়িয়ে চলুন। অর্গ্যানিক কসমেটিকস, ক্লিনার সহজেই পাওয়া যায়। আর যদি এ সব দূরে ঠেলতে না-ই পারেন, ব্যবহারের পরই জলে সামান্য অ্যান্টিসেপটিক লোশন ফেলে স্নান সেরে নিন। ভ্যানিশ হবেই টক্সিন।
দিনে ২০ থেকে ৩০ মিনিট বরাদ্দ রাখুন শারীরচর্চার জন্য। এতে পেশি, হাড়, কোষ খুব পোক্ত থাকবে। রক্ত চলাচল যত হবে, ততই মজবুত হবে রোগ প্রতিরোধ শক্তি। রোগ-দুঃখ কাছে ঘেঁষতেও ভয় পাবে। পারলে মাস দুই অন্তর ‘সনা’ বাথ নিন। দেহ-মন তাজা ঝরঝরে থাকবে।
তবে বাইরে বেরোলে দূষিত বাতাস তো ফুসফুসে ঢুকবেই। মেডিটেশন আর ডিপ ব্রিদিংয়ের অভ্যেস রাখলেই সেই দূষণ থেকে অনেকখানি নিস্তার পাবেন।
বাড়িতে যে সব অনাবশ্যক জিনিসগুলো অকারণে জমে থাকে, তাদের চটপট ডাস্টবিনে দিয়ে আসুন। থাকার পরিসরটুকু ছিমছাম থাকলে, বাঁচতে অনেক বেশি ভাল লাগবে। খেয়াল রাখুন মনেরও। দুশ্চিন্তাকে একদম প্রশ্রয় দেবেন না। টেনশন-উদ্বেগ জড়ো হলেই, সময়টা কাটিয়ে দিন প্রিয় বন্ধু, আপনজনদের সান্নিধ্যে। সময় বার করে, আত্মীয় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পারলে তো দুরন্ত। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ প্রভৃতি ইন্টারনেট-দৈত্যরা অনেক সুবিধে যেমন দেয়, তেমনই জীবনে ঝামেলা বাড়াতেও জুড়ি নেই। সে সব জাল কেটে বেরোতে পারলে অনেক স্ফূর্তিতে বাঁচবেন।
ব্যস। আর চাই আপনার একটু উদ্যম। তাতেই হেরে ভূত হয়ে মাথা নিচু করে আপনার জীবন থেকে একে একে বিদায় নেবে বিষধর টক্সিন-কুল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy