ননদ সম্পর্কটা অনেকটা নগদে পাওয়ার মতো। বিয়ের পরেই বরের সঙ্গে উপস্থিত ননদ। ঠিক তখনই। আর ননদ নামক বিভীষিকার আতঙ্কে বউমাও বাড়াতে থাকেন দূরত্ব। ব্যস! সূত্রপাত গৃহবিবাদ। কিন্তু ননদ মানেই কি ধারাবাহিকে দেখানো জটিল, কুটিল মানুষ? আদপেই তা নয়। তিনিও আপনারই মতো এক বাড়ির মেয়ে। তবুও ননদিনীরা উপাধি পান ‘রায়বাঘিনী’। ননদকে দূরে সরিয়ে না রেখে যদি কাছে টেনে নেওয়া যায়, তা হলে বউমা-ননদের সম্পর্কের রসায়নও কি হয়ে উঠতে পারে না ঈর্ষণীয়?
বউমারা খেয়াল রাখবেন
• আগেই গলা জড়িয়ে বন্ধুত্ব করতে যাবেন না বা মুখ দেখাদেখি বন্ধ করবেন না। ননদের সঙ্গে কথা বলুন, মিশুন। আগে বোঝা দরকার তিনি কেমন মানুষ।
• ননদ যদি স্বামীর চেয়ে বয়সে বড় হন, তা হলে তাঁর কর্তৃত্ব ফলানোর স্বভাব থাকতে পারে। সেটা অস্বাভাবিকও নয়। ভুলে যাবেন না, ছোট বেলায় আপনার স্বামীকে ননদই কিন্তু স্নেহ দিয়ে আগলে রেখেছেন। পড়তে না চাইলে বা রাত অবধি রাস্তায় বল পেটালে, তিনি-ই শাসন করেছেন। তাই বিয়ের পরেই এক রাতে তাঁর সেই স্বভাব পাল্টে যাবে না। কিন্তু তাঁকে এটাও বুঝিয়ে দিতে হবে যে, কর্তৃত্বটুকু তাঁর ভাইয়ের উপরেই ফলাতে পারেন তিনি, ভাইয়ের বউয়ের উপরে নয়।
• যদি শ্বশুরবাড়িতে থাকেন, তা হলে মাথায় রাখবেন, সেটা আপনার ননদেরও বাপের বাড়ি। মেয়েরা বিয়ের পর বাপের বাড়ি গিয়ে যেমন আদরে-আহ্লাদে থাকে, মা-বাবার সব ব্যাপারে মতামত দেয়। তেমন ননদও তার বাপের বাড়ির (আপনার শ্বশুরবাড়ি) সব কথায় চলে আসতে পারে। সেটাকে ননদের নাক গলানো ভাববেন না। তবে ননদ যেন আপনার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করেন, সে ব্যাপারে সচেতন হন। স্বামীর সংসারে যে আপনারও অধিকার আছে, সেটা বুঝিয়ে দিন। প্রথম থেকেই শ্বশুরবাড়ির কোনও সিদ্ধান্তে আপনার মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে কি না খেয়াল রাখুন। নিজের মত কতটা গ্রহণযোগ্য তা অবশ্যই আগে যাচাই করে নিতে হবে। সব ব্যাপারেই যে আপনাকে জিজ্ঞেস করে তাঁরা কাজ করবেন, সেটাও ভাবা ভুল।
• ননদ বয়সে ছোট হলে অনেক সময় দাদা-বউদির গা ঘেঁষে থাকতে ভালবাসে। তাতে প্রাইভেসিতে সমস্যা হতে পারে। তাই বুদ্ধি করে ননদ পছন্দ করে, এমন বিষয় বা জিনিসপত্র দিয়ে তাকে ব্যস্ত রাখুন। প্রথম থেকেই সিনেমা দেখতে গেলে বা শপিংয়ে যাওয়ার সময় ননদকে সঙ্গে করে না নিয়ে গিয়ে, স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে যান। তা হলে সে-ও তার সীমা বুঝবে। প্রথম থেকেই ননদকে নিয়ে ঘুরতে থাকলে, পরে তাকে বাদ দেওয়া সমস্যা হবে।
• ননদের সঙ্গে সময় কাটান। আপনার যদি বোন বা দিদি থাকে, তা হলে সে রকমই আর একটা বোন পেয়ে গেলেন। আর না থাকলে তো আরও ভাল, একটা সম্পর্ক উপরি পেলেন। সেই সম্পর্কটা উপভোগ করুন। ননদের সঙ্গে শপিং করতে বেরিয়ে পড়ুন, সিনেমা দেখতে, একসঙ্গে লাঞ্চে বা ডিনারেও চলে যেতে পারেন। গল্প-আড্ডায় বাড়িতেই এক জন বন্ধু পেয়ে যাবেন।
• ননদের ব্যক্তিগত সমস্যার কথা জেনে তা সমাধান করার চেষ্টা করতে পারেন। তা হলে দেখবেন আপনার সমস্যাতেও তিনি ঝাঁপিয়ে পড়ে সাহায্য করবেন।
• ননদের সঙ্গে মনোমালিন্য হলে সরাসরি তাঁর সঙ্গেই সে ব্যাপারে কথা বলুন। নিজের স্বামীকে নালিশ করে বা বাপের বাড়িতে সেই নিয়ে আলোচনা করতে যাবেন না। এতে সমস্যার সমাধান তো হবেই না। অসন্তোষ বাড়তে পারে। স্বামীকে বারবার তার বোন বা দিদির নামে নালিশ করলে স্বামীর সঙ্গেও আপনার সম্পর্কের অবনতি হওয়ার ভয় থাকে।
ননদরাও মনে রাখবেন
আপনার দাদা বা ভাইয়ের বউ আপনার প্রতিপক্ষ নন। আপনার ভাইয়ের অর্ধাঙ্গিনী। তাই ভাইকে যতটা ভালবাসেন, ঠিক ততটা ভালবাসা তাঁরও প্রাপ্য। ভালবেসে ভাইয়ের বউকে কাছে টেনে নিন, দেখবেন আপনিও স্নেহ বা শ্রদ্ধা পাবেন। আরও কয়েকটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন...
• ভাইয়ের বউয়ের সব ব্যাপারে কথা বলতে যাবেন না। আগে বোঝার চেষ্টা করুন, তিনি কেমন মানুষ। তিনিও আপনার মতো এক জন মেয়ে। আপনাদের পরিবারের অন্যতম সদস্যও বটে! গোড়ায় তাঁর শ্বশুরবাড়িতে নানারকম সমস্যা হতে পারে, যা তিনি শ্বশুর-শাশুড়িকে না-ও বলতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সাহায্যের হাতটা আপনি বাড়িয়ে দিতে পারেন। দেখবেন দু’জনের মধ্যে সখ্য গড়ে উঠবে।
• দাদার বউয়ের সব কিছু নিজের ভেবে বসবেন না। বউদির কোনও জিনিস পছন্দ হলে এক-দু’বার চাইতে পারেন, কিন্তু বারবার নয়। তাঁর যদি আপনাকে কিছু দিতে ইচ্ছে হয়, তিনি নিজেই দেবেন।
• দাদা আর বউদির মাঝে সব সময় বসে থাকবেন না বা তাঁদের সঙ্গে ঘুরতে চলে যাবেন না। দু’জনকে একসঙ্গে সময় কাটাতে দিন।
• অনেক ননদই ভাই-বউয়ের পোশাকে হস্তক্ষেপ করেন। আপনি এথনিকে স্বচ্ছন্দ বলে আপনার
ভাই বউও যে শুধু এথনিকই পরবেন, তা কিন্তু নয়। তিনি যদি শর্ট ড্রেস বা জিন্স টপে স্বচ্ছন্দ হন, তাঁকে সেই ধরনের পোশাকেই মেনে নিন।
• আপনার মা-বাবার সঙ্গে বউদির মনোমালিন্য হলে আপনিও তাঁর সঙ্গে কথা বন্ধ করে বসে থাকবেন না। বরং উভয় পক্ষকে বুঝিয়ে কাছে আনার দায়িত্ব তখন আপনারই নেওয়া উচিত।
মনে রাখবেন সম্পর্ক ভাল হবে না খারাপ, তা কিন্তু মানুষের নিজের হাতে। নিজে আগে ভাল হয়ে দেখুন, বিপরীতের মানুষটিও ভাল হতে বাধ্য। ননদের মধ্যে খুঁজে নিন কাছের বন্ধুকে। দেখবেন বরের সঙ্গে ঝগড়া হলেও শ্বশুরবাড়িতে নিজেকে আর একা মনে হচ্ছে না।
মডেল: পত্রালি, প্রিয়ম। ছবি: শুভদীপ ধর। মেকআপ: পরিণীতা সরকার। পোশাক: আনোখি (ফোরাম মল), ইমেজ অ্যান্ড স্টাইল (গড়িয়াহাট)। লোকেশন: ক্লাব ভর্দে ভিস্তা, চকগড়িয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy