Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ যেন দেশের বাড়ি ফেরা

ফিরলেন দু’জনে। মেঘনাদ ভট্টাচার্য ও গৌতম হালদার। তাঁদের নতুন নাটকের মহলায় হাজির একমাত্র ‘পত্রিকা’ ফিরলেন দু’জনে। মেঘনাদ ভট্টাচার্য ও গৌতম হালদার। তাঁদের নতুন নাটকের মহলায় হাজির একমাত্র ‘পত্রিকা’

মৈমনসিংহ গীতিকা।ছবি: রণজিৎ নন্দী

মৈমনসিংহ গীতিকা।ছবি: রণজিৎ নন্দী

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

এযেন সাহেবি কেতার স্টেডিয়াম ছেড়ে আটপৌরে খেলার ঘাসজমিতে নেমে পড়া!

সেই সঙ্গে চেনা দুঃখ, চেনা সুখের দেশের বাড়ি ফেরাও!

নামলেন, ফিরলেন ওঁরা দু’জনেই। মেঘনাদ ভট্টাচার্য আর গৌতম হালদার।

‘পিঙ্কি বুলি’ থেকে ‘সায়ক’-এর নাটকে যে বদল, সেই বদলের আঁচ ছিল পরের দুটিতেও— ‘দামিনী হে’, ‘পাসিং শো’। সোজাসাপ্টা কাহিনি নয়, জাদুবাস্তবতায় মোড়া। বিমূর্ততার প্রলেপে ঢাকা। সংলাপে লিরিকের বাঁকা টান। এই সব ক’টি ছাঁচ ছেড়ে ‘সায়ক’ ফিরছে তাদের পুরনো জমানায়। অনেকটা সেই ‘দুই হুজুরের গপ্পো’র মোডে।

সিরিও কমিক। ‘প্রেমকথা’। ১৬৬৮ সালে যে নাটকের জন্ম দেন ফরাসি নাট্যকার মোলিয়্যার, ‘লা আভরে’ নামে। নাট্যকার চন্দন সেনের ‘প্রেমকথা’র অবলম্বন ওই নাটকটিই। আপাত ভাবে নির্ভেজাল হাসির নাটক। তার মধ্যে মধ্যে বুনে দেওয়া মেঘনাদীয় কায়দার সোশ্যাল স্যাটায়ার। পাশাপাশি হাঁটে সাম্প্রতিক নোট বদলের ডামাডোল। সাদা-কালোর চক্কর।

হাড়-কৃপণ বস্ত্রব্যবসায়ী প্রাণকেষ্ট (মেঘনাদ ভট্টাচার্য)-কে ঘিরেই এই ‘প্রেমকথা’। ষাট বছরের যে বৃদ্ধর জীবনে হঠাৎ গজিয়েছে বিয়ের ডানা। পাত্রী তাঁরই ছেলের প্রেমিকা! বিয়ে আর বৃদ্ধর সদ্য পাওয়া কাঁড়ি কাঁড়ি টাকাকে সোনার বাট করে লুকিয়ে ফেলাকে নিয়ে কাহিনির সাপ-চলা গতি।

ভান নেই। ভণিতা নেই। তাত্ত্বিক কচকচি তো নেই-ই। শুধু আছে চনমনে গপ্পের মুহুর্মুহু আচম্বিত বাঁক। অনেকটা সেই ভাত-মাংস খেয়েদেয়ে শীত-দুপুরের আদুরে রোদ্দুর গায়ে মেখে রেডিয়োয় নাটক শোনার ফুরফুরে মৌতাতে ফিরে যাওয়া যেন!

হলুদ-লাল সবুজ সাদা দাঁড়ি দাঁড়ি কতগুলো ফ্রেম দিয়ে তৈরি টানা সেট (সৌমিক-পিয়ালী)। তা-ই আকার নেয় কখনও পার্ক, তো কখনও ঘর। কখনও সার্কাস এরিনা, তো কখনও বাঘের খাঁচা। প্রাণকেষ্ট স্বয়ং যেখানে বাঘ।

গল্পের গায়ে গান গড়ায় (প্রতীক চৌধুরী, প্রথম বার কোনও নাটকে)। জোকার আসে। নাচ (সুকল্যাণ ভট্টাচার্য) আসে। কোনওটাই কাহিনির ফাঁক খুঁজে নয়, বরং তাকে টেনে পরের ধাপে নিয়ে যেতে।

প্রেমকথা-র মহলা।ছবি: রণজিৎ নন্দী

বুদ্ধি নয়, মস্তিষ্ক নয়, হৃদয়ের খোলা মাঠে যে মেঘনাদ তাঁর ‘সায়ক’-কে আজন্ম হাঁটিয়েছেন, এ নাটকও তেমনই গড়নে ঢালা।

প্রথম শো ২ মার্চ। মিনার্ভা। দ্বিতীয়টি ৫ মার্চ। একাডেমি। দু’টোই সন্ধে সাড়ে ছ’টায়।

ডান্স-ড্রামা যে তাঁর কতটা কব্জায়, বুঝিয়ে চলেছেন তিনি সেই ‘নগরকীর্তন’ থেকে। তার পর কত! ‘ব্রেখটের খোঁজে’, ‘কাব্যে গানে’, ‘মেঘনাদবধ কাব্য’, ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’...। তিনি গৌতম হালদার।

প্রায় এক দশকের স্বপ্ন যাঁর ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ নিয়ে। তিন বছরেরও বেশি প্রস্তুতি সেরে তা-ই এ বার মঞ্চে আসছে ৩ মার্চ, দুপুর ৩টে ও সন্ধে সাড়ে ৬টায়। একাডেমি। ‘নয়ে নাটুয়া’-র ব্যানারে।

সেই নদের চাঁদ আর তাঁর প্রেমিকা মহুয়ার বিয়োগগাথা। হুমরা বেদের ক্রোধে যাঁদের প্রেম নিকেষ হয়েছিল অঙ্কুরেই।

একের পর এক লোকগান। বাউলাঙ্গ, কীর্তনাঙ্গের গান। পালা গান। বাঁশের চাটাইয়ে তৈরি খেজুর গাছ। তাল গাছ। রংবেরঙা মুখোশ। রঙিন বাঁশের লাঠি। দরমা। সার দেওয়া হারিকেনের মৃদু আলো। এক কোণে বসা এক জোড়া পুতুল।

কুশীলবের গায়ে বানজারার মতো ঢোল্লা জোব্বা। দড়ির ঝালর। থোকা থোকা পুঁতির মালা। মুখে নানা রঙের পোঁচ। মাথায় পালক।

প্রেক্ষাগৃহে দর্শকরা আসন নেওয়ার আগে থেকেই উইংগস-এর ধারে বসা বাজনদারের টুংটাং। সমস্তটা জুড়ো মিঠে আলোর জাঁক।

সব মিলিয়ে ধাঁ করে ‘সোজন...’-এর কথা মনে করাবেই। কিন্তু নাটক গড়ালেই সেই ছাঁচ ভেঙে মাথা তোলে ‘নব্য’ গৌতম হালদার।— লোকনাচে যখন জুড়ে যায় র‌্যাপ। শরীরী বিভঙ্গ পুবের হাওয়ায় মাখামাখি হয়েও খানিক পশ্চিমি। অপেরার ধাঁচে হাতে ওঠে মাইক্রোফোন। কোরিওগ্রাফ টপকায় লোক-অঙ্গের বেড়া।

কাহিনির পায়ে পায়ে উত্তাল তরঙ্গ যেমন এলোপাথাড়িয়া, তেমনই আবার শান্ত নদীর তিরতিরে বাতাসের আলতো দোলায় ভরা। সে দোলা বড় ব্যাকুল করা। বড় মনকাঁদানিয়া সুরে ধরা।

নাটক-পাড়ায় এই সুরেই বছর বছর ধরে বসত করে এক জনা— তিনি নাটুয়া গৌতম হালদার! তাঁর স্বপ্নচারণের লৌকিক উদযাপন হতে আর মাত্র ক’দিনের অপেক্ষা!

দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Meghnad Bhattacharya Goutam Halder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE